বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১২ ১৪৩১

দেশের অবস্থা ভালো নেই, সবাই বুঝতে পারছে : মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশিত: ৭ আগস্ট ২০২২  

 

# মানুষ আজ হতাশাগ্রস্ত - দুঃশ্চিন্তাগ্রস্ত


নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক সাংসদ ও বিএনপির নির্বাহী কমিটির অন্যতম সদস্য মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন বলেছেন, বাংলাদেশে বর্তমানে যে রাজনৈতিক এবং অর্থনীতি অবস্থা বিরাজ করছে এই বিষয়টি, প্রত্যেক নাগরিক বুঝে।  তারা জানে যে, দেশের অবস্থা এখন ভালো যাচ্ছে না। 

 

দেশের মানুষ দীর্ঘদিন যাবৎ গণতন্ত্রহীন অবস্থায় অত্যাচার নির্যাতনের মধ্যে থাকার কারণে এবং গণতান্ত্রিক অনুশীলন করতে না পারার কারণে মানুষ দুশ্চিন্তাগ্রস্ত, হতাশাগ্রস্ত। এরমধ্যে প্রতিনিয়ত দেশে দ্রব্যমূল্যের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। ক্রয়ক্ষমতার বাহিরে চলে যাচ্ছে মানুষের সমস্ত অর্থনীতি কর্মকান্ড।

 

হঠাৎ করে আবার পেট্রোল, ডিজেল, অকটেনের দাম ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি করা হয়েছে। এটার কারণে মানুষ দুঃশ্চিন্তার মধ্যে পড়ে গেছে যেভাবে আজকে এই মূল্যবৃদ্ধি হলো। পাশাপাশি মানুষের উপার্জন ক্ষমতা সেভাবে বৃদ্ধি হয় নাই। চাকরিজীবীর জন্য বেতন বৃদ্ধি হয়েছে না ব্যবসায়ীর জন্য মুনাফাবৃদ্ধি; কোনো দিক বিবেচনায় না এনেই হঠাৎ করে এই মূল্যবৃদ্ধি করা হয়েছে। এটাতো সাধারণ মানুষের জন্য অনেক কষ্টকর হয়ে যাবে।

 

সাধারণ মানুষ আজকে মুখফুটে এই কথা বলতেও পারে না। প্রতিবাদও করতে পারে না। কোনো আন্দোলনেও তারা যেতে পারে না। এই জন্য যে দেশে গনতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা নাই, বাক স্বাধীনতা নাই। সরকারের বিরুদ্ধে কোনো সমালোচনা করতে গেলে কোনো কথা বলতে গেলেই নির্যাতনের শিকার হতে হয়। হত্যা-গুমের শিকার হতে হয়। 

 

সে কারণে মানুষ ব্যাপকভাবে এর বিরুদ্ধে আন্দেলেন সংগ্রামে নামতে পারছে না। কিন্তু এই কথা সত্য যে, জ্বালানির এই মূল্যবৃদ্ধি করার কারণে মানুষ নিদারুণ কষ্টের মধ্যে পড়ে গেল। যুগের চিন্তার সাথে একান্ত স্বাক্ষাৎকারে সাবেক সাংসদ এসব কথা বলেন।


বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন আরো বলেন, জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধিতে দেশের উৎপাদন ব্যবস্থা ব্যহত হবে। মানুষের দুঃখ-কষ্ট বৃদ্ধি পাবে। দেশে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা নাই, সে কারণে যদি আমরা মূল্যবৃদ্ধির ব্যবস্থাকে বিবেচনায় আনি স্পষ্ট দেখা যাবে সর্ব ক্ষেত্রে দুর্নীতি আজকে মানুষের উপরে এই দুর্ভাগ্যের বোঝা চাপিয়ে দিচ্ছে। 

 

প্রশাসনে যারা আছে; যারা সরকারে আছে ব্যাপক দুর্নীতির মাধ্যমে তারা আজকে নিজেদের ভাগ্যের উন্নয়ন করছে। দেশের প্রচুর অর্থ তারা পাচার করে বিদেশে নিয়ে যাচ্ছে যার কারণে অর্থনৈতিক সংকট তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। আর এটা আরো সামনে কত দূর পর্যন্ত যাবে, আমরা সেটা বলতে পারছি না। 

 

