বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১২ ১৪৩১

দ্বিখন্ডিত মহানগর আওয়ামী লীগ

যুগের চিন্তা অনলাইন

প্রকাশিত: ২৪ জুন ২০২১  

# সভাপতি- সেক্রেটারি দুরুত্ব এখন প্রকাশ্য 


# ব্যক্তিকে খুশি করার জন্য আলাদা হতে পারে : আনোয়ার


# আমার অফিসে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালের উদ্বোধন ছিলো : খোকন সাহা

 

প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতেও এক কাতারে দাঁড়ায়নি নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগ। গতকাল বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতেপৃথক স্থানে মহানগর আওয়ামী লীগের নেতারা পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন। এতে করে দলের মধ্যে বিভাজন আরো একবার প্রকাশ্যে আসলো। এরআগেও চলতি বছরে বেশ কিছু দলীয় প্রোগ্রামে এমন ঘটনা ঘটেছে।

 

জানা গেছে, গতকাল সকাল ১০টার দিকে নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে মহানগর আওয়ামী লীগের একটি অংশ ২নং রেলগেট এলাকায় অবস্থিত দলীয় কার্যালয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পন করেন। একই সময়ে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. খোকন সাহা কালিরবাজার এলাকাস্থ তার ব্যক্তিগত অফিসে নির্মিত বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন। সভাপতি আনোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে দলীয় কার্যালয়ে উপস্থিত ছিলেন, মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জি.এম আরমান, আহসান হাবিব, স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. আতিকুজ্জামান সোহেল, বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক আখতারুজ্জামান আক্তার, ধর্ম সম্পাদক গাজী আব্দুল রশিদ, সদস্য ও মনিরুজ্জামান মনির, শামীম খান, সাখাওয়াত হোসেন সুমন প্রমুখ।

 

অন্যদিকে সাধারণ সম্পাদক এড. খোকন সাহার নেতৃত্বে তার ব্যক্তিগত অফিস কার্যালয়ে উপস্থিত ছিলেন, মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাড. মাহমুদা মালা ও আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাড. ওয়াজেদ আলী খোকন প্রমূখ।   এদিকে, গতকাল বিকেলেও বন্দরে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. খোকন সাহা, সম্পাদক এড. মাহমুদা মালা ও বন্দর থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজিম উদ্দিন প্রধানসহ আওয়ামী লীগের একটি অংশ উপস্থিত ছিলেন।

 

তবে, ওই কর্মসূচিতেও দেখা যায়নি সংগঠনের সভাপতি আনোয়ার হোসেনকে। যদিও ওই অনুষ্ঠানকে খোকন সাহার ব্যক্তিগত অনুষ্ঠান বলে মন্তব্য করেছেন আনোয়ার হোসেন। অন্যদিকে, পৃথক ভাবে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণের বিষয়ে জানতে চাইলে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন দৈনিক যুগের চিন্তাকে বলেন, করোনার কারণে কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত মতে কর্মসূচি কমিয়ে আনা হয়েছে। আমরা মহানগর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সকালে ২নং রেলগেট এলাকায় দলিয় কার্যালয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়েছি। দলীয় এই কর্মসূচির বিষয়ে সাধারণ সম্পাদক খোকন সাহাকে আগে থেকেই জানানো হয়েছিলো। কিন্তু তিনি আসেননি। সকালে হঠাৎ করে জয়েন সেক্রেটারী আহসান হাবিবকে জানিয়েছেন যে, তিনি আসতে পারবে না। তার নিজস্ব অফিসে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি করেছে কিনা, সেটাও আমি জানি না।

 

