শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ৭ ১৪৩১

নিষিদ্ধ সিএনজি থেকে মাসোহারা বাণিজ্য

সিদ্ধিরগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২২  


দুর্ঘটনা এড়াতে সরকার মহাসড়কে সিএনজি বন্ধ করলেও এর কোন তোয়াক্কাই করছে না সিএনজি চালকরা। আর এই নিষিদ্ধ সিএনজি থেকে টিআই মেহেদী হাসান মাসে মোটা অংকের মাসোহারা বানিজ্য করছে এমন অভিযোগ উঠেছে। মাসে মাসোহারা দিলে দাপটের সাথে মহাসড়কে চলাচল করে সিএনজি।

 

 

 

সাইনবোর্ড ট্রাফিক পুলিশ বক্সের দায়িত্বে থাকা টিআই মেহেদী হাসানকে ম্যানেজ করে চাঁদাবাজরা ঢাকা-চট্রগ্রাম-সিলেট মহাসড়কে বীরদর্পে নিষিদ্ধ থ্রি-হুইলার চালিয়ে থাকে। আর এই সুযোগে সিএনজি চাঁদাবাজরা সিএনজি চালক বা মালিকের কাছ থেকে প্রতিটি সিএনজি গাড়ী থেকে মাসে চাঁদা নেয় ১৫০০/২০০০ টাকা করে।

 

 

 

মাসে মাসোহারা দিলে অবৈধ সিএনজি বৈধ হয়ে মহাসড়কে হরহামেশা চলাচল করতে দেখা যায়।  মহাসড়কে রোড পারমিট না থাকা এই সব নিষিদ্ধ থ্রি-হুইলারগুলো টিআই মেহেদী ও তার অনুসারী চাঁদাবাজদের মাসে মাসোহারা দিলে মহাসড়কে বৈধ পারমিট হয়ে যায়।

 

 


অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, মাসোহারাকৃত সিএনজির পেমেন্ট দিতে বিলম্ব হলে টিআই মেহেদীর রোষানলে পড়তে হয় চালক-মালিকদের। শিকার হতে হয় মামলা, ডাম্পিং এবং রেকারিংয়ের। সাইনবোর্ড দায়িত্বে থাকা টিআই মেহেদীর অনুসারী চাঁদাবাজরা হলো, শেখ ফরিদ, তাছলিমা, মিজান, সোহেল ও হোসেন। এরা টিআই মেহেদীকে মাসে মোটা অংকের মাসোহারা দিয়ে থাকে।

 

 


মহাসড়কে নিষিদ্ধ থাকার পরও কিভাবে চলাচল করে সোহাগ নামে এক সিএনজি চালকের কাছে জানতে চাইলে সে জানান, ‘আমাদের কাছ থেকে মাসে গাড়ী প্রতি ১৫০০ টাকা লাইনম্যানদের দিয়ে থাকি। তারা নাকি সাইনবোর্ড বক্সের টিআই মেহেদীকে দেয়।’

 

 


শেখ ফরিদ নামে সিএনজি চালক জানান, ‘মাসে সিএনজি গাড়ি প্রতি ১৫০০ টাকা করে দিতে হবে। সাইনবোর্ড থেকে মেঘনা ঘাট এবং গাউছিয়া পর্যন্ত চলাচল করতে পারবে। সবাইর লাইন বন্ধ থাকলেও আমার সিএনজি লাইন বন্ধ থাকে না। এ কারণ, আমি হলাম টিআই মেহেদী স্যারের একান্ত কাছের লোক। আর টিআই মেহেদী স্যার আছে বলে আমি মহাসড়কে সিএনজি চালাতে পারি।’

 

 

জানা যায়, লাইনম্যান শেখ ফরিদ ২০০/৩০০ সিএনজি গাড়ি থেকে মাসে মাসোহারা নিয়ে থাকে। এই গাড়ী থেকে যে টাকা মাসে চাঁদা উঠে অর্ধেকের বেশি টাকা টিঅই মেহেদীর পকেটে যায়।

 

 

 

মহিলা চাঁদাবাজ খ্যাত তাছলিমা মহাসড়কে নিষিদ্ধ থ্রি-হুইলা বিষয়ে জানান, ‘আমি টিআইকে টাকা দিয়ে সাইনবোর্ড থেকে মেঘনা ঘাট পর্যন্ত সিএনজি চালিয়ে থাকি। আমার কোন সিএনজি গাড়ি যদি কোন টিআই, সার্জেন্ট ধরে তখন চালকারা সাইনবোর্ডের বক্সের টিআই মেহদেী স্যারের নাম বললে গাড়ী ছেড়ে দেয়। তাই আমার সিএনজি চালকরা মহাসড়কে নির্দ্ধিধায় গাড়ী চালাতে পারে। আর মেহেদী স্যার কে মাসে মোটা অংকের টাকা পেমেন্ট দিয়ে থাকি।’

 

 


লাইনম্যান তাছলিমার ১৫০/২০০ নিষিদ্ধ সিএনজি আছে যা মহাসড়কে চলাচল করছে বলে জানা গেছে।  মহাসড়কে নিষিদ্ধ সিএনজি চালানো বিষয়ে আরেক লাইনম্যান মিজানের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, ‘সাইনবোর্ডের টিআই মেহেদীকে আমি মাসে একটা মাসোহারা দিই সিএনজি গাড়ির জন্য। তাকে মাসোহারা দিলে মহাসড়কের বিভিন্ন জায়গায় সিএনজি চালানো যায়। সবাই মাসোহারা দিয়ে মহাসড়কে সিএনজি চালিয়ে থাকে। এর জন্য আমিও টাকা দিয়ে থাকি।’

 

 


আরেক লাইনম্যান সোহেল বলেন, ‘আরে ভাই মাসে মোটা অংকের টাকা দিয়া আমার এই সিএনজি গাড়ীর লাইন চালিয়ে থাকি। আমি মেহেদী স্যারকে মাসে মাসোহারা দেই বলে আমার কোন গাড়ী সাইনবোর্ড মোড়ে মামলা হয় না বা ডাম্পিং হয় না। আর এভাবে আমি সিএনজির লাইন চালাচ্ছি।’

 

 


সাইনবোর্ড ট্রাফিক পুলিশ বক্সের টিআই মেহেদী হাসান মাসোহারা গ্রহনের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, ‘এটি প্রমান করতে পারলে আমার বিরুদ্ধে যে ব্যবস্থাা নেয়া হবে আমি তা মাথা পেতে নেব। পুলিশের নাম করে কারা টাকা তুলছে আমার জানা নেই।’

 


এ ব্যাপারে জানতে কাঁচপুর হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নবীর হোসেনকে একাধিক বার ফোন করলেও তাকে পাওয়া যায়নি। এন.এইচ/জেসি

এই বিভাগের আরো খবর