বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ৫ ১৪৩১

নতুন রূপে সাজছে ফতুল্লা স্টেডিয়াম

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশিত: ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২  

# বুয়েটের ফিজিবিলিটি টেস্ট রিপোর্টের পর আসছে প্রায় ৩০০ কোটি টাকার সংস্কার প্রকল্প : ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী

অবশেষে ক্রিকেট বিশ্বে নারায়ণগঞ্জকে পরিচয় করিয়ে দেয়া ফতুল্লার খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়াম নিয়ে আক্ষেপ ঘুঁচতে চলেছে। নকশার ত্রুটিতে গত সাতবছর ধরে জলাবদ্ধতায় পরিত্যক্ত হয়ে পড়া স্টেডিয়ামটি শীঘ্রই প্রাণ ফিরে পাচ্ছে। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের মালিকানাধীন আর্ন্তজাতিক মানের এ মাঠটির সংস্কারে বুয়েটের ফিজিবিলিটি টেস্ট রিপোর্টের পর প্রায় ৩০০ কোটি টাকার প্রকল্প আসছে বলে জানিয়েছেন ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল।

 

তিনি যুগের চিন্তাকে জানান, ‘২০১৮ সালের আগে এই মাঠের ফিজিবিলিটি স্ট্যাডির জন্য বুয়েটকে দায়িত্ব দেয়। গত মাসে ফিজিবিলিটি স্ট্যাডির রিপোর্ট হাতে এসেছে। যখন খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়াম হয়েছে তখন ওই এলাকায় কিছু ছিলনা। এখন স্টেডিয়ামের পাশে অনেক বাড়িঘর হয়ে গেছে। ড্রেনেজ সিস্টেম অপ্রতুল হওয়ায় পানি জমছে মাঠে। বুয়েটের এই রিপোর্ট আসার জন্য অপেক্ষা ছিল। বুয়েটের মতামতের ভিত্তিতে তাদের সাথে দুটো বৈঠকও হয়েছে।

 

আমরা ইদানিংই সংস্কার কাজে হাত দেবো।’ প্রতিমন্ত্রী আরো জানান, সংস্কার বলতে খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়ামের পুরো মাঠ একেবারে সংস্কার করা হবে। মাঠের উচ্চতা ৩ থেকে ৪ ফুট উঁচু করা হবে। গ্যালারি উঁচু রয়েছে। মাঠের নিচের উচ্চতা বাড়াতে গিয়ে মাটি ভরাট করা হলে স্টেডিয়ামের দর্শক সারির উচ্চতাও বৃদ্ধি করা হবে।  আউটার স্টেডিয়াম আসলে যেটি প্র্যাকটিস গ্রাউন্ড সেটিও সংস্কার করা হবে। বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের যেখানে দর্শক ধারণ ক্ষমতা সর্বসাকুল্যে ৪২ হাজার, মিরপুর স্টেডিয়ামের ৬০ হাজার সেখানে এই ফতুল্লা স্টেডিয়ামটি সর্বমোট ৮০ হাজার দর্শক ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন।   প্রতিমন্ত্রী জানান, ‘বুয়েট যে কাজের পরামর্শ দিয়েছে সেটি অনেক টাকার কাজ। ২০০ থেকে ৩০০ কোটি টাকার প্রকল্প হবে। একদম নতুন স্টেডিয়াম করতে যে ধরণের উদ্যোগ নেয়া হয়, অনেকটা সেরকমই।’



সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, দুই টেস্ট ও ১০টি ওয়ানডে ম্যাচসহ প্রিমিয়ার লীগের অসংখ্য খেলা গড়িয়েছে যে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়ামে তা গত সাত বছর অনেকটাই পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছ। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের মালিকানাধীন আর্ন্তজাতিক মানের এ মাঠটির সংস্কারে তৎপরতা কম হওয়ায় খেলোয়াড় ও সংগঠকদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছিল। অবশেষে সেই হতাশার কাটিয়ে নব সাজে সাজতে যাচ্ছে চমৎকার এই স্টেডিয়ামটি।



সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০০০ সালের ১০ সেপ্টেম্বর বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়াম উদ্বোধন করেন। ক্রীড়াসংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়ামটি ২০০৪ সালে অনুষ্ঠিত আইসিসি অনুর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপের মাধ্যমে যাত্রা শুরু করে। ওই বিশ্বকাপের উদ্দেশ্যেই সংস্কার করা হয়েছিল এই মাঠটি।  ২০০৬ সালের ২৩ মার্চ বাংলাদেশ বনাম কেনিয়ার একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচের মাধ্যমে ২৫ হাজার দর্শক ধারণক্ষমতার খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়ামটি যাত্রা শুরু করে। একই বছরের ২৮ এপ্রিল বাংলাদেশ বনাম ভারতের একটি একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচের মাধ্যমে শেষ হয় একদিনের ম্যাচের ইতিহাস।

