শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ৭ ১৪৩১

পছন্দ পুরনো বিয়ে আগস্টে

যুগের চিন্তা অনলাইন

প্রকাশিত: ২৮ এপ্রিল ২০২১  

অতিমারি করোনার মধ্যেও মানুষ এখন উৎসুক খোরশেদ-শিউলির দিকে। গত কয়েকদিন থেকে আবারো টক অব দ্যা টাউন করোনা বীর নাসিক ১৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ । এবার তিনি একা নন, সাথে তার স্ত্রী দাবি করা সাহেদা শিউলিও রয়েছেন।এদিকে গত ২৪ এপ্রিল লাইভে এসে কান্নাবিজড়িত কণ্ঠে দাবি করেছেন,  গতবছর করোনা প্রাদুর্ভাব শুরুর পর অক্সিজেন সিলিন্ডার দিতে এসে পরিচয় হওয়া এক নারী তাকে বিয়ের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে এবং তিনি ও তার পরিবারকে হুমকি দিচ্ছে।

 

অপরদিকে ২৫ এপ্রিল লাইভে এসেছেন খোরশেদের স্ত্রী দাবি করা নারী শাহেদা শিউলি। তিনিও কান্নাবিজড়িত কণ্ঠে খোরশেদের স্ত্রী বলে নিজেকে দাবি করেছেন। তবে দুজনই কিছু বিষয় অস্পষ্ট রাখায় এবিষয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। তাদের বক্তব্যের সূত্র ধরে যুগের চিন্তাও অনুসন্ধান চালিয়ে দুইজনের কথাতেই কিছু ঘোলাটে তথ্য পেয়েছে। প্রথমে খোরশেদ লাইভে এসে যেসব অভিযোগ ওই নারীর ক্ষেত্রে করেছেন, সেখানে ওই নারীর পরিচয় স্পষ্ট করে দেয়া হয়নি, এবং সম্পর্ক এবং চেনাজানার বিষয়টিও কৌশলে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে।

 

আবার অন্যদিকে ওই নারীর করা ফেসবুক লাইভ ভিডিওতেও কিছু বিষয়ের উত্তর পরিষ্কারভাবে দেয়া হয়নি। অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে,  ওই নারীর সাথে কাউন্সিলর মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ পূর্বপরিচিতা। এবং শুধু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেই নয়, তারা পারস্পরিক সম্পর্ক বজায় রেখে সশরীরেও দেখা করতেন। যুগের চিন্তাকে ওই নারী সাহেদা শিউলি দুবাই থেকে জানান, দুইজনের পরিবারের ছেলে-মেয়ে যথেষ্ট বড় হয়ে গিয়েছে বিধায় সম্পর্কের বিষয়টি তারা না জানানোর জন্য অঙ্গীকার করেছিলেন। কিন্তু ব্যবসায়ীক কাজে দুবাইয়ে অবস্থানে সুযোগ নিয়ে খোরশেদ ফেসবুক লাইভে এসে ব্যাপারটিকে সামনে এনে তাঁর বিরুদ্ধে অপ্রপ্রচার চালাচ্ছেন।

 


যুগের চিন্তার কাছে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে গত কয়েকমাসে খোরশেদের সাথে ওই নারীর যোগাযোগের ফিরিস্তি তুলে ধরে নারী আই-মা গ্রুপ অব কম্পানিজ লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর, বাংলাদেশ সিএনজি অনার্স এসোসিয়েশন নারায়ণগঞ্জ-মুন্সিগঞ্জের সভাপতি। তিনি ব্যবসায়ী সংগঠন এফবিবিসিআই এবং বিজিএমইএ’র সদস্য সাহেদা শিউলি নামক ওই নারী দাবি করেন, গত ২ আগস্ট তারা কাঁচপুরে তাঁর মালিকানাধীন এসএস (সাহেদা শিউলি) নামক সিএনজি পাম্প স্টেশনে বিয়ে করেন। সেখানে গাড়ী করে কাজী নিয়ে যান কাউন্সিলর খোরশেদ।

 

পরবর্তীতে বিয়ের ব্যাপারটি ও যোগাযোগের বিষয়ে যখন কাউন্সিলর খোরশেদের স্ত্রী লুনা টের পেয়ে যান চাপে ওই নারীকে এড়িয়ে যেতে থাকেন খোরশেদ। এনিয়ে তাকে  খোরশেদের বাড়িতে মারধর করা হয়েছে বলেও জানান ওই নারী। বর্তমানে দুবাইয়ে অবস্থান নেয়া সাহেদা শিউলি বলেন, আমি বাংলাদেশে ফিরে এসে  সংবাদ সম্মেলন করে পুরো বিষয়টি প্রমাণ করে দিবো। ফেসবুক লাইভে এসে কাউন্সিলর খোরশেদ আমাকে অসম্মান করেছে। আমার ছেলে-মেয়ে এবং পরিবারের লোকজন আমাকে আত্মহত্যার হুমকিও দিচ্ছে।  আমি আমার ইজ্জত ও সম্মান ফেরত চাই। আমি চাই সে আমাকে অস্বীকার করছে সেটি সবার সামনে স্বীকার করুক। অর্থনৈতিক যে সুবিধাগুলো সে আমার কাছ থেকে নিয়েছে সেগুলোও আমি সামনে আনবোনা। আমি চাই নারী হিসেবে আমার যে সম্মানহানি হয়েছে সেটি পুনুরুদ্ধার হোক, ন্যায় বিচার চাই।

