শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪   চৈত্র ১৪ ১৪৩০

বন্দরে এসআই হাসানের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশিত: ৪ ডিসেম্বর ২০২২  

 

# অপকর্মের মূল হোতা সোর্স শাহ আলম
# আমি তো শাহআলম এর সাথে এখন চলি না : এসআই হাসান

 

বন্দর থানা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) আবুল হাসান হাওলাদারের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অভিযোগ পাওয়া গেছে। তার বিরুদ্ধে বন্দর থানাসহ পুলিশের বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ পাঠিয়েছেন একাধিক ব্যক্তি।

 

 

চাঁদা চেয়ে না পেয়ে হুমকিসহ পুরোনো জিডিকে মামলায় রূপান্তর করা, নেশা জাতীয় দ্রব্য খোঁজার উদ্দেশ্যে জনগণের বাড়ি-ঘর থেকে টাকা জোরপূর্বক টাকা হাতিয়ে নেওয়া, দোকানের সব লোকজনকে সরিয়ে দিয়ে সার্চ করার নামে নগদ টাকাসহ মূল্যবান জিনিসপত্র হাতিয়ে নেওয়া ইত্যাদি ইত্যাদি অনেক অভিযোগ আছেন এসআই হাসানের বিরুদ্ধে।

 

 

আর পুলিশের লোক বলে তার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ করলেই তাকে বিভিন্ন মামলা ও অভিযোগের মাধ্যমে হয়রানি করার ভয়ে মুখ খুলতে সাহস করছেন না অনেকে। তবে সম্প্রতি সময়ে তার বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জ পুলিশ সুপারসহ পুলিশের বিভিন্ন একাধিক অভিযোগ আসায় তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের আশার আলো দেখছেন অনেক ভূক্তভোগী।

 

 

আর তার এই কাজের বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সহযোগিতা করছেন বন্দর উপজেলার বন্দর ইউনিয়নের শাহআলম ওরফে ফরমার শাহআলম। পুলিশের সোর্স হিসেবে পরিচিত এই শাহআলম পুলিশের ও মামলার ভয় দেখিয়ে বিভিন্ন অপকর্ম করেও থাকেন ধরা ছোঁয়ার বাইরে। শাহআলম একজন মাদক সম্রাট, ভূমিদস্যু ও চাঁদাবাজ হিসেবে শুধু স্থানীয়ভাবেই নয়, বরং বন্দর উপজেলার বিভিন্ন এলাাকার মানুষের কাছেই পরিচিত তিনি।

 

 

এসআই হাসানের দাপটের শিকার বন্দর ইউনিয়নের তিনগাও এলাকার প্রতিবন্ধী (এক পা হীন) হাজী লোকমান জানান, আমার একটি পা নেই, তাই গত ফেব্রুয়ারিতে আমার দুই প্রবাসী ছেলে দেশে আসলে আমি আমার বাড়িতে ভবন নির্মাণ কাজসহ বাড়ির বাউন্ডারি দেয়াল নির্মাণ কাজ ধরলে কোন প্রকার কাগজপত্র ছাড়াই তারা আমাদের বাধা প্রদানসহ মারধর করে।

 

 

আহতদের চিকিৎসা দেওয়ার জন্য নিয়ে যাওয়ার পথ রোধ করে হত্যার উদ্দেশ্যে এলপাথারী আক্রমণ করে। সে সময় ‘৯৯৯’-এ ফোন করলে দ্রুত গতিতে পুলিশ উপস্থিত হওয়ায় রাস্তার দুপাশে অবস্থিত দোকানদার ও উপস্থিত জনগণের সহযোগিতায় স্পট থেকেই এজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

 

 

এই ঘটনায় যাই ঘটেছে একাধিকবার পত্রপত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হয়েছে। মামলা পাল্টা মামলাও হয়েছে। এর কিছুদিন পরই আমার ছেলেরা বিদেশে চলে যায়। এরই মধ্যে গত ২ আগস্ট রাত ৯ টার দিকে বন্দর থানার হাসান নামের এক এসআই আমার কাছে আসে এবং ৩৫ হাজার টাকা চায়। এত টাকা আমার কাছে নাই, টাকার জন্য আমার বাড়ির কাজ বন্ধ আছে।

