শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ৬ ১৪৩১

প্রভাবশালীর আশ্রয়ে প্রশ্রয়ে বেপরোয়া বিটু

যুগের চিন্তা অনলাইন

প্রকাশিত: ১৮ জুন ২০২১  

আয়তনের দিক থেকে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের বেশ কয়েকটি বড় বড় ওয়ার্ডের মধ্যে ১৮ নং ওয়ার্ড অন্যতম। এই ওয়ার্ডের উত্তর দিকে রয়েছে নিতাইগঞ্জ, জমিদারী-কাচারী গল্লী এবং মাছুয়াবাজারের মতো শহরের কিছু অভিজাত এলাকা। অন্যদিকে দক্ষিণে রয়েছে শহীদনগর, গোপচর ও ডিয়ারা। মূলত ভৌগলিক ভাবে নারায়ণগঞ্জ সিটির করপোরেশনের দক্ষিণে’র শেষ প্রান্তে অবস্থিত এই এলাকাগুলো, এখনো নানা ভাবে পিছিয়ে আছে।

 

কারণ শহীদনগর, গোপচর ও ডিয়ারার স্থানীয় লোকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, নাসিকের আওতায় আসার পর এখানে রাস্তাঘাট ও অন্যান্য খুটিনাটি উন্নয়ন হলেও, এখানকার মানুষজন অর্থনৈতিকভাবে তেমন স্বাবলম্বী হতে পারেনি। এলাকাগুলোর অধিকাংশ পরিবারের আয়ের একমাত্র উৎস প্রবাসে থাকা সন্তানের পাঠানো টাকা ও গুরুর দুধ বিক্রি করে উপার্জন করা অর্থ। কিন্তু এর পরেও এই জনপদের লোকজন বিভিন্ন ভাবে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলেও, তাঁদের এই যাত্রায় বাধা হয়ে দাড়াঁচ্ছে মাদকদ্রব্য।

 

এছাড়া কিশোর গ্যাং’র তান্ডব, জমি দখল ও চাঁদাবাজির মতো ভয়ানক সামাজিক অপরাধও এখানে তুঙ্গে। কিন্তু এসব এলাকায় মাদক ব্যবসা, কিশোর গ্যাং পরিচালনা ও জমি দখলের মতো অপতৎপরতা কাদের হাত ধরে চলছে? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলে, প্রথমেই উঠে আসবে সালাউদ্দিন বিটুর নাম। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নগরীর তামাকপট্টি এলাকার সাধারণ এক পরিবার থেকে উঠে আসা মধ্যবয়ষ্ক এক যুবক ‘বিটুর’ একছত্র আধিপত্য ১৮ নং ওয়ার্ডের এই এলাকাগুলোর মধ্যে। এখানে বিটু নিয়ন্ত্রণ করেন একাধিক কিশোর গ্যাং। আর এই কিশোর গ্যাং’র সদস্যরাই শহীদনগর ও গোপচরের বিভিন্ন স্থানে জমি দখল, চাঁদাবাজি এবং মাদক বিক্রির মতো ভয়ঙ্কর অপরাধে জড়িত।

 

তাছাড়া মাদক বিক্রিতে বিটু এখন এতটাই বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন যে, হাত বাড়ালেই ইয়াবা, গাঁজা ও ফেনসিডিল পাওয়া যায় এই এলাকাগুলোতে। তবে দিন দিন এসব অসামাজিক কর্মকান্ডের দিক দিয়ে অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠা বিটুকে কোন ভাবেই থামানো যাচ্ছেনা বলেও জানা গেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শহীদনগর এলাকার এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, গত ৫-৬ বছর আগেও আমাদের এই এলাকায় মাদকের কোন ছিটে ফোঁটাও ছিলোনা। তবে এখন প্রায় অধিকাংশ বাড়ির যুবকরাই বিভিন্ন নেশায় আসক্ত। আসলে আমাদের আসলে আমাদের এখানে প্রচুর মাদক বিক্রি হয়। স্থানীয় কিছু কিছু অল্প বয়সী যুবকই এর সাথে জড়িত। সেইসঙ্গে বাহির থেকে অপরিচিত লোকজন এসেও এখানে ফেনসিডিলের ব্যবসা করে।

 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গোপচরের এক জনপ্রতিনিধি বলেন, তামাকপট্টি থেকে এসে এক ক্যাডার এখানে মাদকের ব্যবসা করেন। এতে এলাকার উঠতি বয়সী তরুণরা অকালেই ঝড়ে পরছে। তারা বাড়ি থেকে টাকা পয়সা চুরি করে মাদক কিনে খায়। এছাড়া অনেকে বাবা মা‘কে টাকার জন্য মারধরও করে। তাই আমরা দ্রুতই এই মাদক থেকে মুক্তি চাই। আশাকরি প্রশাসনের লোকজন এই এলাকায় মাদক ব্যবসার সাথে যারা জড়িত তাদের অবশ্যই আইনের আওতায় আনবে।  

 

এদিকে সূত্র জানায়, ১৮ নং ওয়ার্ডে মাদক ব্যবসা ও নানান অপরাধ মূলক কর্মের মূল হোতা সালাউদ্দিন বিটুর কোন নিদৃষ্ট রাজনৈতীক পরিচয় নেই। কিন্তু তবুও নারায়ণগঞ্জের প্রভাবশালী এক জনপ্রতিনিধি’র বেয়াইয়ের (ছেলের শশুর) আশ্রয়-পশ্রয়ের মধ্যদিয়ে এসব অপকর্ম করে যাচ্ছেন বিটু। পাশাপাশি এগুলোর মাধ্যমে ইতিমধ্যে অঢেল সম্পদের মালিকও হয়েছেন তিনি। তৈরী করেছেন বিশাল অট্টালিকা, রয়েছে ব্যাংকে নগদ অর্থও।
 

এই বিভাগের আরো খবর