বৃহস্পতিবার   ২৮ মার্চ ২০২৪   চৈত্র ১৪ ১৪৩০

প্রিয়া’কে নিয়ে না’গঞ্জে মিশ্র প্রতিক্রিয়া

প্রকাশিত: ২৫ জুলাই ২০১৯  

ইউসুফ আলী এটম : ‘প্রিয়া’ নাকি ‘প্রিয়’।‘বিশ্বাস’ নাকি ‘সাহা’! দৈনিক প্রথম আলো পড়তে গিয়ে হোঁচট খাওয়ার উপক্রম। শুরুতে প্রিয়া লিখলেও পরবর্তীতে প্রিয় সাহা লিখছে প্রথম আলো। 


একজন নারীর নাম নিয়ে দেশের প্রথম শ্রেণীর দৈনিকটির এমন ভৌতিক আচরণ কেনো ? কারণ খুঁজতে গিয়ে দেখা গেলো, তাদের নীতিমালা অনুযায়ী প্রথম আলো কোন বাড়াবাড়ি করেনি। ডাকনাম বর্জন প্রথম আলোর নিজস্ব নীতিমালা। 


“সংখ্যালঘুরা বাংলাদেশে নির্যাতিত হচ্ছে”- মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ট ট্রাম্পের কাছে -এমন ধরণের নালিশ জানিয়ে বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক-প্রিয়া সাহা ওরফে প্রিয় বালা বিশ্বাস কিংবা প্রিয় সাহা ‘টক অব দ্যা ওয়ার্ল্ড’-এ পরিণত হয়েছেন।


এ নালিশকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশেও তোলপাড় শুরু হয়েছে। নারায়ণগঞ্জের সংখ্যালঘু অধ্যুষিত পাড়া মহল্লাসহ সমাজের বিভিন্ন স্তরে প্রিয়াকে নিয়ে নানারকম মন্তব্য চলছে। অনেকে এ ঘটনায় বড় কোন দেশের হাত রয়েছে বলে মনে করেন।

 

অনেকে আবার প্রিয়াকে গুপ্তচর আখ্যা দিয়ে বলছেন, তার এ বক্তব্য সংখ্যালঘুদের জন্য পীড়াদায়ক। তবে কেউ কেউ বলছেন, আগে প্রিয়া দেশে ফিরে এসে ব্যাখ্যা প্রদান করুক। যদি তার ব্যাখ্যা গ্রহণযোগ্য হয় তবে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়।


 সরকারের কয়েকজন প্রভাবশালী মন্ত্রী ইতোমধ্যেই বিরূপ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেছেন। দেশের বিভিন্নস্থানে প্রিয়া’র বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা হলেও তা খারিজ হয়ে গেছে। বিদেশে অবস্থানরত প্রধানমন্ত্রী প্রিয়া’র বিরুদ্ধে কোনরকম ব্যবস্থা নেয়ার আগে তাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেয়ার নির্দেশ প্রদানের পর উত্তেজনা কমতে শুরু করেছে।


 প্রিয়া সাহা’র আদ্যোপান্ত :

পিরোজপুর জেলার নাজিরপুর উপজেলার মাটিভাঙ্গা ইউনিয়নের চরবানিয়ারী গ্রামের মৃত নগেন্দ্র বিশ্বাসের মেয়ে প্রিয় বালা বিশ্বাসই এই সময়ের আলোচিত প্রিয়া সাহা। যশোহরের ছেলে মলয় কুমার সাহা তার স্বামী।

 

মলয় দুদকের সদর দফতরে সহকারি উপ-পরিচালক পদে কর্মরত। প্রিয়া-মলয় দম্পতির ২ মেয়ে প্রজ্ঞা পারমিতা সাহা ও ঐশ্বর্য লক্ষ¥ী সাহা বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশুনা করছেন।

 

প্রিয়া সাহা বর্তমানে ধানমন্ডির রোড-৪/এ, বাসা-৪৩,এএনজেড এ্যাম্বোসিয়া,ফ্ল্যাট-বি/২তে স্বামীর সাথে বসবাস করেন। অভিযোগ রয়েছে,২মেয়েকে গ্রিণকার্ড পাইয়ে দেয়া এবং নিজে ওই দেশে রাজনৈতিক আশ্রয় পাওয়ার আশায় তিনি ট্রাম্পের কাছে এসব ভিত্তিহীন নালিশ করেছেন।

 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলতি বছরের শুরুতে চরবানিয়ারীতে প্রিয়া সাহার ভাই জগদীশ চন্দ্র বিশ্বাসের একটি অব্যবহৃত ঘরে ভৌতিক অগ্নিকান্ডের ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।

