শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

নবীগঞ্জ ফেরিঘাটে চরম স্বেচ্ছাচারিতা

যুগের চিন্তা অনলাইন

প্রকাশিত: ২২ সেপ্টেম্বর ২০২১  

# প্রায় প্রতিদিনই ফেরির স্টাফদের সাথে যাত্রীদের তর্কবিতর্কের ঘটনা ঘটছে


# ঘাটে টানানো সময়ের তালিকা না মেনে, নিজেদের মতো করে চালাচ্ছে তারা


# এক মিনিটের জন্য মিস করে অপেক্ষা করতে হয় সোয়া এক ঘন্টা


 
নবীগঞ্জ-হাজীগঞ্জ ফেরীঘাটে ফেরি চলাচলে ইজারাদারদের চরম স্বেচ্ছাচারিতায় অতিষ্ঠ বন্দরবাসী। সকল জরুরী প্রয়োজনকে তারা বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে কোন প্রকার নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে, ফেরি ঘাটে টানানো সময়ের তালিকা না মেনে, নিজেদের মতো করে চালাচ্ছে তারা। আর এতে করে নিজেদের প্রভাব বিস্তার করার জন্য যাত্রীদের সাথে দুর্ব্যবহার করছে তারা।

 

ফলে প্রায় প্রতিদিনই ফেরির স্টাফদের সাথে যাত্রীদের তর্কবিতর্কের ঘটনা ঘটছে। আবার কোন স্টাফ যাত্রীদেরকে হুমকি দিয়ে বলছে, পছন্দ না হলে মোটর সাইকেল নৌকা দিয়ে পাড় করেন। এ ব্যাপারে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসন (নারায়ণগঞ্জ সদর ও বন্দর)’র সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানের হস্তক্ষেপ কামনা করছে বন্দর বাসী। তারা মনে করেন যেহেতু ইজারাদার শহরের এবং তারা অনেক ক্ষমতাবান, তাই তাদের বিরুদ্ধে বন্দরবাসীর কোন অনুরোধ, দাবী বা জরুরী পয়োজন অনেক তুচ্ছ হয়ে দাঁড়ায়। এজন্য একমাত্র এমপি সেলিম ওসমানের হস্তক্ষেপেই এই সমস্যার সমাধান হতে পারে বলে মনে করেন বন্দরবাসী।


 
সোমবার রাতে ফেরিঘাটে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রাত নয়টা বাইশ মিনিটে ফেরিটি হাজীগঞ্জ থেকে নবীগঞ্জের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। এ সময় অনেকেই গাড়ি ও মোটর সাইকেল নিয়ে ঘাটে আসলে অল্পের জন্য ফেরীটি মিস করে। তারপর দশটার পাঁচ মিনিট আগে পুনরায় হাজীগঞ্জ ঘাটে ভিড়ে এবং দশটা চল্লিশ মিনিটে নবীগঞ্জের উদ্দেশ্যে ফেরিটি ছেড়ে যায়। যারা অল্পের জন্য ফেরি মিস করেন, অর্থাৎ ১মিনিট কিংবা ২ মিনিটের জন্য মিস করে, তাদের প্রায় সোয়া এক ঘন্টারও বেশী সময় নিয়ে ফেরি পারাপারের জন্য অপেক্ষা করতে হয়। যখন রাত সাড়ে দশটা বাজে তখন মোটর সাইকেল, প্রাইভেট কার ও ফেরিতে থাকা অন্যান্য গাড়িগুলোকে একসাথে হর্ণ বাজিয়ে তাদের বিরক্তি প্রকাশ করতে দেখা যায়।

 

অন্যদিকে নবীগঞ্জ ঘাটে ফেরি ভেড়ানোর পর সেখানে ব্লকবার না তুলে স্টাফরা সে সময় ভাড়া উঠাতে শুরু করে। এতে করে ফেরিটি ঘাটে থাকা ভাসমান পল্টুনের সাথে ধাক্কা খেয়ে দুরে সরে আসে। যাত্রিরা হৈচৈ করলে ফেরির স্টাফরা জানায় ফেরিতে স্টাফ কম থাকায় টাকা তুলতে দেরি হচ্ছে।
 


