শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ৭ ১৪৩১

ফতুল্লা থানাধীন এলাকা সন্ত্রাসীদের স্বর্গরাজ্য; জনগণের মৃত্যুপুরী

আরিফ হোসেন

প্রকাশিত: ৫ নভেম্বর ২০২২  


# কয়েক মাসেই ঘটেছে বেশ কয়েকটি আলোচিত হত্যাকাণ্ড

 

বাংলাদেশের মধ্যে নারায়ণগঞ্জ একটি অন্যতম জেলা। আর এই জেলা দেশের শীর্ষ ধনী জেলা হিসেবে পরিচিত। রাজনৈতিক ও বিভিন্ন কারণে এই নারায়ণগঞ্জের যেমন ব্যাপক সুনাম রয়েছে; তেমনি বিভিন্ন সময় আলোচিত হত্যাকাণ্ড, গুম, ধর্ষণ, ছিনতাই, চুরি ডাকাতি, মাদক, সন্ত্রাসী কার্যক্রমসহ বিভিন্ন কারণে এই নারায়ণগঞ্জের মানুষের জন্য কলঙ্কের তিলকও অঙ্কিত হয়েছে। 

 

 

এ সকল কারণে নারায়ণগঞ্জকে এখন অপরাধের সাম্রাজ্য বলা হয়। আর এই নারায়ণগঞ্জ জেলার মধ্যে ফতুল্লা থানা এরিয়াকে অপরাধ সংগঠিত হওয়ার মূল জোন হিসেবে পরিচিত। জানা যায়,এই ফতুল্লা থানা এরিয়াতে বিভিন্ন  সময় তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে চলে একেক পর এক হত্যাকাণ্ড। আর এই সকল হত্যাকান্ডের বেশিরভাগই ঘটে থাকে কিশোরদের দ্বারা; যাদের বয়স ১৬ - ২০ বছরের মধ্যে। তেমনি বেশ কয়েকটি হত্যাকান্ডে জনমনে ব্যাপক আলোচনা সমলোচনার জন্ম দিয়েছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কার্যক্রম নিয়ে।  

 

 

জানা যায়,গত ১৭ ই মে রাত ৮ টার দিকে  ফতুল্লার ইসদাইর রাবেয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ধ্রুব নামে দশম শ্রেনীর এক ছাত্রকে কুপিয়ে হত্যা করে তার সহপাঠীরা। এই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান,তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে পিয়াস নামে তার এক সহপাঠীর বাকবিতণ্ডা হয়।

 

 

পরে পিয়াস তার কয়েকজন বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে ধ্রুবকে ডেকে স্কুলের পাশে নিয়ে কুপিয়ে জখম করে পালিয়ে যায়। পরে স্থানীয়রা তাকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে।

 

 

এরপর  গত ৩০ জুলাই পূর্ব শত্রুতার জের ধরে পশ্চিম দেওভোগ এলাকায় মাদ্রাসার শেষ মাথায় মিয়াপাড়ার মাঠে নিয়ে মেহেদী হাসান কে  ছুরিকাঘাত করে হত্যা শেষে মৃতদেহ ফেলে রেখে যায় হত্যাকারীরা। এই হত্যাকান্ড বিষয়ে নিহতের স্বজন ও স্থানীয় নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্র থেকে জানা যায়, মেহেদী হাসান হত্যাকান্ডে আটজন কিলার হত্যার মিশনে অংশ নেয়।

 

 

প্রথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পারে, ২০২১ সালের ১৭ জুলাই ডেভিড গ্রুপ ও ওমর ফারুক গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষে নিহত হয় ওমর ফারুকের ভাই ইমন। সে সময় আহত হয় ওমর ফারুকে নিজেও। সেই হত্যা মামলার এজাহারনামীয় আসামী ছিলো নিহত মেহেদী হাসান। সেই মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদনে নিহত মেহেদী হাসানের নাম রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, ইমন হত্যার প্রতিশোধ নিতেই মেহেদীকে হত্যা করা হয়েছ।

 

 

এতেই শেষ নয়, গত ২৯ অক্টোবর ভোর ৪টায় কুষ্টিয়ার জে.এস বাস যোগে নারায়ণগঞ্জ শহরের চাষাঢ়া মোড়ে নেমে পায়ে হেটে চাষাঢ়া রেল ক্রসিং-এর দিকে যান ফতুল্লার বিসিক শিল্পনগরীর ফেইম এ্যাপারেলস লিমিটেডের জুনিয়র কোয়ালিটি অফিসার জনি। এসময় তাকে ছিনতাইকারী সাগরের হাতে থাকা সুইচ গিয়ার ছুরি কোমড়ে ঠেক দিয়ে জিম্মি করে।

 

 

