শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১২ ১৪৩১

ফতুল্লায় ইউনিয়নে নির্বাচনী আমেজ

যুগের চিন্তা অনলাইন

প্রকাশিত: ১১ জুন ২০২১  

মামলা জটিলতার কারণে দীর্ঘ ২৯ বছর ধরে নির্বাচনের স্বাদ পাচ্ছে না ফতুল্লা ইউনিয়নবাসী। তবে, এবার মামলার জট খুলেছে বলে স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে। তাই চলতি বছর অন্যান্য ইউনিয়ন পরিষদের ন্যায় ফতুল্লাতেও নির্বাচন হওয়ার জোরগুঞ্জন চলছে। নির্বাচন নিয়ে আগ্রহের কমতি নেই ফতুল্লাবাসীর মাঝে। যদিও নির্বাচন বঞ্চিত ওই ইউনিয়নে নির্বাচন হওয়ার বিষয়ে স্থানীয় সরকার বা নির্বাচন কমিশন থেকে আনুষ্ঠানিক কোন ঘোষণা আসেনি।  

 

এদিকে, আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না আসলেও মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে- এমন খবরে অনেকের মাঝেই বইছে নির্বাচনের আগাম উৎসবের আমেজ। ইতিমধ্যেই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনে অংশ নিতে অনেকেই আশা প্রকাশ করছেন। নির্বাচনে প্রার্থী হতে আগ্রহীদের কর্মী সমর্থকরা নিজ নিজ নেতা বা পছন্দের সম্ভাব্য প্রার্থীদের নিয়ে আলোচনা তুলছেন। জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জ জেলার গুরুত্বপূর্ণ ইউনিয়ন পরিষদ ফতুল্লা। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, পুলিশ সুপার, আদালত, জেলা কারাগার, এলজিইডি ভবন, সদর উপজেলা কার্যালয়সহ আরো বেশ কিছু সরকারী-বেসরকারী গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা রয়েছে এই ফতুল্লা ইউনিয়নের অধিনে।

 

সরকারী হিসেবে মতে, ৩ দশমিক ৬১ বর্গমাইল আয়তনবিশিষ্ট ইউনিয়নটির ১০টি মৌজায় লোকসংখ্যা ১ লাখ ১৭ হাজার ৮৩৩ জন বলা হলেও বেসরকারী সূত্র বলছে, ইউনিয়নটিতে ভাসমান লোক সংখ্যা অন্তত ২০ লাখের মত। এছাড়াও শিক্ষা, সংস্কৃতি, খেলাধুলা এবং সামাজিক ও ধর্মীয় দিক দিয়েও ফতুল্লার দীর্ঘ ঐতিহ্য রয়েছে। এত গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলের বাসিন্দা হওয়া সত্বেও মামলা জটিলতার কারণে দীর্ঘ ২৯ বছর ধরে নির্বাচনের দেখা পায়নি ফতুল্লাবাসী। সর্বশেষ ১৯৯২ সালে ফতুল্লা ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সেবার নির্বাচিত হয়েছিলেন তল্লা এলাকার বাসিন্দা নূর হোসেন চেয়ারম্যান।

 

অভিযোগ রয়েছে, ১৯৯৬ সালে ফতুল্লা ইউনিয়নের তৎকালীন চেয়ারম্যান নূর হোসেন ও ৫নং ওয়ার্ডের সদস্য আব্দুল মালেক মিলে নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য পর্দার আড়াল থেকে তাদের নিজস্ব লোক দিয়ে হাইকোর্টে ইউনিয়নের পক্ষে ও বিপক্ষে দুইটি মামলা দায়ের করান। এতে ইউনিয়নের নির্বাচন স্থগিত রাখতে হাইকোর্ট নির্দেশ দেন। ফলে এ ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন হওয়া এযাবৎ ছিলো অনিশ্চিত। সম্প্রতি ওই দুই মামলার মধ্যে একটি মামলার বাদি বিবাদী ইন্তেকাল করেন। ফলে মামলাটি নিষ্পত্তি হয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। ইউনিয়নটির বর্তমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান খন্দকার লুৎফুর রহমান স্বপন।

 