ফেরিঘাটে এক মোটর সাইকেল আরোহী সফিকুল জানান, শহরের একটি মার্কেটে তার কাপড়ের দোকান আছে। নয়টার কিছু আগে দোকান বন্ধ করে দ্রুত বের হয়ে পড়েন নয়টা দশের ফেরিতে উঠার জন্য। কিন্তু ফেরি কোনদিন নয়টা দশে ছাড়ে, আবার কোনদিন নয়টা ত্রিশে, চল্লিশে কিংবা পঞ্চাশে ছাড়ে। তিনি জানান, কোনদিন হয়তো নয়টা পাঁচে ঘাটে পৌঁছেছেন তখন ফেরি হয়তো ছাড়ছে নয়টা ত্রিশ পঁয়ত্রিশে। আবার কোনদিন নয়টা পঁচিশ কিংবা ত্রিশে ঘাটে এসে দেখেন ফেরি ছেড়ে দিয়েছে তখন একেবারে সাড়ে দশটার ফেরিতে (যেটা দশটা চল্লিশে ছাড়ে) উঠতে হয়। সারাদিন কাজ করে নদীর পাড় এসে প্রায় সোয়া এক ঘন্টা বসে থাকতে হয়।

 

তিনি অভিযোগ করে বলেন, আমরা বন্দরবাসী, কিন্তু তারা থাকে শহরে, তাই তাদেরকে কিছু বলা যায় না। মাঝে মাঝে যদি এসব অনিয়মের কথা বলি তখন তারা বলে, পোষালে যাবেন, না পোষালে নৌকা দিয়ে যাবেন। তিনি বলেন, যেহেতু আমাদের সংসদ সদস্য শহরের এবং বন্দরবাসীর জন্য ওনার আলাদা একটা টান আছে তাই ওনি যদি বিষয়টায় একটু নজর দেন তাহলে বন্দরবাসীর জন্য কিছু একটা হয়।


 
আরেক যাত্রী ইফতেখার জানান, তিনি ফতুল্লার একটি প্রাইভেট কোম্পানীতে কাজ করেন। নয়টার সময় অফিস থেকে বের হয়ে তিনি এখানে সাধারণত নয়টা বিশ মিনিটে আসতে পারেন। তিনি জানান, ফেরি ঘাটে সময়ের একটি তালিকা টানানো আছে। সে অনুযায়ী তিনি নয়টা ত্রিশে কিংবা নয়টা পঞ্চাশে যেতে পারবেন সে আশা নিয়ে আসলেও রাস্তায় ছোটখাট যানজট থাকলে ঘাটে নয়টা পঁচিশ কিংবা ত্রিশে পৌছে দেখেন ফেরি ছেড়ে চলে গেছে। তখন সারাদিন এই খাটুনির পর রাত দশটা চল্লিশ পর্যন্ত বাইকে বসে ফেরির জন্য অপেক্ষা করতে হয়।

 

তিনি বলেন, এর মধ্যে আমি কয়েকদিনই ফেরির স্টাফদের জিজ্ঞাসা করেছি, তারা সিডিউল মানছেন না  কেন। উত্তরে তারা বলেছে এখানে কোন সিডিউল নাই। আপনারে ফেরিতে আসতে বলছে কে ? তিনি আরো জানান, এখানে তাদের উপর কথা বলার মতো বন্দরের কোন লোক নাই। তাদেরকে সত্যিকার অর্থে যদি সিডিউলে আনা সম্ভব হয়, তবে তার জন্য এমপি সেলিম ওসমানের হস্তক্ষেপের প্রয়োজন।
 


