শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪   চৈত্র ১৫ ১৪৩০

ধূমপান না ছাড়লে পড়তে পারেন করোনার থাবায়

প্রকাশিত: ৪ এপ্রিল ২০২০  

ডেস্ক রিপোর্ট : আপনি ধূমপায়ী হলে আজই ধূমপান ছেড়ে দিন। অন্যথায় প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সবচেয়ে মৃত্যুর ঝুঁকিতে রয়েছেন আপনি। গবেষকরা বলছেন, ধূমপান ফুসফুস রোগের কারণ।

 

এর কারণ হিসেবে তারা বলেছেন, ধূমপান ফুসফুস ও হৃদপিণ্ডের কার্যক্ষমতা কমিয়ে দেয়। এতেই মৃত্যুঝুঁকি বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

 

করোনাভাইরাসের প্রাথমিক উপসর্গ হলো হালকা জ্বর, সর্দি ও কাশি। তবে এটি ফুসফুসকে আক্রমণ করে বসলে ঝুঁকি রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, ফুসফুসের কার্যকারিতা ধরে রাখতে ধূমপান ছেড়ে দেয়া উচিত।
 

ধূমপায়ীদের ক্ষেত্রে কোভিড-১৯’র মারণছোবল অন্যদের তুলনায় অনেক বেশি। ধূমপায়ীদের আশেপাশে যারা থাকেন, তাদেরও প্রায় একই রকম বিপদ।

 

বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থা বার বার অনুরোধ করছেন এই পরিস্থিতিতে ধূমপান ছেড়ে দিতে৷ একই আবেদন জানিয়েছেন ইউরোপিয়ান সেন্টার ফর ডিজিজ প্রিভেনশন অ্যান্ড কন্ট্রোল৷

 

ধূমপায়ীদের জন্য বিপদ কতটা বেড়েছে, তা উঠে এসেছে বিশ্বব্যাপী কয়েকটি সমীক্ষা ও গবেষণায়। চীনে কোভিড আক্রান্ত মানুষদের মধ্যে ১০৯৯ জনকে নিয়ে সমীক্ষা করে ‘দ্য নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিন’তে সেই রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে৷

 

তাতে দেখা গিয়েছে, অধূমপায়ীদের তুলনায় প্রায় তিন গুণ সংখ্যক ধূমপায়ী জটিল অবস্থায় ক্রিটিকাল কেয়ার ইউনিটে ভর্তি হয়েছেন৷ তাদের কৃত্রিমভাবে শ্বাস-প্রশ্বাস চালাতে হয়েছে৷ তারপরও তাদের বেশির ভাগই মারা গিয়েছেন৷ ৭৮ জন জটিল কোভিড রোগীদের নিয়ে সমীক্ষা করে দেখা গেছে তাদের অধিকাংশই ধূমপায়ী৷

 

ইতালির স্বাস্থ্য গবেষণা এজেন্সি জানিয়েছে, কোভিড ১৯’তে মৃতদের মধ্যে প্রায় ৭০ শতাংশই পুরুষ এবং তাদের অধিকাংশই ধূমপায়ী বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণ হলে অধূমপায়ীদের তুলনায় ধূমপায়ীর অবস্থা জটিল হতে পারে প্রায় ১৪ গুণ।

 

বিপদ ঠেকাতে ‘টোকিও মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন’ ও ‘জাপান সোসাইটি ফর টোব্যাকো কন্ট্রোল’ এগিয়ে এসেছেন বেশ কয়েক কদম৷ টোব্যাকো কন্ট্রলের পক্ষ থেকে সমস্ত অফিসকাছাড়ি ও বহুতল আবাসনের কতৃপক্ষের কাছে ধূমপান কক্ষ বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশ পাঠানো হয়েছে৷ কারণ এসব জায়গা থেকেই একযোগে বেশ কিছু মানুষের মধ্যে সংক্রমণ ছড়াতে পারে, যাকে বলে ‘ক্লাস্টার ইনফেকশন’।

 

কেন এত কড়াকড়ি?