 


ব্যবসায়িক কাজে দুবাইতে অবস্থান করা সাহেদা শিউলি যিনি ইসদাইর এলাকায় খুকু মনি হিসেবে পরিচিত তিনি যুগের চিন্তাকে জানান, ১৯৯০ সালের দিকে নারায়ণগঞ্জ গার্লস স্কুলে পড়াকালীন সময়েই খোরশেদকে চেনেন তিনি। তিনি তার ভাইয়ের বন্ধু। কিন্তু সেসময় পরিবার ব্যাপারটি জেনে যাওয়ায় দ্রুত বিয়ে দিয়ে দেন তাকে। যদিও তার এক মেয়ে এবং খোরশেদের এক মেয়ে নারায়ণগঞ্জ আইডিয়েল স্কুলে পড়াশোনা করে তবে সেখানে তাদের দেখা সাক্ষাত হয়নি।

 

করোনা প্রাদুর্ভাব শুরুর পর হঠাৎ খোরশেদ অনবরত তার ফেসুবকে রিকোয়েস্ট পাঠিয়ে নক করতে থাকেন। কয়েকমাস সফল না হলেও করোনায় আক্রান্ত হয়ে যখন তিনি শয্যাশায়ী ছিলেন করোনা বীর খোরশেদ ওই নারীর বাড়িতে যান, সেবা যত্ন করেন, এবং পরবর্তীতে যোগাযোগ তৈরি করেন। তিনি নিজে নন, খোরশেদই তাকে নিয়মিত ভিডিও কল ও মেসেঞ্জারে যোগাযোগ করতেন। এসংক্রান্ত অজস্র প্রমাণ তার কাছে আছে বলে দাবি করেন ওই নারী।

 

হ্যারিটেস স্কুলের পাশে চানমারী ট্যাক্সি স্ট্যান্ড শফি ডাক্তারের রোডের বাসায় নিয়মিত যাতায়াত করতেন কাউন্সিলর খোরশেদ।ওই এলাকার বাসিন্দাদের জিজ্ঞাসা করলেই এসবের সত্যতা বেরিয়ে আসবে। ভিডিও কলে আসতে না চাইলেও কাউন্সিলর খোরশেদ তাকে আসতে বাধ্য করতেন। শিউলি জানান, করোনার সময় কাউন্সিলর খোরশেদ আমার পাশে ছিলেন। আমার এসএস সিএনজি পাম্প স্টেশনে বিয়ে করার দুই মাস পর থেকেই বদলে যেতে থাকেন খোরশেদ। তিনি আমাকে বলতে থাকেন, মুখে মুখে বিয়ে, মুখে মুখে ছেড়ে দিলেনই কী? আমার ১০১টা শর্ত মানতে হবে।

 


সাহেদা শিউলি বলেন, ফেসুবক মেসেঞ্জারে তার ভিডিও কলদেয়ার অজস্র রেকর্ড আমার কাছে রয়েছে। ব্যবসায়ীক কাজে আমি ব্যস্ত থাকলে প্রথম প্রথম খোরশেদ আমার উপর রাগ করতো। বিয়ের পর গতবছরের আগস্টে মাঝামাঝি সময়ে তাঁর বাড়ির নিচতলায় অফিস গার্মেন্ট ব্যবসায়ী রাহুল শেখের জালকুড়ির বাসায় আমরা দেখা করতাম। খোরশেদ যখন আমাকে এভোয়েড করা শুরু করে তখন রাহুল আমাকে অনেকভাবে বুঝিয়েছে। খোরশেদের স্টাফ নাঈম ও খোরশেদের গাড়ির ড্রাইভার সেলিম সবসময় আমরা যখন দেখা করতাম পাহারায় থাকতো। তাদের দুজনকে নিয়েও খোরশেদ আমার বাসায় আসতো।

 

তিনি বলেন, একদিন আমার সাথে দেখা করতে আসার সময় চানমারী ট্যাক্সি স্ট্যান্ডের লোকজন খোরশেদকে চিনে ফেলে। পরে খোরশেদ তাদের অন্যকথা বলে চা-পানি খেয়ে সেখান থেকে ছুটে আসে। আমি জিজ্ঞাসা করেছিলাম, আমাদের সম্পর্কের বিষয়টি বলে দিয়েছে কিনা! এসব কথা বলার অর্থ হচ্ছে আমরা চেয়েছিলাম যেহুতু আমাদের ছেলে মেয়ে যথেষ্ট  বড় তাই তারা এখনই আমাদের সম্পর্কের বিষয়টি না জানুক। কিন্তু সবজায়গাতেই তিনি আমাকে ছোট করেছে। আমি দেশের বাইরে এসেছি এই সুযোগটাই সে কাজে লাগাতে চেয়েছে, কারণ দেশের মানুষ এখন আমার বক্তব্য নিতে সমস্যায় পড়বে।

