শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ৬ ১৪৩১

নিশ্চুপ দানবীর সেলিম ওসমান

যুগের চিন্তা অনলাইন

প্রকাশিত: ৯ মে ২০২১  

দানবীর খেতাবে ভূষিত নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সাংসদ একেএম সেলিম ওসমান। দুঃসময়ে মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে কেবল নারায়ণগঞ্জেই নয়, সারা ফেলেছিলেন গোটা দেশে। বিশেষ করে গত বছর সারা দেশের ন্যায় নারায়ণগঞ্জের বাসিন্দারাও যখন করোনার কারণে কর্মহীন হয়ে অর্থ ও খাদ্য সংকটে পড়েছিলেন এবং নিম্ন আয়ের মানুষেরা যখন ঈদের আনন্দ নিয়ে শঙ্কায় ছিলেন, তখন সাহায্যের দু’হাত বাড়িয়ে দিয়ে দানবীর খেতাবে ভূষিত হয়েছিলেন সাংসদ সেলিম ওসমান।

 

তবে, এবার করোনার ঢিলেঢালা লকডাউন চলায় এবং গত বারের মত করুণ পরিস্থিতি না হওয়ায় সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়াতে দেখা যায়নি সাংসদ সেলিম ওসমানকে। ঈদকে সামনে রেখে নিম্ন আয়ের বৃহৎ একটি অংশ সেলিম ওসমানের সহায়তার দিকে তাকিয়ে আছেন। কিন্তু ঈদুল ফিতর দরজায় কড়া নাড়তে শুরু করলেও এখনো ঈদ কেন্দ্রীক সহযোগিতা করতে দেখা যাচ্ছে না সাংসদ সেলিম ওসমানকে। বিপরিতে বেশ কিছু রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতারা নিম্ন আয়ের মানুষ ও হতদরিদ্রদের ঈদ সামগ্রী বিতরণ করে যাচ্ছেন।


দানবীর সাংসদ সেলিম ওসমান এখনো কেন সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন না, তা জানতে চাইলে গতকাল দৈনিক যুগের চিন্তাকে তিনি বলেন, ‘করোনার বিষয়টা এখনো ওই পরিস্থিতে চলে যায়নি যে, মানুষকে সহায়তা করতে হবে। মানুষ ৩০ টাকার তরমুজ সাড়ে ৩শ টাকা দিয়ে কিনে নেয়। যেই লেভেলটায় সহায়তা করতে হয়, সেটা এখনো হয়নি। একটা রিকশা ওয়ালা যদি আগে প্রতিদিন ৫০০ টাকা কামাতো, তার প্রতিদিনের ইনকাম এখন আরো বেশি। আর আমার চোখে দেখা যেটা সেটা হচ্ছে যে, মানুষ যদি চাইলেই পেয়ে যায়, তাহলে সে কাজ করবে না। আমি এমন অসহায় এখন দেখি নাই যিনি না খেয়ে আছেন। আমাদের সরকার এমন পরিস্থিতি রাখেন নাই।

 

তবে, আমার মনে একটা ভুল হচ্ছে, যেমন এই লকডাউনটা মুখে বলা হচ্ছে, কিন্তু কড়াকাড়ি করা হচ্ছে না। এতে করে একজন সাধারণ মানুষের যাতায়াতে যেখানে ১০টাকা খরচ হতো, সেখানে এখন একশ টাকা খরচ হচ্ছে। যাতায়াত ব্যবস্থার কারণে এই ভোগান্তি হচ্ছে। এটাই এখন বিদ্যমান। তবে আর্থিক দিক থেকে আমি কোন গ্যাপ দেখছি না।’


তিনি বলেন, ‘বহু দেশে শীপম্যান্ট হচ্ছে না। প্রতিটি ব্যবসায়ীর খুব খারাপ অবস্থা। এটা শুধু বাংলাদেশেই নয়, সারা বিশ্বে একই অবস্থা বিরাজ করছে।’
সূত্র জানায়, গত বছর করোনার প্রেক্ষাপটে সাংসদ সেলিম ওসমান নারায়ণগঞ্জে ২০ হাজার ৬শ’ দুস্থ পরিবারকে রমজানে খাদ্যসামগ্রী কিনতে ব্যক্তিগত তহবিল থেকে ২ কোটি ২৮ লাখ টাকা বিতরণ করেছেন। মোবাইল ব্যাংকিং বিকাশ, রকেট বা নগদ অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে জিজিটাল পদ্ধতিতে ওই নগদ অর্থ সহায়তা দেয়া হয়। এর বাইরেও ঈদকে কেন্দ্র করে এবং করোনার নানা সময়ে আরো কোটি কোটি টাকা ব্যায়ের মাধ্যমে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন সেলিম ওসমান।


জানা গেছে, সিটি করপোরেশনের ১৭টি ওয়ার্ডের সব কাউন্সিলর এবং বন্দর উপজেলা চেয়ারম্যানসহ সাতটি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ও ইউপি মেম্বারদের মাধ্যমে তাদের নিজ নিজ এলাকার সুবিধা বঞ্চিত দুস্থ মানুষদের তালিকা, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, মোবাইল ও বিকাশ নম্বর সংগ্রহ করা হয়েছিলো। তালিকা অনুযায়ী টাকাও দেওয়া হয়। প্রতিটি ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডে ২০ জন করে মোট ৪৮০ জন যুবককে রমজান মাসের জন্য ৪ হাজার ৫শ টাকা করে সম্মানি দেওয়া হয়েছিলো।


তাছাড়া, কাউন্সিলর খোরশেদকে ১০ লাখ টাকা এবং খানপুর ৩শ’ শয্যা হাসপাতালে করোনা রোগীদের চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদেরও অনুদান দিয়েছিলেন সেলিম ওসমান। এছাড়াও ৬০০ স্বেচ্ছাসেবক যারা ত্রাণ ও সেবায় নিয়োজিত তাদেরও অর্থ সহায়তা প্রদান ও করোনা আক্রান্তদের আনা নেওয়ার কাজে ছয়টি অ্যাম্বুলেন্স দেওয়া হয়েছিলো সেলিম ওসমানের পক্ষ থেকে। 


শুধু কী তাই? সাতটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এবং কাউন্সিলদের মাধ্যমে এলাকার নিম্ন মধ্যবিত্ত প্রায় ১৩ হাজার মানুষের মধ্যে ব্যক্তিগত তহবিল থেকে ৫৫ লাখ ৯০ হাজার টাকা ব্যয়ে ১০ কেজি করে ১ লাখ ৩০ হাজার কেজি চালও বিতরণ করেছিলেন তিনি। তবে, সেলিম ওসমানের দৃষ্টিতে গতবারের তুলনায় এবার সেই বিভিষিকাময় প্রেক্ষাপট তৈরী না হওয়ায় এখনো তিনি সেভাবে সহায়তা করছেন না। তাছাড়া, ব্যবসার লাগাতার মন্দা পরিস্থিতি চলমান থাকায় অন্যান্য ব্যবসায়ীরাও এবার রয়েছেন নীরব।
 

এই বিভাগের আরো খবর