নির্বাচনী ব্যবস্থা নিয়ে ভিপি বাদলের ক্ষোভ

যুগের চিন্তা রিপোর্ট
প্রকাশ: ২৮ নভেম্বর ২০২৩, ০৮:২৯ পিএম

নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত শহীদ বাদল নির্বাচনী ব্যবস্থা নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। একই ব্যক্তি টানা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়া এবং স্থানীয় নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পদ্ধতির সমালোচনা করে এর পরিবর্তন দাবি করেছেন তিনি। নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী এই নেতার এমন বক্তব্য ইতিমধ্যে দলের অভ্যন্তরে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনা সৃষ্টি হয়েছে।
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া বক্তব্যে আবু হাসনাত শহীদ বাদল বলেন, ‘বাংলাদেশে স্বাধীনতা পরবর্তী ৫২ বছর পার হয়ে গেছে, ক্যান ইউ এক্সপ্লেইন ইট নির্বাচনে কোনো নীতিমালা আছে? একজন লোক পাঁচবার, দশবার এমপি হয়। এটা কেন, আর কোনো নেতা নেই? আর কোনো ভালো নেতা তৈরি হয় না? আমি তীব্র বিরোধিতা করি! এটা আমার ব্যক্তিগত মতামত।’
তিনি আরও বলেন, ‘একজন পার্লামেন্ট মেম্বার দুই বারের বেশি নয়, এটুকুই এনাফ। এরপরেও আশাবাদী হলে টানা দুইবারের পর দুইবার সুযোগ বন্ধ থাকবে। পঞ্চম সময়ে এসে আবার নির্বাচন করুক। এছাড়া স্থানীয় চেয়ারম্যান নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে চেয়ারম্যানদের। এই মনোনয়ন দেওয়ার কারণে দলের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হয়।
আমাদের দলকে দুর্বল করে দিচ্ছে, আপনারা এটা জরিপ করে দেখবেন। আর দুইবারের কথা যে বললাম, সেটা দলীয় প্রধানকে বাদ রেখে শুধু এমপিদের জন্য। আগামী প্রজন্মের জন্য এটা বড় দরকার। তাহলে দেশে বিশৃঙ্খলা কম হবে এবং ভোটারদের মুখে হাসি ফুটবে।’
তবে দলীয় প্রধানের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত জানিয়ে বলেন, ‘আমি এখন ৬৩ বছরে পা রেখেছি। নির্বাচনে মনোনয়ন কী হবে তা আল্লাহ জানেন। আমি আমার কিশোর-যৌবন বয়সে মানুষের খেদমতের জন্য একটি আদর্শের পেছনে দৌঁড়ে মানুষের জন্য কাজ করে গেছি। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের মধ্য দিয়ে মানুষের মুখে হাসি ফুটিয়ে তোলার জন্য। এই সব বক্তব্য আমার ব্যক্তিগত। কিন্তু আমার নেত্রীর সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত।’
শাহিন নামে এক আওয়ামী লীগ কর্মী ছড়িয়ে পড়ে সেই ভিডিওতে মন্তব্য করেছেন, ‘জননেত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছেন উনি। শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তে আপনি জেলার সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন, এর চেয়ে বেশি আপনি কি চান? শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানান। এই বক্তব্যের জন্য আমি তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’
তবে এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জিএম আরাফাত বলেন, ‘বাদল ভাই যেটা বলেছেন, সেটা একদম অযৌক্তিক না। তার ব্যক্তিগত মত হলেও বিষয়টি অনেক ক্ষেত্রে বাস্তব। একজন এমপি একাধিকবার সুযোগ পায়, আর বাকি ত্যাগী নেতারা সুযোগ বঞ্চিত হয়। এটা পরিবর্তন হলে সবার জন্যই ভালো হবে।’
এদিকে এমন বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে আবু হাসনাত শহীদ বাদল বলেন, ‘আমার বক্তব্যগুলো সম্পূর্ণই ব্যক্তিগত। তারপরেও আমি বলেছি, নেত্রীর সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। মূল বিষয় হচ্ছে-একটি পুরস্কার পেলে কর্মীরা উৎসাহ পায়। আমি ৪০-৪৫ বছর রাজনীতি করেছি, আমার অবদানের মূল্যায়ন কই? এটা তো আমার একার কথা না, আওয়ামী লীগের হাজারো নেতা-কর্মীর প্রশ্ন। আমাদের এত মানুষের কি যোগ্যতা নেই? যারা বারবার এমপি হচ্ছে তারাই শুধু যোগ্য? সেই কারণেই আমি বলেছি, এমপি পর্যায়ে ২ বারের বেশি সুযোগ না দিতে।’
স্থানীয় নির্বাচনের বিষয়ে বাদল বলেন, ‘স্থানীয় নির্বাচনে সবারই আকাঙ্ক্ষা থাকে। সেটাও যদি দল নির্ধারণ করে দেয়, চেয়ারম্যান হওয়ার অধিকারও সরিয়ে নেয়, তাহলে সেটা দুঃখজনক। দেখা যাচ্ছে, যার টাকা আছে সেই সবকিছু পাচ্ছে। গরিবের জন্য রাজনীতিতে সাফল্য হাস্যকর বিষয় হয়ে দাঁড়াচ্ছে। সেই কারণেই আমি এই কথাগুলো বলেছি।’
স্বতন্ত্র প্রার্থী হবেন কি না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এমন কোনো প্রস্তুতি আমার নেই। তাছাড়া জেলার সম্পাদক হিসেবে এমন অবস্থানে চলে যাওয়াটা কঠিন। প্রার্থী হিসেবে দাঁড়িয়ে যাওয়াটা বোধ হয় সম্ভব হবে না।’ এস.এ/জেসি