মোবাইল ও মানিব্যাগ না দেয়ায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে ডান পায়ের হাটুর উপরে একটু পিছনের দিকে আঘাত করে। এ সময় জনি’র হাতে থাকা মোবাইল ফোন ও মানিব্যাগ ছিনতাই করে পালিয়ে যান সাগর। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের ফলে ভোরে জয়নুর রহমান জনি (২২) মারা যায়। আর এই হত্যাণ্ডের ঘটনার সূত্র ধরে পরের দিনই এই এলাকায় অভিযান চালিয়ে ২ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ এবং প্রাথমিক ভাবে তারা এর দায় স্বীকার করে।

 

 

এই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই ঘটে গেছে গতকাল ফতুল্লার কুতুবপুরে ঘটে গেল  আরেকটি ঘটনা গতকাল শুক্রবার সকালে স্থানীয় লোকজন পিলকুনি মোল্লা বাড়ী মসজিদ সংলগ্ন একটি ডোবায় লাশ দেখতে পেয়ে। ৯৯৯ নাম্বারে ফোন করলে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশটি উদ্ধার করে। পুলিশের ধারণা, বৃহস্পতিবার রাতের যে কোন সময়ে অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা তাঁকে হত্যা করে ডোবায় ফেলে রেখে গেছে। নিহতের পরনে জিন্স প্যান্ট ও গায়ে নীল রংয়ের ফতুয়া রয়েছে।

 

 

ঘটনাস্থলে যাওয়া ফতুল্লা মডেল থানার উপ-পরিদর্শক এসআই,শাহাদাত হোসেন জানান, ‘লাশের গলায় কালো দাগ রয়েছে । বৃহস্পতিবার রাতে কোনো এক সময়ে দূর্বৃত্তরা তাকে হত্যা করে ডোবায় রেখে গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। লাশটি ময়না তদন্তের জন্য হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। নিহত ব্যক্তির নাম পরিচয় সনাক্তের চেষ্টা চলছে এবং হত্যার রহস্য উদঘাটনেও কাজ করছে পুলিশ।’

 

 

ফতুল্লা থানাভুক্ত এলাকায় এই সকল হত্যাকাণ্ড ছাড়াও মাদকের ছড়াছড়ি এবং বিভিন্ন ধরণের অপকর্ম প্রতিনিয়তই চলছে। এসকল ঘটনার বিভিন্ন সময় আসামীরা গ্রেফতার হলেও খুব শীঘ্রই তারা জামিনে বেরিয়ে আসে এবং সমাজে চলতে থাকে বীরদর্পে। অসহায় সাধারণ জনগণ দিনদিন তাদের দাপটে আজ দিশেহারা।

 

 

‘দুঃখজনক হলেও সত্যি ফতুল্লা থানাধীন এলাকায় এমন কি একজন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তা বা সদস্য নেই; যে অসহায় সাধারণ জনগণকে রক্ষা করবে’, ব্যাথাতুর মন নিয়ে প্রতিবেদকের কাছে কথাগুলো তুলে ধরেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি আরো বলেন, ‘আমরা মাদক সম্রাট ও কিশোর বয়সী সন্ত্রাসীদের হাতে আজ আমরা ফতুল্লা থানাধীন এলাকাবাসী জিম্মি ভাবতেও লজ্জা পাই।’  

 

 

এই ফতুল্লার মানুষ এখন আতঙ্কের মধ্যে পার করে প্রতিটা সময়। তাই এই এলাকার মানুষের একটাই দাবি প্রশাসন যদি আরও কঠোর না হয় তাহলে হত্যাকাণ্ড, মাদকের বিস্তার, সন্ত্রাসী কার্যকলাপ বন্ধ করা সম্ভব নয়। আরও যদি এভাবেই সন্ত্রাসীদের দর্পভরে পদচারণায়, কেউ হারাবে সন্তান, কেউ হারাবে ভাই, আবার কেউবা স্বামী।

 

 

তবে বর্তমানে এই ফতুল্লার বেশ কয়েকটি হত্যাকাণ্ডে যুক্ত হয়েছে ব্যাপকহারে ছিনতাই আর কোন কোন জায়গাতে গভীর রাত হলেই দেশী অস্ত্র ঠেকিয়ে ব্যাটরি চালিত অটো রিকশা ছিনিয়ে নেওয়া হয় আর না দিতেই চাইলেই ছুরিকাঘাত করে হত্যা করা হয়।

 

 

তাই অত্র এলাকার জনসাধারণ প্রশাসনের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, দ্রুত ব্যাপক পর্যায়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উচিত চিহ্নিত অপরাধীদের বিরুদ্ধে  অভিযান পরিচালনা করা এবং দিনে ও রাতে পুলিশের টহল তৎপরতা বাড়াতে হবে। এন.এইচ/জেসি

এই বিভাগের আরো খবর