মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১০ ১৪৩১

বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ি:বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুলহুদা

এন. হুসেইন রনী

প্রকাশিত: ৫ ডিসেম্বর ২০২২  

 

 
১৯৭১ সালের ১ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রকাশিত নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশের ভেতরে গেরিলা আক্রমণ অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর পদস্থ কর্মকর্তাদের নির্দেশে, সেনাবাহিনী আরও ভয়াবহভাবে নিরীহ জনগণের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে।

 

 

বুড়িগঙ্গা নদীর অপর পারে জিঞ্জিরায় সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে একদিনেই হত্যা করা হয় ৮৭ জনকে।’ বাঙালির জন্মভূমি শত্রুমুক্ত করার লড়াইকে আড়ালে রাখতে পাক-ভারত যুদ্ধ শুরু হয়েছে বলে বেতারে ঘোষণা দেন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান। এরূপ অনেক ষড়যন্ত্র হয়েছে; কিন্তু কোনো ষড়যন্ত্রই বাঙালিকে বিজয় অর্জন থেকে পিছিয়ে দিতে পারেনি।

 

 

মাতৃভূমিকে হানাদারমুক্ত করতে বীর মুক্তিযোদ্ধারা ২৫ মার্চ রাত থেকেই মরণপণ লড়াই চালিয়ে যান। আওয়ামী লীগের সূতিকাগার নারায়ণগঞ্জ থেকে প্রতিরোধ যুদ্ধ শুরু হয় ২৭ মার্চ সকাল হতে। সেদিন যে বীর যোদ্ধারা স্বদেশের স্বাধীনতার রক্তিম সূর্য ছিনিয়ে আনতে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন তাদেরই একজন হলেন- নারায়ণগঞ্জের সূর্য সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধা মো: নুরুল হুদা (এ্যাডভোকেট), ডেপুটি কমান্ডার, নারায়ণগঞ্জ জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ।

 

 

“হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ০৭ মার্চ ভাষণের পর হতেই আমরা বুঝতে পেরেছিলাম যে, আমরা একটি চূড়ান্ত সংগ্রামের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। তাই সেদিন থেকেই আমরা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ শুরু করি। তৎকালীন ঢাকা ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দের নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে তৈরি হয়ে যাই।

 

 

আমি যেহেতু সিভিল ডিফেন্সে ছিলাম, সেহেতু আমার মিনিমাম ট্রেনিং ছিল”, ০৩ ডিসেম্বর শনিবার যুগের চিন্তা’র আয়োজনে ‘মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিকথা’ অনুষ্ঠানে অতিথি হিসাবে উপস্থিত হয়ে কথাগুলো বলছিলেন, নারায়ণগঞ্জ জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ডেপুটি কমান্ডার  ছিলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা মো: নুরুল হুদা (এ্যাডভোকেট)।

 

 

পরিচিতি:
মো: নুরুল হুদা এর জন্ম ১৯৫২ সালে নারায়ণগঞ্জ ফতুল্লা থানার ৪৫, নিউ হাজীগঞ্জ এলাকায়। তার পিতা: মরহুম ফটিক চান মিয়া, এবং রত্ন গর্ভা মাতা: মরহুমা পতি খানম। ২৭ মার্চ থেকে পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে নারায়ণগঞ্জে প্রতিরোধের মধ্য দিয়ে সশস্ত্র যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন।

 

 

বীর মুক্তিযোদ্ধা তার সাক্ষাৎকারে বলেন ৩ এপ্রিল ১৯৭১ ছিল আমার প্রথম পরীক্ষার দিন। আমরা রাজকুমার গোপ এবং একজন অবসরপ্রাপ্ত সৈনিকের পরামর্শ অনুযায়ী ২ মে, ১৯৭১ ২৫ জনের একটি ছাত্র যুবক দল কাইকারটেক দিয়ে বৈদ্যের বাজার লঞ্চঘাটে যাই।
আমার সাথে ছিল মহিউদ্দিন (মহি), মনিরউদ্দিন, নূরুল হক, ফজলুল হক, জালাল, রুমী, শাহজাহান (হাজীগঞ্জ), শাহজাহান (তল্লা), মহলসহ প্রায় ২৫ জনের একটি টিম।

 

 

বৈদ্যের বাজার লঞ্চঘাটের সামনে আ. ছাত্তার (মরণ) ভাইয়ের সাথে সাক্ষাৎ হয়। আমরা সবাই তাকে দলনেতা হিসাবে মেনে নিয়ে ভারতের আগরতলার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হই। বৈদ্যের বাজার লঞ্চঘাট হতে আমরা লঞ্চে করে রামচন্দ্রপুর পৌছাই। এর মাঝে বহু চড়াই উৎড়াই পড়ি দিয়ে আমরা আগরতলা কংগ্রেস ভবনের সামনে পৌছাই।

 

 

সেখান থেকে আমরা জয় বাংলা অফিসে যাই, যেখানে আমরা সোনারগাঁ এর লুৎফুর ভাইয়ের দেখা পাই। লুৎফুর ভাই পাশ সংগ্রহ করে দেয়া সহ ট্রেনিং গ্রহণের প্রাথমিক পর্যায়ের গ্রহণের পথ দেখিয়ে দেন।

 

 

পরবর্তীতে আমরা মতিনগর ক্যাম্পে ব্রিগেডিয়ার আ. মতিন সাহেবের অধীনে কিছুদিন ট্রেনিং গ্রহণ করে; অমাদের মেলাঘর ট্রেনিং ক্যাম্পে পাঠিয়ে দেয়া হয়। সেখানে আমদের প্রিয় কমান্ডো ক্যাপ্টেন হায়দার স্যারের সাথে দেখা হয়।

 

 

তিনি বলেন, ক্যাম্পে বাঙালি সৈনিকগণ আমাদেরকে অস্ত্র ট্রেনিং দিতেন এবং ক্যাপ্টেন হায়দার স্যার আমাদের বোমা তৈরির ট্রেনিংসহ বিভিন্ন গেরিলা প্রশিক্ষণ প্রদান করেন। সেখানে আমরা সফলতার সাথে ২১ দিনের প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করি।

 

 

তিনি জানান, প্রশিক্ষণ গ্রহণ শেষে বাংলাদেশে প্রবেশ করি এবং আমরা ২ নং সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার এবং 'কে-ফোর্স'-এর সর্বাধিনায়ক খালেদ মোশাররফ, বীর উত্তম এর অধীনে যুদ্ধ করেছি। আমরা পাকিস্তান হানাদার বাহিনী ও রাজাকারদের বিরুদ্ধে কয়েকটি সফল অপারেশন পরিচালনা করি।

 

 

বিজয় দিবসে ও পরবর্তী সময়ে আমরা গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো রক্ষায় আমাদের টিম মিত্রবাহিনীর সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নতুন দেশ বিনির্মাণে কাজ শুরু করি।

 

 

পরিশেষে এই বীর মুক্তিযোদ্ধা নতুন প্রজন্মের উদ্দেশ্যে বলেন, “ আমাদের অনেক ত্যাগ ও তিতিক্ষার মাধ্যমে অর্জিত এই স্বাধীনতা। তোমরা একটি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র পেয়েছো; এই বিশাল অর্জন ধরে রাখতে হবে। বয়োজ্যৈষ্ঠদের সম্মান করতে হবে। মনে রাখবে, স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে স্বাধীনতা রক্ষা করা কঠিন।”

এস.এ/জেসি

এই বিভাগের আরো খবর