তিনি বলেন, ‘খোকন সাহার সাথে আমার ব্যক্তিগত কোন্দল নেই। সে আমার অনেক জুনিয়র, আমি তাকে অনেক স্নেহ করি। আমি যখন নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি, সে তখন একটি ওয়ার্ডের কর্মী। সেখান থেকে যেকোন কারণেই হোক, সে আমার সাথে সেক্রেটারি হয়েছে। তাকে আমি অত্যন্ত ভালোবাসি। এখন সে কেন আসলো না, কেন আলাদা ভাবে কর্মসূচি করলো, এটা আমার দেখার বিষয় না।’  তিনি আরো বলেন, ‘বিভেদ পূর্ন কর্মকান্ড সংগঠনের জন্যই ক্ষতিকর। যারা বিভেদ সৃষ্টি করতে চায়, তারা সংগঠনের জন্য শুভ নয়। আমাকে সবাই শ্রদ্ধা করে। তাই আমিও চাই সবাইকে নিয়ে দল করতে। এখন কেউ যদি পছন্দ না করে, তাহলেতো তাকে জোর করে কাছে আনা যায় না। আমি এগুলো কিছু মনেও করি না। কারণ আমি দল করি দলের জন্য। ব্যক্তির জন্য দল করি না। কিন্তু কেউ কেউ হয়তো ব্যক্তিকে খুশি করার জন্য দল করতে পারে। নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে খুশি করার জন্য আলাদা হতে পারে। আমার নেতা শেখ হাসিনা। এছাড়া আমার কোন নেতা নাই। শেখ হাসিনার পথই আমার পথ। কেউ ইর্শন্বিত হয়ে আলাদা হতে চাইলে এটা তার নিজের বিষয়।’  

 

এদিকে, একসাথে কর্মসূচি পালন না করার বিষয়ে জানতে চাইলে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এড. খোকন সাহা দৈনিক যুগের চিন্তাকে বলেন, করোনা কালিন সময়ে আমাদের লোক সমাগম করা নিষেধ। এই অবস্থায় আমি আমার রাজনৈতিক কার্যালয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একটি ম্যুরাল তৈরী করেছি। আজকে এটার উদ্বোধন অনুষ্ঠান ছিলো। যেহেতু আমার রাজনৈতিক কার্যালয়ে ছবিটা, সেহেতু আমার সেখানে থাকতে হয়েছে। আর নারায়ণগঞ্জেতো অনেক কমিটি আছে, অনেক সংগঠন আছে, কেউতো তাদের কার্যালয়ে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল করে নাই, তাই আমি আমার কার্যালয়ে বঙ্গবন্ধুর একটি ম্যুরাল করেছি।

 

সভাপতি আনোয়ার হোসেনের বক্তব্যের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘আনোয়ার ভাইয়ের বক্তব্য সঠিক না। তার বুঝা উচিৎ যে, আমার দলীয় কার্যালয়ে একটি ম্যুরাল তৈরী করেছি আমি। আনোয়ার ভাই এটা ভুল বলছেন।  আর তিনি নিজেও জানেন বিষয়টা। আমার বক্তব্য হচ্ছে, আমার কার্যালয়ে বঙ্গবন্ধুর একটি ম্যুরাল তৈরী করা হয়েছে এবং ম্যুরালের উদ্বোধন অনুষ্ঠানও আজকে ছিলো। এই কারণেই আমি সময় মতো আসতে পারিনি। আমি তাদের বলেছিলাম যে, ১০টার দিকে পার্টি অফিসের কার্যক্রম চালাতে। কিন্তু ওনারা তা না মেনে আমি আসার আগেই ৯টার দিকে ফুল দিয়েছে। আমি সোয়া ১০টা দলীয় কার্যালয়ে গিয়ে দেখি, আনোয়ার  ভাই ফুল দিয়ে চলে গেছে। তারা আমার জন্য অপেক্ষাও করেনি। আমি বলেছিলাম যে আমার একটু দেরি হবে।’
 

এদিকে, বিগত সময়ে নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন এবং সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. খোকন সাহার মাঝে বিরোধ দেখা গেছে আরো স্পষ্ট। ইতিপূর্বে খোকন সাহা একটি সভাতে বলেছেন, ‘আনোয়ার হোসেন বিএনপি জামায়াতের সাথে আঁতাত করেছেন।’ নিজ দলের সভাপতির বিষয়ে ওই মন্তব্যের পর চারিদিকে আলোচনার ঝড় উঠে। খোকান সাহার এমন মন্তব্যের পাল্টা জবাবে প্রমান চেয়েছিলেন আনোয়ার হোসেন নিজেই। যার প্রতি উত্তরে একটি পত্রিকার তৎকালিন সংবাদ প্রমান স্বরুপ উপস্থাপন করেন খোকন সাহা। ইতিপূর্বে বেশ কিছু রাজনৈতিক কর্মকান্ডে আনোয়ার হোসেনকে আমন্ত্রন জানানো হয়নি বলে সূত্রের দাবী। এমনকি আনোয়ার হোসেন নিজেই বলেছিলেন যে, তাকে মাইনাস করে বিভিন্ন স্থানে দলের কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। এই অবস্থায় অভ্যান্তরিন বিভেদ ভেসে উঠেছিলো মোটা দাগে।
 
 

এই বিভাগের আরো খবর