শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ৭ ১৪৩১

দৌলত মেম্বার হত্যাকাণ্ডে রুবেলকে গ্রেপ্তারে বাধা কোথায়  

অর্ণব হাসান

প্রকাশিত: ১ জুলাই ২০২২  


# মূল আসামীরা ধরা ছোয়ার বাইরে
# নিরাপত্তাহীনতায় নিহতের পরিবার

 

গোগনগরে প্যানেল চেয়ারম্যান রুবেল বাহিনীর হাতে নির্মমভাবে হত্যা হন ওই ইউনিয়নের সাবেক মেম্বার দৌলত সিকদার। তবে তাকে পরিকল্পিত ভাবে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ ভূক্তভোগীর। তাকে হত্যার মূল পরিকল্পনায় রুবেল মেম্বার এবং আনসারের নাম উঠে। হত্যার চার দিন অতিবাহিত হলেও মূল আসামীরা এখনো ধরা ছোয়ার বাইরে রয়েছে। নিহতের পরিবারের অভিযোগ পুলিশ আসামীদের গ্রেপ্তারে গাফলতি করছে। তবে এই হত্যাকান্ডের ঘটনায় ৩ জন দিনমজুরকে গ্রেপ্তার করেছে। অথচ এলাকাবাসী জানান তারা এই ঘটনার সাথে কেউ জরিত নন। তাদের আসামী করায় গোগনগর জুড়ে তীব্র সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে।


এদিকে এই ঘটনার পর থেকে মূল আসামীরা গা ডাকা দিয়েছে। সেই সাথে আসামীদের জামিনের জন্য শহরের প্রভাবশালী পরিবারের সাথে যোগসাজস করে স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধি দৌরঝাপ করছে বলে জানান এলাকাবাসী। তাদের গ্রেপ্তার করা না হলে কঠোর আন্দোলনে নামবে গোগনগরবাসী।  


গোগনগর এলাকাবাসী জানান, পুলিশ নিজেদের ব্যর্থতা ডাকতে নিরীহ তিন যুবক কে গ্রেপ্তার করে হত্যা মামলায় চালান করে দেয়। অথচ হত্যার প্রধান আসামী রুবেল মেম্বার, বাবু,কাশেম হৃদয় সহ কোন আসামীকে গ্রেফতার করতে পারেননি। এমনকি মামলার ৭নং আসামী তাওলাদ মেম্বার যিনি দৌলত মেম্বারের অবস্থান খুনীদের জানিয়ে ছিল সেই তাওলাদ মেম্বার এলাকায় অবস্থান করলেও তাকে গ্রেপ্তার করতে পুলিশ প্রশাসনের যেন এক ধরনের অনীহা।

 

হত্যার ৪ দিন অতিবাহিত হলেও ২২ জনের মধ্যে ১৯ কে আটক করতে পারেনি পুলিশ। যে তিন জন গ্রেপ্তার হয়েছে তারা হত্যার সাথে জড়িত নয় বলে জানান এলাকাবাসী। তারা ৩ জনই দিনমজুর। ২ জন কাজে যাবার পথে ও একজনকে ঘুম থেকে উঠিয়ে এনে আসামি করা হয়। এ নিয়ে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে নানান প্রশ্ন উঠেছে । দৌলত মেম্বার পরিবার জানায় নিরীহ কাউকে যেন হয়রানি না করা হয়। যারা প্রকৃত আসামী তাদের গ্রেপ্তারে মাধ্যমে শাস্তির দাবী জানান ভুক্তভোগী পরিবার। দৌলত মেম্বার মৃত্যু হওয়ার পর গোগনগর থমথমে আছে। অপরদিকে সাইজুদ্দিন ও সালাউদ্দীন বাহিনীর হাতে গুরুতর আহত থাইল্যান্ডে চিকিৎসারত রবিন মারা গেছে বলে এলাকার মসজিদের মাইকে প্রচারনা চালানো হয়। মঙ্গলবার (২৮ জুন) সকালে রবিনের মরদেহ গোগনগরে পৌছার কথা থাকলেও এ রির্পোট বিকালে লেখা পর্যন্ত রবিনের মরদেহ এলাকায় পৌছেনি। এতে করে গোগনগরে ধুম্যজাল সৃষ্টি হয়েছে।


