বুধবার   ১৭ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ৩ ১৪৩১

ফজর আলীর বিচ্ছু বাহিনী আতঙ্কে গোগনগরবাসী

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশিত: ২৯ জুন ২০২২  

 

# চুন থেকে পান খসলেই মারামারির ঘটনা ঘটে
# নিয়ন্ত্রণহীন বিচ্ছু বাহিনী
# গোগনগরে মূর্তিমান আতঙ্ক ফজর আলী

 

নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার গোগনগর ইউনিয়ন যেন এখন সন্ত্রাষীদের শীর্ষ এলাকা হিসেবে রুপান্তরিত হতে যাচ্ছে। গতবছর  নভেম্বর মাসে গোগনগর ইউনিয়ন নির্বাচনে ফজর আলী নির্বাচিত হন। এখানে গত বছর ইউনিয়ন নির্বাচনের পরে কয়েকদিন পর পর আধিপত্য বিস্তার নিয়ে মারামারির ঘটনা ঘটছে। অভিযোগ রয়েছে এই আধিপত্য বিস্তারে ফজর আলীর শেল্টারে দফায় দফায় মারামারি ঘটনা ঘটে। তাই সচেতন মহল বলছে, যার ইন্ধনে একের পর একের ঘটনা ঘটে যাচ্ছে তার বিরুদ্ধে সবার আগে ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন। কেননা শেল্টারদাতা ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়।


এদিকে অভিযোগ উঠেছে ফজর আলী চেয়ারম্যানের ইন্ধনে তার বিচ্ছুবাহিনীর সদস্য রুবেল মেম্বারের বাহিনীর হাতে গোগনগরের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার দৌলত সিকদার নিহত হন। এই ঘটনায় ২১ জনের নাম উল্লেখ্য করে নারায়ণগঞ্জ সদর থানায় হত্যা মামলা হয়। যার মামলা নম্বর ৩০। এই হত্যার পিছনে ফজর আলীর শেল্টার রয়েছে বলে অভিযোগ করেন এলাকাবাসী। রুবেল বাহিনী গোগনগরে ফজর আলীর বিচ্ছু বাহিনীর লিডার হিসেবে পরিচিত। একই সাথে তার প্রধান সহযোগী আনসারও কোন অংশে পিছিয়ে নেই।  


অন্যদিকে ফজর আলী চেয়ারম্যান হওয়া পর বিভিন্ন কর্মকান্ডের জন্য তিনি গোগনগর ইউনিয়নের মানুষের কাছে মূর্তিমান আতঙ্কে পরিনত হয়েছে।  তার বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই। তার ইউনিয়নে জন্ম সনদে, ওয়ারিশ সনদ, নাগরিক সেবার নামে সরকারি নিয়ম বাদ দিয়ে নিজে নিয়ম করে মানুষের কাছে অতিরিক্ত টাকা আদায় করছে বলে একাধিক ভূক্তভোগীরা অভিযোগ করেন। তার বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করলে তাকে ধরে নিয়ে মারধর করা হয়।

 

অভিযোগ রয়েছে প্রশাসনের ব্যক্তিদের ফজর আলী ভূল বুঝিয়ে ধলেশ্বরী নদীর জায়গায় মুজিব বর্ষের নামের বরাদ্দ গৃহহীনদের ঘর নির্মাণ রয়েছে। গৃহহীনদের ঘর দেয়ার কথা বলে প্রতিটি লোকের কাছ অতিরিক্ত টাকা নিয়েছে বলে অভিযোগ ফাজর আলীর বিরুদ্ধে। এই ঘটনায় তার বিরুদ্ধে এলাকাবাসী মিলে ডিসি বরাবর স্বারক লিপি প্রদান করেন। এছাড়াও  জোরপূর্বকভাবে মানুষের জায়গা দখল করে নিয়ে তাদের থেকে অল্প টাকা দিয়ে কিনে নেয়। তার বিচ্ছু বাহিনীর বিরুদ্ধে অসহায় মানুষের জায়গা দখলের অভিযোগ রয়েছে।


 
খোজ নিয়ে জানাযায়, জেলার প্রভাবশালি পরিবারের শ্যালকের সাথে মিলে গোগনগরের চেয়ারম্যান ফজর আলী জায়গা জমিনের ব্যবসা করেন। বিভিন্ন ভেজাল জায়গা ক্রয় করে তা বেশি দামে বিক্রি করেন। তার মাথার উপর প্রভাবশালি পরিবারের আর্শীবাদ থাকায় দিন দিন তার ভূমিদস্যুতা বেড়েই চলছে বলে জানান স্থানীয়রা। তার বিরুদ্ধে গিয়ে কেউ ভয়ে মুখ খুলতে পর্যন্ত সাহস পায়না। গোগনগরের মানুষদের জিম্মি করে এক চেটিয়া শাসন করে যাচ্ছে এই জনপ্রতিনিধি। আর এনিয়ে সচেতন মহল প্রশ্ন তুলেন, একজন জনপ্রতিনিধি যদি ভূমিদস্যুতায় জড়িত থাকে তাহলে অসহায় মানুষ কোথায় যাবে। তার সকল কর্মকান্ডের রাস্বাক্ষী নিহত দৌলত মেম্বার হত্যার প্রধান আসামী রুবেল মেম্বারে ভাই রবিন। তিনি ফজর আলী সকল কিছু ডিল করতেন বলে জানান একাধিক ব্যক্তি। এক কথায় ফজর আলীর সেকেন্ড ইন কমান্ড হিসেবে কাজ করতেন রবিন।

