বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১২ ১৪৩১

বাণিজ্য মেলায় নিত্যপণ্যে আগ্রহী; বিদেশী পণ্যে চড়া মূল্যে অনীহা

রূপগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৮ জানুয়ারি ২০২৩  



ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার ২৭ তম আসরের পূর্বাচলে ২য় আসরের ১৭তম দিনে বাড়তে শুরু করেছে ক্রেতা ও দর্শনার্থীর সংখ্যা। মেলা সংশ্লিষ্টদের দেয়া তথ্যে জানা যায়, প্রায় সব পন্যের দাম নিয়ে ক্রেতাদের অভিযোগ। তবে দেশীয় ও নিত্য পন্যের দিকে অফার নিতে ঝুঁকছেন ক্রেতারা।

 

 

আর বিদেশী পন্যের প্রায় সবটা অতিরিক্ত দাম হাঁকায় বিক্রি কমেছে আশঙ্কাজনক হারে। অন্যদিকে বাণিজ্য মেলায় বেশি দামে পণ্য বিক্রি করায় গ্রাহকরা পাচ্ছেন না প্রতিশ্রুত সেবা।  ১৭ জানুয়ারি মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় স্টল ঘুরে দেখা যায় দেশীয় সব পন্যের স্টলে ক্রেতা দর্শনার্থীদের ভীড়।

 

 

বিদেশী প্যাভিলিয়নে ভীর থাকলেও বিক্রি করতে দেখা যায়নি খুব একটা। সাধারণ ক্রেতাদের আকর্ষণে রূপ নিয়েছে নিত্য পন্য,শিশুদের খেলনা আর শিশুপার্কে। তবে বরাবরের মতোই অভিযোগ নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে পণ্য বিক্রি করার।  মেলা ঘুরতে আসায় কাঞ্চনের চনপাড়া এলাকার বাসিন্দা গৃহীনি শাহিদা হোসেন বলেন, মেলার বেশ কিছু পন্য দেখলাম।

 

 

যেসব পণ্য নিজেদের বাসায় কাজে লাগে ওসবের কিছু ক্রয় করলাম। তবে মানের আর দামের দিক থেকে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ক্রেতাকে দেওয়া হচ্ছে না পণ্য ও সেবা।  মঙ্গলবার (১৭ জানুয়ারি) মেলা প্রাঙ্গণে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মনিটরিং ও সাধারণ ক্রেতাদের অভিযোগের যেন অন্ত নেই।

 

 

এসব নানা অপরাধে বাণিজ্য মেলায় প্রতিদিন অভিযোগ প্রমাণিত হলে নানা প্রতিষ্ঠানকে জরিমানার পাশাপাশি সতর্ক করেছে অধিদপ্তর। কিন্তু নানা ফাঁকফোকরে লোকসান কাটাতে ব্যবসায়ীরা নানা কৌশলে চালাচ্ছেন অবাণিজ্যিক কর্মকাণ্ড।

 

 

অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (প্রশিক্ষণ ও প্রচার) আতিয়া সুলতানা বলেন, বাণিজ্য মেলা চলাকালে নিয়মিত কার্যক্রমের অংশ হিসেবে প্রতিদিন মেলায় প্রতিষ্ঠানগুলো মনিটরিং করছি।

 

 

যে কেউ নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে পণ্য বিক্রি ও প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী পণ্য-সেবা না দেওয়ার অপরাধে আজও কিছু প্রতিষ্ঠানকে ৯ হাজার টাকা জরিমানার পাশাপাশি সতর্ক করা হয়েছে। এ সময় তিনি আরও বলেন,জনস্বার্থে এসব কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।

 

 

সূত্র জানায়, গত ১ জানুয়ারি মাসব্যাপী আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এটি ঢাকার ২৭তম আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা। ১৯৯৫ সাল থেকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর যৌথ উদ্যোগে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।

 

 

দেশীয় পণ্যের প্রচার, প্রসার, বিপণন ও উৎপাদনে সহায়তার জন্য এ মেলার আয়োজন করা হয়। আগে বাণিজ্য মেলা শেরে বাংলা নগরের চীন-মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রের পাশের খোলা মাঠে অনুষ্ঠিত হতো। ২০২২ সাল থেকে পূর্বাচলের বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টার প্রাঙ্গণ মেলার জন্য নির্ধারিত হয়েছে।

 

 

মেলার প্রবেশদ্বার ইজারাদার কর্তৃপক্ষ এ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন রাজিব বলেন, বাণিজ্য মেলায় ১০টি দেশের ১৭টি প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে। মেলা প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা থাকছে। এবার মেলায় প্রবেশ মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ৪০ টাকা এবং অপ্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য ২০ টাকা।

 

 

