শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪   চৈত্র ১৪ ১৪৩০

ফের বড় ভাই-ছোট ভাই ইস্যুতে খুন

লিমন দেওয়ান

প্রকাশিত: ২ আগস্ট ২০২২  

 

# সজিব হত্যায় কিশোর গ্যাংয়ের ১০ জন গ্রেপ্তার 

 

জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয় গলিতে ছুরিকাঘাতে সজিব (১৬) নিহতের ঘটনার ২২ ঘন্টার মধ্যে মামলার এজাহারনামীয় দশ আসামীকে গ্রেফতার করেছে ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশ। রোববার রাত সাড়ে সাতটার দিকে জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয় গলিতে ছুরিকাঘাত করা হয় সজিব (১৬) ও তার বন্ধু রিফাতকে (১৭)। এতে করে নিহত হয় সজিব ও আশংকাজনকবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন রিফাত। 

 

নিহত সজিব ফতুল্লা মডেল থানার চাষাঢ়া রামবাবুর পুকুর পাড় ছোট মসজিদ সংলগ্ন বাবুল মিয়ার ভাড়াটিয়া এবং ভাঙ্গারী ব্যবসায়ী কামাল হোসেনের পুত্র। সজিব নিহতের ঘটনায় নিহতের বাবা কামাল হোসেন সোমবার (১ আগস্ট) বাদী হয়ে গ্রেফতাকৃত সাতজন সহ ১৩ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত নামা আরো ৭-৮ জনকে আসামী করে ফতুল্লা মডেল থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছে। 

 

রোববার (৩১ জুলাই) রাতভর পুলিশ অভিযান চালিয়ে সিয়াম (১৮), সাব্বির (১৮), তৈয়ব (১৮), রাহাত (১৮), লিংকন চন্দ্র দাস (১৮), নাজমুল (১৮) ও হৃদয় ওরফে রাকিব (২০) কে গ্রেফতার করে।  সোমবার (১ আগস্ট) দুপুরে পুলিশ মামলার এজাহার নামীয় প্রধান আসামী বিপ্লব (২০), নাজমুল (২০) ও রাকিব (১৮) কে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃত দশ আসামীর মধ্যে রোববার রাতের গ্রেফতারকৃত সাত এজাহারনামীয় আসামী সিয়াম, সাব্বির, তৈয়ব, রাহাত, লিংকন চন্দ্র দাস, নাজমুল ও হৃদয় ওরফে রাকিব (২০) কে দশ দিনের রিমান্ড চেয়ে সোমবার আদালতে পাঠিয়েছে পুলিশ।

 

গ্রেফতারকৃত অপর তিন আসামী মামলার এজাহারনামীয় প্রধান আসামী বিপ্লব (২০), নাজমুল (২০) ও রাকিব কে আগামীকাল আদালতে পাঠানো হবে বলে পুলিশের দায়িত্বশীল একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে। ফতুল্লা মডেল থানার ইনচার্জ শেখ রিজাউল হক দিপু জানান, আধিপত্য ও প্রভাব বিস্তারকে কেন্দ্র করে খুন হয় সজিব। 

 

ইতিমধ্যেই মামলার প্রধান আসামী সহ এজাহার নামীয় দশ আসামী কে গ্রেফতার করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত থাকার বিষটি স্বীকার করেছে। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে সাতজনকে দশ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে। অপর তিনজনকে আগামীকাল আদালতে পাঠানো হবে। 

 

মামলার অপর আসামীদের গ্রেফতারের চেষ্টা করা হচ্ছে। তাছাড়া সন্দেহজনক হিসেবে দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য আটক করা হয়েছে বলে তিনি জানান। উল্লেখ্য যে, রোববার রাত সাড়ে সাতটার দিকে জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয় গলিতে কিশোর গ্যাং সদস্যদের হামলায় নিহত হয সজিব ও আহত হয় রিফাত।

 