এ বিষয়ে একাধিক যানবাহন চালকের সাথে কথা বলে জানা যায়, এখানে সকাল ৮টা দশ মিনিট থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত ফেরি চলাচল করে। এখানে আগে একটি ফেরি সার্ভিস চালু থাকলেও এখন দুপুর ১২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত দুইটি ফেরি চলাচল করে। প্রথম দিকে ফেরির জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষার জটিলতায় পড়তে হতো। তারপর যখন সময়সুচী নির্ধারণ করা হয় তারপর বেশ কয়েক মাস সেই তালিকা ধরে যাতায়াত করতো। ফলে আমরা একটি নির্দিষ্ট সময়ের টার্গেট নিয়ে উপস্থিত হতে পারতাম। কিন্তু দুইটি ফেরি সার্ভিস চালু হওয়ার পর সবার ধারণা ছিল এখন সময় অনেকটাই বেঁচে যাবে। কিন্তু হিতে বিপরীত। এখন ফেরি আর টাইম টেবিল মানে না। যেকোন এক পাশের ফেরি যানবাহনে পরিপূর্ণ হতে হবে।

 

তাহলে বাধ্য হয়েই অন্যপাশের ফেরিও ছাড়ে, আর না হয় অপেক্ষার পর অপেক্ষা করতে হয়। এখানে সারাদিন চলাচলকৃত যানবাহনের মধ্যে এম্বুলেন্সসহ রিক্সা, অটোরিক্সা ও ভ্যানে করে অনেক রুগীকে নিয়েও পারাপার হতে হয়। কিন্তু তাদের ফেরি চলাচল কর্তপক্ষের মধ্যে সেবা বা মানবিকতার কোন ছিটেফোঁটা চিহ্নও খুঁজে পাওয়া যায় না। যেহেতু ফেরি সার্ভিস চালু করার পিছনে সাংসদ সেলিম ওসমানের ব্যাপক ভূমিকা আছে, বন্দরবাসীর সাংসদও তিনি এবং বন্দরের জন্য ওনার আলাদা একটা অনুভূতি কাজ করে তাই এই বিষয়টিতে তিনি হস্তক্ষেপ করলে বন্দরবাসী সহ সকল প্রকাল যানবাহন চালকদের অনেক সুবিধা হবে।


 
উল্লেখ্য, নদী পথে পারাপারে সদর ও বন্দরবাসীর সুবিধার জন্য নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সাংসদ সেলিম ওসমানের চেষ্টায় ২০১৮ সালের ১৪ জুন শীতলক্ষ্যা নদীর হাজীগঞ্জ-নবীগঞ্জ রুটে প্রথমবারের মতো ফেরি সার্ভিস চালু হয়। প্রথমে সরকারী ব্যবস্থাপনায় চলাচল করলেও গতবছরের জুলাই মাস থেকে শাহাদাৎ হোসেন ভূইয়া সাজনুর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দরপত্রের মাধ্যমে ফেরি সার্ভিসের দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

 

কয়েকমাস পূর্বে বন্দরের মুসাপুর ইউনিয়ন পরিষদের এক জনসভায় সাংসদ সেলিম ওসমান বলেছিলেন, তিনি সব সময় বন্দরবাসির পাশে আছেন। যে পর্যন্ত শীতলক্ষ্যা নদীর উপর ব্রিজ নির্মাণ করা না হবে সে পর্যন্ত হাজীগঞ্জ-নবীগঞ্জ ঘাটে তিনটি ফেরি চলাচল করবে। যাতে বন্দর বাসীর চলাচলে কোন প্রকার অসুবিধা না হয়। তাই তিনটি ফেরি চলাচল না করলেও অন্ততপক্ষে সময় মেনে যদি ফেরি চলাচল করে, তাহলে বন্দরবাসিসহ ফেরিতে চলাচল করা সকল প্রকার যানবাহনের সুবিধা হবে। তাই বন্দরবাসিসহ সকল ফেরি যাত্রিদের ভোগান্তির নিরসন ও অনেক জরুরী রোগীর প্রাণ বাঁচানোর লক্ষ্যে এ বিষয়ে সাংসদ সেলিম ওসমানের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন ভুক্তভোগীরা।
 

এই বিভাগের আরো খবর