শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ৬ ১৪৩১

নিরাপত্তা চেয়ে খোরশেদ দম্পতির জিডি

যুগের চিন্তা অনলাইন

প্রকাশিত: ৫ মে ২০২১  

 নানা কারণেই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে নারায়ণগঞ্জ। তবে, সম্প্রতি সব আলোচনাকে ছাপিয়ে সামনে এসেছে ‘করোনা বীর’ উপাধী পাওয়া কাউন্সিলর খোরশেদের ‘দ্বিতীয় বিয়ের’ ঘটনা। খোরশেদের দাবী  সাইদা আক্তার শিউলী নামে ওই নারী তাকে ফাঁদে ফেলেছেন। অন্যদিকে, সাইদা আক্তার শিউলীর দাবি- খোরশেদ তার প্রথম স্ত্রীকে গোপন রেখে তাঁকে দ্বিতীয় বিয়ে করলেও শেষ পর্যন্ত গোপন না থাকায় এখন অস্বীকার করছেন। এমনকি মিথ্যে অপবাদও দিচ্ছেন শিউলীর বিরুদ্ধে। এদিকে, সময়ের আলোচিত এই কাউন্সিলরের এমন ভিন্ন রূপ প্রকাশ পাওয়ায় কৌতুহল জেগেছে জনমনে।


জানা গেছে, করোনায় মৃতদেহের সৎকার ও দাফন-কাফনে ‘করোনা বীর’ উপাধী পায় কাউন্সিলর খোরশেদ। এমনকি ভীন্ন মতাদর্শের রাজনৈতিক সাংসদ সেলিম ওসমানও তাকে ‘বীর বাহাদুর’ খেতাবে ভূষিত করেন। দেশ-বিদেশে পরিচিতি পাওয়া সেই করোনার ‘বীর বাহাদুর’ এবার ‘দ্বিতীয় বিয়ের কান্ডে’ স্বপরিবারে হুমকির মধ্যে আছেন! তিনি জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে প্রথম স্ত্রীকে নিয়ে থানায় জিডি করেছেন দ্বিতীয় স্ত্রী দাবি করা সাইদা আক্তার শিউলির বিরুদ্ধে।


অনুসন্ধানে জানা যায়, দ্বিতীয় স্ত্রী দাবি করা প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী শিউলীর বিরুদ্ধে গত ২ মার্চ ফতুল্লা মডেল থানায় জিডি করেছেন কাউন্সিলর খোরশেদ ও তার স্ত্রী লুনা। শিউলীর দ্বারা ‘বীর বাহাদুর’ খোরশেদ ও তার স্ত্রী-সন্তান জীবন শঙ্কায় রয়েছেন বলে ওই জিডিতে উল্লেখ করেন খোরশেদ দম্পতি।
এদিকে, খোরশেদের দ্বিতীয় স্ত্রী দাবি করা সাইদা আক্তার শিউলী দৈনিক যুগের চিন্তাকে জানিয়েছেন, ‘খোরশেদ ও তার প্রথম স্ত্রীর দায়ের করা ওই জিডি সঠিক ভাবে তদন্ত করা হোক। তাহলে পুলিশের সঠিক তদন্তের মাধ্যমেই বেড়িয়ে আসবে প্রকৃত ঘটনা।’


জানা গেছে, থানায় দায়েরকৃত ওই জিডির তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয় ইন্সপেক্টর (তদন্ত) শফিকুল ইসলামকে। তিনি ইতিমধ্যেই ফতুল্লা থেকে সোনারগাঁ থানায় বদলি হয়েছেন। ফলে জিডির তদন্তের বিষয়ে জানতে চাইলে গতকাল দৈনিক যুগের চিন্তাকে ইন্সপেক্টর (তদন্ত) শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমি ফতুল্লায় নেই। বদলি হওয়ায় ওই জিডি হস্তান্তর করেছি। জিডির তদন্ত চলছে। তদন্তের জন্য কোর্টে পাঠানো হয়েছে। এখন কোর্টের আদেশের অপেক্ষায় আছে। তদন্তের পরবর্তীতে ব্যবস্থা নেয়া হবে। আর আমি জিডির কপি থানায় হস্তান্তর করে যাওয়ায় আমার পরিবর্তে যিনি তদন্ত ওসি হিসেবে দায়িত্বে এসেছেন, সম্ভবত তিনিই এটার তদন্তের দায়িত্ব পাবেন।’


তবে, ফতুল্লা মডেল থানার বর্তমান ইন্সপেক্টর (তদন্ত) তারিকুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি যুগের চিন্তাকে বলেন, ‘আমি এখানে নতুন এসেছি। সাবেক তদন্ত কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম আমাকে ওই জিডির কাগজ হস্তান্তর করেনি। তাই ওই জিডির বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই।’

