বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ৫ ১৪৩১

পুলিশ তৎপর হলে ছেলেকে হারাতাম না - রিয়াদের বাবা

যুগের চিন্তা অনলাইন

প্রকাশিত: ২০ জুন ২০২১  

পুলিশ তৎপর হলে সিদ্ধিরগঞ্জের চাঞ্চল্যকর মাদরাসা ছাত্র রিয়াদ (৭) হত্যাকান্ড এড়ানো যেত বলে অভিযোগ মামলার বাদী ও রিয়াদের পিতা রাজুর। তিনি বলেন, চলতি বছরের ২৪ এপ্রিল অপহরণ করা হয় শিশু রিয়াদকে। ঘটনার দিনই পুলিশকে বিষয়টি জানানো হয়। তবে পুলিশ তার কথা গুরুত্ব দেয়নি। শুরুতেই পুলিশ তার কথার গুরুত্ব দিয়ে সন্দেহভাজন আসামি ছেড়ে না দিলে ছেলেকে হারাতেন না বলে দাবি রাজুর।

 

শুরুতে বাদীর সহযোগিতা না পাওয়ার অভিযোগ থাকলেও আসামি গ্রেফতারের পর দ্রুততার সাথে তদন্ত শেষ করে পুলিশ। ২৫ দিনের মধ্যে আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করে পুলিশ। রিয়াদ চরশিমুল পাড়ায় একটি মাদ্রাসায় পড়াশোনা করত। সে তার মা-বাবার ছোট ছেলে। নিহত রিয়াদের বাবা রাজু সিদ্ধিরগঞ্জের সুমিলপাড়া পূর্ব মুনলাইট রেললাইন এলাকার করিম মিস্ত্রির বাড়ির ভাড়াটিয়া। মামলার বাদী মো. রাজু জানান, মুক্তিপণের ফোন পাওয়ার পরপরই সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় যান তিনি। তবে পুলিশ তাকে সহযোগিতা করেনি। পরে র‌্যাবের কাছে যান রাজু।

 

র‌্যাবের পরামর্শে ২৮ এপ্রিল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। জিডির কাগজ নিয়ে র‌্যাব-১১ এর কার্যালয়ে যান। সেখানে প্রযুক্তির সহায়তায় আসামির অবস্থান নিশ্চিত করা হয়। তবে র‌্যাব কর্মকর্তারা তাকে বলেন, ‘আমরা এ মুহূর্তে অন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যস্ত আছি। আপনার মামলার আসামিদের ধরতে দুই-তিন দিন সময় লেগে যাবে। বিষয়টি নিয়ে এসপি অফিসে যোগযোগ করুন।’ র‌্যাবের পরামর্শে প্রযুক্তিগত তথ্য-উপাত্ত নিয়ে এসপি অফিসে গেলে এসপি অফিস থেকে আসামিকে গ্রেফতারের জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়। এরপর আসামি গ্রেফতার করা হয়।

 

রাজু বলেন, ‘এতদিনে আমার ছেলেকে অপহরণকারীরা হত্যা করে ফেলে। ঘটনার পরই যখন আসামিকে ধরে থানায় নিয়ে যাই, তখনই যদি পুলিশ আসামি ছেড়ে না দিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নিতো তাহলে হয়তো আমার ছেলেকে হারাতে হতো না। আসামি সুজন থানা থেকে ছাড়া পাওয়ার পরই আমার ছেলে রিয়াদকে হত্যা করে।’ পুলিশ জানায়, আসামি সুজন সম্পর্কে খুন হওয়া রিয়াদের খালু। গ্রেফতারের পর আসামি আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছে। জবানবন্দিতে সে জানায়, রিয়াদের চাচা সাজুর সহযোগিতায় মুক্তিপণের জন্য রিয়াদকে অপহরণ করে রাজু।

 

পরে দু’জন মিলে গলাটিপে শ্বাসরোধ রিয়াদকে হত্যা করে তারা। আসামির দেওয়া তথ্যমতে, গত ৫ মে ভোরে সিদ্ধিরগঞ্জের জালকুড়ি মাতবর বাজার এলাকার পরিত্যক্ত একটি ডোবার ঘাসের নিচ থেকে অর্ধগলিত অবস্থায় রিয়াদের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিদ্ধিরগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শওকত জামিল বলেন, অপহরণকারীরা ভিকটিমের পরিবারের কাছে মোবাইল ফোনে দেড় লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করছিল। ভিকটিমের বাবা রাজু এবং খালু সুজন একসঙ্গে থানায় এসেছিলেন। সুজনের আচরণে সন্দেহ হওয়াতে আমরা তাকে জিজ্ঞাসাবাদও করি। কিন্তু ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার পর্যাপ্ত তথ্য না পেয়ে তখন তাকে ছেড়ে দেই। পরে প্রমাণ পেয়ে ৫ মে তাকে গ্রেফতার করি।

 

তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে রিয়াদের লাশ উদ্ধার করি। এরপর সুজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। জবানবন্দিতে তিনি জানান, রিয়াদের চাচা সাজুর সহযোগিতায় অপহরণ ও হত্যাকা- ঘটেছে। রিয়াদের পা ধরেছিল সাজু। আর সুজন গলাটিপে হত্যা করে। তদন্ত কর্মকর্তা আরও বলেন, পরে ৩০ মে সাজু ও সুজনকে আসামি করে আদালতে চার্জশিট দিই। তারা দুজনই এখন জেলহাজতে আছেন। এক প্রশ্নের উত্তরে তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, অপহরণের পরই রিয়াদকে হত্যা করা হয়। তাই প্রথম দিকে যখন জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়, তখন গ্রেফতার দেখানো হলেও রিয়াদকে জীবিত পাওয়া সম্ভাবনা ছিল না।


 

এই বিভাগের আরো খবর