বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১২ ১৪৩১

পুরো রমজান জুড়ে শহরকে যানজটমুক্ত রাখার দাবি

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশিত: ২২ মার্চ ২০২৩  

 

# অবৈধ স্ট্যান্ড, ফুটপাত দখলমুক্ত রাখলে কিছুটা সুরাহা হতে পারে

 

 

আর একদিন পরই পবিত্র মাহে রমজান। শিল্পনগরী খ্যাত নারায়ণগঞ্জবাসীর বর্তমানের সবচেয়ে বড় ভোগান্তির নাম যানজট। আর রমজান এলে এই যানজট যেন আরও ফুলে-ফেঁপে ওঠে। শহরের মধ্য দিয়ে মেয়াদোত্তীর্ণ, ফিটনেস ও অনুমোদনবিহীন গাড়ির অনিয়মতান্ত্রিক চলাচল ও যত্রতত্র পার্কিং, ব্যাটারী চালিত অবৈধ রিকশা অটো ইজিবাইকের নিয়ন্ত্রণহীন চলাচল ও একাধিক অবৈধ স্ট্যান্ডের কারণে প্রতিনিয়ত তৈরি হচ্ছে যানজট। তাই নারায়ণগঞ্জের মানুষ এই যানজটকে এখন অভিশাপ হিসেবেই দেখতে শুরু করেছে। নগরীর বঙ্গবন্ধু সড়ক, টার্মিনাল সড়কসহ মূল শহরের সড়কগুলোতেই সকাল থেকে রাত পর্যন্ত প্রায় সব সময়ে যানজট দেখা যায়।

 

এই যানজটে প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েও দিন দিন ক্ষুব্ধ হচ্ছেন নারায়ণগঞ্জের সাধারণ মানুষ। যানজটে অস্থির মানুষগুলো বিশেষ করে এই রমজানকে কেন্দ্র করে এই অভিশাপ থেকে মুক্তি চায়। এরই মধ্যে রমজানে শহরকে যানজটমুক্ত করার লক্ষ্যে পুলিশ সদস্যদের উদ্বুদ্ধ করার জন্য নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য একেএম সেলিম ওসমানের উদ্যোগে ২৫ লাখ টাকার অনুদান দেওয়া হয়েছে। তবে এই যানজট নিদেনপক্ষে পুরো রমজান জুগে যেন মুক্ত থাকে সেটাই এখন শহরবাসীর দাবি। বিশেষ করে ফিটনেসবিহীন গাড়িগুলোর দৌরাত্ম্যের উপর যেন এই অল্প সময়ের জন্য হলেও প্রশাসন নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারে সেটাই চাচ্ছেন তারা। এরই মধ্যে রমজানকে কেন্দ্র করে যানজট নিয়ন্ত্রণে মাঠে নেমেছে প্রশাসন। গতকাল শহরের বেশ কয়েকটি জায়াগায় পুলিশ প্রশানের বেশ তৎপরতা দেখা যায়।

 

সূত্রমতে নারায়ণগঞ্জে এখন পর্যন্ত যতগুলো গাড়ি রেজিস্ট্রেশন করা আছে তার চেয়েও কয়েকগুণ বেশি যানবাহন রাস্তায় চলাচল করে। যার মধ্যে বেশিরভাগ গাড়িই ফিটনেসবিহীন, লক্কর-জক্কর, মেয়াদোত্তীর্ণ ও অনুমোদনবিহীন। নেই বৈধ রুট পার্মিট, নেই ড্রাইভারদের লাইসেন্স। শহরে বৈধ-অবৈধ প্রায় ২০-২৫টি বাস কোম্পানি রয়েছে বলে জানা যায়। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- শীতল এসি বাস সার্ভিস, সিটি বন্ধন (পুরাতন বন্ধন), উৎসব পরিবহন, আনন্দ পরিবহন, বোরাক, হিমাচল, আল্লাহ ভরসা, শীতলক্ষ্যা, বন্ধু পরিবহন, বাঁধন পরিবহনসহ বেশ কয়েকটি আন্ত:জেলার বাস সার্ভিস।

