শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১২ ১৪৩১

দোদুল্যমান বাম রাজনীতি

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশিত: ৫ ডিসেম্বর ২০২২  

 

# হুঙ্কার হচ্ছে কিন্তু অবশেষে কিছু হবে না: হিমাংসু সাহা
# আমাদের কর্মসূচি নেই তাই ভাবনাও নেই : হাফিজুল
# সবাই ক্ষমতা বদলে ব্যস্ত : আওলাদ
# পাল্টা বক্তব্যে এখন সাধারণ মানুষ আতঙ্কে : নিখিল
# ককটেল বিস্ফোরণ পুরোটাই সাজানো : তরিকুল সুজন

 

বাংলাদেশের রাজনীতির সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হয়ে উঠেছে আগামী ১০ ডিসেম্বর। সকল পর্যায়ের সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে সকল নেতাকর্মীদের মাঝে এখন অনেকটাই মুখ্য বিষয় হয়ে উঠেছে এ ১০ই ডিসেম্বর।

 

 

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ইতি মধ্যে বিএনপির সকল নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন। প্রতিটি জেলায় জেলায় বিভাগীয় সমাবেশ করতে এবং সকল সমাবেশের মাধ্যমে সরকার পতনের ডাক দিতে।

 

 

তারেক রহমানের এ আদেশের পর থেকেই জেলায় জেলায় বিএনপির নেতাকর্মীরা ব্যাপক ভূমিকা সহকারে বিভাগীয় কর্মসূচি গুলো করছে ও সফল করছে। সর্বশেষ মহাসমাবেশ হতে যাচ্ছে ঢাকায় যার কারণে এ ঢাকার সমাবেশে সকল জেলার নেতাকর্মীরা যোগদান করবে। এবং এ সমাবেশকে ঘিরে ইতি মধ্যে বিরোধী দল আওয়ামী লীগ অনেকটাই উত্তেজিত হয়ে উঠেছে।

 

 

এখন শুধু রাজনীতিতে দেখা মিলছে পাল্টা বক্তব্যের আর সরকারি দল ও বিরোধী দল বিএনপির এ ধরনের বক্তব্যে শুনে আতঙ্কের মধ্যে আছে দেশের সাধারণ জনগণ। অপর দিকে বিএনপি যেভাবে যে যে ইস্যু নিয়ে নানা কর্মসূচি দিয়ে যাচ্ছেন এ ধরণের কর্মসূচি প্রায় প্রায় বিভাগীয়ভাবে না করলে ও জেলা ভিত্তিকভাবে ছোট পরিসরে করে থাকে বাংলাদেশের আরেকটি রাজনীতিক দল বাম। এখন দুই দলই কর্মসূচি একই অবস্থানে অগ্রসর করছে।

 

 

বামের দলীয় সূত্রে জানা যায়, ১০ই ডিসেম্বরের সমাবেশ নিয়ে যতটুকু প্রস্তুতি গ্রহণ বিএনপি করেছে বাম নেতৃবৃন্দের ধারনা তা দিয়ে কোন ভালো ফলাফল আসবে না। আর বিএনপির এ কর্মসূচি যতই তাদের সাথে এক হোক না কেন তারা এ কর্মসূচি বা বিভাগীয় সমাবেশ কোনটাকেই প্রাধান্য করে না।

 

 

আর তারা বিএনপির প্রতি অনেকটাই ক্ষোপ প্রকাশ করেছেন কারণ তাদের চোখে বিএনপি একটি লুটবাজীর দল। বাম রাজনীতির আন্দোলনের প্রধান দিক সর্বক্ষেত্রে দেখা যায় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, তেল, গ্যাস, বিদ্যুৎ, বাসা ভাড়া ও নিত্য প্রয়োজনীয় সকল বৃদ্ধি হলেই বাম রাজনীতির কেন্দ্রীয় কর্মসূচির ঘোষণা হয়ে যায়।

 

 

আর বিগত দিনে রাজনীতিতে অসহায় মানুষের পক্ষে আন্দোলনে ব্যাপক ভূমিকা পালন করতে পারতেন এ বাম রাজনীতির নেতৃবৃন্দ এখন তারা আর সেই কর্মী পায় না। কারণ এখন বাম রাজনীতির অনেক নেতাকর্মী অর্থলীপ্সু হয়ে বাম দল থেকে আওয়ামী লীগ বা বিএনপির দিকে অনেক নেতাকর্মী ঝাঁপিয়ে পরছে। যার কারণে বাম রাজনীতি এখন অনেকটাই কর্মী সংকটের দেখা মিলছে।