এর প্রধান কারণ, যিনি ধূমপান করছেন, তার শরীরে যদি ভাইরাস থাকে, তিনি যখন ধোঁয়া ছাড়বেন, সেই ধোঁয়ায় ভর করে ভাইরাসও ছড়িয়ে পড়বে আশপাশে৷ ওই অ্যারোসল বা বাতাসবাহীত লালার কণায় ভাইরাস বেঁচে থাকতে পারে ঘণ্টা তিনেক৷ কাজেই বদ্ধ ঘরে কাছাকাছি বসে ধূমপান করলে অন্যের মধ্যেও ছড়াবেভাইরাস।

 

ধূমপায়ীদের সংক্রমণ বেশি হয়

লাগাতার ধূমপানে ফুসফুসের রোগ ঠেকানোর ক্ষমতা কমে যায়৷ কারণ ফুসফুসে ছোট ছোট চুলের মতো দেখতে সিলিয়া থাকে। সাধারণ অবস্থায় এরা ধুলোবালি, জীবাণু সবকিছুকে ঝেঁটিয়ে বিদায় করে। দীর্ঘদিন ধরে প্রচুর ধূমপান করলে তারা অনেকটাই নিষ্ক্রিয় হয়ে যেতে পারে৷ তাই ধূমপায়ীদের মধ্যে যে কোনও ধরণের ফুসফুসের সংক্রমণ বেশি হয়৷

 

নিউমোনিয়া, ইনফ্লুয়েঞ্জা, টিবি ইত্যাদির প্রকোপ তাদের মধ্যে বেশি৷ এই একই কারণে করোনা সংক্রমণের আশঙ্কাও তাদের বেশি৷ নিয়মিত ধূমপানে ফুসফুসের কার্যকারিতা কমে যায় বলেও বিপদ হয়৷

 

বিপদ আছে আরও৷ বক্ষরোগ বিশেষজ্ঞ বিশ্বনাথ চক্রবর্তী জানিয়েছেন, করোনাভাইরাস যে সমস্ত রিসেপ্টারের মাধ্যমে কোষের মধ্যে ঢোকে, ধূমপান করলে সে সব রিসেপ্টার অনেক বেশি সক্রিয় হয়ে উঠতে পারে। ফলে ভাইরাস খুব দ্রুত গতিতে বংশবিস্তার করে বিপাকে ফেলে দিতে পারে।

 

বিভিন্ন গবেষণা থেকে জানা গিয়েছে, ধূমপানের কারণে যদি ‘ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ’ বা ‘সিওপিডি’ নামের রোগ হয়ে থাকে, এক বার কোভিড হলে তার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে৷

 

তা হলে উপায়?

উপায় একটাই। ধূমপান ছেড়ে দেওয়া৷ কিন্তু দীর্ঘদিন ধূমপান করলে এর উপর শারীরিক ও মানসিক নির্ভরতা জন্মায়৷ হঠাৎ ছেড়ে দিলে যে সব উইথড্রয়াল সিম্পটম হয়, তা সামলাতে পারেন না অনেকেই৷ তাই বিপদ এড়াতে কয়েকটি পদক্ষেপ নেওয়াই যেতে পারে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা৷

 

যেমন:

ধূমপান ছাড়তে চাইলে আগে ধূমপান কমান৷ আগে যদি ২০টা খেতেন, এখন তবে ১০টা খাওয়ার চেষ্টা করুন৷ সবচেয়ে ভাল হয়, যদি দিনে ৫টায় নামিয়ে আনতে পারেন৷ বা আরও নীচে৷ এবার কমাতে কমাতে দিন তিন-চারেকে একেবারে ছেড়ে দিন।


বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, ধূমপানে কোভিডের আশঙ্কা বাড়ার অন্যতম কারণ হল ‘হ্যান্ড হাইজিন’ বজায় রাখতে না পারা৷ ধূমপান করার সময়ও মানুষ কিন্তু অসংখ্য বার নাকে-মুখে হাত দেন, একটু আগেই হয়তো সেই হাতে সিগারেটের প্যাকেট খুলেছেন, দেশলাই জ্বালিয়েছেন, যা হয়তো খানিক আগেই দোকানি বা অন্য কারও হাতে ছিল৷

 

কাজেই এদের কারও হাতে জীবাণু থাকলে তা আপনার হাতে-নাকে ও মুখে লেগেছে৷ আবার মাস্কের সামনের অংশটা ধরে মাস্ক খুলে সেই হাতে সিগারেট ধরিয়েছেন৷ সেখানে জীবাণু থাকলে, তাও আপনার হাতে লেগেছে।


প্রথমত, সিগারেট ছেড়ে দিতেই হবে। যতক্ষণ না তা পারছেন, তত ক্ষণ সিগারেট, সিগারেটের প্যাকেট, দেশলাই বা লাইটার আদান-প্রদান করবেন না। অর্ধেক খেয়ে অর্ধেক আর এক জনকে দেওয়ার তো কোনও প্রশ্নই নেই৷ হুঁকোও ভাগাভাগি করে খাওয়া চলবে না৷
 

 

এই বিভাগের আরো খবর