শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ৭ ১৪৩১

পাগলায় চোরাই মালামালের রমরমা বাণিজ্য!

যুগের চিন্তা অনলাইন

প্রকাশিত: ২০ মে ২০২১  

ফতুল্লার পাগলা এলাকায় ভাঙ্গারি ব্যবসাকে কেন্দ্র করে চোর সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে চলছে চোরাই মালামালের রমরমা বাণিজ্য। দিনের আলোয় তারা আপাদমস্তক ভাঙ্গারি মালামালের ব্যবসায়ী হলেও রাত যত গভীর হয়, ততই দাপিয়ে বেড়ায় ওই চক্রটি।


অনুসন্ধানে জানা গেছে, রাতের আঁধারে অবৈধভাবে পাগলার মুন্সীখোলা থেকে পাগলা বাজার ও আলীগঞ্জ মেইন রোডে রড, সিমেন্ট ও মূল্যবান মালামাল নিয়ে চলাচল করা চলন্ত পরিবহন থেকে প্রতিনিয়ত দুঃসাহসিক কায়দায় চুরি করছে একটি দুর্ধর্ষ চোর চক্র। শুধু কী তাই, এসব এলাকা ছাড়াও আশপাশ থেকে অটোরিকশা ছিনতাই, প্রাইভেটকার ও বাসাবাড়ির পাশে থাকা বিভিন্ন সরঞ্জাম চুরি করে চক্রটি। এসব চোরাই গাড়ি বা মালামাল পাগলা মুন্সিখোলাসহ পাগলার আশপাশের এলাকায় অবস্থিত ভাঙ্গারির দোকান গুলোতে বিক্রি করে ওই চোর চক্র। ফলে প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ চোরাই লোহাজাত দ্রব্য বিক্রি হচ্ছে ভাঙ্গারি দোকানগুলোতে। সন্ধ্যা গড়ালেই ভাঙ্গারির দোকানগুলোতে গভীর রাত পর্যন্ত গ্যাস দিয়ে চোরাই মালামাল কেটে টুকরা করে অন্যসব সরঞ্জামের সাথে মিশিয়ে রাখে চোরচক্রের সাথে সক্ষতা গড়ে তোলা ভাঙ্গারি ব্যবসায়ীরা।


সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ফতুল্লা থেকে পাগলা মেইন রোডের আশপাশে গড়ে উঠেছে একাধিক ভাঙ্গারি মালামাল কেনা-বেচার দোকান। এইসব দোকানির সহযোগিতায় এলাকা ভিত্তিক গড়ে উঠেছে একাধিক চোরের সিন্ডিকেট। দুর্ধর্ষ এই চোর চক্রের সিন্ডিকেট বিভিন্ন এলাকা থেকে বৈদ্যুতিক মোটর, তার, বৈদ্যুতিক ট্রান্স ফর্মার,  মিটার, দরজা-জানলার গ্রীল, টিন, লৌহজাত মালামাল, অটোরিকশা, ব্যাটারী, প্রাইভেটকারসহ যানবাহনের যন্ত্রাংশ চুরি করে দোকানিদের কাছে স্বল্পমূল্যে বিক্রি করে।


এসব মালামাল ভাঙ্গারি ব্যবসায়ীরা তাদের নিরাপদ স্থানে গোডাউন ঘরে মজুদ রাখে এবং মজুদের পর বিভিন্ন স্থানে তা সরবরাহ করে থাকে। সরেজমিনে জানাযায়, পাগলা মেরী এন্ডারসনের সামনে রাস্তার পশ্চিম পাশে ভাঙ্গারির দোকানটির মালিক হাবিবুল্লাহ। তার এই দোকানটি নিয়ন্ত্রণ করছে পুলিশের কথিত সোর্স আলী, সোর্স আমজাদ, চোর সাগরসহ ৪/৫ জন। তালতলা এলাকা নিয়ন্ত্রণ করছেন, জুয়াড়ি নজরুল, মাদক ব্যবসায়ী ইকবাল, সুমন, কাল্লুসহ ২/৩ জন। পাগলা দেলপাড়া রোড এলাকায় ভাঙ্গারি ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছে তোতলা জাহাঙ্গীর, টোকাই আরিফ, ড্রাইভার হোসেনসহ ৬/৭ জন।

