বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১১ ১৪৩১

ফজর আলীর প্রভাব বিস্তার করে ভূমিদস্যুতা করতো রুবেল

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশিত: ২ জুলাই ২০২২  

 


# র‌্যাবের জালে দৌলত হত্যাকাণ্ডের আসামী গ্রেপ্তার

 

নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার গোগনগর ইউনিয়নের সাবেক দৌলত মেম্বার হত্যার ঘটনায় এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে এই হত্যা মামলার প্রধান আসামী ও ইউনিয়নের  ৮ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার রুবেল আহম্মেদ। তার পরিকল্পনায় এবং নির্দেশে দৌলত মেম্বারকে খুন করা হয় বলে পরিবারের অভিযোগ। তবে এখনো এই হত্যার ঘটনায় প্রধান আসামী গ্রেপ্তার হন নাই। 

 

তাকে গ্রেপ্তারের জন্য দাবী তুলেন নিহতের পরিবার। তবে তাকে আইনের আওতায় না আনতে পারায় নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন তারা। এবার এই রুবেলে বিরুদ্ধে ভূমিদস্যুতার অভিযোগ উঠেছে। ভূমিদস্যুতায় তিনি গোগনগরের চেয়ারম্যান ফজর আলীর প্রভাব বিস্তারসহ বিভিন্ন অসহায় মানুষের জায়গা দখল করে নিতেন রুবেল বাহিনী। 

 

অভিযোগ রয়েছে এই বাহিনীকে শেল্টার দিতেন ফজর আলী। যার জন্য ভয়ে এলাকার কোন মানুষ তাদের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস পায়নি। তাই এবার একের পর এক মানুষ তাদের কুকর্ম নিয়ে মুখ খুলতে শুরু করেছে। তাছাড়া মুজিববর্ষ উপলক্ষে গৃহহীনদের ঘর উপহারের দেয়ার কথা বলে রুবেল মেম্বার মানুষের কাছ থেকে ২ লাখ করে টাকা নিয়েছে বলে জানান এলাকাবাসী।

 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি জানান , এই রুবেল মেম্বার জোর পূর্বক ভাবে তার শশুর মোশরফের জন্য এক অসহায় ব্যক্তির জায়গা দখল করে নেন। পরে তাকে জোর করে অল্প টাকা দিয়ে তার কাছ থেকে লিখে নেন। তাকে বলা হয়েছে এই টাকা না নিলে জায়গা পাবি না আর টাকাও পাবিনা তাই তিনি বাধ্য হয়ে টাকা নিয়েছেন। ফজর আলীর প্রভাব বিস্তার করে রুবেল এই অপকর্ম করতেন। তাই এলাকাবাসী তার ফাঁসির দাবী জানান। তা না হলে সে আরেকজন শীর্ষ সন্ত্রাসী হয়ে উঠবে। এখনি তার লাগাম টেনে ধরা দরকার।

 

এদিকে অভিযোগ উঠেছে ফজর আলী চেয়ারম্যানের ইন্ধনে তার বিচ্ছুবাহিনীর সদস্য রুবেল মেম্বারের বাহিনীর হাতে গোগনগরের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার দৌলত সিকদার নিহত হন। এই ঘটনায় ২১ জনের নাম উল্লেখ করে নারায়ণগঞ্জ সদর থানায় হত্যা মামলা হয়। যার মামলা নম্বর ৩০। এই হত্যার পিছনে ফজর আলীর শেল্টার রয়েছে বলে অভিযোগ করেন এলাকাবাসী। রুবেল বাহিনী গোগনগরে ফজর আলীর বিচ্ছু বাহিনীর লিডার হিসেবে পরিচিত। একই সাথে তার প্রধান সহযোগী আনসারও কোন অংশে পিছিয়ে নেই।

 