এ বিষয়ে নিহতের বড় বোন শাহিনূর বেগম জানান, রোববার বিকাল চারটায় আমার ভাই সজিব বাসা থেকে বাহির হয়। সন্ধ্যা ছয়টার দিকে আমার ভাই আবার বাসায় আসে পুড়ি আর চা খেয়ে আবার বাহির হয়ে যায়। তার কিছুক্ষন পরে তার দুই বন্ধু তাকে খোঁজতে আসে। পরে তারা তাকে বাসায় না পেয়ে চলে যায়। 

 

পরে রাত সাড়ে নয়টায় শুনতে পেলাম আমার ভাই মারা গেছেন তার লাশ ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে আছে। গিয়ে দেখি সত্যি আমার ভাই আর এই দুনিয়াতে নেই। আমার ভাই ফুটবল খেলতে অনেক ভালোবাসতো কিছুদিন পরে তার একটা ম্যাচ ছিলো টিভিতে দেখাবে আমাদের ও নিয়ে যাবে বলছিলো আমার ভাই। আমার ভাই অনেক ভালো ছেলে ছিলো এলাকার ভিতরে কোনো মারামারি মানুষ খারাপ বলে এমন কাজ তিনি করতে না। আমাদের এখন শুধু একটাই চাওয়া আমরা যে সস্ত্রাসীরা এখন গ্রেফতার হয়েছে তাদের বিচার চাই।

 

এ বিষয়ে নিহত সজিবের বন্ধুরা জানান, রোববার বিকালে উত্তর চাষাঢ়া এলাকার ছোট ভাই তৌহিদ গ্রুপের সাথে মাউরাপট্টি এলাকার আরেক গ্রুপের সাথে সংঘর্ষ হয়। এই বিষয়টি বড় ভাই সজিবকে জানাতে পারলে তিনি  মাউরাপট্টি এলাকার কিশোরদেরকে বোঝাতে যায়। পরে দুই গ্রুপের সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষের পর সবাই সরে পড়লেও আটকে যায় সজিব। সজিবকে একা পেয়ে মাউরাপট্টি এলাকার কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা ছুরিকাঘাত করে ফেলে যায়।


নিহতের বাবা কামাল জানান, সন্ধ্যার দিকে বাড়ীর সামনের খেলার মাঠ থেকে তৈয়ব তার পুত্র সজিবকে ডেকে নিয়ে যায় চানমারী নীট হাউজের সামনে। সেখানে নিয়ে গিয়ে তার পুত্রকে অভিযুক্ত আসামীরা এলোপাতাড়ি ভাবে ছুরিকাঘাত করে। তার ছেলের ডাক চিৎকারে নিহত সজিবের বন্ধু রিফাত এগিয়ে গেলে তাকে ও আসামীরা ছুরিকাঘাত করে। 

 

এ সময় সজিব ও রিফাতের ডাক - চিৎকারে স্থানীয়রা এগিয়ে এলে অভিযুক্তরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। পরে তাদেরকে পথচারীরা শহরের জেনারেল (ভিক্টোরিয়া) হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা রাত ৮টার দিকে সজিবকে মৃত ঘোষনা করে। এবং রিফাতকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঠিয়ে দেয়।

 

উল্লেখ্য এর আগে মাস দুয়েক আগে ফতুল্লার রাবেয়া হোসেনের উচ্চ বিদ্যালয়ের ধ্রুব নামের এক শিক্ষার্থীকে বড় ভাই ছোট ভাই ইস্যুতে তাকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে অপর এক কিশোরগ্যাং গ্রুপ হত্যা করে। আর রোবার রাতে জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সামনে একই ইস্যুতে সজিব নামের এক কিশোরকে অপর কিশোরগ্যাং গ্রুপ কুপিয়ে হত্যা করে। 

 

তবে আগের ঘটনার মত এই ঘটনায়ও ২৪ ঘন্টা না যেতে সজিব হত্যার ঘটনায় ১০ আসামীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এ বিষয়ে কোর্ট পুলিশ ওসি আসাদুজ্জামান জানান, জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্টেট কাজি মোহসিনের আদালতে আসামীদের সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন। পরে আদালত মঙ্গলবার রিমান্ড শুনানীর দিন ধার্য করেন। জেসি/এন.এইচ

এই বিভাগের আরো খবর