শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ৬ ১৪৩১

পারিবারিক নিয়ন্ত্রণে না’গঞ্জের রাজনীতি

এল আর আকাশ

প্রকাশিত: ২৪ জানুয়ারি ২০২৩  

 

# দলের চেয়ে নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করার প্রবণতা বেশি
# সুযোগ সন্ধানীরা দলীয় অনুকুলে না থেকে নির্দিষ্ট নেতাদের অনুকুলে থাকে

 

রাজনীতিতে পারিবারিক নিয়ন্ত্রণ নতুন কোন বিষয় না। জাতীয় রাজনীতিতে এধরণের পারিবারিক সূত্র ধরে নেতৃত্ব দেওয়ার প্রচলন ব্যাপকভাবে দেখা যায়। বিশেষ করে যাকে কেন্দ্র করে কোন দলের উৎপত্তি হয় সেই দলের প্রতি তার পরিবারের সদস্যদের ভালোবাসার কারণেই ধীরে ধীরে তারা সেই দলের রাজনীতিতে জড়িয়ে যায়।

 

 

তবে বর্তমানে স্থানীয় রাজনীতিকে পারিবারিকভাবে ব্যবহারের কারণে সামগ্রিক রাজনীতি তার রং হারিয়ে বিবর্ণ রূপ ধারণ করছে বলে মনে করছেন অনেকে। এসব রাজনৈতিক পরিবারের প্রভাবশালী সদস্যগণ তাদের নিজেদের আধিপত্য ধরে রাখার জন্য এখন নিজেদের সংশোধন করে গুনগত মান বাড়ানোর চেয়ে অন্যকে দমিয়ে রাখার জন্যই ব্যস্ত সময় পার করেন বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অভিমত।

 

 

তবে এর মধ্যে যদি একটি দলকে কেন্দ্র করে দুটি রাজনৈতিক পরিবারের মধ্যে পারিবারিক দ্বন্দ্ব থাকে, কিংবা একই পরিবারে দুটি রাজনৈতিক দলের শক্ত অবস্থান থাকে তাহলেতো আর রক্ষে নেই।

 

 

নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতেও সেই রীতির পুরোপুরি সদ্ব্যবহারে কোন কার্পণ্য দেখা যাচ্ছে না বলে এখানকার রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অভিমত। এখানকার রাজনীতি, বিশেষ করে শহর কেন্দ্রিক রাজনীতি ওসমান পরিবার (আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি), চুনকা পরিবার (আওয়ামী লীগ) ও জালাল হাজী পরিবার (বিএনপি) নামের উপরই যেন ঘুরপাক খাচ্ছে।

 

 

এই তিনটি দলের ছত্রছায়ায় থাকতেই যেন দলগুলোর নেতা, কর্মী ও সমর্থকরা বেশি পছন্দ করেন। এর ফলে প্রত্যেকটি দলের সুবিধাবাদী নেতাকর্মীরা সুবিধা পায় বেশি। দলকে শক্তিশালী করার চেয়ে রাজনীতিতে নিজেদের অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করার প্রবণতা নারায়ণগঞ্জের প্রায় সব দলেই লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তবে স্থানীয়ভাবে এসব রাজনৈতিক দলের প্রয়োজনে এধরণের পরিবারের ভূমিকার গুরুত্বও কম নয়।

 


 
জেলা হিসেবে নারায়ণগঞ্জ একসময় রাজধানী ঢাকার অন্তর্গত থাকলেও বর্তমানে তা রাজধানীর পাশ্ববর্তী জেলা হিসেবে পরিচিত। শিল্প-শৈল্পিক, অর্থ-বাণিজ্যসহ বিভিন্ন্ ক্ষেত্রেই দেশব্যাপি আলোচনার কেন্দ্র বিন্দুতে নারায়ণগঞ্জ। বাংলাদেশের প্রধান তিনটি দলের সৃষ্টিতেও আছে নারায়ণগঞ্জের অবদান।

 

 

