শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ৭ ১৪৩১

পরিচ্ছন্নকর্মীদের জন্য নাসিকের ‘বিগ প্রজেক্ট’

যুগের চিন্তা অনলাইন

প্রকাশিত: ১০ জুন ২০২১  

ব্রিটিশদের শাসনামলে ভারতের অন্ধ প্রদেশ, রাজস্থান, মাদ্রাজ ও আসাম থেকে পরিচ্ছন্ন কর্মী ও চা বাগানে কাজের জন্য তেলেগু ভাষাভাসী অসংখ্য নারী পুরুষ এসেছিলো বাংলাদেশে। সহজ সরল মন-মানুষিকতা ও কর্মদক্ষতার কারনে দ্রুতই এদেশের মানুষের কাছে গ্রহনযোগ্যতা পায় এরা। এরপর বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে; স্থানীয় সরকার কর্তৃক প্রদত্ত জমি, রেলস্টেশনসহ সরকারি খাস জমিতে বসবাস করতে শুরু করে এসব নারী ও পুরুষ। মূলত হরিজন ও দলিত সম্প্রদায় হিসেবেই এরা বেশি পরিচিত।

 

এদিকে এই হরিজন ও দলিত সম্প্রদায়ের বড় একটি অংশ আমাদের নারায়ণগঞ্জেও আছে। পরিচ্ছন্ন কর্মী হিসেবে কাজ করছে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন ওয়ার্ডে। তবে দীর্ঘদিন ধরে নাসিকের এসব পরিচ্ছন্ন কর্মীরা শিক্ষা ও বাসস্থানসহ নানা দিক দিয়ে পিছিয়ে থাকলেও, দ্রæতই তাঁদের সুসময় আসছে। কারণ নগরীকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে সদা প্রস্তুত, প্রায় ৯৮১ জন পরিচ্ছন্ন কর্মীর জন্য নিরাপদ বাসস্থানের ব্যবস্থা করছে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন।


জানা গেছে, “নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্ন কর্মী নিবাস নির্মাণ” নামক একটি মেগা প্রকল্প হাতে নিয়েছে নাসিক। এই প্রকল্পের আধীনে প্রায় ১০০ কোটি টাকা ব্যায়ে পরিচ্ছন্ন কর্মীদের জন্য ৭ টি বহুতল ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। যারমধ্যে ৩ টি ভবন ঋষিপাড়ায়, ২ টি ভবন টানবাজারে এবং বাকি ২ টি ভবন ইসডাইর এলাকায় নির্মাণ করা হচ্ছে। এদিকে ১০ তলা বিশিষ্ট এসব ভবনগুলোতে ৫৪৯ টি পরিচ্ছন্ন কর্মীর পরিবারকে পুনর্বাসিত করা হবে বলেও জানা গেছে। আর পরবর্তীতে অবিশিষ্টদের বিষয়ে নেয়া হবে নতুন প্রকল্প।

 

প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, খান এন্ড সন্স বিডি লিমিটেড, মামুন এন্ড জসিম কন্সট্রাকশন, কাসেম কন্সট্রাকশন, এহসান এন্টারপ্রাইজ এন্ড রীপা কন্সট্রাকশন এবং এ.সিই.এস.টি নামের ৫ টি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান অধীনে এই ৭ টি ভবনের নির্মাণ কাজ হচ্ছে। অন্যদিকে, নাসিকের পরিচ্ছন্ন কর্মীদের যেসব ফ্ল্যাটে পুনর্বাসিত করা হবে, তার প্রতিটির আয়োতন হবে ৫৬০ বর্গফুট। থাকবে ২ টি থাকার ঘর, ১ টি কমন স্পেস, ১ টি রান্নাঘর এবং ২ টি বাথরুম। যাতে করে প্রত্যেক পরিচ্ছন্ন কর্মীর পরিবারই অনায়েসে এসব ফ্ল্যাটগুলোতে বসবাস করতে পারবে।


এবিষয়ে জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের তত্ত¡াবধায়ক প্রকৌশলী কামরুল আহসান বলেন, আসলে এই মুহুর্তে আমাদের প্রকল্পের অগ্রগতি ২৫ ভাগ। মূলত নাসিকের পরিচ্ছন্ন কর্মীদের থাকার জন্যই আমরা এই প্রকল্পটি হাতে নিয়েছি। পরিচ্ছন্ন কর্মীদের বাদে এখানে অন্য কেউ থাকতে পারবেনা। তিনি বলেন, এই প্রকল্পে আওতায় আমাদের ঋষিপাড়ায় ৩ টি ১০ তলা ভবন আছে। সেখানে আমাদের ঢালাইয়ের কাজ প্রায় শেষ। এখন অন্যান্য কাজ চলছে। অন্যদিকে আমাদের টানবাজারে ২ টি ভবনের পাইলিঙের কাজ চলছে। আশাকরি আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই আমরা পুরো প্রকল্পের কাজ শেষ করতে পারবো। প্রসঙ্গত, সারা বাংলাদেশে অবহেলিত, বিচ্ছিন্ন, উপেক্ষিত কিংবা দলনের শিকার প্রায় ১২ লাখ হরিজনদের সবচেয়ে বড় অংশ ছিলো ঢাকায়।

 

ইতিমধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের সহযোগীতায় সেখানকার হরিজনরা মাথা গোঁজার জন্য বেশ কয়েকটি বহুতল ভবনও পেয়েছে। তাই নারায়ণগঞ্জ রেলওয়ে কলনির হরিজনরাও আশায় রয়েছে যে, স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগীতা পেলে এই সৌভাগ্য একদিন তাঁদেরও হবে। মূলত তাঁদের সেই স্বপ্নই এখন বাস্তবে রূপান্তরীত হতে চলেছে।  

এই বিভাগের আরো খবর