বৃহস্পতিবার   ২৮ মার্চ ২০২৪   চৈত্র ১৪ ১৪৩০

দুর্নীতির দায়ে সোহেল-মুক্তার বদলী নিয়ে সর্বত্র তোলপাড়

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশিত: ৪ মে ২০২৩  


# এক মাসেও শুন্যস্থান পুরণ হয়নি

# মুক্তার হয়ে মায়ের দৌড়ঝাঁপ

# বদলী ঠেকাতে অর্থের ছড়াছড়ি
 

নারায়ণগঞ্জের ৩শ’ শয্যা হাসপাতালের নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। এছাড়াও অভিযোগ রয়েছে ওই সরকারি হাসপাতালে রোগীদের চেয়ে দালালাদের কদর বেশি। তাছাড়া প্রশাসনিক কর্মকর্তা, ডাক্তার, নার্সদের রুঢ় আচরণেরও অভিযোগ পাওয়া গেছে। এত কিছুর পরেও সম্প্রতি দুর্নীতির অভিযোগে নগরীর খানপুর ৩শ’ শয্যা হাসপাতালে দুই কর্মচারীকে তাদের দায়িত্ব থেকে বদলী করা হয়েছে।

 

 

কিন্তু বদলী হওয়ার পরেও তারা তাদের নিজ কর্মস্থলে থাকার জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিভিন্ন জায়গায় দৌরঝাপ করছে করে বলে জানান সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের একাধিক কর্মরত ব্যক্তি। এমনকি নিজেদের বদলী ঠেকাতে অর্থ নিয়ে মাঠে নেমেছে বলে জানান কয়েকজন ব্যক্তি। 

 

 

এদিকে নারায়ণগঞ্জের খানপুর ৩শ’ শয্যা হাসপাতাল প্রসঙ্গে গতকাল দৈনিক যুগের চিন্তা পত্রিকায় দুর্নীতির অভিযোগে ৩শ’ শয্যা হাসপাতালের সোহেল মুক্তার বদলী শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ হয়। এই সংবাদে নগরীর হাসপাতাল সহ পুরো নগর জুড়ে আলোচনা সমালোচনার ঝড় বইছে। সেই সাথে বদলী হওয়া দুই কর্মচারীর অপকর্ম নিয়ে মুখ খুলতে শুরু করেছে হাসপাতালের কর্মচারীরা। 

 

 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ৬ এপ্রিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহা-পরিচালকের পক্ষে সহকারী পরিচালক ডা. মুহাম্মদ মইনুল হক স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে নারায়ণগঞ্জ ৩০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের প্রধান সহকারী নাসরিন সুলতানা ও অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর সোহেল রানাকে দুর্নীতির অভিযোগে বদলির আদেশ দেয়া হয়।

 

 

তাদের মধ্যে নাসরিন সুলতানাকে ঢাকার দোহার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং সোহেল রানাকে মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বদলি করা হয়েছে। কিন্তু এই বদলী ঠেকানোর জন্য ইতোমধ্যে তারা উঠে পরে লেগেছে। এমনকি তারা এখনো পর্যন্ত তাদের কর্মস্থলে যোগদান করেননি। অপর দিকে খানপুর ৩শ’ শয্যা হাসপাতালে তাদের শুন্য পদে এখনো নতুন ব্যক্তি না আসে নাই। আর এতে করে প্রশাসনিক বিভিন্ন কাজে মানুষকে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। 

 

 

একাধিক বিশ্বস্ত সুত্র জানান, ৩০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের প্রধান সহকারী নাসরিন সুলতানা ও অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর সোহেল রানার বিরুদ্ধে নানা দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। তার মাঝে সম্প্রতি ৩শ’ শয্যা হাসপাতালের ৪০ জন আউট সোর্সিং নিয়োগের চাকুরী প্রার্থীদের থেকে ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ করে টাকা নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। এই বিষয়ে চাকরী প্রার্থী কেউ মুখ খুললে তাদের চাকরী হবে না বলে বিভিন্ন ভাবে হুমকি ধমকি দিয়ে যাচ্ছে। 

