শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ৬ ১৪৩১

না’গঞ্জে চালু হচ্ছে গ্যাসের প্রি-পেইড মিটার

যুগের চিন্তা অনলাইন

প্রকাশিত: ২৬ নভেম্বর ২০২১  


#২০২২ সালের মধ্যে সকল তিতাস গ্রাহকদের আনা হবে প্রিপেইড মিটারের আওতায়
#গ্যাসের অপচয় রোধেই এই পথে হাঁটছে তিতাস


তিতাস গ্যাসের অপচয় রোধে নারায়ণগঞ্জে চালু হচ্ছে আবাসিক প্রি-পেইড মিটার। ২০২২ সালের মধ্যে নারায়ণগঞ্জের সকল তিতাস গ্রাহকদের আনা হবে প্রিপেইড মিটারের আওতায়। ইতিমধ্যে পৃথক দুই ধাপে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় প্রায় সোয়া তিন লাখ গ্রাহককে প্রি-পেইড মিটারের আওতায় এনেছে তিতাস কর্তৃপক্ষ। লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ২০২২ সালের মধ্যে রাজধানীর পরই নারায়ণগঞ্জ জেলার গ্রাহকদেরও আনা হবে প্রি-পেইপ মিটারের আওতায়। জাইকা ও বাংলাদেশ সরকারের যৌথ অর্থায়নে করা এই প্রকল্পের খসড়া ইতিমধ্যেই সম্পন্ন করেছে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানী।


দৈনিক যুগের চিন্তাকে এমনটাই জানিয়েছিলেন প্রিপেইড মিটার স্থাপন প্রকল্পের মহাব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মো. ফাইজার রহমান। তিনি জানান, “জ্বালানী মন্ত্রনালয় তথা সরকারী নির্দেশনা অনুযায়ী ২০২২ সালের মধ্যে নারায়ণগঞ্জসহ সকল অঞ্চলের আবাসিক সংযোগ গুলো প্রিপেইড মিটারের আওতায় আনা হবে। এ বিষয়ে মাস্টার প্ল্যান চলছে। ইতিমধ্যে খসরা করা হয়েছে। যেহেতু ২০২২ সালের মধ্যে কাজ সম্পন্ন করতে বলা হয়েছে, সেহেতু আগামী বছর থেকেই প্রকল্পের কাজ শুরু করা হবে।”


এদিকে, চলতি বছরই নারায়ণগঞ্জে প্রিপেইড মিটার স্থাপনের কার্যক্রম শুরু করার কথা থাকলেও করোনা মহামারির কারণে কার্যক্রম অনেকটা পিছিয়েছে। তাই ২০২২ সালের মধ্যে প্রিপেইড নারায়ণগঞ্জের গ্রাহকদের মিটারের আওতায় আনা যাবে কিনা, তা নিয়ে শঙ্কাও তৈরী হয়েছে।  


প্রিপেইড মিটার নীতিমালার উদ্দেশ্য সম্পর্কে তিতাস সূত্র জানায়, আবাসিক পর্যায়ে গ্যাসের প্রি-পেইড মিটারের টেকসই সংযোগ হবে। গ্যাসের অপচয় ও সিস্টেম লস কমে আসবে। গ্যাসের প্রকৃত ব্যবহারের ভিত্তিতে বিলিং ব্যবস্থার মাধ্যমে জ্বালানি সরবরাহ সেবাকে জনবান্ধব করা হবে। এর মাধ্যমে গ্যাসের সঠিক হিসাব রাখা যাবে। আর সেবার ক্ষেত্রে মোবাইল ফোন ছাড়াও আরও কিছু মাধ্যম ব্যবহার করতে পারবে গ্রাহকরা।  


সরেজমিনে দেখা যায়, বর্তমানে গ্যাসের এক চুলার বিল ৯২৫ এবং ডাবল চুলার বিল ৯৭৫ টাকা। কোনো কোনো গ্রাহকের পরিবারে সর্বোচ্চ ২ থেকে ৩ জন সদস্য রয়েছে। আবার কোন কোন গ্রাহকের পরিবারে রয়েছে অন্তত ১০জন। উভয় গ্রাহকের পরিবারের সদস্য সংখ্যায় যেমন তারতম্য রয়েছে, তেমনি বড় ধরনের তারতম্য রয়েছে গ্যাস ব্যবহারেও। অথচ, মাস শেষে উভয় পরিবারই গ্যাসের বিল পরিশোধ করছে একই হারে।