সূত্র বলছে, নূর হোসেন চেয়ারম্যান মৃত্যুবরণ করার পর নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার তৎকালিন নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মোতাহার হোসেনের তত্বাবধানে ও স্থানীয় সাংসদ সারাহ বেগম কবরীর উপস্থিতিতে ২০১১ সালের ১৬ মে ইউপি সদস্যগণের প্রত্যক্ষ ভোটে মালেক মেম্বারকে হারিয়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হন খন্দকার লুৎফুর রহমান স্বপন। সেই থেকে তার উপর ভর করেই চলছে ফতুল্লা ইউনিয়নের কার্যক্রম। তবে, মামলার জট খোলার খবরে উচ্ছাস প্রকাশ করেছেন বর্তমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান খন্দকার লুৎফুর রহমান স্বপন নিজেও। ভারপ্রাপ্ত হিসেবে নয়; নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব পালন করার আগ্রহের কথা জানিয়েছেন তিনি।

 

গতকাল দৈনিক যুগের চিন্তাকে তিনি বলেন, ‘সুনেছি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। এটা আমার জন্যে খুশির খবর। ভারপ্রাপ্ত হয়ে ভালোকাজ করলেও এর মূল্যায়ন নির্বাচিত চেয়ারম্যানের মত পাওয়া যায় না। আমি চাই নির্বাচন হোক। আর নির্বাচন হলে জনগণ যদি আমাকে চায় আর আমি যদি দলের মনোনয়ন পাই তাহলে অবশ্যই নির্বাচন করবো।’ এদিকে, মামলার জট খোলার খবরে উচ্ছাসিত ফতুল্লার প্রথম সারির নেতৃবৃন্দরাও। তারাও দলের মনোনয়ন প্রাপ্ত হয়ে নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত হওয়ার আশা ব্যক্ত করেছেন। এই তালিকায় শোনা যাচ্ছে ফতুল্লা থানা যুবলীগের সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মীর সোহেল আলী, থানা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ফাইজুল ইসলাম, ফতুল্লা থানা ছাত্রলীগের সভাপতি ও আসন্ন যুবলীগ কমিটির সম্ভাব্য নেতা আবু মোহাম্মদ শরীফুল হক, ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ফরিদ আহমেদ লিটনের নাম।

 

ইতিমধ্যেই তারা জনসেবামূলক কাজে সম্পৃক্ত আছেন। তাই আসন্ন ইউপি নির্বাচন নিয়ে তাদের নিজ নিজ কর্মী সমর্থকদের মাঝে চলছে নানা জল্পনা কল্পনা। এই বিষয়ে জানতে চাইলে মীর সোহেল আলী বলেন, ‘মামলা নিষ্পত্তি হওয়ার বিষয়টি বিভিন্ন আলোচনায় শুনতে পাচ্ছি। নির্বাচন নিয়ে ফতুল্লাবাসীর মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ। ফতুল্লার মানুষ যদি আমাকে চায় এবং আমাদের নেতা সাংসদ শামীম ওসমান ভাই যদি আমাকে যোগ্য মনে করেন, তাহলে অবশ্যই আমি নির্বাচন করবো এবং ফতুল্লাবাসীর খেদমতে কাজ করে যাবো।’ একই প্রত্যাশাব্যক্ত করে থানা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ফাইজুল ইসলাম বলেন, ‘মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে বলে খবর পেয়েছি। যদিও আনুষ্ঠানিক ভাবে কোন ঘোষণা আসেনি। আর নির্বাচন প্রসঙ্গে এলাকাবাসী আমাকে নিয়ে আগ্রহী। এখন সাংসদ শামীম ওসমান ভাইসহ আমাদের থানার নেতৃবৃন্দ যারা আছেন, তারা যদি চান তাহলে আমি আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করবো।’

 

থানা ছাত্রলীগের সভাপতি ও আসন্ন যুবলীগ কমিটির সম্ভাব্য নেতা আবু মোহাম্মদ শরীফুল হক বলেন, যদি মামলা নিষ্পত্তি হয়ে থাকে, তাহলে নির্বাচন হওয়ার ক্ষেত্রে কোন প্রতিবন্ধকতা থাকার কথা নয়। কর্মী সমর্থকসহ স্থানীয় এলাকাবাসির মাঝে আলোচনা চলছে। তাই নির্বাচন নিয়ে আমিও আগ্রহী। আমাদের নেতা সাংসদ শামীম ওসমান ভাই যদি আমাকে নির্বাচন করার জন্য বলেন, তাহলে অবশ্যই আমি নির্বাচন করবো এবং নির্বাচিত হয়ে মানুষের খেদমত করার মাধ্যমে শামীম ওসমান ভাইয়ের আস্থার প্রতিদান দেব ইনশাআল্লাহ। এদিকে, ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. ফরিদ আহমেদ লিটনও নির্বাচন করতে আগ্রহী বলে তার কর্মী সমর্থকদের মাধ্যমে জানা গেছে। 
 

এই বিভাগের আরো খবর