 

 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ৩শ’ শয্যা হাসপাতালের একাধিক ব্যক্তি জানান, সোহেল মুক্তা সিন্ডিকেট গড়ে তোলে ৩০ লাখ টাকা দিয়ে ওই হাসপাতালের পাশেই গ্যাষ্ট্রলিভ ডায়াগনিষ্টিক সেন্টার কিনে নিয়ে তারা চালাচ্ছেন। খানপুর হাসপাতালের ডাক্তারদের জিম্মি করে রোগীদের বিভিন্ন ডিজিটাল পরীক্ষা হাসপাতালে না করে তাদের ডায়াগনিষ্টিক সেন্টারে করার জন্য বাধ্য করতেন।

 

 

এই পরীক্ষা গুলোর মাধ্যমে নিজেরা মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নিতেন। অথচ একই পরীক্ষা সরকারি ৩শ’ শয্যা হাসপাতালে অল্প খরচে করা যায়। কিন্তু সেখানে করতে দিতেন না। এছাড়া তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে করোনা কালিন সময়ে এই সোহেল ও মুক্তা যোগসাজস করে বিভিন্ন প্রভাবশালী ব্যক্তিদের থেকে অর্থ নিয়ে তাদের বাসায় গিয়ে করোনা টিকা দিতেন। যা অনিয়মের মাঝে পরে। 

 

 

এদিকে ৩শ’ শয্যা হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মুক্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে তিনি প্রভাব বিস্তার করে হাসপাতালের কোর্টারে তার বোনকে থাকার ব্যবস্থা করে দিছেন। অথচ তার বোন ঢাকা মেডিকেলে চাকরী করেন। আর থাকেন নারায়ণগঞ্জের ৩শ’ শয্যা হাসপাতালের কোর্টার বাসায়। এনিয়ে হাসপাতালের কর্তপক্ষ তা ছেড়ে দেয়ার কথা বললেও তিনি ছাড়েন নাই।

 

 

এই ভাবে তাদের বিরুদ্ধে অপকর্মের অভিযোগের শেষ নেই। মুক্তার পক্ষে তার মা দৌরঝাপ করছে বলে কয়েক জানান। কেননা তার মার সাথে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সাবেক ড্রাইভারের সাথে সম্পর্ক রয়েছে। তবে তারা যেন কোন ভাবে তাদের কর্মকান্ড থেকে রেহাই না পান স্থানীয়রা সেই দাবী জানান।  

 

 

এবিষয়ে ৩শ’ শয্যা হাসপাতালের অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর সোহেল রানা বলেন, আমার বদলী হয়েছে আমি তার চিঠি পেয়েছি আমার কর্মস্থলে যোগদান করেছি। কিন্তু আমার নামে কোন অভিযোগ নেই। আর যদি কেউ অভিযোগ করে বলে থাকে তাহলে তা সম্পুর্ণ মিথ্যা। হাসপাতালের কোন দুর্নীতির সাথে আমি জড়িত নই।  

 

 

৩শ’ শয্যা হাসপাতালের প্রধান সহকারী নাসরিন সুলতানা মুক্তা জানান, আমাকে কেন বদলী করছে তা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলতে পারবে। আমি শারিরিকভাবে অসুস্থ্যতা থাকার কারণে এখনো যোগদান করতে পারি নাই। আমার বিষয়ে যে সকল অভিযোগ তুলা হয়েছে তা মিথ্যা। তাছাড়া স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধিদপ্তরে প্রবেশ করতে পাশ লাগে।

 

 

সেখানে আমার মা কিভাবে গিয়ে দৌড়ঝাঁপ করবে। আউটসোর্সিংয়ের নিয়োগের বিষয়ে আমাদের কোন হাত নেই। এখানে কন্ট্রাক্টররা নিয়োগ করে আমাদের দিয়ে যান।  এন.হুসেইন/জেসি

এই বিভাগের আরো খবর