মেলার টিকিট অনলাইনে কিনলে ৫০ শতাংশ ছাড়ের সুযোগ থাকবে। এছাড়াও মেলায় প্রায় এক হাজার গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থাসহ বিদেশি প্রতিষ্ঠানের জন্য ১৭টি প্যাভিলিয়ন, মিনি প্যাভিলিয়ন ও স্টল রয়েছে। দেশি ও বিদেশি প্রতিষ্ঠানের জন্য দুটি হলের বাইরে মিলে মোট ৩৩১টি স্টল, প্যাভিলিয়ন ও মিনি প্যাভিলিয়ন রয়েছে।

 

 

এদিকে মেলার শুরুর দ্বিতীয় সপ্তাহ পার হওয়ার পর থেকে প্রতিদিনই দর্শনার্থীদের পদচারণায় জমে উঠছে। বিক্রিও হচ্ছে ভালো। বিক্রিত পণ্যের মধ্যে মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় ব্যবহার্য ও গৃহস্থালি পণ্যেরই চাহিদা বেশি বলে জানা গেছে।

 

 

ব্যবসায়ীদের মতে, মানুষ অর্থনেতিক সংকট ও ব্যয় সংকোচন করতে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বেশি কিনছেন। বিলাসবহুল বা কম প্রয়োজনীয় পণ্য অধিকাংশই কিনছেন না। আর বিদেশী পন্যের দাম বেশি হাঁকায় ক্রেতারা শুধু দেখছেন কিন্তু কিনছেন না।


 

পাঁচাইখা এলাকার টেলাপাড়ার বাসিন্দা রহিমা আক্তার কলি বলেন, মেলায় নিত্য পন্যের কাপড়ের দোকান, প্লাস্টিক সামগ্রী, গৃহস্থালি পণ্য, ক্রোকারিজ, খাবার, আসবাবপত্র, ইমিটেশনের দোকান, কসমেটিকসের দোকানের পন্যগুলো আমাদের কাজে লাগে বেশি৷ তাই এসব দোকানের সাধ্যের মধ্যের কিছু পন্য ক্রয় করেছি।

 

 

টঙ্গি চেরাগ আলী থেকে ঘুরতে আসা দর্শনার্থী মোজাফ্ফর হোসেন বলেন,৷ দেশীয় পন্যে আস্থা আছে। কারন এসব পন্যের মান যাচাই করা সম্ভব। আর বিদেশী পন্যের দাম ও মান নিয়ে সন্দেহ তৈরী হয়। তাই আমি চেষ্টা করি দেশীয় পন্য ক্রয়ে। এবারের মেলার দেশীয় পন্য বিক্রি হতে দেখলাম বেশি।

 

 

সূত্র জানায়, এবারের মেলায় মোট স্টল ৫০৬টি। এর মধ্যে ১২ দেশের ৩১টি বিদেশি প্রতিষ্ঠান তাদের পণ্য নিয়ে এসেছে। পাকিস্তান, ভারত, চীন, ইরান, দক্ষিণ কোরিয়া, থাইল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র, তুরস্ক, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও মরক্কোর স্টল রয়েছে মেলায়। বিদেশি স্টলগুলোয় নানা রকম ছোটখাটো পণ্য ভালোই বিক্রি হচ্ছে।

 

 

সূত্রমতে, মেলায় প্যাভেলিয়ন, প্রিমিয়ার প্যাভেলিয়ন, মিনি প্যাভেলিয়ন, সাধারণ স্টলে বিভিন্ন সৌন্দর্যবর্ধক সামগ্রী, ইলেকট্রনিকস পণ্য, পাটজাত পণ্য, চামড়াজাত পণ্য ও জুতা, খেলার সামগ্রী, খেলনা, স্টেশনারি, জুয়েলারি, সিরামিকস পণ্য, মেলামাইন পণ্য, দেশি বস্ত্র, আসবাবপত্র, হস্তজাতসহ নানা ধরনের পণ্য বিক্রি হচ্ছে।

 

 

গোয়ালপাড়া এলাকার বাসিন্দা তানজুমা আইজি ইকরা বলেন, সংসারের খরচ মেটানোর পর খুব বেশি ব্যয় করার সুযোগ থাকে না। তাই, মেলায় দরকারি জিনিসটিই সবাই কিনতে চায়। আসলে মধ্যবিত্ত বা নিম্নবিত্তের পক্ষে শখের জিনিস কেনা অসম্ভব হয়ে উঠেছে।

 

 

রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবির) সচীব ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী বলেন, মেলা জমজমাট হয়েছে। বিক্রিও প্রতিদিনই বাড়ছে। তবে মানুষ নানা কারণে হিসাব করেই কেনেন। তাই ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে ব্যবসায়ীরা ছাড় দেয়া শুরু করেছে।  এন.এইচ/জেসি

এই বিভাগের আরো খবর