বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১২ ১৪৩১

ফতুল্লায় মৃত্যুফাঁদ বিদ্যুতের ফোর-ফরটি লাইন

যুগের চিন্তা অনলাইন

প্রকাশিত: ২৭ মে ২০২১  

ফতুল্লায় মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে ট্রান্সফর্মা থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহের এলপি বা ৪৪০ ভোল্টের তার। যা ফোর-ফরটি লাইন হিসেবে পরিচিত। প্রায় সময়ই স্পার্ক হয়ে ছিড়ে পড়ে এমন হেভী ভোল্টের তারগুলো। এতে প্রাণহানীসহ ঘটে চলেছে ছোট-বড় দূর্ঘটনা। সংশ্লিষ্ট ডিপিডিসি তা সাময়ীক সময়ের জন্য জোড়া-তালি দিলেও স্থায়ী ভাবে সংস্কার করছেন না। এতে করে যেকোন সময়ে আরো বড় ধরনের দূর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী।  

 


সবশেষ গত ১৬ ফতুল্লার লালপুরে জাপানী মহিউদ্দিনের বাড়ীর সামনের রাস্তায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে জয়নাল (২২) নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়। জয়নাল লালপুরের সালাম- কালামের ভাড়াটিয়া রাজ্জাক হাওলাদারের পুত্র ও ফতুল্লা ইউনিয়ন পরিষদ সংলগ্ন বাংলাদেশ টায়ার ফ্যাক্টরীর শ্রমিক। ১৬ মে সকাল সাড়ে ৬ টার দিকে বাসা থেকে বের হয়ে পায়ে হেটে দোকানে যাওয়ার পথে বিদ্যুতের হাইভোল্টেজের তার ছিড়ে জয়নালের শরীরের উপর পরলে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।


জানা গেছে, ফতুল্লা ও কুতুবপুর ইউনিয়নসহ আশপাশের প্রায় প্রতিটি এলাকায় দীর্ঘ বছরের পুরনো এলপি বা ফোরফরটি তার ঝুলে আছে। এসব তারগুলোর কয়েক ফুট অন্তর-অন্তর জোড়া তালি দেখা যায়। বেশির ভাগ স্থানেই তারগুলোর প্লাস্টিকের মোড়ক পুড়ে ভেতরের অংশ বেড়িয়ে আছে। তাছাড়া, বর্তমানে নতুন গড়ে উঠা বহুতল ভবনগুলোর দেয়াল, ছাদ বা জানালার সানসেটে ঝুঁকিপূর্ণ ভাবে ঘেঁষে আছে বিদ্যুতের হাইভোল্টেজের ফোর ফরটি তার। এতে করে যেকোন সময় আরো বড় ধরনের দূর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা বিদ্যমান।    

 

ফতুল্লার বাসিন্দা মো. হিমেল বলেন, ‘অধিকাংশ ভবনের বৈদ্যুতিক খাম্বা থেকে নেওয়া বিদ্যুতের তারের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গেছে। এটা আশপাশের বাড়ি, রাস্তা ও ভবনের জন্য মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। তাছাড়া, ট্রান্সফর্মার ফোরফরটি ভোল্টের যেই তার থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ হচ্ছে, তা আরো বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। প্রায় সময়ই এই তারগুলো স্পার্ক হয়ে আগুনের ফুল্কি ঝরে এবং বিচ্ছিন্ন হয়ে রাস্তায় পড়ে যায়। এই অবস্থায় যেকোন সময়ে প্রাণহানীর ঘটনাও ঘটতে পারে।’

 

উকিলবাড়ী এলাকার ব্যবসায়ী ওয়াহিদুল ইসলাম ওমর বলেন, ‘গত মাস খানেক আগে দিনের বেলায় ফোরফরটি লাইনের তার বিচ্ছিন্ন হয়ে রাস্তার উপর পড়ে যায়। এসময় একজন রিক্সা চালক যাত্রী নিয়ে ওই সড়ক পথেই আসছিলেন। তবে, অল্পের জন্য তিনি রক্ষা পান।’ দাপা ইদ্রাকপুর এলাকার বাসীন্দা মোঃ পাপন সরকার জানান, তাদের বাড়ির পাশ দিয়ে যাওয়া ফোরফরটি লাইনের সংযোগের একাধিক স্থানে জোড়া-তালি লাগানো। অর্থাৎ একাধিকবার ছিড়ে পড়েছিল। বিদ্যুৎ অফিসের সদস্যরা এগুলো প্রাথমিক ভাবে সংস্কার করলেও স্থায়ী সমাধানের জন্য কোন উদ্যোগ নিচ্ছে না।

 

এদিকে, ফোর-ফরটি লাইনের হাইভোল্টের তার গুলোতে এমন স্পার্ক হওয়ার কারণ হিসেবে বিদ্যুৎ টেকনিশিয়ানরা বলছেন, ‘বর্তমানে এলাকাগুলোতে ঘনবসতি বাড়ায় বেড়েছে বিদ্যুৎ ব্যবহার। তাছাড়া, প্রায় প্রতিটি এলাকাগুলোতে অসংখ্য হোসিয়ারি ও প্রিন্টিং কারখানা গড়ে উঠেছে। ফলে বিদ্যুতের অতিরিক্ত লোড বাড়ায় প্রায় সময়ই তারগুলো ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। যা প্রায় সময়ই ছিড়ে পরে। এতে যেকোন বড় ধরনের দূর্ঘটনা ঘটার আংশকা থেকে যায়।’

 

এই বিষয়ে ডিপিডিসির এনওসিএস ফতুল্লা জোনের নির্বাহী প্রকৌশলী মাইনুদ্দিন দৈনিক যুগের চিন্তাকে বলেছিলেন, ‘ইতিপূর্বে ৪৪০ ভোল্টের ক্ষতিগ্রস্থ প্রধান তারগুলো আমাদের টেকনিশিয়ানরা সংস্কার করেছে। তবে, তারগুলো অপসারণের মাধ্যমে নতুন করে সংযোগ স্থাপনের বিষয়ে স্থানীয় গ্রাহকদের কেউ আমাদের কাছে আবেদন করেননি। এরপরও যেহেতু জানতে পেরেছি, সেহেতু আমাদের মনিটরিং টিম তা পর্যবেক্ষন করবে যে, কোন কোন এলাকায় এধরনের সমস্যা আছে। অতঃপর তা স্থায়ী ভাবে সমাধানের বিষয়ে আমরা কাজ করবো।’    
 

এই বিভাগের আরো খবর