শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪   চৈত্র ১৫ ১৪৩০

নারায়ণগঞ্জে লাফিয়ে বাড়ছে করোনা

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১০ এপ্রিল ২০২১  

নারায়ণগঞ্জে লাফিয়ে বাড়ছে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। প্রতিদিনই সংক্রমণের পুরোনো রেকর্ড ভাঙছে এক সময়ের করোনার হটস্পটে রূপান্তরিত হওয়া জেলাটি। একই সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃতের সংখ্যাও। এদিকে সারাদেশে লকডাউন ঘোষিত হলেও তা মানছেন না জনসাধারণ। এমন অবস্থায় সংক্রমণের মাত্র নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে চিকিৎসা সংকট দেখা দিতে পারে মনে করছেন অনেকে। বিষয়টি নিয়ে শঙ্কিত জেলা স্বাস্থ্য বিভাগও। সংক্রমণ ঠেকাতে স্বাস্থ্যবিধি মানার বিকল্প নেই বলে মন্তব্য তাদের। জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, গত চব্বিশ ঘন্টায় এই জেলায় ১৯৯ জন কোভিড আক্রান্ত হয়েছেন। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে একদিনের ব্যবধানে এই সংখ্যাটি সর্বোচ্চ। গত চব্বিশ ঘন্টায় মারা গেছেন তিনজন পুরুষ। নিহতদের প্রত্যেকের বয়স ৬৯-৭২ বছরের মধ্যে। তিনজনই কোভিড রোগীদের চিকিৎসার জন্য নির্ধারিত নারায়ণগঞ্জ ৩শ’ শয্যা হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। গত বছরের ৮ মার্চ প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার পর থেকে এই জেলায় মোট আক্রান্ত হয়েছেন ১১ হাজার ২৮০ জন। তাদের মধ্যে মারা গেছেন ১৮১ জন। সুস্থ হয়েছেন ৯ হাজার ৩১১ জন। গত কয়েক সপ্তাহে জেলায় করোনার সংক্রমণ অধিক মাত্রায় বেড়েছে। গত এক সপ্তাহে প্রাণঘাতী এই ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়েছেন ৯৯৫ জন। প্রতিদিনই সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা শতাধিক ছিল। জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইমতিয়াজ জানান, গতবছর করোনার শুরুর দিকে নারায়ণগঞ্জের শতাধিক চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্য সেবার সাথে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গ করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। তবে এবার সেই সংখ্যা কম হলেও আক্রান্ত হচ্ছেন অনেকেই। সর্বশেষ শুক্রবার কোভিড আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন জেলা সিভিল সার্জনের গাড়িচালক মোহাম্মদ সুরুজ্জামাল (৫৯)। তবে করোনা রোগীর সংখ্যা এইভাবে বাড়তে থাকলে পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয় বলে মনে করেন জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের শীর্ষ এই কর্মকর্তা। তিনি বলেন, এখনই সারাদেশের হাসপাতালগুলোর অবস্থা খুবই করুণ। রোগীদের জায়গা দেওয়া যাচ্ছে না। নারায়ণগঞ্জেও এর ব্যতিক্রম নয়। সংক্রমণ এই হারে বাড়তে থাকলে অবস্থা বেগতিক হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সিভিল সার্জন। সারাদেশে গত ৫ এপ্রিল থেকে সারাদেশে লকডাউন ঘোষণা করা হলেও গণপরিবহন, শিল্প কারখানা ও মার্কেট চালু থাকাতে তা কার্যকর হয়নি কোথাও। তবে জেলার বিভিন্ন স্থানে মাস্ক পরিধান না করা ব্যক্তিদের ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে জরিমানা করা হয়েছে। গতকাল সরেজমিনে শহর ঘুরে দেখা যায়, বিভিন্ন বিপনী বিতানে লোকজনের সমাগম। অধিকাংশের মুখে মাস্ক থাকলেও শারীরিক দূরত্বের কোনো বালাই ছিল না। বাসগুলো এক সিট ফাঁকা রেখে চলাচল করলেও অন্যান্য গণপরিবহন স্বাস্থ্যবিধির কোনো নির্দেশনাই মানছে না। এদিকে স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, লকডাউন ঘোষণা করে তা ‘সীমিত’ বলার কোনো সুযোগ নেই। কার্যকর লকডাউন না হলে সংক্রমণ রোধ করা সম্ভব নয়। এ বিষয়ে কথা বলতে জেলা প্রশাসক মো. মোস্তাইন বিল্লাহর মুঠোফোনের নম্বরে একাধিকবার চেষ্টা করেও তার সংযোগ পাওয়া যায়নি। তবে গত বছরের অভিজ্ঞতার আলোকে জেলা করোনা ফোকাল পারসন সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. জাহিদুল ইসলাম মনে করেন, সংক্রমণ রোধে স্বল্প সময়ের জন্য হলেও কার্যকর লকডাউন প্রয়োজন। স্বাস্থ্যবিভাগ থেকে সরকারকে এমন পরামর্শই দেওয়া হয়েছে। কারখানা, মার্কেট, গণপরিবহন চালু রেখে লকডাউন ঘোষণা কার্যকর হবে না বলে মন্তব্য তার। তবে আগামী ১৪ এপ্রিল থেকে সরকারি পর্যায় থেকে এ ধরনের নির্দেশনা আসবে বলে জানান ডা. জাহিদুল ইসলাম। তবে কড়াকড়ি লকডাউন দেওয়ার ক্ষেত্রে খেটে খাওয়া মানুষকে বিবেচনায় রাখতে হবেÑ মন্তব্য করে নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি রফিউর রাব্বি বলেন, ‘করোনা নিয়ে খেটে খাওয়া মানুষগুলোর অনীহা রয়েছে এবং তাদের মধ্যে এখন আর ভীতি কাজ করছে না। কেননা তারা ঘরে থেকে দেখেছে খাবার আসে না। করোনার এই পরিস্থিতি সরকার কীভাবে সামাল দেবে তা নিয়ে সরকারের মধ্যেই দ্বন্দ্ব রয়েছে। প্রণোদনা দিতে পারবে কিনা তা নিয়েও দোদুল্যমান অবস্থায় রয়েছে। সামগ্রীক দিক বিবেচনা করে সিদ্ধান্তে আসতে হবে সরকারকে।’

এই বিভাগের আরো খবর