 

 

অপর দিকে সামনে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন সেটাকে উদ্দেশ্য করে বাম রাজনীতি ৩ ভাগে বিভক্ত হয়ে গেছে। এখন তাদের মধ্যে অনেক কোন্দলের দেখা মিলছে যার কারণে তাদের ঐক্যবদ্ধতা আস্তে আস্তে হারিয়ে যাচ্ছে।

 

 

এ ধরণের চিন্তাকে মাথায় নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে আসতে চাচ্ছে বামের তৃণমূল নেতৃবৃন্দ। যার কারণে এখন ১০ই ডিসেম্বরে কি হবে তা নিয়ে তাদের কাছে ভাবার কোন সময় নেই।

 

 

এ বিষয়ে ওয়ার্কাস পার্টি নারায়ণগঞ্জ জেলার সাধারণ সম্পাদক হিমাংশু সাহা যুগের চিন্তাকে জানান, ১০ই ডিসেম্বরকে নিয়ে আমরা কিছুই মনে করি না। আমার বিএনপির যে সর্বশেষ মহাসমাবেশ ১০ই ডিসেম্বরে তারা দেশে স্বৈরাচারি সরকার পতন করে বিপ্লব ঘটাবে আমরা এমনটা মনেই করি না।

 

 

একটা বিল্পব ঘটাতে হলে আগে এটার প্রস্তুতি ব্যাপকভাবে নেওয়া লাগে। আমি এ ধরণের প্রস্তুতি কাউকে নিতে দেখছি না। শুধু দেখছি নানা সময় নানা হুঙ্কার দিচ্ছে অনেক দলের নেতাকর্মীরা কিন্তু কোন পরিবর্তণ হবে করতে পারবে এমনটা আমি কাউকে দেখছি না। আমি মনে করি এখন যে হুঙ্কার হচ্ছে সেখানেই সীমাবদ্ধ থাকবে কিন্তু দেখা যাবে ১০ই ডিসেম্বর কিছুই হবে না।

 

 

এবিষয়ে বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি হাফিজুল ইসলাম যুগের চিন্তাকে জানান, ১০ই ডিসেম্বর নিয়ে আমাদের কোন ভাবনা নেই। কারণ এটাতো আমাদের কোন কর্মসূচি না। বিরোধী দল বিএনপি সমাবেশ ডেকেছে এটাতে তাদের অধিকার আছে। কিন্তু বর্তমান সরকার তাদের যেভাবে বাধা দিচ্ছে এটা বলার মতো না।

 

 

আমরা বিএনপির সাথে না থাকলে ও এ বিষয়ের প্রতি তীব্র নিন্দা জানাই। আর এ সরকার একজন স্বৈরাচারি সরকার তাদের ধারা এ ধরনের কার্যকলাপ শুধু এখন না এটা জনগণ ১৪ বছর ধরইে ভোগ করছে। আর ১০ই ডিসেম্বর আমাদের কোন কর্মসূচি নেই তাই কোন ভাবনা ও নেই।

 

 

ন্যাপ নারায়ণগঞ্জ জেলার সাধারন সম্পাদক আওলাদ হোসেন যুগের চিন্তাকে জানান, ১০ই ডিসেম্বর নিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি যে পাল্টাপাল্টি বক্তব্যে প্রধান করছেন। এ বক্তব্যে জনগণের কিছু আসে যায় না। এখন রাজনীতিতে কি হচ্ছে তা দেখার এখন সময় জনগণের আর নেই কারণ।

 

 

দেশের এখন দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি, বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি, গ্যাসের অভাব, বাস ভাড়া বৃদ্ধি, স্কুল কলেজে ছাত্র-ছাত্রীদের বেতন বৃদ্ধি, শিক্ষার উপকরন বৃদ্ধি যার কারণে মানুষ এখন অনেকটাই কষ্টে আছে। তাই এখন কি হচ্ছে কি হবে তাদের কিছু আসে যায় না।

 

 

আমরা ও এখন চাই এ সরকারকে হাটিয়ে একটা ভালো পরিস্থিতি সৃষ্টি না হলে গরিব মানুষের কোন উপকার হবে না। গণতন্ত্রের নামে ক্ষমতার পালা বদল হবে। ব্যবসায়ী, রাজনীতিবীদ তাদের হাতে ক্ষমতা যাবে মানুষের ভাগ্যের কোন  পরিবর্তণ হবে না। এখন ১০ই ডিসেম্বর কিছু না সবাই ক্ষমতা বদলে ব্যস্ত।

