বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১১ ১৪৩১

পহেলা বৈশাখ বাংলা নববর্ষ বাঙালির ঐতিহ্য সংস্কৃতি উৎসব

প্রকাশিত: ১৪ এপ্রিল ২০১৯  

বাংলা নববর্ষ। বাঙালির নববর্ষ। বাঙালির ঐতিহ্য সংস্কৃতি উৎসব পহেলা বৈশাখ। বাংলা নববর্ষ তোমাকে জানাই সাদর সম্ভাষণ। বলতে চাই ছন্দ কথায়। 


রঙে রঙে রঙিন হয়ে কাটতে সুখের বেলা, বাংলা নববর্ষ এলো এলো বোশেখ মেলা / সব বাঙালির মনে প্রাণে হাসি খুশির দিনটি, হালখাতার ওই মিষ্টি মুখে মুক্ত হল ঋণটি। / উদযাপনের শুভ ক্ষণে সবার মনে কয়ে, সবুজ বঙ্গের পুষ্প ঘ্রাণে আনন্দ যাই বয়ে। /গ্লানি বিষাদ বিদায় দিলাম স্বাগতম হর্ষ, মমতার এই বঙ্গ মাটির বাংলা নববর্ষ।


আমি বাঙালি। বাংলা আমার ভাষা। মমতার এই বঙ্গ আমার সঙ্গ দেওয়া জন্মভূমি। বৈশাখের প্রথম দিন তুমি আসো নতুন রূপে। তাই বলতে চাই। বৈশাখ দিনে আনন্দ আর খুশি ভরা কাঙালি ক্ষণ, উচ্ছ্বাস আর উদযাপিত প্রাণ সঞ্চারি বাঙালি মন। / বঙ্গ জুড়ে তাই বাঙালির সুখ সমাহার ট্যুর গড়ানো, বর্ষবরণ বাংলা বর্ণে মিষ্টি মধুর সুর ছড়ানো। / বৈশাখ দিনে নতুন করে বঙ্গবাসির হর্ষ স্মরণ, পুরনোকে বিদায় দিয়ে স্বাগতমের বর্ষ বরণ। / বাংলা সনের ঐতিহ্য দিন নববর্ষে যেতে ফুঁটি, সকল বিষাদ গ্লানি ভুলে নতুন দিনে মেতে উঠি। 


নববর্ষ হলো হিংসা বিভেদ, বিষাদ গ্লানি, জীর্ণজ্বরা পিছনে ফেলে, নতুন দিনের নব উদ্যমে, নব যৌবনের জয়গান। নববর্ষ সমগ্র বাঙালির সাথে আমিও প্রস্তুত থেকে তোমাকে স্বাগত জানাই। 


পুরনোকে বিদায় দিয়ে নতুন দিনের আগমন, বাংলা নববর্ষ তোমায় জানাই ফুলেল স্বাগতম। / মমতার এই বঙ্গ সনে হাসি খুশির জোয়ারে, রঙ বেরঙের ফেস্টুন আর মুখর পটকার ধোঁয়ারে / মেলার মাঠে শুনি আওয়াজ হৈ হুল্লোড় হৈ ডাকের, মিষ্টি মধুর পরিবেশে বরণ করি বৈশাখের। 


বাংলা নববর্ষ বাঁধ ভাঙা উচ্ছ্বাস, উল্লাস, আনন্দ, হাসি খুশী তোমার উদযাপনে সুসজ্জিত সুশোভিত ঘ্রাণে, তুমি বহমান বাঙালির মনে প্রাণে। বঙ্গ জুড়ে তোমার শোভাযাত্রা। বলতে ইচ্ছে করে ছন্দ শব্দের গাঁথুনীতে। সকল গ্লানি বিষাদ যত পিছে ফেলে, বঙ্গ জুড়ে নববর্ষ / সঙ্গ সুখের মনঃহর্ষ / মধুর করে এলো বাংলায় পেখম মেলে। / উৎসব মুকর সব বাঙালির বহর পায়ে, /হাসি খুশির আনন্দতে/ মেলার খেলার সানন্দতে/ বৈশাখী দিন হল রঙিন শহর গাঁয়ে। 


