শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১২ ১৪৩১

না’গঞ্জে নাম সর্বস্ব জাতীয় পার্টি

তুষার আহমেদ

প্রকাশিত: ১৭ অক্টোবর ২০২১  

# বিশেষ পরিবারের দুই নেতার কথায় জাপা কর্মীরা উঠ- বস করেন


# সাংসদ সেলিম এবং খোকার মত নেতা থাকলেও দলে কর্মগতি নেই


# স্থানীয় নির্বাচনে শতভাগ অংশগ্রহণ নেই, সিটি নির্বাচনেও অনিশ্চয়তা


# জেলা-মহানগরে সম্মেলন নেই, দীর্ঘ হচ্ছে সময় ক্ষেপনের মাত্রা


 
ক্ষমতার মসনদে না থাকলেও আওয়ামী লীগের সাথে জোটগত কারণে দুই মেয়াদেই বিরোধী দলের আসনে আছে জাতীয় পার্টি। জোটের বদান্যতায় ঢাকার পার্শ্ববর্তী অঞ্চল নারায়ণগঞ্জের পাঁচটি আসনের মধ্যে গুরুত্বপূর্ন দুটি আসন জাতীয় পার্টির দখলে। এর মধ্যে ৫ আসনে জাতীয় পার্টির বর্তমান সাংসদ রয়েছেন একেএম সেলিম ওসমান এবং ৩ আসনে রয়েছেন লিয়াকত হোসেন খোকা। তন্মধ্যে সাংসদ সেলিম ওসমান জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং লিয়াকত হোসেন খোকা প্রেসিডিয়াম সদস্যসহ অতিরিক্ত মহাসচিব (ঢাকা বিভাগ) ও জাতীয় স্বেচ্ছাসেবক পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন।

 


নারায়ণগঞ্জে জাতীয় পার্টির এই দুই হেভীওয়েট নেতা থাকা সত্বেও এ অঞ্চলেই নিষ্প্রান জাতীয় পার্টি। জেলাতো বটেই, কমিটি নেই মহানগর ও ওয়ার্ডগুলোতেও। আবার কোথাও আহবায়ক কমিটি থাকলেও তা ৮ বছরেও হয়নি পূর্নাঙ্গ ! ফলে নারায়ণগঞ্জে জাতীয় পার্টি থাকলেও কার্যত তাদের কার্যতৎপরতা খুব একটা নেই। এমনকি, স্থানীয় নির্বাচনগুলোতেও তাদের অংশগ্রহণ শতভাগ নয়। বর্তমান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের ডামাডোল চললেও এতে জাতীয় পার্টির শতভাগ অংশগ্রহণ নেই। নারায়ণগঞ্জের বিশেষ পরিবারের দুই নেতার ইশারায় তারা যেন উঠ-বস করেন।

 

এদিকে, আসন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগ যখন মাঠে উত্তাপ ছড়াচ্ছে, তখন অনেকটা ঘুমন্ত অবস্থায় আছেন জাতীয় পার্টির নেতারা। তারা আগামী সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে প্রার্থী দেবেন কিনা, তা এখনো হলফ করে বলতে পারছেন না। জেলা ও মহানগরে সম্মেলনও করতে পারছে না। তাই বিশ্লেষকরা নারায়ণগঞ্জ জাতীয় পার্টিকে কেবল নাম সর্বস্ব দল হিসেবে অভিহিত করছেন।

 

এদিকে সিটি নির্বাচনে প্রার্থী দেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য, ঢাকা বিভাগের অতিরিক্ত মহাসচিব এবং জাতীয় স্বেচ্ছাসেবক পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের সাংসদ লিয়াকত হোসেন খোকা দৈনিক যুগের চিন্তাকে বলেছিলেন, ‘যেহেতু আমি জাতীয় পার্টির ঢাকা বিভাগের অতিরিক্ত মহাসচিব, সেহেতু আগামী নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে জাতীয় পার্টি দলীয় ভাবে প্রার্থী দিবে কিনা, সেই বিষয়ে কেন্দ্রের অন্যান্য সিনিয়র নেতাদের সাথে আলোচনা করবো। আলোচনা সাপেক্ষে কেন্দ্র থেকে যেই সিদ্ধান্ত আসবে, আমরা সেই সিদ্ধান্ত মোতাবেক পরবর্তী পদক্ষেপ নেব। তবে, নাসিক নির্বাচনে জাতীয় পার্টি কোন প্রার্থী দেবে কি দেবে না, তা আপাতত  চুড়ান্ত হয়নি।’

 


জেলা জাতীয় পার্টির আহবায়ক সানাউল্লাহ সানু বলেছিলেন, ‘আমরা চাই নির্বাচনে জাতীয় পার্টি দলীয়ভাবে অংশ গ্রহন করেন। এজন্য দলীয় ভাবে সিদ্ধান্ত আসা জরুরি। কেন্দ্র থেকে এখনো কোন সিদ্ধান্ত আসেনি। কেন্দ্রে আলোচনা সাপেক্ষে যেই সিদ্ধান্ত হবে, আমরা সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কাজ করবো।’  

 


জানাগেছে, গত সিটি নির্বাচনেও জাতীয় পার্টি দলীয়ভাবে অংশ নেয়নি। আসন্ন নির্বাচনেও অংশ নেবে কিনা, তা নিয়েও রয়েছে ধোঁয়াশা। নেতারাও নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় নেই। এদিকে, দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হলেও নারায়ণগঞ্জে সম্মেলন করতে পারছে না জাতীয় পার্টি। নানা কারণ দেখিয়ে কেবল সময় ক্ষেপনের মাত্রা দীর্ঘ করছে দলটির দায়িত্বশীল নেতারা। এমন নানা কারণেই নারায়ণগঞ্জে জাতীয় পার্টিকে কেবল নাম সর্বস্ব দল বলে আখ্যায়িত করছেন বোদ্ধা মহল। সাংসদ সেলিম ওসমান, সাংসদ লিয়াকত হোসেন খোকা এবং সালাউদ্দিন খোকা মোল্লাদের মতো জাতীয় পার্টির এমন হেভীওয়েট নেতা থাকা সত্বেও নারায়ণগঞ্জে দলটির এমন হাল দৃষ্টিকটু বলে মন্তব্য করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।  

এই বিভাগের আরো খবর