শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪   চৈত্র ১৫ ১৪৩০

প্যানেল মেয়র শাহজালাল বাদলের স্ত্রীর রহস্যজনক মৃত্যু

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশিত: ৬ মার্চ ২০২৩  



নারায়ণগঞ্জের চাঞ্চল্যকর সাত খুন হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামী নূর হোসেনের ভাতিজা ও নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র-২ শাহজালাল বাদলের স্ত্রী সাদিয়া ইসলাম নিঝুর মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। রোববার দুপুর একটার দিকে নারায়ণগঞ্জ শহরের চাষাড়া বালুর মাঠ এলাকার একটি ৭ তলা ভবন থেকে পড়ে গিয়ে তার মৃত্যু হয়।

 

 

নিহত ৩০ বছর বয়সী সাদিয়া ইসলাম নিঝুর, চাষাড়া বালুর মাঠ এলাকায় রাজু মিয়ার বাড়িতে থাকতেন। তিনি জাতীয় পার্টির নেতা আলী হায়দার শামীম মেয়ে ও নিঝু বিউটি পার্লারের মালিক। এর আগে নিঝু সংবাদ সম্মেলন করে তার স্বামীর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ করেছিলেন।

 


নিহতের মা ঝর্ণা হায়দার বলেন, দুপুরে শরীর ক্লান্ত লাগায় সাত তলার ছাদে হাঁটা চলা করতে যায় নিঝু। ছাদে একা থাকা অবস্থায় হঠাৎ পড়ে গিয়ে গুরুতর আহত হয়। পরে তাকে হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

 


নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার নুরুজ্জামান জানান, হাসপাতালে আনার আগেই তার মৃত্যু হয়েছে। তবে মৃত্যুর কারণ জানা যায়নি। ময়নাতদন্তের পর কারণ নিশ্চিত হওয়া যাবে।

 


নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসি আনিচুর রহমান জানান, পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে। নিহত নিঝু পড়ে গিয়ে মারা গেছেন কিংবা আত্মহত্যা বা হত্যাকাণ্ড তা তদন্ত করা হচ্ছে।

 


এর আগে গত বছর ৮ ফেব্রুয়ারি নিজ বাড়িতে সাংবাদিকদের ডেকে নানা বিষয়ে অভিযোগ করেন নিঝু। সাদিয়া নিঝু বলেছিলেন, ২০০৭ সালে আমার সঙ্গে শাহজালাল বাদলের বিয়ে হয়। কিন্তু তিনি আমাকে স্ত্রীর অধিকার থেকে বঞ্চিত করছেন। আমাদের একমাত্র ছেলে আইভিএফ পদ্ধতির মাধ্যমে হয়েছে।

 

 

কারণ বাদল সন্তানদানে সম্পূর্ণ অক্ষম। তিনি আমার অনুমতি না নিয়ে দ্বিতীয় বিয়ে করেছে। তার চাচা, চাচাতো ভাই কাউকে সে প্রাধান্য দেয় না। তার মা ৪৫ দিন ধরে লিভার ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে, সে তার কোনো খরচ দেয়নি। বাদল মায়ের একমাত্র ছেলে। তার বাবা দুই বিয়ে করেছে।

 

 

তার মা ৭ বছর ধরে লিভার ক্যান্সারে ভুগছিলেন। আমার প্রেগন্যান্ট অবস্থায় সে টালবাহানা শুরু করে। সেসময় থেকে তার ফোন ঘণ্টার পর ঘণ্টা ওয়েটিং থাকতো, বাসায় থাকতো না। আমার বাচ্চাটা খুব অসহায়। ১০ বছর ধরে আমাদের মাঝে স্বামী স্ত্রীর কোনো সম্পর্ক নেই। আমার অন্যায় কি আমি জানতে চাই। যেহেতু সে জনপ্রতিনিধি, আমি জানতে চাই আমার সন্তানের দোষ কি?

 

 


তিনি আরও বলেন, আমি নারায়ণগঞ্জের মেয়ে। আমি জানতে চাই আমার সন্তানকে কেন এ বাসায় আসতে দেয়া হচ্ছে না। আমি কেন প্রতারিত হচ্ছি। আমার দুটি সন্তান মারা যাওয়ার পর এটা আমার একমাত্র সন্তান। আমরা অসহায়, আমাদের কোনো খরচ সে দিচ্ছে না।

 

 

আমি বাসায় আসার পর থেকে সে আমার ফোন ধরে না। আর বাসায়ও আসে না। আমি এ বিষয়ে মামলা করবো, আইনগত ব্যবস্থা নেবো। আমি চাই সমাজের সকলে আমার পাশে থেকে আমাকে সহযোগিতা করুক।

 


তবে কাউন্সিলর শাহজালাল বাদল সেসময় সাংবাদিকদের জানান, নিঝু নেশাগ্রস্ত। তাকে তার সুস্থ্যতায় রিহ্যাব সেন্টারে পাঠানো হবে। তার বিষয়টি পারিবারিকভাবে সমাধানের চেষ্টা চলছে।

 


এলাকাবাসী জানায়, সাত খুন মামলার ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি নূর হোসেনের ভাতিজা কাউন্সিলর বাদলের ৩ থেকে ৪টি স্ত্রী রয়েছে। কোনো স্ত্রী তার বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙ্গুল তুললে ওই স্ত্রীকে কখনো পাগল, কখনো মানসিক অসুস্থ, কখনো নেশাগ্রস্ত বলে চালিয়ে দেয়।

 


এ ব্যাপারে কাউন্সিলর শাহজালাল বাদল জানান, আমি আমার অফিসে কাজ করছিলাম। তখনই আমার শাশুড়ীর ফোন আসে। উনি বললেন তুমি তাড়াতাড়ি আসো, নিঝু ছাদ থেকে পড়ে গেছে। ওর সাথে কোন পারিবারিক কলহ ছিল না। এই চার পাঁচদিন আগেও ও আমার সাথেই ছিল। আমার ছেলে এখানে ক্যামব্রিয়ান স্কুলে পড়ে তাই ও এখানেই বেশি থাকে। এন.হুসেইন/জেসি

এই বিভাগের আরো খবর