সরেজমিন এলাকায় গিয়ে জানা যায়,আলী আহম্মেদের ডকইয়ার্ডের লোহা বিক্রি কে কেন্দ্র করে রবিন ও হাবিবের সাথে সাইজুদ্দিন ও সালাউদ্দিনদের সাথে মারামারির ঘটনা ঘটে। কাশেম সম্রাট ও রানা এ বিষয়ে কিছু জানেনা। সেদিন সালাউদ্দীন ও সাইজুদ্দিন গংদের হামলায় রবিন গুরুতর আহত হলে রবিনকে ঢাকার আলী আজগর হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নেয়া হয়। সেখানে অবস্থার উন্নতি না হলে রবিনকে এয়ারবাসে করে থাইল্যান্ডে নিয়ে যাওয়া হয়।


এলাকাবাসী জানান,সালাউদ্দিন, সাইজুদ্দিন বাহিনীর হামলায় রবিন ও হাবিব গুরুতর জখম হলেও রবিনের ভাই রুবেল মেম্বার এর ধারনা রবিনকে  মারধরের পিছনে কাশেম সম্রাট,রানা গংরা জড়িত এ বিষয়ে পুলিশ সুষ্ঠু তদন্ত করলে প্রকৃত ঘটনা উম্মোচন হবে। 

 

গত ২৬ জুন রাত ১০ টায় কাশেম সম্রাটের পিতা গোগনগর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক ৯ নং ওয়ার্ড মেম্বার দৌলত শিকদার সিএনজি যোগে শহরে ঔষধ কিনতে আসার পথে ৩য় শীতলক্ষ্যা সেতুর কাছে আসা মাত্র রুবেল গংরা দৌলত মেম্বার কে পিটিয়ে ও কুপিয়ে গুরুতর জখম করে রাস্তায় ফেলে রেখে যায়। দৌলত মেম্বার কে উদ্ধার করে প্রথমে মুন্সিগঞ্জ হাসপাতালে নেয়া হয়। অবস্থা আশংকাজনক হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন। ঢাকা নেওয়ার পথে দৌলত মেম্বার মারা যান। 

 

এই ঘটনায় মমতাজ বেগম বাদী হয়ে নারায়ণগঞ্জ সদর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নম্বর ৩০। দৌলত মেম্বার ও রানার লোকজন এবং এলাকাবাসী পুলিশের প্রতি তীব্র ক্ষোভ করে বলেন,সদর থানা পুলিশ যদি শুধু রুবেল মেম্বারের মামলা গ্রহন না করে উভয় পক্ষের মামলা গ্রহন করতো তাহলে দৌলত মেম্বার কে খুন হতে হতোনা। রুবেল মেম্বারের মামলা নেয়ায় কাশেম সম্রাট, রানা বাহিনীর লোকজন ছিল এলাকা ছাড়া। এ সুযোগ নেয় রুবেল।তার লোকজন এলাকায় দিব্যি ঘুরে বেড়ানোর কারনে দৌলত মেম্বার কে খুন হতে হয়। অপর দিকে রবিন মারা গেছে বলে প্রচারণা চালানো হলেও লাশ না আশায় তার মৃত্যু নিয়ে রহস্যের দানা বেঁধেছে।  যা এখনো শেষ হয় নাই। দৌলত মেম্বার হত্যা মামলা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে রুবেল মেম্বার গংরা রবিনের মৃত্যুর সংবাদ প্রচার করে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। 

 

এ বিষয়ে জেলা পুলিশ সুপারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তার নাম্বার ব্যস্ত পাওয়া যায়। নারায়ণগঞ্জ সদর অফিসার ইনচার্জ আনিচুর রহমান জানান, এই ঘটনার পর থেকে আসামীদের গ্রেপ্তারে আমাদের অভিযান চলছে। কেউ ছাড় পাবে না।এমই/জেসি
 

এই বিভাগের আরো খবর