 

পাগলা নন্দলালপুর রোডের এই সেক্টর নিয়ন্ত্রণ করছে মোহাম্মদ আলীসহ অন্যান্যরা। তাদের বিশাল এই চোর সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বছরের পর বছর চলছে রমরমা চোরাই মালমালের বাণিজ্য। রাত একটু গভীর হলেই এসব ভাঙ্গারির দোকানে চলে কাটাকাটি। অসংখ্য চোরা কারবারীদের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে এসব ভাঙ্গারি দোকান মালিকদের। পাগলা এলাকার বেশ কয়েকজন বাড়ির মালিকের সাথে কথা বলে জানা গেছে, কিছু মাদকসেবী নেশার টাকা  যোগাড় করতে এই চুরির পথ বেছে নিচ্ছে। আর চুরি করা মালামাল ভাঙ্গারি ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে দেয়।

 

চিতাশাল এলাকার বাসিন্দা অটোরিকশা গ্যারেজ মালিক মো. মন্টু মিয়া জানান, কিছুদিন আগে চোরের দল তার গ্যারেজ থেকে ব্যাটারির চার্জারসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র চুরি করে নিয়ে যায়। পরে তা পাগলা মেরী এন্ডারসনের সামনে এক ভাঙ্গারি দোকান থেকে টাকার বিনিময়ে উদ্ধার করা হয়। অন্য এক গাড়ির মালিক জানান, তার গাড়িটি মেরামতের জন্য অটো স্ট্যান্ডে রাখা অবস্থায় অতিরিক্ত চাঁকা ও কিছু যন্ত্রাংশ চুরি হয়ে যায়। এদিকে, পাগলা এলাকার এক ভাঙ্গারি ব্যবসায়ী জানান, চুরির মালমাল ছাড়া প্রকৃত ভাবে ভাঙ্গারি ব্যবসা করা খুবই কঠিন। আর পুলিশ প্রশাসনসহ সকলকেই ম্যানেজ করেই চলে এই ভাঙ্গারি ব্যবসা!


তিনি আরও জানান, একেকজন ব্যবসায়ীর ৫-৬ জন ফেরি ব্যবসায়ী থাকেন। তারা বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে কিছু নিত্যপণ্যের বিনিময়ে ব্যবহার অনুপযোগী কিংবা পরিত্যক্ত জিনিষপত্র সংগ্রহ করে বিক্রি করে থাকে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পাগলা ও আশপাশের এলাকার ফুটপাতে ও মহাসড়কে ক্রমাগত বেড়ে চলেছে ভাঙ্গারির দোকান। ফলে বাড়ছে চুরির সংখ্যা। তাই এসব দোকানে প্রশাসনের দ্রুত নজরদারী আনা উচিত বলে মনে করচেন সচেতন মহল। এদিকে, অভিযুক্ত ভাঙ্গারি ব্যবসায়ী হাবিবুল্লার সাথে যোগাযোগ করা হলে যুগের চিন্তাকে তিনি বলেন, ‘আমি এখানে ৫-৬ মাস ধরে ব্যবসা করছি। অনেকে ১০-১২ বছর ধরে এই ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। আর আমরা টাকা দিয়ে মালামাল কিনি। চোরাই নাকি অন্যকিছু, তা আমাদের দেখার বিষয় না।’ অভিযুক্ত জাহাঙ্গীরের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ভাঙ্গারির মালামাল কেনা বেচা ও চোর চক্রের সাথে তার সক্ষতার বিষয়টি অস্বীকার করেন।

 

এই বিষয়ে ফতুল্লা মডেল থানার ওসি রকিবুজ্জামানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘এই বিষয়গুলো আমার জানা নেই। যেহেতু এখন জানতে পেরেছি, সেহেতু এই বিষয়ে খোজ খবর নিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
 

এই বিভাগের আরো খবর