বৃহস্পতিবার   ২৮ মার্চ ২০২৪   চৈত্র ১৪ ১৪৩০

নেতার সংখ্যা বেশি, প্রতিদ্বন্দ্বিতাও তুমুল

যুগের চিন্তা অনলাইন

প্রকাশিত: ১২ জুন ২০২১  

করোনা মোকাবেলায় সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলদের ভূমিকা সারাদেশে প্রশংসিত হয়েছিল। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে সেভাবে নিজেদের মেলে ধরেননি কাউন্সিলরা। নির্বাচনী বছর বিধায় কাউন্সিলদের সরব কাজকর্ম ঠিকই খেয়াল রাখছেন ওয়ার্ডবাসী। ২০১৬ সালের ২২ ডিসেম্বর নির্বাচনে নাসিকের ২৭টি ওয়ার্ডে জয়ী হয়েছেন আওয়ামী সমর্থিত যেসব কাউন্সিলররা এতোকিছুর পরেও তারা এবার স্বস্তিতে নেই।

 

দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকায় প্রতিটি ওয়ার্ডে নিজ দলের সম্ভাব্য প্রার্থীর সংখ্যা অনেক বেড়েছে। নানা সময় আধিপত্য নিয়েও নানা ঘটনা ঘটছে। সেসব মাথায় নিয়েই নির্ভার হতে পারছেননা সিটি করপোরেশনের আওয়ামী সমর্থিত কাউন্সিলররা। সূত্র জানিয়েছে, এখন থেকেই লবিং, মাঠ গোছাতে মরিয়া বর্তমান বেশ কিছু কাউন্সিলররা।এলাকায় আধিপত্যকে নিয়ন্ত্রণ নিতে প্রকাশ্য ও গোপনে কাউন্সিলর পদে সম্ভাব্য প্রতিযোগিতা ক্রমেই বাড়ছে। সময় গড়ানোর সাথে সাথে এর মাত্রা কয়েকগুন বৃদ্ধি হবে বলে মত রাজনৈতিক বোদ্ধাদের।

 

সংশ্লিষ্ট সূত্রের তথ্যানুযায়ী, নাসিকের ১নং ওয়ার্ডে ফুলের ঝুড়ি প্রতীকে যুবলীগের হাজী মো. ওমর ফারুক ৪ হাজার ৮১৭ ভোট পেয়ে প্রথমাবারের মতো কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। তবে এবার স্বস্তিতে নেই তিনি। এবার এই ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী রয়েছেন অন্তত ১০ জনেরও বেশি। সেটি বুঝতে পেরেই জনসংশ্লিষ্টতা গত দুবছরের চেয়ে বেশি বাড়িয়ে দিয়েছেন ওমর ফারুক। তবে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সাথে দুরুত্ব তৈরি হওয়ায় বিকল্প চিন্তা মাথায় নিয়েই মাঠ গুছাচ্ছেন কাউন্সিলর ফারুক। নাসিক ৩নং ওয়ার্ডে ঠেলাগাড়ি প্রতীকে ছাত্রলীগ নেতা ও বর্তমান কাউন্সিলর শাহজালাল বাদল ৬ হাজার ৪০০ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন।

 

গতবারের নির্বাচনে শক্ত প্রতিপক্ষ না থাকলেও এবারের নির্বাচনে দুই একজন আওয়ামী ঘরনার প্রার্থী তার প্রতিদ্ব›দ্বী হতে পারেন। নাসিক ৪নং ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের অন্যতম বিতর্কিত কাউন্সিলর আরিফুল হক হাসান।  গত নির্বাচনের লাটিম প্রতীকে বর্তমান কাউন্সিলর আওয়ামীলীগের আরিফুল হক হাসান ৩ হাজার ৮০৯ ভোট পেয়ে জয়ী হন। গতবারের চেয়ে এবার যে তার ওয়ার্ডে আওয়ামী সমর্থিত প্রার্থীর সংখ্যা কম হবেনা সেটা নিজেও ভালো করে জানেন বর্তমান কাউন্সিলর। অতীতের বেশ কিছু ত্রুটি এবং মাঝেসাঝেই বিতর্কিত ঘটনাবলি দিয়ে হাজির হওয়ার দরুণ এবারের নির্বাচনে কাউন্সিলর হাসানকে শক্ত পরীক্ষায় দিতে হবে বলে অনুমেয়। 

