
♦ নাগরিক ঐক্যের মনোনয়নে সম্ভাব্য তালিকায় আছেন এসএম আকরাম
♦ নির্বাচনে অংশগ্রহণে তৈমূরের কোন বাধা রইলো না
♦ সেলিম ওসমান যে একজন শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হবেন তাতে কোন সন্দেহ নেই
♦ ছাড় দিবে না আ.লীগ কিংবা বিএনপি
নারায়ণগঞ্জের রাজনীতির সর্বশেষ আলোচিত বিষয় তৈমূর আলম খন্দকারের তৃণমূল বিএনপিতে যোগদান। বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হলেও সমর্থনও করেছেন অনেকে। তার সহোদর বিএনপি নেতা এবং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদও বিষয়টিকে সমর্থন করতে পারেননি বলে জানা গেছে। বিশেষ করে নারায়ণগঞ্জ বিএনপির দীর্ঘ সময়ের কান্ডারি এই নেতার এই সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারেননি নারায়ণগঞ্জ বিএনপির নেতারা। অনেকটাই বিস্মিত হয়েছেন তারা।
অন্যদিকে তৈমূর বিরোধী বিএনপির নেতারাও পেয়েছেন সমালোচনার খোড়াক। তবে তৈমূর আলম খন্দকার তার এ ধরণের সিদ্ধান্তের বিষয়ে নিজস্ব যুক্তি দেখানোর চেষ্টা করে আত্মপক্ষ সমর্থনের চেষ্টা করেছেন। তবে তৈমূর আলমের নতুন দলে যোগদানের কারণে এবার জাতীয় নির্বাচনে তার অংশগ্রহণ নিশ্চিত বলে মনে করেন রাজনৈতিক বোদ্ধাগণ, সেটা হোক নারায়ণগঞ্জ-৫ কিংবা নারায়ণগঞ্জ-১।
তবে তার রাজনৈতিক বর্তমান অবস্থানের কারণে তৈমূর আলম যদি তৃণমূল বিএনপি মনোনয়ন নিয়ে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসন থেকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন তাহলে এখানকার নির্বাচনি হিসাব নিকাশ অনেকটাই জটিল হয়ে যাবে বলে মনে করেন তারা। অর্থাৎ একদিকে তৃণমূল বিএনপি তৈমূর আলম খন্দকার, জাতীয় পার্টি থেকে সেলিম ওসমান, তার উপর আওয়ামী লীগ ও বিএনপি থেকে যাকেই মনোনয়ন দেওয়া হবে তারাও প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকবেন বলে আশা করা যায়।
তার উপর এই আসন থেকে নির্বাচিত আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি এবং নাগরিক ঐক্যের বর্তমান উপদেষ্টা এসএম আকরামকেও এবারের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে থাকবেন বলে মনে করে হয়। সব কিছু মিলিয়ে বর্তমান সাংসদ সেলিম ওসমান, সাবেক সাংসদ এসএম আকরাম, এডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার এবং আওয়ামী লীগ ও বিএনপি থেকে মনোনীত প্রার্থীগণ যদি এই আসন থেকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন তাহলে কেউ কারো নাহি ছাড়ে সমানে সমান হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
অন্যান্য একাধিক প্রার্থী থাকলেও এই পাঁচজনের মধ্যে যে খুব শক্ত প্রতিযোগিতা হবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তাই নারায়ণগঞ্জের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই আসনটির এবারের নির্বাচন শুধু জেলা জুড়ে নয়, সারা বাংলাদেশের আলোচনায়ই থাকবে বলে মনে করা হয়।
বিভিন্ন তথ্য সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৬ সালের জাতীয় নির্বাচনে এই আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচিত হন এসএম আকরাম। এরপর ২০০১ এর নির্বাচনেও তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে অংশগ্রহণ করে বিএনপির এডভোকেট আবুল কালামের কাছে পরাজিত হন। ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনেও প্রথমে তাকে মনোনয়ন দেয় আওয়ামী লীগ। পরে সেই আসনটি জাতীয় পার্টির জন্য ছেড়ে দেওয়া হয়। ২০১১ সালের নাসিক নির্বাচনে মেয়র পদে আইভীকে নির্বাচিত করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন তিনি।
এরপর ২০১৪ সালের উপনির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে আওয়ামী লীগ থেকে পদত্যাগ করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আনারস প্রতীকে নির্বাচন করে পরাজিত হন তিনি এবং নাগরিক ঐক্যে যোগ দান করেন। ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকে নাগরিক ঐক্যের হয়ে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে লড়াই করে পরাজিত হন তিনি। এবারও তিনি নাগরিক ঐক্যের মনোনয়ন নিয়ে একজন শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবেই নারায়ণগঞ্জ-৫ আসন থেকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তৈমূর আলম খন্দকার এর আগে একাধিকবার জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার চেষ্টা করেন। কিন্তু সেটা আর হয়ে ওঠেনি। এরপর ২০১১ সালে একজন শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে নাসিক নির্বাচনে বিএনপি’র দলীয় সমর্থন নিয়ে মেয়র প্রার্থী হন তৈমূর। পরে ভোটের মাত্র ৭ ঘণ্টা আগে দলীয় চেয়ারপারসনের নির্দেশে তিনি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান। যদিও পরে তাকে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা করা হয়। এরই মধ্যে ২০২২ সালে অনুষ্ঠিত নাসিক নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী হন এডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার।