 

 

তাছাড়া আমি কি জন্য টাকা দিব তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার টাকা খুব দরকার, তোমার দুই ছেলে বিদেশ থাকে তোমার কাছে থাকবে না কেন? আমি টাকা না দিলে সে হুমকি দিয়ে চলে যায়। এরপর গত মাসে হঠাৎ করেই দেখি আমার নামে একটি নেটিশ এসেছে।

 

 

যাতে গত ফেব্রুয়ারি মাসের সেই ঘটনার সময়ের একটি তারিখ উল্লেখ করে আমার বিরুদ্ধে একটি জিডি দেখিয়ে অভিযোগের প্রতিবেদন দাখিল করেছেন সেই এসআই হাসান। যাতে আমিসহ আমার প্রবাসী দুই ছেলেকে আসামী করা হয়। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো সেই প্রতিবেদনটি ছিল অক্টোবরের (১৮ অক্টোবর দাখিল ওসির নিকট দাখিল করেন)।

 

 

সেখানে ১৫ ফেব্রুয়ারি জিডির কথা উল্লেখ করা হয়, ১৪ ফেব্রুয়ারি এসপি জাহিদ সাহেব ডিবির লোক (বন্দর থানার এসআই রফিকের নেতৃত্বে) পাঠিয়েছে আমাদের নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য। সে সময় বিভিন্ন মিডিয়ার লোকজন সন্ধ্যা পর্যন্তই আমার বাড়িতে ছিল।

 

 

সেই ১৪ তারিখের ঘটনা দেখাইয়া আমাদের নামে এই প্রতিবেদন করা হয়। তাই আমার প্রতিপক্ষের লোককে বাদি বানিয়ে ব্যাক ডেটে (পূর্বের তারিখে) একটি ঘটনা কিভাবে সাজালো তা আমি বুঝতে পারছি না। এই ঘটনাটি স্থানীয় মেম্বারসহ জনগণকে আমি জানিয়েছি।

 

 

এর আগে বিভিন্ন সময় শাহআলমের ঘনিষ্ঠ এই এসআই এই ঘটনার বাদি রিপা বেগমদের বাসায় যাতায়াত আছে, যা স্থানীয়রাও জানে। আমার একটা পা নাই, আমি একজন প্রতিবন্ধী, এই বিষয়টার আমি সুষ্ঠু তদন্ত চাই।

 

 

এই বিষয়টি আমি ঢাকা রেঞ্জের উপমহা পুলিশ পরিদর্শক, জেলা পুলিশ সুপার, সার্কেল এসপি (সার্কেল এসপি রিসিভ করেননি) ও বন্দর থানায় কুরিয়ারের মাধ্যমে পাঠাই। যার রিসিভ কপি আমার কাছে আছে।

 

 

উপজেলার মিনারবাড়ির বাড়ৈখারী এলাকার চন্ডি মার্কেটের মুদি দোকানদার শাহাবুদ্দিন বলেন, আমি এই ব্যবসার পাশাপাশি মাছের ব্যবসা করি। গত সেপ্টেম্বর মাসের ৩০ তারিখ শুক্রবার রাত সাড়ে আটটার দিকে আমি মাছের বাকি (বকেয়া) টাকা তোলার জন্য দোকানে আমাদের স্থানীয় কয়েকজনকে বসিয়ে রেখে যাই।

 

 

সে সময় আমাদের এলাকার ফরমার শাহআলম (পুলিশের সোর্স শাহআলম) এবং বন্দর থানার এসআই হাসান আমাদের দোকানে এসে এখানে বসা লোকজনকে বলেছে এই দোকানে দুই কেজি মাদক আছে। এই কথা বলে এখানকার সবাইকে তাড়িয়ে দিয়ে দোকানে ঢুকে (প্রবেশ করে) তছনছ করে।