 


নাসিকের নির্বাচনী অন্যতম জটিল ওয়ার্ড ৬নং ওয়ার্ড। এই ওয়ার্ডে  গত নির্বাচনে ঠেলাগাড়ি প্রতীকের সিদ্ধিরগঞ্জ থানা যুবলীগের আহŸায়ক মতিউর রহমান মতি ৫ হাজার ৯৮৪ ভোট পেয়ে প্রথমবারের মতো  কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। এই ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর সিরাজুল ইসলাম মন্ডলের সাথে পুরো বছর ধরেই দ্বৈরথ চলে মতির। আসন্ন নির্বাচনেও বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি সিরাজ মন্ডল যে মতিকে কঠিন প্রতিদ্ব›িদ্বতায় ফেলবেন তা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা।

 

নাসিক ৭ নম্বর ওয়ার্ডে  ঠেলাগাড়ি প্রতীকে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আলী হোসেন আলা ৩ হাজার ৯৩ ভোট পেয়ে টানা দ্বিতীয়বারের কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। এই ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন প্রতিদ্ব›দ্বী রয়েছেন নাসিক  ৮নম্বর ওয়ার্ডে মিষ্টি কুমড়া প্রতীকে আওয়ামী লীগ নেতা রুহুল আমিন ৫ হাজার ৭২ ভোট পেয়ে দ্বিতীয়বারের মত কাউন্সিলর হয়েছেন। এই ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন প্রতিদ্ব›দ্বী রয়েছেন।  নাসিক ১০নম্বর ওয়ার্ডে ব্যাডমিন্টন প্রতীকে প্রথমবারের মত আওয়ামী লীগ নেতা ইফতেখার আলম খোকন  ২ হাজার ৭৪৩ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। অপেক্ষাকৃত নির্ঝঞ্ঝাট হলেও এবারও খোকনও আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থীর সম্মুখীন হতে হবে। সিদ্ধিরগঞ্জের ১০টি ওয়ার্ডের বেশিরভাগেই আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী বেশি।

 

নাসিক  ১৬নম্বর ওয়ার্ডে ব্যাডমিন্টন প্রতীকে প্রথমবারের মত নগর সেচ্ছাসেবকলীগ সভাপতি নাজমুল আলম সজল ৪ হাজার ৮৩৪ ভোট পেয়ে কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। তার মূল প্রতিদ্ব›দ্বী ছিলেন দুইবারের সাবেক প্যানেল মেয়র ওবায়েদউল্লাহ।এই ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর সংখ্যাটাও বাড়ার আভাস মিলেছে। নাসিক ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে ঘুড়ি প্রতীকে মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য মো. আব্দুল করিম বাবু ৭ হাজার ৬১৮ ভোট পেয়ে প্রথমবারের মত কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। অপেক্ষাকৃত শক্তিশালী হলেও আওয়ামী ঘরনার একটি অংশও এবার আটঘাট বেধে কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্ব›িদ্বতা নেয়ার প্রস্তুতি নিয়েছে বলে জানিয়েছে সূত্র।

 

গত নির্বাচনে  নাসিক ১৮নম্বর ওয়ার্ডে ঠেলাগাড়ি প্রতীকে কবির হোসাইন ৮ হাজার ২২৭ ভোট পেয়ে প্রথমবারের মত কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। তবে এবার অনেকটা প্রকাশ্যই এবার তাকে প্রথমত লড়তে হবে এই ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মহানগর শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. কামরুল হাসান মুন্নার সাথে। এর বাইরেও আওয়ামী লীগের একটি অংশ নতুন প্রার্থী দেয়ার পক্ষে।  নাসিক  ১৯ নম্বর ওয়ার্ডে করাত প্রতীকে আওয়ামী লীগ নেতা ফয়সাল আহাম্মেদ সাগর পেয়েছেন ৩ হাজার ২৫২ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। আসনন্ন নির্বাচনে মহানগর আওয়ামী লীগের এক নেতাও এই ওয়ার্ডে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে আভাস পাওয়া গেছে।  নাসিক ২৩ নম্বর ওয়ার্ডে লাটিম প্রতীকে মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফুদ্দিন আহম্মেদ দুলাল  ৪ হাজার ২০৬ ভোট পেয়ে কাউন্সিলর নির্বাচিত হন।নানা কারণে সমালোচিত হয়ে পড়ায় এই ওয়ার্ডে স্বচ্ছ ইমেজের আওয়ামী প্রার্থী দেয়ার কথা ভাবছে আওয়ামী লীগ।