 
এই বিষয়ে ফতুল্লা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রকিবুজ্জামান দৈনিক যুগের চিন্তাকে বলেন, ‘জিডির কপিটি সে (তদন্ত শফিকুল ইসলাম) আমার কাছে বুঝিয়ে দেয়নি। নিয়ম অনুযায়ী এটা আমার কাছে বুঝিয়ে দেয়ার কথা। আর তিনি যদি জিডির কপি কোর্টেই পাঠান, তাহলে থানায় বুঝিয়ে দিলেন কিভাবে? আবার থানায় বুঝিয়ে দিলে কোর্টে পাঠালো কী? এটা একটা সাধারণ ডাইরি, এখানে লুকানোরতো কিছু নেই। তাই বিষয়টা তারই ক্লিয়ার করা উচিৎ যে, তিনি এটা কি করেছেন।’  

 


জিডিতে যা লিখেছেন খোরশেদ দম্পতি : শুরুতে খোরশেদ ও তার স্ত্রী আফরুজা খন্দকার লুনা তাদের করোনাকালিন কর্মকান্ডের বিস্তারিত উপস্থাপন করেন। এরপর বলেন, আমাদের সেবামূলক কর্মকান্ডে অনেকেই সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেন। করোনাকালিন সময়ে ২০২০ সালের ৯ই জুন ব্যবসায়ী সাইদা আক্তার শিউলী আমাদের নিকট তার পরিচয় দিয়ে করোনা রোগীর দের জন্য একটি অক্সিজেন সিলিন্ডার দান করার আগ্রহ প্রকাশ করে এবং আমাদের সম্মতিতে জুন মাসের শেষের দিকে একটি অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে আসে। ২০২০ সালের জুলাই মাসের প্রথম দিকে সে আমার সাথে ফেসবুকে এ্যাড হয়ে মাঝে মাঝে ম্যাসেঞ্জারে ও ফোনে কথা বলা শুরু করে। কয়েক দিন কথা বলার পর বুঝতে পারি যে সে আমাকে ব্ল্যাক মেইল করার চেষ্টা করছে। সে এমনও বলে, তার মানসিক শান্তির জন্য আমি যেন মিথ্যা হলেও তার সাথে যেন প্রেমের মত করে কথা চালিয়ে যাই এবং সে আরো কিছু দিন পর আমাকে বিয়ে করার কথা শুরু করে। এরপর থেকে সে আমার বিভিন্ন ভাবে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা শুরু করে। সারাক্ষন ফোনে কথা বলার জন্য বিরক্ত করতে থাকে। তার মতিগতি ভালো না বুঝতে পেরে আমি তাকে এড়িয়ে চলার চেষ্টা শুরু করি। এ সময় থেকে সে বিভিন্ন ক্ষমতাবান মানুষের কথা বলে ব্ল্যাকমেইলিং শুরু করে ও হুমকি দিতে থাকে তার সাথে কথা বলার জন্য। সে তার গাড়িতে পুলিশ স্টিকার ব্যবহার করে। তার কথা বার্তা প্রসঙ্গে বুঝতে পারি যে, সে একজন মানসিক রোগী। সে আমাকে প্রলুব্ধ করার চেষ্টা করে এই বলে যে, তাকে বিয়ে করে আমার সংসার করতে হবে না। শুধু টেলিফোনে কথা চালিয়ে গেলেই হবে। তার মুখ থেকেই জানতে পারি যে, পূর্বে তার দুটি বিবাহ হয়েছে, তার বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়–য়া সন্তান রয়েছে। এক পর্যায়ে সে তার বাড়ীর রাস্তার কাজ হচ্ছে জানিয়ে তার গাড়ী আমার বাসার উঠানে রাখতে অনুরোধ করলে আমি উপকার করার মানসে তাকে গাড়ী রাখার অনুমতি দেই এবং অক্টোবর, নভেম্বর, ডিসেম্বর-২০২০ পর্যন্ত আমাদের বাড়ীতে গাড়ি রাখে।

 