 

 

আমি ব্যাংক থেকে দোকানে মাল তোলা এবং মাছ ব্যবসার জন্য টাকা তুলেছিলাম সেই টাকাটা ফ্রিজের উপর একটি কৌটায় রাখা ছিল। সেখান থেকে সেই টাকা, মানিব্যাগ, আইডি কার্ড ও ব্যাংক এর চেক বই ছিল এগুলো সব নিয়ে গেছে। আমি আসার পর দেখি তারা এগুলো নিয়ে চলে গেছে, এখানে লোকজন জড়ো হয়ে আছে।

 

 

তারা আমাকে সব ঘটনা খুলে বলে। এই বিষয়টি আমি স্থানীয় চেয়ারম্যান ও মেম্বারকে জানিয়েছি। তবে বন্দর থানায় জানিয়ে কোন লাভ হবে না বলে স্থানীয়রা বললে আমি কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে পুলিশ প্রশাসনকে জানিয়েছি।

 

 

এর আগে গত ১৯ অক্টোবর বন্দর থানার এসআই হাসানের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নারায়ণগঞ্জ পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন বন্দর থানার নামাপাড়া স্কুল রোডের নুরুল হক সরকারের মেয়ে চার মাসের অন্তঃসত্ত্বা বিলকিস আরা রিভা।

 

 

বিষয়টি বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমেও প্রকাশ করা হয়। রিভাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন বলে হাসানের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন তিনি। হাসানের ধাক্কায় চার মাসের গর্ভবতী এই নারী বিল্ডিংয়ের কলাম করার জন্য তৈরি করা একটি বেজের গর্তে পড়ে যান বলে অভিযোগ করেন তিনি।

 

 

তখন তাদের চিৎকারে আশেপাশের লোকজন এগিয়ে আসলে এসআই হাসান আরও ক্ষীপ্ত হয়ে বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতি দেখিয়ে বিলকিস ও তার স্বামী মামুনকে মিথ্যা মামলা মোকদ্দমা দিয়ে জেল খাটানোর হুমকী দিয়ে চলে যায়। পরে পেটে ব্যথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে ব্যথা নিয়ে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নেন ভুক্তভোগী এই নারী।

 

 

এছাড়াও এসআই হাসান তার প্রধান চেলা শাহআলমকে নিয়ে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় তল্লাশীর নামে ঘরে থাকা জমানো টাকা পয়সা হাতিয়ে নেওয়াসহ একাধিক অভিযোগ আছে। হাসান পুলিশের লোক হওয়ায় ভয়ে হাসান ও শাহআলমের বিরুদ্ধে তারা মুখ খুলতে ভয় পান।

 

 

তবে সবারই দাবি উপরের মহল যদি একটু সদয় হয়ে বিষয়টি গভীরভাবে তদন্ত করে তাহলেই বিষয়টি খোলাসা হয়ে যাবে। এতে করে পুলিশের ভাবমুর্তি নষ্ট হওয়ার হাত থেকে রক্ষা পাবে পুলিশ প্রশাসন।

 

 

অভিযোগের বিষয়ে এসআই হাসান বলেন , আমার বিরুদ্ধে কে বা কারা অভিযোগ দিয়েছে আমি কিছু জানি না। আমি তো একমাস ধরে ট্রেনিংয়ে আছি। আমি তো শাহআলম এর সাথে এখন চলি না। এক পা হীন হাজী লোকমান ভাই এর সাথে আমার ভালো সম্পর্ক বিরুদ্ধে একটা প্রসিকিউশন আসছে তার জন্য তিনি এখন বলছে আমি তার কাছে টাকা চেয়েছি এটা আসলে মিথ্যা। আপনার সাথে আমি এসে দেখা করবো।

 

 

এ বিষয়ে , পুলিশের সোর্স শাহআলম এর মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তার ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।

এস.এ/জেসি

এই বিভাগের আরো খবর