তাই স্বভাবতই দলগুলোর কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে এসব পরিবারের রাজনৈতিক সদস্যের গুরুত্ব বেশি থাকে। ফলে স্থানীয় রাজনৈতিক গুরু হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন তারা। স্থানীয় বিভিন্ন কমিটির নেতৃবৃন্দও তাদের নিজেদের অবস্থান নিশ্চিত করতে এবং ভাগ্য পরিবর্তন করতে এসব রাজনীতিবিদদের ছায়াকে ব্যবহার করতে দ্বিতীয়বার ভাবেন না। সেজন্যই এখানকার সুযোগ সন্ধানীরা যতটা না দলীয় অনুকুলে থাকে তার চেয়েও বেশি নির্দিষ্ট নেতাদের অনুকুলে থাকে।

 

 

তাই যখনই ওসমান পরিবার তার কোন নিজস্ব বলয়ের নৌকার কর্মীকে বলেন লাঙ্গলের হয়ে কাজ করতে তখন তারা এরজন্য দ্বিতীয়বার ভাবেন না। কারণ তাদরে মতে যেখানে লাঙ্গল সেখানেই নৌকা। অর্থাৎ লাঙ্গল বা নৌকা যে মার্কা-ই হোক না কেন তাতে-তো এই পরিবারেরই তুষ্টি লাভ করা যাবে।

 

 

নারায়ণগঞ্জে যেহেতু আওয়ামী লীগ বা জাতীয় পার্টি দুটি দলেরই পরিচালনায়ই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন ওসমান পরিবার। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের যারা ওসমান পরিবারের সু-দৃষ্টি পান না, তারা চেষ্টা করেন চুনকা পরিবারের সাথে মিশে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করা। তেমনি নারায়ণগঞ্জ বিএনপির বিশেষ করে শহরকেন্দ্রীক বিএনপির রাজনীতিতে জালাল হাজী পরিবারও একটি ফ্যাক্টর হিসেবে পরিচিত।

 


 
বিভিন্ন রাজনৈতিক সূত্রে জানা যায়, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে শক্ত অবস্থানে থাকা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দুই জনপ্রিয় নেতা ছিলেন একেএম শামসুজ্জোহা ও আলী আহাম্মদ চুনকা। এই দুই পরিবারের মধ্যে রাজনৈতিক বিরোধ থাকলেও দলটির নিয়ন্ত্রণ বজায় থাকে এই দুই পরিবারের মাঝেই।

 

 

১৯৮৪ সালে আলী আহাম্মদ চুনকার মৃত্যুর পর আওয়ামী লীগের নিয়ন্ত্রণ এককভাবে ওসমান পরিবারের হাতে চলে গেলেও ২০০৩ সালে চুনকার কন্যা ডা. সেলিনা হায়াত আইভী আবারও রাজনীতিতে ফিরে আসার পর থেকে আবারও এই দুই পরিবারের নিয়ন্ত্রণে চলে যায় নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের নিয়ন্ত্রণ।

 

 

অন্যদিকে দল গঠনের পর থেকেই নারায়ণগঞ্জ বিএনপির শহর কেন্দ্রিক রাজনীতিতে হাজী জালাল উদ্দিন এবং ২০০১ সালের পর থেকে তার পুত্র এডভোকেট আবুল কালামের সূত্র ধরে তাদের পরিবারের নিয়ন্ত্রণে চলে আসে বিএনপির রাজনীতি। সম্প্রতি সময় তারা অনেকটা ব্যাকফুটে থাকলেও শহর বিএনপির রাজনীতিতে এই পরিবারের নিয়ন্ত্রণ যে এখনও বিদ্যমান রাজনীতি নিয়ে যারা কিছুটা হলেও ভাবেন তারা খুব সহজেই বুঝতে পারেন।

 

 

জাতীয় পার্টির নারায়ণগঞ্জ যাত্রাও শুরু হয় ওসমান পরিবারের সদস্য একেএম নাসিম ওসমানের হাত ধরে। যা বর্তমানে তারই আরেক ভাই একেএম সেলিম ওসমান নেতৃত্ব দিচ্ছেন। অন্যদিকে জাতীয় পার্টি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন নাসিম ওসমানের সহধর্মিনী পারভীন ওসমান ও তার পরিবার।
 

এই বিভাগের আরো খবর