দল তাকে প্রথমে ইঙ্গিত দিলেও পরবর্তীতে নির্বাচনে অংশ নিতে নিষেধ করা হয়। কিন্তু নির্বাচনী মাঠ ছাড়েননি তিনি। এ ঘটনায় দল তাকে বহিষ্কার করে। এরপর দীর্ঘ দেড় বছর যাবত তিনি দলকে বুঝিয়ে দলে পুনরায় প্রবেশ করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। সবশেষে তিনি তৃণমূল নামক নতুন রাজনৈতিক দলে নাম লেখান। তাই এবার তার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করায় আর কোন বাধা থাকল না বলে তৈমূর আলম খন্দকারের সমর্থকদের ধারণা। এই বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে বিভিন্ন মিডিয়াকে তৈমূর নিজেই এই ধরণের ইঙ্গিত দিয়েছেন। তাই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তার অংশগ্রহণ অনেকটাই নিশ্চিত বলে মনে করা হয়।
অন্যদিকে ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসন থেকে নির্বাচিত জাতীয় পার্টির সাংসদ একেএম নাসিম ওসমান মারা যাওয়ার পর এই আসন থেকে জাতীয় পার্টির মনোনয়ন নিয়ে উপনির্বাচনে নির্বাচিত হন তারই ছোট ভাই একেএম সেলিম ওসমান। এরপর ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনেও জোটবদ্ধ নির্বাচনের কারণে এই আসন থেকে আওয়ামী লীগ এবং জাতীয় পার্টির যৌথ সমর্থনে নির্বাচিত হন তিনি। তবে বর্তমানে আওয়ামী লীগের আলাদা প্রার্থী দেওয়ার সম্ভাবনা থাকায় আওয়ামী লীগের সমর্থন পাচ্ছেন না তিনি।
অন্যদিকে এই আসন থেকে সেলিম ওসমানকে আওয়ামী লীগের যোগদান করে নির্বাচন করার আহ্বান জানান নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের আওয়ামী লীগ মনোনীত বর্তমান মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী। একইভাবে সেলিম ওসমান নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত শাহীদ মো. বাদল (ভিপি বাদল) খুশি হবেন বলে জানিয়েছেন। যা বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রকাশ করা হয়েছে।
একই সাথে জাতীয় পার্টির সকল সদস্যসহ নিজেকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক হিসেবে ঘোষণা করেন বর্তমান সাংসদ সেলিম ওসমান। সেই হিসেবে অনেকেই মনে করেন এবার যদি সেলিম ওসমান আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়েও নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন তাতেও অবাক হওয়ার কিছুই নেই। তবে সেলিম ওসমান আওয়ামী লীগ কিংবা জাতীয় পার্টি যে দল থেকেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুন না কেন তিনি যে একজন শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হবেন তাতে কোন সন্দেহ নেই।
তবে আওয়ামী লীগ যদি দলীয়ভাবে কোন প্রার্থী দেয় তাহলে নারায়ণগঞ্জের অন্যতম শক্তিশালী দল হিসেবে এবং সাংগঠনিক শক্তির জোরে এই আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী খুবই শক্তিশালী হবেন বলে রাজনৈতিক মহলের অভিমত। একই সাথে যদি যে কোন উপায়ে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপিও নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন এবং এই আসনটি পুনরুদ্ধারে তারা কোন শক্তিশালী প্রার্থী মনোনয়ন দিতে পারেন তাহলে দলটির দীর্ঘদিনের খরা ঘুচিয়ে এই আসনটিকে আবারও নিজেদের করে নেওয়ার একটি সুযোগ থাকবে।
তাই দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকা এই দলটির নেতা, কর্মী ও সমর্থকগণও মরিয়া হয়ে চেষ্টা করবে তাদের নেতৃত্ব ফিরে পেতে। তাই এবার এই আসন থেকে বিএনপিও যে খুব শক্ত অবস্থানে থাকার চেষ্টা করবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। অনেকেরই ধারণা এবারের নির্বাচনের প্রার্থীর তালিকায় কারা থাকছেন তা অনেক যদি এবং কিন্তুর উপর নির্ভর করছে।
অর্থাৎ যদি আওয়ামী লীগ আলাদা প্রার্থী দেয় কিংবা যদি সেলিম ওসমান নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেন এবং যদি বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন এরকম অনেক জটিল সমীকরণের উপর নির্ভর করছে এবারের প্রার্থী তালিকা। তবে এবারের জাতীয় নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থীদের তালিকায় আছেন একেএম সেলিম ওসমান, এসএম আকরাম, এডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার এবং আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দু’জন প্রার্থী।
যাদেরকে অনেকেই আবার ফাইভ স্টার বা পাঁচ তারকা হিসেবে উল্লেখ করে ফাইভ স্টারের লড়াই বলে আখ্যায়িত করতে শুরু করে দিয়েছেন। তাই শেষ পর্যন্ত এই আসনের হাল কে ধরছেন তার জন্য অপেক্ষা করতে হবে নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা পর্যন্ত। এস.এ/জেসি