কিন্তু আশঙ্কা করছি এই সমস্যা আরো বৃদ্ধি পাবে, যদি এখনই এর লাগাম টেনে না ধরা হয়। আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে বলি ১৯৭১ সালে আমি যখন কলেজের ছাত্র মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলাম জীবন বাজি রেখে । নিশ্চয়ই তখন আমার একটা চেতনা ছিল লক্ষ্যে ছিল, উদেশ্যে ছিল। অনেকগুলো লক্ষ্য উদ্দেশ্যের মধ্যে প্রধানতম লক্ষ্যে ও উদেশ্যে ছিল পাকিস্তানের শাসক জনতা আমাদের যে গণন্ত্রাতিক অধিকার  হরণ করেছিল সে অধিকার প্রতিষ্ঠা করা। 

 

এই ৯ মাস যুদ্ধ করে ত্যাগের বিনিময়ে দেশে স্বাধীন করলাম এখন আমি জীবিত থেকে আমি যদি এখন মূল্যায়ন করি যে পাকিস্তান আমলে কতটুকু গণতন্ত্র ছিল যেটা সহ্য করতে না পেরে আমরা মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলাম। আজকে দেশে স্বাধীন হওয়ার ৫০ বছরে এখন গণতান্ত্রিক অবস্থা কোন জায়গায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে স্পষ্ট লক্ষ্য করি তাহলে পাকিস্তান আমলে যতটুকু গণতন্ত্র ছিল আজ সেটুকুও নাই। 

 

তাহলে সেদিন যে মুক্তিযুদ্ধ করলাম আজ মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে আজকে আমার মনের অবস্থা কি? আমার আজকে বিচার কি? তো আমি মুক্তিযুদ্ধ কেন করলাম? সবচাইতে বড় প্রয়োজন হল দেশে এখন গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা। সরকার হোক আর বিরোধী দলের লোক, আন্দোলন করে হোক, সর্বপ্রথম মুক্তিযুদ্ধে চেতনার লক্ষ্য বাস্তবায়ন করতে হবে।

 

এটা না করতে পারলে যত উন্নয়নের কথা আমার বলি না কেন সে উন্নয়ন টেকসই উন্নয়ন হবেনা। ব্যক্তিগত স্বার্থের কারণে বড় বড় মেগা প্রজেক্ট বা বড় বড় প্রকল্পের কাজ করা হচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে আমরা দেখাতে পারবো যে, এই প্রকল্পের পিছনে  রয়েছে বড় ধরনের চুরি; রয়েছে বড় ধরনের  দুর্নীতি; যে ব্যাপারে কেউ মুখ খুলতে পারছে না। 

 

আর এইভাবে বিপুল পরিমাণ রাষ্ট্রীয় অর্থ সম্পদ লোপাট করার কারণেই আজকের এই অর্থনৈতিক সংকট। এই অর্থনৈতিক সংকটের কারণেইতো সাধারণ নাগরিকের উপরে আজকে দ্রব্যমূল্যের দাম বৃদ্ধি হচ্ছে। তৈল-গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি, বিদ্যুতের উপর বেশি রেট করা, সবই হচ্ছে এই দুর্নীতির কারণে। 

 

দেশে রাষ্ট্র ব্যবস্থা সঠিক ও গণতান্ত্রিক হলে এই দুর্নীতিগ্রস্ত অর্থনৈতিক অবস্থা আমার কাটিয়ে উঠতে পারবো। তিনি বিএনপি নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, দেশে এখন গণতন্ত্রবিহীন রাজনীতি চলছে এবং বিএনপি গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার জন্য আন্দোলন সংগ্রাম করছে। জনগণের মৌলিক ব্যবস্থা আদায়ের জন্য কর্মসূচি দিয়ে বিএনপি কাজকর্ম করছে। 

 

আমাদের বিএনপির নেতাকর্মীদের প্রত্যেকের উচিত আমাদের ব্যাক্তিগত স্বার্থকে পরিহার করা। দেশ এবং জাতির সার্থকে বড় করে দেখে। দলীয় কাজকর্মে ঝাঁপিয়ে পরার জন্য দলীয় শৃঙ্খলা রক্ষা করে সমস্ত প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করে দেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ গণন্ত্রাতিক রাষ্ট্র ব্যাবস্থা কায়েম করা দরকার। এন.এইচ/জেসি

এই বিভাগের আরো খবর