এক পর্যায়ে গত ২০২১ সালের ২১ জানুয়ারি সে আমাকে বিয়ে করার জন্য বিয়ের কাজীসহ আমার বাড়ীর বাইরে গাড়ী নিয়ে অপেক্ষা করতে থাকে। এ অবস্থায় আমি আমার স্ত্রীকে ঘটনা জানাই। আমার স্ত্রী তাকে বুঝিয়ে বলে, এসব করা আমাদের পক্ষে সম্ভব না। এরপর দিন থেকেই সে আমার ও আমার স্ত্রীকে ফোন করে প্রতিনিয়ত মেরে ফেলার হুমকি দেয় শুরু করে। আমার সন্তানদের এতিম করা ও সামাজিক ভাবে হেয় প্রতিপন্ন করার হুমবি দেয়। উত্ত মহিলা ভুয়া নামে একটি আইডি বানিয়ে আমার বিরুদ্ধে তাকে বিয়ে করেছি মর্মে ফেসবুকে অপপ্রচার শুরু করে। গত ১৮/০২/২০২১ তারিখে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সামনে রাস্তায় অনুষ্ঠিত সভায় আমাকে হেয় করার চেষ্টা করে। গত ২১/০২/২০২১ তারিখ সকালে আমার কাজের বুয়া অফিসে ঝাড়– দেয়ার সময় সে একা অফিসে ঢুকে অফিসে কিছু রাখার চেষ্টা করে। আমার কাজের বুয়া তখন তাকে অফিস থেকে বের করে দেয়।

 

এছাড়াও আমার এলাকার আত্মীয়দের ফোন করে কখনো তার ছোট বোন কখনো খালাতো বোন আবার কখনো তার বান্ধবীকে বিয়ে করেছি বলে অপপ্রচার করে। গত ২৭/০২/২০২১ তারিখ সন্ধ্যায় ও রাতে দুই দফা দুইজন মহিলা ও পুরুষ নিয়ে আমার বাড়িতে প্রবেশের চেষ্টা করে। ব্যর্থ হয়ে এলাকায় অপপ্রচার করাসহ আমার বোনের বাড়িতে গিয়ে বিরক্ত করে। আমার ও আমাদের সন্তানদের জান মালের ক্ষয়ক্ষতি এবং আমার অফিস, গাড়ী ও বাসায় বিভিন্ন অবৈধ কিছু রেখে আমাদের আইনগত ও সামাজিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ ও হেয় করার আশংকা করছি। তার দেয়া হুমকি, ফেসবুকে অপপ্রচারসহ সকল প্রকার প্রমাণ আমার কাছে আছে। গত ১/৩/২০২১ তারিখ রাত ৯টায় বাসায় প্রবেশ করে আবার বের হয়ে যায়। রাত ৩টায় পূনরায় কালো হাইস ও সাদা প্রাডো গাড়ি নিয়ে বাড়ীর গেটে ধাক্কা ধাক্কি করে। তার অত্যাচারে বিরক্ত হয়ে আমি তার ছেলেকে জানাতে শুরু করি। ফল পাইনি, ২০২০ সালের নভেম্বর পর্যন্ত তার ভগ্নিপতিকে জানিয়ে কোন ফল পাইনি। উক্ত মহিলা আমার নামে কিছু ভূয়া স্ক্রীন শট তৈরী করে চরিত্র হরণের হুমকি দিচ্ছে। এমনকি আমার অফিসের পিওন ও আমার ড্রাইভারকে টাকার লোভ দেখিয়ে আমার বিরুদ্ধে কাজে লাগানোর চেষ্টা করে। আমার স্টাফরা রাজি না হওয়ায় তাদেরকেও হুমকি ধামকি দিচ্ছে। অতএব, আমাকে ও আমার পরিবারকে সাইদা আক্তার শিউলীর নানাবিধ নির্যাতন থেকে রক্ষার জন্য সাধারণ ডায়েরীসহ আমাদের পরিবারের জীবনের নিরাপত্তার প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য অনুরোধ করা হইল।


এদিকে, খোরশেদ দম্পতির এমন দাবির প্রেক্ষিতে সাইদা আক্তার শিউলী জানিয়েছেন, খোরশেদ ও তার প্রথম স্ত্রী যা অভিযোগ এনেছে জিডির তদন্ত কর্মকর্তা সেই অভিযোগের ভিত্তিতেই তদন্ত কার্যক্রম চালিয়ে গেলে যেমন প্রকৃত সত্য বেড়িয়ে আসবে, তেমনই তিনিও সকল তথ্য প্রমাণ উপস্থাপন করতে প্রস্তুত রয়েছেন।  


প্রসঙ্গ, সায়েদা শিউলি নামের ওই নারীর ভাষ্য অনুযায়ী, গত ২ আগস্ট কাঁচপুরে শিউলির মালিকানাধীন এসএস সিএনজি ফিলিং স্টেশনে সাথে কাজী নিয়ে গিয়ে তাকে বিয়ে করেন খোরশেদ।
 

এই বিভাগের আরো খবর