 


কাউন্সিলর খোরশেদ লাইভে কাজী নিয়ে বিয়ে করতে বাড়িতে আসা প্রসঙ্গ শাহেদা শিউলি বলেন, ‘এই বছরের ২১ জানুয়ারি খোরশেদ আমাকে তার বাসার এখানে আসার জন্য ফোন করে। আমি বললাম মিটিংয়ে যাচ্ছি। কিন্তু সে আমাকে বাসায় আসতে বললো। মাসদাইর ইদগাহ মাঠের কাছে গাড়ি নিয়ে আসার পর সে আমাকে কল দিয়ে বললো ১৫মিনিট পরে আসো। আমাকে অনুনয় বিনয় করে বললো একটু ঘুরে আসো। তারপর আমি আমার ড্রাইভারকে বললাম পঞ্চবটির দিকে যেতে। সামান্য এগোতেই খোরশেদ আমাকে তার বাসায় যেতে বললো। আমি তার বাড়ির সামনে গিয়ে গাড়ি থামাতেই তার স্ত্রী লুনা আমার গাড়ির দরজা খোলে।

 

আমাকে নামতে বললো গাড়ি থেকে, আর বললো আমার সাথে আপনার জরুরি কথা আছে। সে গাড়িটি সরানোর সময়টুকুও দেয়নি, আমাকে নিয়ে খোরশেদ ও তার স্ত্রী পাহারা দিয়ে বাড়ির তিনতলায় নিয়ে গেল। এমন আচরণ দেখে আমি ভাবছি, নিশ্চিত খোরশেদ বাসায় লুনার কাছে ধরা খেয়ে গেছে। লুনা আমাকে একের পর এক প্রশ্ন করলে আমি তখনো বলি, কী সব আজেবাজে কথা বলছেন, আমার সাথে তার কোন সম্পর্ক নাই। আমি পরে নিশ্চিত হয়েছিলাম যে আসলেই খোরশেদ লুনার কাছে ধরা খেয়েছে।

 

আমার ড্রাইভার ও খোরশেদের ড্রাইভার লুনার কাছে সব বলে দিয়েছে।এরপরই লুনা খোরশেদের উপর চড়াও হয়। আর কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে খোরশেদ আমাকে উপরে নিয়ে তার স্ত্রীর সামনে বসিয়েছে। সেখানে সে আমাদের দুজনের কাছেই ক্ষমা চেয়েছে। কিন্তু আমি লুনা আপাকে সবকিছু লুকিয়ে কোন সম্পর্ক নেই বলে সেখান থেকে চলে এসেছিলাম। বরং আমি তাকে সাইক্রিয়াটিস্ট দেখানোর জন্য লুনা আপাকে বলে এসেছি। কিন্তু লুনা আপা আমাকে বারবার জোর করে চেপে ধরে জিজ্ঞাসা করে বলতে থাকে, আমি সবজানি, সবকিছু খুলে বলো। পরে আমি আগামীকাল বললো বলে সেখান থেকে আসি। আমার ধারণা ছিল খোরশেদ আমাকে পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে জানাবে। কিন্তু ওই দিনের পর থেকে আমি যতবার খোরশেদকে কল দিয়েছি লুনা আপাকে বারবার ফোনকল ধরেছে।

 

আমি বারবার জানানোর জন্য বলেছি, যাতে বসে সমস্যাটার সমাধান করে। লুনা আপাকেও বলেছি, আমি যা বলবো খোরশেদের সামনে বলবো। কিন্তু তিনি বলেন, তাকে ডাকা যাবেনা। আমি একা বললে আপনি বিশ্বাস করবেননা। পরে আমি তাকে বিয়ের কথা, দেখা-স্বাক্ষাতের কথা সব খুলে বলেছি। আমি বারবারই বোঝানোর চেষ্টা করেছি, যেভাবেই এটা হয়ে গেছে, হয়ে গেছে। এটা কীভাবে মিউচ্যুয়েল করা যায়, সেটিই দেখেন। কেননা,এটা দুই পরিবারের জন্যই সম্মানের প্রশ্ন। আজ সবার কাছে আমাকে ছোট করছে। মার্চের ১ তারিখে বসার কথা থাকলেও সে আসেনি। তার ছেলেমেয়েও আমার ছেলেমেয়ের সাথে নানাকটুক্তি করছে। তবে দেশে ফিরেই দুই-একদিনের মধ্যে সব খোলাশা করবেন বলে জানান সাহেদা শিউলি।   
 

এই বিভাগের আরো খবর