এই বঙ্গের শহরে কিংবা গাঁয়ে বৈশাখী আয়োজনে আমাদের বিন্দুমাত্র কমতি নেই। রঙ বেরঙের ব্যানার ফেস্টুন। ছোট বড় মেলা, নানান রকম খেলা। সুর ছন্দে বলি। বছর ঘুরে নববর্ষের বোশেখ মেলা ফিরে আসে, সপ্তাহ জুড়ে আমার গাঁয়ের বৃক্ষ নদীর তীরে হাসে।/ নিত্ত্য রঙিন রঙের মেলা/ নাগোর দোলা সার্কাস খেলা/ এই মেলাতে সাজ্না রয়,/নাচা গাওয়া বাজনা রয়।/ আনন্দেরই পশরা স্বরুপ নদীর কূলে সাজে ভেলা,/এই মেলাতে খেলনা পাতি দেখে কিনে কাটে বেলা। /আমোদ প্রমোদ খুশির জোয়ার এই বাঙালির ভীড়ে ভাসে,/এই আনন্দে ভাগ বসাতে পাখি বৃক্ষের নীড়ে হাসে।


বৈশাখের প্রথম দিন থেকে শুরু হয় সপ্তাহ ব্যপি মেলা। মেলাতে মানুষের ঢল নামে। 
তাই এভাবে মুখ থেকে বেরিয়ে আসে কিছু কথা। বৈশাখের এই প্রথম দিনে আনন্দেরই ঢল নেমেছে,/এ গাঁ সে গাঁ দেখতে মেলা শিশু কিশোর দল নেমেছে। /হরেক রকম খেলনা নিয়ে নিত্য নতুন রঙিন আলোয়,/নাগোর দোলা চড়ক পূঁজো বোশেখ মেলা মানায় ভালোয়।/হাসির জোয়ার খুশির দুয়ার প্রাণে প্রাণের মিলন ঘটায়,/কতক শিশু কিনতে জিনিস আদর করে নানার পটায়।/ মেলার মাঠে/ বেজায় ডাঁটে/ মাটি বাঁশের খেল্না আছে/লোহা প্লাস্টিক দোল্না আছে/ রঙ বেরঙের হরেক রকম আছে মিষ্টির ছড়াছড়ি,/ম্যাজিকশো’ আর গানের বাজার বোশেখ মেলায় গড়াগড়ি।/নব উদ্যম নব বর্ষ/দুঃখ কষ্ট গ্লানী হর্ষ/নব চেতনার দিন,/পয়লা বোশেখ নববর্ষ আনন্দ রঙিন।


বসলে বোশেখ মেলা গাঁয়ের বাঁকে নদীর তীরে। কি দারুণ মায়াময় মধুর লাগে। গ্রাম বাংলায় সত্যিই অন্য রকম একটা অনুভূতি বিরাজ করে। 

আমার গাঁয়ের নদীর তীরে বসলো বোশেখ মেলা,/দূরদূরান্তের মানুষ এলো বৈঠা ঠেলে ভেলা।/ নাগর দোলা বেলুন উড়া চলছে হরেক খেলা,/ নিত্য রঙের খেলা দেখে /হরেক রকম ছবি এঁকে /নববর্ষের বৈশাখের এই আনন্দে যায় বেলা।

বিনোদনে মুখন বঙ্গবাসি। নাচ গান, শোভাযাত্রা, শুভ হালখাতায় মিষ্টি মুখ। পয়লা বৈশাখ মানে আনন্দ ও ভালবাসা বন্ধনে দাঁড়িয়ে পুরো বাঙালি। 

 

বৈশাখের এই প্রথম দিনে নববর্ষ পালন হয়,/পান্তা ভাতে ইলিশ খাওয়া সবার মনে লালন হয়।/শহর গাঁয়ে মেলার মাঠে খেলনা পাতি ছেঁয়ে যায়,/সকাল দুপুর রাত অবধী শিশু কিশোর ধেয়ে যায়।/ হৈ-হুল্লোড় খুশির জোয়ার নৃত্য তালে গাওয়া যায়,/রঙ বেরঙের হরেক রকম মজার খেলনা পাওয়া যায়।/পছন্দসই জিনিস কিনে দলে দলে ফিরে আসে, /আনন্দতে হর্ষ গ্লানি বিলিন করে নীড়ে আসে।


নববর্ষ এক ধরনের বাঙালির উদ্বেলিত করে। বাংলার ইতিহাসের সবচেয়ে ভালো ঐতিহ্য সংস্কৃতি উৎসব। নববর্ষ তোমাকে স্বাগত। 
বঙ্গদেশে বাংলা সনের নববর্ষ এলো, /আনন্দেতে এগাঁ সেগাঁ হলো এলোমেলো /তাকধিনাধিন খুশিতে সব পালায় রাতের ঘুম,/সকাল হতেই পান্তা ভাতে ইলিশ খাওয়ার ধুম।/শহর গাঁয়ের বোশেখ মেলার নিত্য রঙের রূপ,/স্বদলবলে ঘুরাঘুরি থাকছিনা আর চুপ।/বিষাদ গ্লানি পিছে ফেলে সব বাঙালি আগত,/পয়লা বোশেখ নববর্ষ জানাই তোমার স্বাগত।