গোগনগরে প্যানেল চেয়ারম্যান রুবেল বাহিনীর হাতে নির্মমভাবে হত্যা হন ওই ইউনিয়নের সাবেক মেম্বার দৌলত সিকদার। তবে তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ ভূক্তভোগীদের। তাকে হত্যার মূল পরিকল্পনায় রুবেল মেম্বার এবং আনসারের নাম উঠে। হত্যার ৫ দিন অতিবাহিত হলেও মূল আসামীরা এখনো ধরা ছোঁয়ার বাইরে রয়েছে। নিহতের পরিবারের অভিযোগ, পুলিশ আসামীদের গ্রেপ্তারে গাফলতি করছে। তবে এই হত্যাকান্ডের ঘটনায় ৩ জন দিনমজুরকে গ্রেপ্তার করেছে। অথচ এলাকাবাসী জানান, তারা এই ঘটনার সাথে কেউ জড়িত নন। তাদের আসামী করায় গোগনগর জুড়ে তীব্র সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে।


 
অন্যদিকে ফজর আলী চেয়ারম্যান হওয়া পর বিভিন্ন কর্মকান্ডের জন্য তিনি গোগনগর ইউনিয়নের মানুষের কাছে মূর্তিমান আতঙ্কে পরিণত হয়েছে।  তার বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই। তার ইউনিয়নে জন্ম সনদে, ওয়ারিশ সনদ, নাগরিক সেবার নামে সরকারি নিয়ম বাদ দিয়ে নিজে নিয়ম করে মানুষের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায় করছে বলে একাধিক ভূক্তভোগীরা অভিযোগ করেন। তার বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করলে তাকে ধরে নিয়ে মারধর করা হয়।

 

অভিযোগ রয়েছে, প্রশাসনের ব্যক্তিদের ভুল বুঝিয়ে ফজর আলী ধলেশ্বরী নদীর জায়গায় মুজিব বর্ষের নামের বরাদ্দ গৃহহীনদের ঘর নির্মাণ করেছে। গৃহহীনদের ঘর দেয়ার কথা বলে প্রতিটি লোকের কাছ অতিরিক্ত টাকা নিয়েছে বলে অভিযোগ ফজর আলীর বিরুদ্ধে। এই টাকার সকল হিসেব নিকেশ রুবেলের কাছে। কেননা তিনি সকল কিছু ডিল করতেন। এই ঘটনায় তার বিরুদ্ধে এলাকাবাসী মিলে ডিসি বরাবর স্বারক লিপিও প্রদান করেন। 

 

এছাড়াও  জোরপূর্বকভাবে মানুষের জায়গা দখল করে নিয়ে তাদের থেকে অল্প টাকা দিয়ে কিনে নেয়। তার বিচ্ছু বাহিনীর বিরুদ্ধে অসহায় মানুষের জায়গা দখলের অভিযোগ রয়েছে। এই জায়গা দখলে ফজর আলীর প্রধান খলিফা হিসেবে কাজ করেন রুবেল। খোজ নিয়ে জানাযায়, জেলার প্রভাবশালি পরিবারের শ্যালকের সাথে মিলে গোগনগরের চেয়ারম্যান ফজর আলী জায়গা জমিনের ব্যবসা করেন। বিভিন্ন ভেজাল জায়গা ক্রয় করে তা বেশি দামে বিক্রি করেন। তার মাথার উপর প্রভাবশালী পরিবারের আর্শীবাদ থাকায় দিন দিন তার ভূমিদস্যুতা বেড়েই চলছে বলে জানান স্থানীয়রা। 

 