 

 

এ বিষয়ে বাম জোটের নারায়ণগঞ্জ জেলার আহ্বায়ক নিখিল দাস যুগের চিন্তাকে জানান, এখন ১০ই ডিসেম্বর বিএনপি যে মহা সমাবেশ ডেকেছে এটা তারা করতেই পারে কারণ তারা দেশের জনগণ বা বিরোধী নেতৃত্বে রয়েছে। এটা আটকানোর কোন অধিকার নেই বর্তমান সরকারের। কিন্তু তারা বাধা দিচ্ছে পাল্টা বক্তব্যে দিচ্ছে এটা করে আরো দেশকে আরো সমস্যার দিকে ডেলে দিচ্ছে।

 

 

এখন তারা মানুষকে দুইভাগে বিভক্ত করে রাখছে। আর সরকারি পক্ষ থেকে যে ধরণের উত্তেজনা বক্তব্যে ও অপর বিএনপির লোকদের ও যে উত্তেজনা মূলক পাল্টা বক্তব্যে তাদের মাঝে থাকা সাধারণ জনগণের মনে আতঙ্ক তৈরি হচ্ছে। তারা এখন চায় সাধারণ মানুষকে একটু ভয়ে রাখতে।

 

 

এ বিষয়ে গণসংহতির নারায়ণগঞ্জের সমন্বয়ক তরিকুল সূজন যুগের চিন্তাকে জানান, বিএনপি একটি রাজনৈতিক দল তারা আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকাতে একটি মহাসমাবেশে ডাক দিয়েছে। ফলে একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে তাদের সমাবেশ করবার অধিকার আছে। এখন আওয়ামী লীগ যদি সেটাকে একটা সহিংসতার দিকে ঠেলে দিতে চায় তার সম্পূর্ণ দায়বার কিন্তু আওয়ামী লীগের।

 

 

বাংলাদেশে এখন যে রাজনৈতিক অবস্থা আমি মনে করি আওয়ামী লীগ পুরো বাংলাদেশকে একটি সৃতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে চায়। আওয়ামী লীগের উচিত হবে তার প্রশাসনসহ সমস্ত জেলা থেকে বিএনপির এই সমাবেশকে করতে সহযোগীতা করা। তা না করে আওয়ামী লীগ তাদেরকে হুমকি দিচ্ছে।

 

 

তারা এখন বলছে আগামী ৬ তারিখ থেকে ১০ তারিখ পর্যন্ত ঢাকায় তারা একই সাথে অনেকগুলো কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। কিন্তু বিএনপির এ কর্মসূচি অনেক আগে থেকেই ঘোষিত হয়েছিল। ফলে তারা বিএনপির এই সমাবেশকে কেন্দ্র করে সারাদেশে একটি উত্তেজনা তৈরি করছে।

 

 

তিনি আরো বলেন, আমি মনে করি নারায়ণগঞ্জে একসাথে যে তিনটি ককটেল বিস্ফোরণ পুরোটাই সাজানো এবং বিএনপির নেতাকর্মীদের নামে এ ইস্যু দেখিয়ে নানা মিথ্যা মামলা দেওয়া হচ্ছে।

 

 

সোনারগাঁ, সিদ্ধিরগঞ্জ, ফতুল্লা, বন্দর, আড়াইহাজার, রূপগঞ্জ নানা জায়গা থেকে তারা তাদেরকে গ্রেফতার করছে এবং একটি হয়রানি মূলক পরিস্থিতিতে রেখেছে। এই ধরনের কর্মকান্ড আওয়ামী লীগ আগে ও করেছে এখনও করছে। আমি পরিষ্কারভাবে বলতে চাই আওয়ামী লীগ যাই করুক এবার তারা তাদের ক্ষমতাকে রক্ষা করতে পারবে না।

 

 

আমি প্রশাসনকে উদ্দেশ্য করে বলতে চাই তাদের উচিত ও কর্তব্য হচ্ছে নাগরীকের অধিকার রক্ষায় কাজ করা। তারা কোন দলের দলীয় কর্মী না। কিন্তু বর্তমানে প্রশাসন আওয়ামী লীগের দলীয় কর্মী হিসেবেই আচার আচরণ করছে।

 

 

আমি তাদের আহ্বান জানাই সকল রাজনৈতিক দলের সভা সমাবেশ করার অধিকার আছে। প্রশাসন যেন সেটাকে সহযোগীতা করে। তারা কোন দলের কর্মীর মত আচরণ যাতে না করে।

এস.এ/জেসি

এই বিভাগের আরো খবর