বৈশাখ এলে ভাললাগে খুব। ধান ক্ষেত মাঠের পর মাঠ। পাখির কিচিরমিচির শব্দ বৈচিত্র্যময় আবেগ। তাই এভাবে বলি। 
বোশেখ এলে ভালো লাগে কণ্ঠ ছেড়ে গান গেতে,/দু'চোখ ভরে আলো লাগে স্বর্ণ ছায়ার ধান ক্ষেতে।/ নববর্ষের নতুন বেলায়/চতুর্দিকের মিলন মেলায়/ হৈ হুল্লোড় কান পেতে,/মেলার মাঠে শুনিতে গান ছুটে সবাই চান্ যেতে! /দেখি পাখির কিচিরমিচির সুরে সুরে বলে যেতে,/প্রখর রোদের গরম বাতাস এদিক ওদিক চলে যেতে।


নতুনভাবে নতুন বছরের আগমন। নতুন অধ্যায়ের সূচনা। দিগন্তে মনোরম ছোঁয়ায় নববর্ষ বরণ পালন হয়। 
নতুন বছর আসে শুধু নতুন আলো দিতে, / যত কালো অধ্যায় গুলো শোষণ করে নিতে।/প্রতি সকাল রঙিন ফুলে ছেঁয়ে যেতে আসে,/এই মাটিকে আপন করে সবাই ভালবাসে।/গ্লনি যত ধুয়ে মুছে রঙিন জীবন গড়তে, সকল প্রাণে জয়গানে মুখরিত করতে।/নব সালের প্রথম দিনে মৌ মধুর গন্ধে/ হৈ হুল্লোড় হাসি খুশি ভুলে দ্বিধাদ্বন্ধে/ রঙে মাখা ছবি আঁকা নাচা গাওয়া ছন্দে, উৎসবের এই নববর্ষ আসে যে আনন্দে।


বোশেখ বরণ শিশু বাবা মায়ের আবেগ ঘন মূহুর্ত প্রকাশ। পান্তাভাতে ইলিশ খাওয়ার ধুম পড়ে বঙ্গ জুড়ে। শিশু শান্তার অনুভব এমন। 
বছর স্মরণ বোশেখ বরণ করবে শিশু শান্তা,/মায়ের কানে বলছে গানে খাবো ইলিশ পান্তা।/ বাবার হাতে টাকা সাথে দিচ্ছে ধরে ব্যাগটা, সব বাজারের আগেই এবার কিনবে ইলিশ মাছটা/ বাংলা সনের প্রথম দিনে পান্তা ইলিশ খাওয়ার দিন,/পুরনোকে বিদায় দিয়ে নতুনত্ব পাওয়ার দিন।/বঙ্গজুড়ে ঘুরে ঘুরে আনন্দে গান গাওয়ার দিন,/ দল বাঁধিয়া বন্ধুবান্ধব এদিক ওদিক যাওয়ার দিন /বৈশাখী রঙ মাখতে গায়ে নতুন পোশাক চাওয়ার দিন,/হাসিখুশির রঙের ফেস্টুন শহর গাঁয়ে ছাওয়ার দিন।


বাংলা নববর্ষ ধরনীর বুকে তুমি বাঙালির সুফসল ঘরে তোলা চাষ। বিগত দিনের স্মরণ, তুমি নতুনের বরণ। চেতনার বিকাশ ঘটাতে প্রকাশের সৃষ্টি। তুমি অমলিন, তুমি অম।অম্লান। যুগে যুগে তুমি প্রেরণার উৎস। বাংলা নববর্ষ তোমার জড়তা নেই। সব বাঙালির মুখে ঠোঁটে তুমি হাসি দিতে পারো। চোখে মায়াময় স্বর্ণালী স্বপ্ন দিতে পারো। বুকের ভিতর দিতে পারো আত্মবিশ্বাসের শক্তি। নতুনভাবে পথ চলা, সাহসী কথা বলা। বাংলা নববর্ষ আমাদের জীবনের উপজীব্য মমতাময় অধ্যায় তুমি। জাগরণে আমরণ বাঙালির ঐতিহ্য সংস্কৃতি উৎসব বাংলা নববর্ষ উদযাপন। 

 

শরীফ সাথী


লেখক : গীতিকার, বাংলাদেশ বেতার
মোবাইল : ০১৭২৪ ৯৪৮ ২৫৯