 

এলাকাবাসী জানান, গোগনগর ফজর আলী চেয়ারম্যান হওয়ার পর গোগনগরে সন্ত্রাসী কার্যক্রম বেড়েই চলছে। তার ইন্ধনে সন্ত্রাসী কার্যক্রম হওয়ায় তা আর থামছে না। যা এখন হত্যা পর্যন্ত নিয়ে এসেছে। ওই এলাকা যেন এখন সন্ত্রাসীদের আস্তানা গড়ে উঠেছে। কিছুদিন আগেও ফজর আলী বিচ্ছু বাহিনীর লোকজন প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে গোগনগরের সাবেক ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যার নুর হোসেনের উপরে গুলি চালান। এই ঘটনায় নুর হোসেন বেঁচে গেলেও গোগনগর ইউনিয়নের নারী সদস্য আহত হন। তখন ওই ঘটনায় ৮ জন গ্রেপ্তার হলেও পরে তারা জামিনে ছাড়া পেয়ে ফজর আলী বিচ্ছু বাহিনী সিমেন্ট ফ্যাক্টরী, শীতলক্ষ্যা ৩য় সেতুর ওয়েস্টেজ মালামাল বিক্রির টাকার ভাগাভাগি নিয়ে কয়েক দফায় মারামারির ঘটনা ঘটে। 

 

সর্বশেষ এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে হত্যা পর্যন্ত হয়। ২৬ জুন রাতে গোগনগর ইউনিয়নের সাবেক মেম্বার দৌলত সিকদারকে রুবেল মেম্বারের লোকজন পিটিয়ে হত্যা করে। অপর দিকে এলাকাই মাইকিং করা হয় রুবেল মেম্বারের ভাই এবং ফজর আলীর সেকেন্ড ইন কমান্ড রবিনও থাইল্যান্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। এই ঘটনার পিছনে গোগনগরবাসী স্থানীয় চেয়ারম্যানকে দায়ী করছেন। কেননা তিনি চাইলে আরও আগে থেকে সমাধান দিতে পারতেন। কিন্তু তাতে তিনি ব্যর্থতার পরিচয় দেন। ফজর আলীর বিরুদ্ধে এত অপকর্মের অভিযোগ থাকলেও তার বিরুদ্ধে প্রশাসন কোন কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে না তা নিয়ে সচেতন নাগরিক প্রশ্ন তুলেন। সেই সাথে সচেতন মহল বলেন, একজন জনপ্রতিনিধি যদি এই ধরনের কর্মকান্ড করেন তাহলে মানুষ কি করবে। তাদের এখনি লাগাম টেনে ধরতে হবে। অন্যথায় ওই এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম হবে পারে। যা ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। আর এনিয়ে পুরো গোগনগর জুড়ে আতঙ্ক বিরাজ করছে।

 

গোগনগর ইউনিয়নের সাবেক ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নুর হোসেন জানান, ফজর আলী চেয়ারম্যান হওয়ার আমাদের এলাকা এখন ত্রাসের রাজত্ব চলছে। সে নিজের যোগ্যতায় ছোট ঘটনা ঘটলে তা মিটমাট করতে পারে না। এছাড়া তার বিচ্ছু বাহিনী বিভিন্ন আধিপত্য বিস্তার নিয়ে একে অপরের মাঝে দফায় দফায় মারামারি লাগে। যা শেষ পর্যন্ত হত্যাতে গড়ায়। এখানে তার ব্যর্থতাকে দায়ী করছে এলাকাবাসী। তিনি তার সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে আমার উপর হামলা করান। তখন তার বিচ্ছু বাহিনীর অন্যতম সদস্য রানা পিস্তল দিয়ে গুলি পর্যন্ত চালান। তখন কোন ব্যবস্থা নেয়া হয় নাই।  

 

গোগনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফজর আলী জানান, আমি লোক মুখে শুনেছি ৪ থেকে ৫ কেজি রড নিয়ে মারামারির ঘটনা ঘটে। তবে তারা কেউ আমার কাছে অভিযোগ নিয়ে আসে নাই। থানায় অভিযোগ হয়েছে প্রশাসন আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিয়েছে। এখানে আমার কিছু করার নেই। আর উভয় পক্ষ আমার আত্মীয়। যারা আমার বিপক্ষে অপপ্রচার চালান তারা নির্বাচনে আমার বিপক্ষে ছিলেন। তাই তারা বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন।এমই/জেসি
 

এই বিভাগের আরো খবর