তার বিরুদ্ধে গিয়ে কেউ ভয়ে মুখ খুলতে পর্যন্ত সাহস পায়না। গোগনগরের মানুষদের জিম্মি করে এক চেটিয়া শাসন করে যাচ্ছে এই জনপ্রতিনিধি। আর এনিয়ে সচেতন মহল প্রশ্ন তুলেন, একজন জনপ্রতিনিধি যদি ভূমিদস্যুতায় জড়িত থাকে তাহলে অসহায় মানুষ কোথায় যাবে। তার সকল কর্মকান্ডের স্বাক্ষী নিহত দৌলত মেম্বার হত্যার প্রধান আসামী রুবেল মেম্বারের ভাই রবিন। তিনি ফজর আলীর সকল কিছু ডিল করতেন বলে জানান একাধিক ব্যক্তি। এক কথায় ফজর আলীর সেকেন্ড ইন কমান্ড হিসেবে কাজ করতেন রবিন।

 

এলাকাবাসী জানান, গোগনগর ফজর আলী চেয়ারম্যান হওয়ার পর গোগনগরে সন্ত্রাসী কার্যক্রম বেড়েই চলছে। তার ইন্ধনে সন্ত্রাসী কার্যক্রম হওয়ায় তা আর থামছে না। যা এখন হত্যা পর্যন্ত নিয়ে এসেছে। ওই এলাকা যেন এখন সন্ত্রাসীদের আস্তানা গড়ে উঠেছে। কিছুদিন আগেও ফজর আলী বিচ্ছু বাহিনীর লোকজন প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে গোগনগরের সাবেক ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যার নুর হোসেনের উপরে গুলি চালান। 

 

এই ঘটনায় নুর হোসেন বেঁচে গেলেও গোগনগর ইউনিয়নের নারী সদস্য আহত হন। তখন ওই ঘটনায় ৮ জন গ্রেপ্তার হলেও পরে তারা জামিনে ছাড়া পেয়ে ফজর আলী বিচ্ছু বাহিনী সিমেন্ট ফ্যাক্টরী ও শীতলক্ষ্যা ৩য় সেতুর ওয়েস্টেজ মালামাল বিক্রির টাকার ভাগাভাগি নিয়ে কয়েক দফায় মারামারির ঘটনা ঘটে। সর্বশেষ এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে হত্যা পর্যন্ত হয়। 

 

২৬ জুন রাতে গোগনগর ইউনিয়নের সাবেক মেম্বার দৌলত সিকদারকে রুবেল মেম্বারের লোকজন পিটিয়ে হত্যা করে। অপর দিকে এলাকায় মাইকিং করা হয় রুবেল মেম্বারের ভাই এবং ফজর আলীর সেকেন্ড ইন কমান্ড রবিনও থাইল্যান্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। এই ঘটনার পিছনে গোগনগরবাসী স্থানীয় চেয়ারম্যানকে দায়ী করছেন। কেননা তিনি চাইলে আরও আগে থেকে সমাধান দিতে পারতেন। কিন্তু তাতে তিনি ব্যর্থতার পরিচয় দেন। 

 

ফজর আলীর বিরুদ্ধে এত অপকর্মের অভিযোগ থাকলেও তার বিরুদ্ধে প্রশাসন কেন কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে না, তা নিয়ে সচেতন নাগরিকরা প্রশ্ন তুলেন। সেই সাথে সচেতন মহল বলেন, একজন জনপ্রতিনিধি যদি এই ধরনের কর্মকাণ্ড করেন তাহলে মানুষ কি করবে। তাদের এখনই লাগাম টেনে ধরতে হবে। অন্যথায় এই এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম হতে পারে। যা ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। আর এনিয়ে পুরো গোগনগর জুড়ে আতঙ্ক বিরাজ করছে।

 

গোগনগরের দৌলত হত্যায় র‌্যাবের জালে আরও দুই আসামীকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা হলে ১৮ নম্বর আসামী সেলিম, অপর আসামী শ্যামল। সদর থানার তদন্ত ওসি সাইদুজ্জামান বলেন, আমারা অন্যান্য আসামীদেরকে গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান পরিচালনা করে যাচ্ছি, কেউ ছাড় পাবে না। এন.এইচ/জেসি
 

এই বিভাগের আরো খবর