শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪   চৈত্র ১৪ ১৪৩০

নৌকায় ভোট দিতে না পারায় আ.লীগ নেতার দুঃখ

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশিত: ২৯ জানুয়ারি ২০২৩  

 

# নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের নৌকার প্রার্থী চাই : আনোয়ার হোসেন

 

 

আগামী জাতীয় দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে সারাদেশে এখন থেকে ডামাডোল বাঝতে শুরু করেছে। বিশেষ করে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসন নিয়ে একটু বেশি আলোচনা হচ্ছে। কেননা দীর্ঘ দিন যাবৎ এই আসনটি ক্ষমতাসীন দলের দখলের বাইরে রয়েছে। আর এতে করে আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীদের মাঝে দীর্ঘ দিনের কষ্ট জমা হয়েছে। কেননা তারা এখানে টানা এক যুগের বেশি হয়েছে নৌকায় ভোট দিতে পারছেন না। তবে দীর্ঘদিন ধরে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে নৌকার প্রার্থী দেয়ার দাবি জানিয়ে আসছে ক্ষমতাসীন দলের নেতা কর্মীরা। বিশেষ করে ২০১৮ সনের ৩০ ডিসেম্বর গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকে ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় নেতারা এখানে নৌকার প্রার্থী দেয়ার জন্য জোরালো ভাবে দাবী জানিয়ে আসছে। তাদের এই দাবী গত বছরের নাসিক নির্বাচনে কেন্দ্রীয় নেতাদের সামনে আরও জোরালো ভাবে তুলা হয়। তখন কেন্দ্রীয় নেতারা এখানে নৌকা দেয়ার আশ্ব্স্ত করেন।

 

এদিকে গতকাল নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের ১৭ ও ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন হয়। এই সম্মেলনে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে উন্নয়ন করেছে তার সুফল মানুষ এখন ভোগ করছে। আগামী নির্বাচনে আমরা কেন ক্ষমতায় আসতে পারবো না। নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে আমরা দীর্ঘদিন যাবৎ নৌকায় ভোট দিতে পারছি না। নৌকায় ভোট দিতে না পারায় নেতা কর্মীদের মাঝে অনেক দুঃখ কষ্ট জমে আছে। তাই এবার আমরা এখানে নৌকায় ভোট দিতে চাই। সেই সাথে আমরা এখানে নৌকার প্রার্থীকে জয়ী করে প্রমান করতে চাই নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের ঘাটি ছিল এখনো আছে। আমরা আর ধার করে আনা এমপি চাই না। যাদের কাছে দলীয় নেতা কর্মীরা তাদের মনের সুখ দুঃখের কথা বলতে পারে না। তাই আমরা অন্যান্য আসনের মত নারাণগঞ্জের ৫ টি আসনের পাশে এখানে নৌকার প্রার্থী চাই। এতে করে নৌকায় ভোট দেয়ার সাদ নিতে চায় নেতা কর্মীরা।

 

এছাড়া এই নেতার বক্তব্যের সাথে অন্যান্য নেতারাও নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে নৌকার প্রার্থী দেয়ার দাবী জানান।  তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, আজকে আমরা এমপি হবো আর কোটি কোটি টাকা কামাবো এর নাম কী রাজনীতি। এছাড়া অনেকে রাজনীতির নাম ব্যবহার করে চাদাঁবাজি করে টাকা কামিয়ে যাচ্ছে। এর থেকে বেরিয়ে মানুষের মাঝে ছড়িয়ে ভোটের রাজনীতি করতে হবে। জানা যায়, আগামী নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসন নিয়ে এবার আগে থেকে আলোচনা চলছে। এই আসনটিতে টানা ১৪ বছর যাবৎ ওসমান পরিবারের দখলে রয়েছে। একই সাথে জাতীয় পার্টির দখলে রয়েছে। এখানে ঘুরে ফিরে তারাই রাম রাজত্ব চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে তাদের সেই রাজত্বে আগামীতে ভাটা পরতে পারে বলে মনে করে রাজনৈতিক সচেতন মহল।

 

দলীয় সুত্র মতে জানা যায়, জোটভুক্ত নির্বাচনের কারণে ২০০৮ সালের ২৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-৫ (শহর-বন্দর) আসনটি জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। রাজনৈতিক সমঝোতার কারণে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এ আসন ছেড়ে দেয়ায় ওই সময় মনঃক্ষুন্ন হন আওয়ামী লীগের নিবেদিত প্রাণ নেতাকর্মীরা। ২০০৮ সালের ২৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনটি ছেড়ে দেয়া হয়েছিল জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য একেএম নাসিম ওসমানকে। ওই নির্বাচনে বিএনপি অ্যাডভোকেট আবুল কালামকে পরাজিত করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন নাসিম ওসমান। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনেও জাতীয় পার্টিকে আসনটি ছেড়ে দেয়া হয়। কিন্তু ওই নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ না করায় নাসিম ওসমান বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ফের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

 

কিন্তু ২০১৪ সালের ৩০ এপ্রিল ভারতের দেরাদুনে হঠাৎ নাসিম ওসমানের মৃত্যু হলে উপ-নির্বাচনে জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন পান তার মেজ ভাই ব্যবসায়ী নেতা সেলিম ওসমান। ২০১৪ সালের ২৬ জুন অনুষ্ঠিত উপ-নির্বাচনে সেলিম ওসমান সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক আহ্বায়ক এসএম আকরামকে পরাজিত করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। একই ভাবে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ নির্বাচনে মহাজোটের শরীক দল জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন পেয়ে এমপি সেলিম ওসমানের কাছে বিএনপির শরীক দল থেকে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে সাবেক সংসদ সদস্য এস এম আকরাম পরাজিত হন। তবে সেলিম ওসমান গত বছরের বন্দরের ইউনিয়ন নির্বাচনে এক সভায় নৌকা নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, গাঞ্জার নৌকা তালগাছে উঠবে না। তার এই মন্তব্যে আওয়ামী লীগের নেতাদের মনে রক্তক্ষরণ হয়। তারা এইর জনপ্রতিনিধির মন্তব্যের প্রতিবাদও জানান।

 

তবে এবার আগামী নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে নাসিম ওসমান পরিবার থেকে তারই সহধর্মিনী পারভীন ওসমান মাঠ গুছিয়ে নিচ্ছেন। রাজনৈতিক মহলে তাকে নিয়েও ব্যপক আলোচনা চলছে। তিনি যদি এবার জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন পান তাহলে সেলিম ওসমানের কপাল পুড়বে। এছাড়া ইতোমধ্যে জাতীয় পার্টির সাথে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সাথে তাদের আগের প্রেম নেই। তাদের জোট ভঙ্গ হয়ে আছে। গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের শরীক দল হওয়ায় তারা ছাড় পেয়ে যান। তখন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারাও জাতীয় পার্টির প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেন। কিন্তু এবার আর তা হচ্ছে না। এতে করে বুঝা যাচ্ছে আগামী নির্বাচনে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীদের নৌকায় ভোট দিতে না পারার যে দুঃখ রয়েছে তা শেষ হতে পারে।

এস.এ/জেসি

এই বিভাগের আরো খবর