শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪   চৈত্র ১৫ ১৪৩০

পঞ্চবটি-মুক্তারপুর সড়ক প্রকল্পে স্বস্তির নিঃশ্বাস

আবু সুফিয়ান

প্রকাশিত: ২২ মার্চ ২০২৩  

 

# প্রকল্প শুরুর দু’বছরে শেষ মাটি পরীক্ষার কাজ
# অতঃপর জমি অধিগ্রহণ, চলছে স্থাপনা উচ্ছেদ

 

 

অবশেষে ঢাকা মুন্সীগঞ্জ সড়কের পঞ্চবটি থেকে মুক্তারপুর পর্যন্ত সড়ক প্রশস্তকরণের জন্য জমি অধিগ্রহণের পালা চূড়ান্তভাবে চুকিয়ে সড়কের দু'পাশের স্থাপনা ভেঙে ফেলার মধ্য দিয়ে আংশিক দৃশ্যমান হচ্ছে সড়ক প্রশস্তকরণ কাজ। প্রকল্পের কাজ শেষ হলে দীর্ঘদিনের যানজট থেকে পরিত্রাণ পাবে এই পথ দিয়ে চলাচলকারী যাত্রীরা। প্রকল্পের কাজ পুরোদমে এখন পর্যন্ত শুরু না হলেও যানজট থেকে মিলবে মুক্তি এই ভেবে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন এলাকাবাসীর সহ সাধারণ পথচারী।

 

বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, ২০২৫ সালে প্রকল্পের কাজ শেষ হলে এই রুটে যানবাহনের গতি বাড়বে প্রায় ৫ গুণ। জানা গেছে, মুন্সিগঞ্জ জেলা শহরের সাথে রাজধানী ঢাকার যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম এই সড়ক। সরু এবং আঁকাবাঁকা এই সড়কের গড় প্রশস্ততা ৫.৫ মিটার। যার কারনে ব্যস্ত এই সড়কে প্রায় দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয় এবং দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, ফরিদপুরের ভাঙ্গা ও সিরাজগঞ্জের পর ইন্টারসেকশন সম্বলিত দৃষ্টিনন্দন সড়ক নির্মাণ হচ্ছে নারায়ণগঞ্জের এই পঞ্চবটিতে।

 

পঞ্চবটি মোড় থেকে ছয় লেন সড়ক ৩১০ মিটার করে ফতুল্লা-ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ দুই দিকে প্রসারিত হবে। এই দুই দিকে ৬ লেন করে সড়ক প্রসারিত হওয়ার পাশাপাশি পঞ্চবটি মোড় থেকে মুন্সীগঞ্জের মুক্তারপুর সেতু পর্যন্ত হবে চার লেন সড়ক। এরমধ্যে পঞ্চবটি থেকে চর সৈয়দপুরের শীতলক্ষ্যা-৩ সেতু পর্যন্ত ৬ কিলোমিটার দীর্ঘ দুই লেন সড়ক হবে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। বাকি দুই লেন নিচতলায়। মুক্তারপুর সেতু থেকে পঞ্চবটি পর্যন্ত ১০ দশমিক তিন সাত কিলোমিটার দীর্ঘ পুরো এই পথে তিন ধরনের সড়ক নির্মাণ হচ্ছে। এর মধ্যে এলিভেটেড এক্সপ্রেস হবে ৯ দশমিক শূন্য ছয় কিলোমিটার দীর্ঘ। নিচতলা ফ্রি হলেও দোতলা সড়কে চলাচলে লাগবে টোল।

 

প্রকল্পে চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সয়েল টেস্টের কাজে নিয়োজিত রয়েছে। এই সড়ক দিয়ে নিয়মিত চলাচল করেন বেসরকারি চাকরিজীবী মো. আসমত আলী। তিনি যুগের চিন্তাকে জানিয়েছেন, দিনের বেশিরভাগ সময় এই সড়কে যানজট লেগেই থাকে। যার কারণে আমাদের মূল্যবান সময় নষ্ট হয়। এই যানজটের কারণে প্রতিদিন অফিসে যেতে দেরি হচ্ছে। নষ্ট হচ্ছে আমাদের মূল্যবান কর্মঘন্টা। মো. মনিরুজ্জামান নামের আরেকজন পথচারী বলেন, এসব কি প্রশস্ত করা হবে এই কথাটি শুনছি আরো কয়েক বছর আগ থেকে কিন্তু বাস্তবায়নের কোন ধরনের অগ্রগতি নাই।

 

তিনি বলেন, এই প্রকল্পটি শুরু হয় ২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে। শুধু মাটি পরীক্ষার নাম করে কেটে গেল দুই বছর। এখনো জমি অধিগ্রহণ করার পর সবার পাওনা পরিশোধ সম্পন্ন হয় নাই। শেষে তিনি বলেন, আমি যতটুকু জানি এই প্রকল্পের মান আছে আর দুই বছর। এই দুই বছরে কিভাবে তারা প্রকল্পের কাজ শেষ করবে তারাই জানে। স্কুল ছাত্র মো. রাফসান বলেন, প্রতিদিন সকালে স্কুলে যাওয়ার সময় যানজট লেগে থাকে যার কারণে প্রতিদিন স্কুলে যেতে লেট হয়।

 

উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে ধলেশ্বরী নদীর উপর নির্মিত ষষ্ঠ বাংলাদেশ চীন মৈত্রী সেতু উদ্বোধনের পর থেকে এর সংযোগ রাস্তা হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে পঞ্চবটি মুক্তারপুর সড়ক। এটি খুব সংকীর্ণ ও আঁকাবাঁকা যার গড় প্রশস্ততা ৫.৫ মিটার। এ রাস্তার উভয় পাশে বিভিন্ন ব্যবসার প্রতিষ্ঠান এবং বসতবাড়ি থাকায় প্রায় দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। মুন্সিগঞ্জের মুক্তারপুরে পাঁচটি সিমেন্ট কারখানা এবং কয়েকটি হিমাগার আছে। যার ফলে ঐ সড়কে ২৪ জন থেকে ৫০ টনের ভারী যানবাহন নিয়মিত চলাচল করায় প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে। এই প্রকল্পের এলাকায় বেসিক শিল্পাঞ্চল এবং রপ্তানিমুখী পোশাক কারখানা থাকায় প্রতিদিন লক্ষাধিক শ্রমিক রাস্তা ব্যবহার করেন।

 

এ ব্যবস্থা বিবেচনা করে বাংলাদেশের সাথে কর্তৃপক্ষ পঞ্চবটি থেকে মুক্তারপুর সে তো পর্যন্ত সড়ক প্রশস্তকরণ ও দোতলার রাস্তা নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ করে। ২০২০ সালের ৮ ডিসেম্বর একনেক সভায় এ প্রকল্প অনুমোদিত হয়। প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ২৪২ কোটি ৭৭ লাখ ৪৫ হাজার টাকা। প্রকল্পটি জিওবি এবং বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়িত হবে। ঢাকা মুন্সিগঞ্জ সড়কের পঞ্চবটি থেকে মুক্তারপুর পর্যন্ত সড়ক প্রশস্তকরণ ও দোতলা রাস্তা নির্মাণ প্রকল্পটি শুরু হয় ২০২১ সালের ১ জানুয়ারি তারিখে। বাস্তবায়ন কাল ৩০ জুন, ২০২৫ পর্যন্ত।

এস.এ/জেসি

এই বিভাগের আরো খবর