 

প্রিয়া তার নিজ স্বার্থ হাসিলের জন্য তার ভাইয়ের জমি নিয়ে বিরোধের জের ধরে স্থানীয় হিন্দু ও মুসলমান সম্প্রদায়ের  বেশ কয়েকজনকে মামলা দিয়ে হয়রানি করে আসছেন।এই ঘটনাকেই রংমিশিয়ে তিনি ট্রাম্পের কাছে উপস্থাপন করেছেন যা সর্বৈব মিথ্যা ও বানোয়াট। 


নারায়ণগঞ্জে মিশ্র প্রতিক্রিয়া : 

প্রিয়া সাহার স্পর্শকাতর বক্তব্যটি নিয়ে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন স্তরের মানুষ মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান তাঁর প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন,যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা পাওয়াটা খুব সহজ নয়।

 

কিন্তু প্রিয়াকে ভিসা দিয়ে খুব সহজে ট্রাম্পের সাথে দেখা করে কথা বলার সুযোগ করে দেয়ার পেছনে একটা মিশনতো অবশ্যই আছে। যুক্তরাষ্ট্রের অনুগত বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষেই কথা বলেছেন প্রিয়া। আওয়ামী লীগ সরকারকে এ জিনিসটি মাথায় রেখে সাবধানে পা ফেলতে হবে।


নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি মাহবুবুর রহমান মাসুম বলেন, প্রিয়া সাহার আচরণ কোনমতেই গ্রহণযোগ্য নয়। নিজ দেশের প্রতি তিনি অন্যায় আচরণ করেছেন। তবে প্রধানমন্ত্রী তাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিয়ে উভয়কুল রক্ষা করেছেন।তার নির্দেশনায় বিচক্ষণতার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে।


নারায়ণগঞ্জ জেলা পূজা কমিটির সভাপতি শংকর সাহা প্রিয়ার বক্তব্যকে প্রত্যাখ্যান করে তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন,আমরা অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী। প্রিয়ার বক্তব্যে সনাতন ধর্মের ‘৭১-এর রাজাকারের চরিত্র ফুটে ওঠেছে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উজ্জ্বল নিদর্শন বাংলাদেশ।

একটা দূরভিসন্ধি নিয়েই প্রিয়া সাহা যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে  দেশবিরোধী বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি হয়তো নিজের অজান্তেই কোন ষড়যন্ত্রে জড়িয়ে পড়েছেন। তিনি ক্ষুব্ধ কন্ঠে বলেন, প্রিয়া সাহা আমাদের কমিউনিটির জন্য একটা কলংক। আমরাতো কোন সভা করে তাকে এ ধরণের বক্তব্য দেয়ার জন্য দায়িত্ব দেইনি।

 

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,প্রধানমন্ত্রী ত্বরিত নির্দেশনা দিয়ে দূরদর্শিতার পরিচয় দিয়েছেন। তিনি উদার মনের অধিকারী। প্রিয়ার স্পর্শকাতর বক্তব্যকে পূঁজি করে যাতে কোন মহল দেশে বিশৃংখলা সৃষ্টি করতে না পারে সেই রাস্তাটি প্রধানমন্ত্র্রী তার প্রজ্ঞা দিয়ে রুদ্ধ করে দিয়েছেন।

 

অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,প্রিয়া সাহা এমন কোন আহামরি গোছের ব্যক্তি নন যে তার স্বার্থান্বেষী বক্তব্যের জন্য পার্শ্ববর্তী কোন দেশে বিরূপ প্রভাব পড়বে।


নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শিক্ষানুরাগী প্রিয়ার বক্তব্যকে আর্ন্তজাতিক খেলা হিসেবে চিহ্নিত করে বলেছেন, এর পেছনে কোন বড় দেশের হাত রয়েছে। পার্শ্ববর্তী একটি বড় দেশে বর্তমানে কমিউনাল সরকার ক্ষমতায়। সেই দেশের মুসলমানেরা অনেক ভালো আছেন। প্রিয়ার বক্তব্যটি নিঃসন্দেহে ইঙ্গিতবহ।


সাহা ফাউন্ডেশনের যুগ্ম-আহ্বায়ক সুভাষ সাহা বলেন, প্রিয়ার বক্তব্যে আমরা ক্ষুব্ধ। প্রধানমন্ত্রীর দেয়া সুযোগ গ্রহণ করে তিনি দেশে ফিরে আত্মপক্ষ সমর্থন করবেন বলে আমাদের বিশ্বাস। তার ব্যাখ্যা সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হলে আমরাও মেনে নেবো।    
 

এই বিভাগের আরো খবর