 

২০০৬ সালের ৯-১৩ এপ্রিল বাংলাদেশ বনাম অস্ট্রেলিয়ার মধ্যকার ম্যাচের মাধ্যমে শুরু হয় স্টেডিয়ামটির টেস্টের ইতিহাস। ২০১১ ক্রিকেট বিশ্বকাপে এই মাঠে ইংল্যান্ড বনাম পাকিস্তানের মধ্যে একটি প্রস্তুতিমূলক ম্যাচ হয়েছিল। ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত এশিয়া কাপ প্রতিযোগিতার অন্যতম প্রধান ক্রিকেট মাঠ। এরপর ২০১৫ সালের ১০-১৪ জুন বাংলাদেশ বনাম ভারতের টেস্ট ক্রিকেট খেলার মাধ্যমে শেষ হয় এই স্টেডিয়ামের টেস্ট ম্যাচের ইতিহাস। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ম্যাচ কখনও মাঠে গড়ায়নি। বর্তমানে মাঠটিতে দুই-একটি ক্লাবের খেলা ও বিভিন্ন টুর্নামেন্টের খেলা অনুষ্ঠিত হলেও মাঠের চারদিকে পানির কারণে সেটাও বন্ধ। সর্বশেষ ২০১৫ সালে বাংলাদেশ ও ওয়েস্টইন্ডিজ টেস্ট ম্যাচের পর আর কোনও আর্ন্তজাতিক ম্যাচ মাঠটিতে গড়ায়নি।



সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আউটার স্টেডিয়াম থেকে শুরু করে মূল স্টেডিয়ামেও রয়েছে পানি। মাঠটি ডিএনডি প্রজেক্টের ভেতের থাকায় এবং ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড থেকে অনেক নিচু হওয়ায় সামান্য বৃষ্টিতেই তলিয়ে যায়। পাশের আউটার স্টেডিয়াম বর্তমানের হাঁটু পানির নিচে তলিয়ে আছে। কচুরিপানা আর কালো নোংরা পানিতে সৃষ্ট উৎকট দুর্গন্ধেও টেকা দায়। আউটার স্টেডিয়ামের জলাবদ্ধতার আটকে থাকা পানি চুইয়ে মূল স্টেডিয়ামের ভেতের ঢুকে পড়ায় মাঠ পানির নিচে রয়েছে। এছাড়া  ২৫ হাজার দর্শকের ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন গ্যালারিতে বসার চেয়ার, ইলেকট্রনিক স্কোরবোর্ড, ভিআইপি গ্যালারি, সাংবাদিকদের বসার স্থান (প্রেস বক্স) ক্রিকেটারদের ড্রেসিং ও ওয়েটিংরুমসহ বাথরুম সবই এখন ব্যবহারের অনুপযোগী হওয়ার পথে। হঠাৎ করে মূলরাস্তা থেকে দেখলে আর্স্তজাতিক স্টেডিয়াম না ভেবে বড় ধরনের জলাশয় ভেবে বসতে পারেন যে কেউ।

 

স্টেডিয়ামের সংস্কারের জন্য বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড, জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ যৌথভাবে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) মাধ্যমে কর্মসূচি হাতে  নেয়। অবশেষে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ ও বিসিবি যৌথভাবে এই স্টেডিয়াম সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে। এরই মধ্যে বুয়েট ড্রয়িং ডিজাইনের কাজ শেষ করেছে। এখন বিল অব কন্ট্রাক্টের কাজ চলছে। এ ব্যাপারে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ এর পরিকল্পনা ও উন্নয়ন শাখার পরিচালক মুহাম্মদ সারওয়ার জাহান যুগের চিন্তাকে জানান, ‘আগামী মার্চের মধ্যে অর্থমন্ত্রণালায় থেকে বুয়েটের প্রস্তাবনা অনুসারে অনুমোদন আসার সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি বলেন, ‘নতুন রেট দিয়ে আমরা বিল পেপার সাবমিট করব, ২০১৮ সালের পুরনো বিলে তো করা যাবে না তাহলে তো প্রজেক্ট শুরুর আগেই ফেল করবে। বুয়েট থেকে আমাদের জানিয়েছে আমাদের কি কি কাজ করতে হবে, আমরা সেই অনুযায়ীই মার্চের শিডিউলে আমরা করে ফেলব।’

এই বিভাগের আরো খবর