এছাড়াও, ব্যায় যতটুকুই হোক-মাস শেষে যেহেতু নির্দিষ্ট অংকে বিল আসে, সেহেতু গ্যাস ব্যবহারে সচেতন নয় কেউই। অনেকেই অহেতুক চুলো জ্বালিয়ে রাখে। রান্নার কাজ ব্যতিত চুলো জ্বালিয়ে ভিজে কাপড়ও শুকোতে দেয় কেউ কেউ। শুধু কী তাই? দেয়াশলাইয়ের মাত্র একটি কাঠি খরচ করার ভয়ে বা অলসতায় অনেকে অহেতুক ঘণ্টারপর ঘণ্টা চুলো জ্বালিয়ে রাখছে। এতে অতিরিক্ত হারে অপচয় হচ্ছে জ্বালানী গ্যাস।  


অন্যদিকে, এমন অসংখ্য গ্রাহক রয়েছে যারা মাসের পর মাস চাহিদাতুল্য গ্যাস পাচ্ছে না। চুলোয় গ্যাস থাকলেও তা পর্যাপ্ত নয়। অথচ, মাস শেষে নির্দিষ্ট হারে বিল পরিশোধ করা তাদের জন্যেও বাধ্যতা মূলক। তাই মিটার স্থাপন করা হলে যতটুকু ব্যবহার ততটুকু বিল এই পরিক্রমায় অতিরিক্ত বিল পরিশোধ থেকে রেহায় মিলবে গ্রাহকদের।  


সচেতন মহল বলছে, প্রিপেইড মিটার স্থাপন করা হলে গ্যাস ব্যবহারে সচেতন হবে গ্রাহকরা। মিটারে বিল বেড়ে যাওয়ার ভয়ে অপ্রয়োজনীয় ভাবে গ্যাস ব্যবহার থেকে বিরত থাকবে প্রত্যেকেই। একই সাথে এই পদ্ধতিতে গ্যাস ব্যবহার অন্তত ৫০ শতাংশ সাশ্রয় হবে। একই হারে সাশ্রয় হবে গ্রাহকদের অর্থও।


তাই প্রকল্প কর্তাগণও বলছেন, সংযোগগুলো প্রিপেইড মিটারের আওতায় আনা হলে একদিকে যেমন গ্যাসের অপচয় কমবে, তেমনি বিলও সাশ্রয় হবে গ্রাহকদের। ফলে এই পদ্ধতিতে লাভবান হবেন সরকার-নাগরীক উভয়েই।


তিতাস কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, মোবাইল ফোনে টাকা রিচার্জের মতোই গ্রাহকরা মিটারে প্রয়োজনীয় গ্যাসের বিল রিচার্জ করতে পারবেন। প্রিপেইড মিটারের আওতায় আসা প্রত্যেক গ্রাহককে একটি ‘কন্ট্যাক্টলেস স্মার্ট কার্ড’ দেওয়া হবে। গ্রাহকদের জন্য সংশ্লিষ্ট এলাকার একটি নির্দিষ্ট ব্যাংকের শাখায় রিচার্জ সেন্টার বসানো হবে। তবে সার্বিক কার্যক্রম তদারকির জন্য থাকবে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ। যেখান থেকে সব ধরনের সেবা পাওয়া যাবে।


জানা গেছে, অপচয় রোধে গ্রাহকদের প্রিপেইড মিটারের আওতায় আনার লক্ষ্যে রাজধানীতে ২০১৫ সাল থেকেই কাজ শুরু করেছে তিতাস। ২০১৮ সালের মধ্যে ওই প্রকল্প বাস্তবায়নের কথা থাকলেও নানা প্রতিবন্ধকতায় তা সম্পন্ন হয়নি। ফলে দ্বিতীয় দফায় মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে আরো দু’বছর। দ্বিতীয় দফার মেয়াদ শেষের পথে কিন্তু শেষ হয়নি প্রকল্পের কাজ। তাই পাঁচ বছরেও যেখানে ঢাকায় প্রকল্প বাস্তবায়ন করা যায়নি, সেখানে নারায়ণগঞ্জে ২০২২ অর্থাৎ আগামী দু’বছরের মধ্যে কাজ সম্পন্ন করা যাবে কিনা তা নিয়ে দেখা দিয়েছে সংশয়।    

এই বিভাগের আরো খবর