বুধবার   ০৮ মে ২০২৪   বৈশাখ ২৫ ১৪৩১

না.গঞ্জ-৫ আসনে চ্যালেঞ্জ

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশিত: ২৩ মার্চ ২০২৩  


 # সেলিম ওসমান-আনোয়ার হোসেন-এস.এম আকরাম প্রস্তুত

নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে এবার দেখা যাবে বহুমুখী লড়াই। তবে নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগ এবং জাতীয় পার্টির দুই নেতাকে নিয়েই বর্তমানে নারায়ণগঞ্জের রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছে আলোচনা, সমালোচনা ও বিশ্লেষণ।

 

 

তারা হলেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন ও নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য একেএম সেলিম ওসমান। তারপরও এবারের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চতুর্মুখী লড়াই হবে বলেই মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকগণ।

 

 

কারণ এবার যদি আওয়ামী লীগ আলাদা প্রার্থী দেয় তাহলে নির্বাচনের মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, বিএনপি এবং নাগরিক ঐক্য থাকবে বলে তাদের অভিমত। তাই এবার সব পক্ষই যদি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে এবং ফেয়ার নির্বাচন হয় তাহলে কেউ কাউকে ছেড়ে কথা বলবে না মনে করেন তারা। তাই এবার লড়াই হবে সেয়ানে সেয়ানে। 

 

 

বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সাবেক এমপি একেএম নাসিম ওসমান (প্রয়াত) এর সময় এই আসনের শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে জায়গা করে নিয়েছিলেন জাতীয় পার্টি। সেই ধারাবাহিকতা ধরে রেখেই কাজ চালিয়ে গেছেন তার উত্তরসূরী এবং ছোট ভাই একেএম সেলিম ওসমান।

 

 

আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনেও জাতীয় পার্টির মনোনয়নপ্রত্যাশীর তালিকায় তিনি শীর্ষে রয়েছেন বলে শোনা যাচ্ছে। নির্বাচনে জাতীয় পার্টির দলীয় সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে সভা-সমাবেশ, সামাজিক ও রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করে রেখেছেন।

 

 

এক সময় বন্দরে অবস্থিত পাচটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান (আওয়ামী লীগের সালাম চেয়ারম্যানসহ) তার সকল কাজের সঙ্গী ছিলেন। বন্দর উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান এমএ রশিদসহ পাশে ছিলেন সাবেক চেয়ারম্যান আতাউর রহমান মুকুল।

 

 

তবে গত ইউপি নির্বাচনের পূর্বে গাঞ্জার নৌকা তাল গাছে উঠবে বলে মন্তব্য করে বন্দরবাসীর বিশেষ করে বন্দরের আওয়ামী লীগ কর্মী, সমর্থক ও আওয়ামী প্রেমিকদের অনেকটাই বিরাজ ভাজনের শিকার হন তিনি।

 

 

অন্যদিকে স্থানীয় পর্যায়ের নেতাকর্মী যারা এতদিন দলীয় নির্দেশে জাতীয় পার্টির হয়ে কাজ করেছেন তারাও যেকোন উপায়ে এই আসনে নৌকার প্রার্থী চাচ্ছেন।

 

 

তারা স্থানীয় পর্যায়ের জাতীয় পার্টির নেতাকর্মী এবং আওয়ামী লীগের কাউয়া মার্কা নেতাদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে জাতীয় পার্টির উপর নাখোশ। তাই এবার নৌকার প্রতীক থাকবে শুনে তারা অনেকটাই আশান্বিত হয়েছেন। 

 

 

সূত্র জানায় নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনটি শহর ও বন্দর উপজেলা এলাকা নিয়ে গঠিত হলেও আসনটি ধরে রাখার জন্য সদরের তুলনায় বন্দরের উপর নির্ভর করতে হয় বেশি। এক সময় এমপি সেলিম ওসমানের ঘনিষ্ট দুই সঙ্গী ছিলেন এমএ রশিদ এবং আতাউর রহমান মুকুল।

 

 

তবে এবার আতাউর রহমান মুকুল দলীয় নির্বাচন কিংবা নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে আছেন খুবই বেকায়দায়। তার উপর তাদের মহানগর বিএনপির কমিটি নিয়ে চলছে রাজনৈতিক ও বাকযুদ্ধ।

 

 

তাই এখন সেলিম ওসমানের পক্ষ নিয়ে কাজ করার কোন উপায় নেই মুকুলের। এরই মধ্যে হাম্মাজান গ্রুপ, ভাইজান গ্রুপ ও হোন্ডাবাহিনী নিয়ে কথা বলে কিছুটা সাড়া ফেলেছিলেন তিনি। কিন্তু এবার সেই গ্রুপ তাকে অনেকটা বেকায়দায় ফেলে দিয়েছে।

 

 

বিশেষ করে বন্দরবাসীর কাছে। বন্দরের পাঁচটি ইউনিয়ন পষিদের মধ্যে চার জন চেয়ারম্যানই জাতীয় পার্টি সমর্থিত। তবে সেসব চেয়ারম্যানরাও এখন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সমর্থন পাচ্ছে না বলে এখন রাজনৈতিকভাবে আর আগের মতো শক্তিশালী অবস্থায় নেই। 

 

 

অন্যদিকে সম্প্রতি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদ ছাড়ার পর রাজনৈতিক  মাঠে বেশ সক্রিয় হয়েছেন মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন। বর্তমানে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়ার জন্য বেশ কয়েকজন নেতার নাম শোনা গেলেও তিনি সম্প্রতি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান থাকাকালীন সময়ে শহর ও বন্দরের সাথে একটি সম্পর্ক তৈরি করার চেষ্টা করেন।

 

 

তাছাড়া তিনি নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াত আইভীর সমর্থনও খুব জোরেশোরে পাচ্ছেন বলে জানা গেছে। তিনি এই আসনে সেলিমের ওসমানের একজন শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে অভির্ভাব করছেন বলেও জানা যায়।

 

 

গত ১৮ মার্চ জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যালের সামনে অনুষ্ঠিত এক শান্তি সমাবেশে আনোয়ার হোসেন বলেন, জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগের ঘারে ভর করে অনেক আকাম-কুকাম করছে। কয়েকদিন আগে এই ফরাজিকান্দায় জাতীয় পার্টির সন্ত্রাসীরা কি কর্মকান্ডটাই না করেছে। 

 

 

তবে নারায়ণগঞ্জের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই আসনটিতে বিগত তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী জয়ী হন। কিন্তু আসনটি ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সালে মহাজোটের শরিক দল জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেওয়ায় হতাশ স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা ও সমর্থকগণ।

 

 

তাই এ আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীর হাতে নৌকা প্রতীক তুলে দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছেন। জোটগতভাবে নির্বাচন করা হলে জাতীয় পার্টিকেই এ আসনটি ছাড় দিতে হবে বলে হুশিয়ারি দিয়ে যাচ্ছেন জাতীয় পার্টি।

 

 

তাই এই আসনের মনোনয়ন নিয়ে চলছে নানামুখী গুঞ্জন। কিন্তু নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলে বিএনপিও তাদের হারানো আসনটি পুনরুদ্ধারে মরিয়া হয়ে উঠবে।

 

 

তবে ছেড়ে কথা বলবেন না নাগরিক ঐক্যের উপদেষ্টা এবং এই আসনের সাবেক এমপি এসএম আকরাম। ক্লীন ইমেজের কারণে এবং বন্দরে এখনও বেশ জনপ্রিয়াত জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক আহবায়ক এসএম আকরামের। এন.হুসেইন/জেসি

এই বিভাগের আরো খবর