মঙ্গলবার   ১৬ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ৩ ১৪৩১

প্লাস্টিক ফুলের দখলে তাজা ফুল

আবু সুফিয়ান

প্রকাশিত: ৬ জানুয়ারি ২০২৩  


তাজা ফুল এবং এর ব্যবহার মনকে যেমন সতেজ করে তেমনি অনন্য এক প্রাকৃতিক ভাবের স্পন্দন তৈরি করে মনের ভেতর। একটা সময় ছিল যখন বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠানে তাজা ফুলের ব্যবহার ব্যাপক ছিল। কিন্তু দুঃখজনক হলেও তাজা ফুলের ব্যবহার দিন দিন কমে যাচ্ছে।

 

 

আর সেই জায়গা দখল করছে প্লাস্টিক দ্বারা তৈরি বিভিন্ন রকমের ফুল। বর্তমানে বিয়ে, জন্মদিন, আকিকা, প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী, বিভিন্ন শোক দিবস, ১৪ ফেব্রুয়ারি, একুশে ফেব্রুয়ারি, ২৬ শে মার্চ, ১৬ই ডিসেম্বরসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তাজা ফুলের বদলে বেড়েই চলেছে আমদানি করা প্লাস্টিকের ফুলের চাহিদা।

 

 

ফুল ব্যবসায়ী সূত্রে জানা যায়, প্লাস্টিকের এই ফুলগুলো বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা হয়ে থাকে। নারায়ণগঞ্জের ফুল শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কয়েক বছর ধরে বিদেশি প্লাস্টিক ফুলের আমদানি বেড়েই চলেছে। তারা জানান, যখন প্লাস্টিক ফুল ছিল না তখন তাজা ফুলের ব্যাপক চাহিদা ছিল।

 

 

আর এই চাহিদা মেটাতে তাজা ফুলের চাষের পরিধি বেড়ে যায়। যার কারনে অসংখ্য বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের সুযোগও সৃষ্টি হয়েছিল। চীন সহ বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা এসব প্লাস্টিক ফুলের কারণে তাজা ফুলের কদর দিন দিন কমে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন তারা।

 

 

আরোও জানান, তাজা ফুলের বিক্রি কমে যাওয়ায় ব্যবসায়ী সহ ফুল শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকলের জীবিকা হুমকির মুখে রয়েছে। নারায়ণগঞ্জ শহরে যে সকল ব্যবসায়ী প্লাস্টিক ফুল বিক্রি করেন তারা জানিয়েছেন, আমদানি করা প্লাস্টিকের ফুল অনেক কম দামে পাওয়া যায় এবং বহুবার ব্যবহারযোগ্য বিধায় এই প্লাস্টিকের ফুল গুলোর চাহিদা প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে।

 

 

তারা জানান, এই প্লাস্টিকের তৈরি ফুলগুলো চীন থেকেই বেশি আমদানি করা হয়ে থাকে। তাজা ফুল ব্যবসায়ীদের দাবি, কিছু লোক ব্যবসার নামে চীন ও থাইল্যান্ড থেকে প্লাস্টিকের ফুল আমদানি করে সম্ভাবনাময় ফুল চাষকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। তারা বলেন, গত কয়েক বছর ধরে কোন ধরনের আমদানি নীতি ছাড়াই দেশে প্লাস্টিকের ফুলের আমদানি বেড়েছে।

 

 

নারায়ণগঞ্জ শহরের ফুল ব্যবসায়ী ফিরোজ বলেন, ফুল চাষীরা ঋণ নিয়ে জমিতে ফুল চাষ করেন। প্লাস্টিক ফুলের ব্যবহারের কারণে তাজা ফুলের ব্যবহার দিন দিন কমে যাচ্ছে আর আমাদের আয়ের দরজা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে ফুল চাষি ও ফুল ব্যবসায়ীরা ঋণের জালে জড়িয়ে সর্বস্বান্ত হয়ে পড়বেন বলে তিনি জানান। এন.এইচ/জেসি

 

 

এই ব্যবসায়ী শেষে বলেন, ফুল নিত্য প্রয়োজনীয় কোন পণ্য নয়, এটা হল একটা শখের জিনিস। ফুল পচনশীল হওয়ায় বিক্রি না হলে পচে নষ্ট হয়ে যায়। এতে ব্যবসায়ীদের অনেক লোকসান হয়ে যায়। তিনি বলেন, বর্তমানে তাজা ফুলের ব্যবসা ভালো যাচ্ছে না বিধায় বেশিরভাগ ভুল ব্যবসায়ী ফুল ছেড়ে সবজি চাষে আগ্রহী হচ্ছেন।

 

 

তাজা ফুল তার সৌন্দর্য বেশিদিন ধরে রাখতে পারে না জানিয়ে নারায়ণগঞ্জ শহরের একজন প্লাস্টিক ফুল ক্রেতা বলেন, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে, বিয়ে বাড়িতে বা ঘর সাজাতে এখন প্লাস্টিক ফুলের বিকল্প নাই। তাজা ফুল দিয়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠান বা ঘর সাজালে দ্রুত শুকিয়ে যায় তাই প্লাস্টিক ফুলের দিকেই ক্রেতারা বেশি ঝুকছেন বলে তিনি জানিয়েছেন।

 

 

ফুল ক্রেতা রাজিয়া সুলতানা জানান, ঘর সাজাতে অনেক দিন হয় তাজা ফুল কেনা হয় না। জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিভিন্ন প্রয়োজনে ঘর সাজাতে এখন তাজা ফুলের বদলে প্লাস্টিকের ফুল কিনছি। কারন তাজা ফুল পচনশীল, দামও বেশি। তাছাড়া একবার প্লাস্টিকের তৈরি বিভিন্ন রকমের আর বিভিন্ন রং-এর ফুল কিনলে একাধিকবার ব্যবহার করা যায়।

 

 

তাজা ফুলের থেকে অনেক কম দামে এসব ফুল পাওয়া যায়। এতে অর্থের অপচয় কম হয় বলে তিনি জানান। কিন্তু একই দোকানের আরেক ফুল ক্রেতা জানান ভিন্ন কথা। তিনি গোলাপ, রজনীগন্ধা এসব তাজা ফুল কিনতে এসেছেন।

 

 

হাসানুর রহমান নামের এই ক্রেতা বলেন, দিনে দিনে তাজা ফুলের চাহিদা কমে গেলেও তাজা ফুল রূপে গুণে তার নিজস্ব জায়গায়ই থাকবে। তাজা ফুলের তুলনা কখনই অন্য কিছু দিয়ে হবে না। তিনি বলেন, সুন্দর মনের মানুষরাই ফুল কিনে থাকেন। ফুল প্রেমিদের প্লাস্টিক কিনে মন ভরে না।

 

 

নারায়ণগঞ্জের ফুল ব্যবসায়ী রুবেল হোসেন বলেন, সরকার যদি তাজা ফুলের শিল্পকে টিকিয়ে রাখার জন্য বিদেশ থেকে আমদানি করা প্লাস্টিক ফুলের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেন তাহলে দেশের ফুল শিল্পের পরিধি যেমন বাড়বে তেমনি দেশে ফুলের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশও ফুল রপ্তানি করে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক অর্জন করাও সম্ভব হবে।