বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১২ ১৪৩১

নগরীতে নিরাপদ বিশুদ্ধ পানির সংকট 

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ৭ এপ্রিল ২০২১  

 গতকয়েক মাস ধরে নগরীর অনেক স্থানে ওয়াসার সরবরাহ করা পানিতে দুর্গন্ধ, গোলাসহ ময়লা আর্বজনা আসছে বলে গ্রাহকেরা অভিযোগ করেছেন। এই পানি শুধু গোসল ও ধোয়া মোছার কাজে ব্যাবহার করা হচ্ছে। রান্না-বান্নার কাজে এই পানি ব্যবহারের অজগ্য বলে গভীর নলকূপের পানি দিয়ে এসব কাজ সারছেন গৃহিনীরা। 

 


তবে এর জন্য তাদের খরচও করতে হচ্ছে। গ্রাহকদের অভিযোগ মাসে মাসে বিল পরিশোধ করলেও ওয়াসার সেবা পাচ্ছেন না ত্রা। কল খুললেই ফেনাযুক্ত দুর্গন্ধময় পানি আসছে। খানপুর, নগরখানপুর, ডনচেম্বার, মিশনপাড়া, কালীরবাজার, দেওভোগ, বাবুরাইলসহ অনেক স্থানে এই সমস্যা রয়েছে। আবার এসব স্থানে পানির সরবরাহও খুব একটা ভাল না।  পাঠানটুলী, আইলপাড়া নতুন আইলপাড়া, গোপ্তা, হাজীগঞ্জ, পেপামিলসহ বিভিন্ন স্থানে পানিতে ময়লা আর্বজনাসহ দুর্গন্ধ থাকার কথা জানাগেছে। পানিতে ময়লা আর্বজনাসহ দুর্গন্ধ থাকায় স্বস্তি নেই এসব এলাকার মানুষের মধ্যে। ফলে ময়লা, দুর্গন্ধ, পানির কারনে অনেকে পানিবাহিত রোগরসহ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা করেছে। 


খানপুর এলাকার বাসিন্দা গৃহিনী জেসমিন জানান, এই পানি দিয়ে গোসল করলেও শরীরে গন্ধ থাকে। ওয়াসার পানিতে ড্রেনের পানির মতো ময়লা আসে প্রায়ই। এ পানি দিয়ে রান্না-াবান্না তো দূরের কথা গোসলও করা যায় না। ফলে পানি কিনে আনতে হয়। ওয়াসার পানিতে দুর্গন্ধ ও লালচে হওয়ার কারণে বাসার অনেকের চর্মরোগ দেখা দিয়েছে। মাঝেমধ্যেই ছেলেমেয়েরা পেটের পীড়ায় ভূগছে। বিল পরিশোধ করেও পানি কিনে পান করতে হচ্ছে। গোদনাইল ইউনিয়ন যুবলীগের সহ-সভাপতি মো. শাহ্জাহান জানান, বিশুদ্ধ পানির জন্য আশেপাশের হাজারও মানুষ চরম দূভোগে পড়েছেন। দীর্ঘ দিন ধরে এই এলাকায় গন্ধ, কর্দমাক্ত শেওলা ও ময়লা আর্বজনা পানি সরবরাহ করছে ওয়াসা। 

 


তবে গতকাল পানি কিছুটা পরিস্কার আসলেও খাওয়ার উপযোগি না। শাহ্জাহান আরো জানান, ওয়াসার এই পানি পান করে এলাকার অনেকেই অসুস্থ্য হয়ে পড়ছে। ওয়াসার পানিতে স্যুয়ারেজের গন্ধ এই এলাকায় বিশুদ্ধ পানির তীব্র  সংকট চলছে।  সরেজমিনে দেখা গেছে, পাঠানটুলী, আইলপাড়া, নতুন আইলপাড়া, এনায়েত নগর সহ এর আশপাশের এলাকায় ওয়াসা ময়লা পানি সাপ্লাইয়ে অভিযোগ উঠে। এতে করে এসব এলাকায় বিশুদ্ধ পানির জন্য চলছে হাঁহাঁকার। ফলে বিশুদ্ধ পানির অভাবে  ডায়রিয়া সহ নানা বিধ পানি বাহিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এত কিছুর পরও এসব এলাকায় বিশুদ্ধ পানির সংকট রয়েই গেছে। তাই এই দূর্ভোগ লাগবে ওয়াসা নামক সেবা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে ভোক্তভোগীরা। জানা গেছে, গরমের শুরুতে থেকেই এসব এলাকায় বিশুদ্ধ পানির সংকট শুরু হয়েছে। স্যুয়ারেজের গন্ধ সহ ময়লা, আর্বজনা পানি আসায় চরম দূর্ভোগে পড়েছেন এসব এলাকার সাধারন মানুষ। কিন্তু ওয়াসা অফিসে অভিযোগ করলেও পানির এ সংকট সমাদান করেনি তারা। স্বচ্ছ পানি না থাকার কারনে রান্না সহ সাংসারিক কাজে বেকায়দায় পরেছেন গৃহিনীরা।

 


নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের পানি সরবরাহ বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. মোস্তাফিজুর রহমান জানান, শীতলক্ষা নদীর পানির অবস্থা অত্যান্ত খারাপ। ডাইংকের ময়লা কালো বর্জ্য নদীতে ফেলে পানি খারাপ করে দিয়েছে। আমরা নদীর পানি রিফাইন করতে প্রয়োজনীয় মেটারেল ব্যবহার করেও পানি স্বচ্ছ হচ্ছে না। ডাইং গুলি ইটিপি প্লান্ট বাস্তবায়ন না করলে নদী দূষণ ঠেকানো যাবে না। তবে সামনে বর্ষা মৌসুমে নদীর পানি পরিস্কার হলে এই সমস্যা কেটে যাবে। কিছু কিছু স্থানে গ্রাহকরা ওয়াসার পাইপ থেকে সংযোগ নিয়েও এই সমস্যার সৃষ্টি করেছে। সংযোগস্থানে ভাল মেরামত না করায় লিকেজর কারনে ওয়াসার পাইপে ঢুকছে ময়লা আর্বজনা। আবার অনেক গ্রাহক তাদের টাংকি পরিস্কার না করায়ও পানি গোলা আসছে। তবে এখন পানির সরবরাহ ভাল এখন পর্যন্ত পানি সংকটের কোন অভিযোগ আমাদের কাছে আসেনি। যদি ওয়াসার লাইনে সমস্যা থাকে তা হলে ঠিক করে দেওয়া হবে। আর যদি পানি শোধনাগরে সমস্যা থেকে থাকে সেটাও দেখা  হবে। উল্লেখ্য নিরাপদ, স্বচ্ছ ও বিশুদ্ধ পানির দাবীতে গত বৎসর নারায়ণগঞ্জ-আদমজী সড়ক অবরোধ করে মানববন্ধন সহ বিক্ষোভ করেছিল হাজারো মানুষ। তার কারনও ছিল ওই সময় ওয়াসার এই পানি পান করে অনেকে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিল।  

এই বিভাগের আরো খবর