 


সংরক্ষিত আসনগুলোতেও এবার প্রতিদ্ব›দ্বীতা থাকবে আওয়ামী প্রার্থীদের মধ্যেই।   নাসিক সংরক্ষিত ১ নম্বর ওয়ার্ডে (১,২ ও ৩) গøাস প্রতীকে আওয়ামী  লীগের মাকসুদা মোজাফফর ২২ হাজার ৫৬১ ভোট  পেয়ে পুনরায় নির্বাচিত হন। ক্লিন ইমেজের হলেও এবার তাকে আরো একাধিক আওয়ামী প্রার্থীর সাথে দলীয় প্রতিদ্ব›িদ্বতা করতে হবে।  নাসিক ২ নম্বর ওয়ার্ডে (৪,৫ ও ৬) মোবাইল  প্রতীকে আওয়ামী লীগের মনোয়ারা বেগম ১১ হাজার ৫৩৯ ভোট পেয়ে প্রথমবারের মত কাউন্সিলর হন। গুরুত্ব বিবেচনায় মনোয়ারা বেগমও এই ওয়ার্ডে নির্ভার থাকতে পারছেননা।

 

নাসিক সংরক্ষিত ৭ নম্বর ওয়ার্ডে (১৯,২০,২১) বই প্রতীকে আওয়ামী লীগের শিউলী নওশাদ ৬ হাজার ২৬৭ ভোট পেয়ে প্রথমাবারের মত কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। গত নির্বাচনে  সংরক্ষিত ৮ নম্বর ওয়ার্ডে (২২,২৩,২৪) বই প্রতীকে আওয়ামী লীগের শাওন অংকন ১৮ হাজার ২০৯ ভোট পেয়ে প্রথমবারের মত কাউন্সিলর হন। নাসিক সংরক্ষিত ৯ নম্বর ওয়ার্ডে (২৫, ২৬, ২৭) চশমা প্রতীকে বেগম হোসনে আরা ৬ হাজার ২৫৯ ভোট পেয়ে প্রথমবারের মত কাউন্সিলর  নির্বাচিত হন।সংরক্ষিত এই তিনটি  আসনেও আওয়ামী ঘরনার বেশ কয়েকজন মনোনয়ন প্রত্যাশা করে প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানিয়েছে সূত্র।

 

রাজনৈতিক বোদ্ধাদের মতে, বিএনপি’র দৈন্যদশা এবং আওয়ামী লীগের দীর্ঘমেয়াদী ক্ষমতায় থাকার দরুণ আওয়ামী ঘরনার বর্তমান কাউন্সিলরদের আরো কঠোর প্রতিদ্ব›িদ্বতার মুখোমুখি হতে হবে নিজ দলেই। জেলার প্রভাবশালী সাংসদ তো বটেই, জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতা এমনকি কেন্দ্রীয় পর্যায়ের আওয়ামী লীগের নেতার সাথে বেশ জোরোলো লবিং ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেছে বলে জানিয়েছে সূত্র। তবে কোভিড পরিস্থিতি বিবেচনায় সেটি চলছে ঢিমেতালে। অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলেই তা মোটা দাগে দেখা যাবে বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, ত্যাগী আওয়ামী ঘরনার নেতৃবৃন্দ তো বটেই সাথে হাইব্রীডরা আধিপত্য দেখানোর চেষ্টা করবে। 
 

এই বিভাগের আরো খবর