 

শহরবাসীর অভিযোগ, শহরের বঙ্গবন্ধুর সড়ক, সিরাজউদ্দৌল্যা সড়ক, শায়েস্তা খান সড়ক, প্রেসিডেন্ট রোড, মীরজুমলা সড়কসহ খানপুর, চাষাঢ়া, ব্যাংকমোড়, ২নং রেলগেট, ১নং রেলগেট, টার্মিনাল, কালিরবাজার, নিতাইগঞ্জ অর্থাৎ মূল শঞরের এমন কোন জায়গা নেই যেখানে যানজটের ভোগান্তি নেই। এসব এলাকা ও সড়কের যেকোন জায়গায় যখন খুশি তখনই যেকোন গাড়ি থামিয়ে যাত্রি উঠানো নামানোর কাজ করছে। যানবাহনগুলো প্রভাবশালীদের নিয়ন্ত্রণে থাকায় ভয়ে কেউ মুখ খুলতেও সাহস পায় না।

 

নারায়ণগঞ্জের প্রভাবশালী একটি মহল এসব যানবাহন থেকে কোটি-কোটি টাকার চাঁদাবাজি করে বলে বিভিন্ন সময় অভিযোগ ওঠে। এমনকি এখান থেকে ট্রাফিক ও চাষাড়া পুলিশ ফাঁড়ির সদস্যরাও মোটা অংকের টাকা আদায় করছে বলে অভিযোগ বিভিন্ন সময় পাওয়া যায়। যার ফলে সাধারণ নাগরিক খুবই অসহায় হয়ে পড়েছে। এর আগে এসব ট্রাকস্ট্যান্ড, বাসস্ট্যান্ড ও লেগুনা থেকে পুলিশ ও বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নামে কোটি কোটি টাকা চাঁদা আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী।

 

এরই মধ্যে চাষাড়া মোড়, মেট্রো হল, খানপুর, রাইফেল ক্লাব মোড় এলাকায় দেখা যায়, মৌমিতা পরিবহনের একাধিক বাস সড়কের বিভিন্ন জায়গায় ট্রাফিক পুলিশের উপস্থিতিতেই গাড়ি পার্কিং করে আছে দীর্ঘ সময় ধরে। যা সম্পূর্ণ আইনের পরিপন্থী। এই গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না কেন জানতে চাইলে নাম না বলার শর্তে এক ট্রাফিক পুলিশ বলেন, ভাই আমরা কি করবো, আপনারা নিজেরাওতো পত্রিকায় নিউজ করতেছেন, তারপরও পারতেছেন না। তাদের হাত অনেক লম্বা। আমরাও যানজট নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খাচ্ছি। কিন্তু কাউকে কিছু বলতেও পারতেছি না, কিছু করতেও পারতেছি না।

 

শহরবাসীর অভিমত মূলত মৌমিতার এই বেপরোয়া আচরণেই সিংহভাগ যানজট হচ্ছে। ফলে মানুষকে ঘন্টার পর ঘন্টা রাস্তার মাঝেই অলস সময় পার করতে হচ্ছে। একদিকে খানপুর হাসপাতালের সামনে থেকে মিশনপাড়া, চাষাঢ়া ও রাইফেল ক্লাব এলাকা পর্যন্ত এক মৌমিতাই যানজটের জন্য যথেষ্ট। এখানে পুরো রাস্তা জুড়ে চলে তাদের রাজত্ব। এরা শহরবাসীকে এভাবে চরম ভোগান্তিতে ফেললেও প্রশাসন নিশ্চুপ, নেই কোন কার্যকরী পদক্ষেপ। এখানে প্রশাসনের দুর্বলতার অভিযোগ আনা হয়।

এস.এ/জেসি
 

এই বিভাগের আরো খবর