শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১২ ১৪৩১

বাবা ডাকার আগেই এতিম হলো আয়েশা

রাকিবুল ইসলাম

প্রকাশিত: ২ আগস্ট ২০২২  


 # ১৪ মাস না যেতেই বাবাকে হারালো মেয়ে 

 

এখন আমি কী করমু! আমার পুতরে খুনি আফজাল, তুলি, রোজিনা, উজ্জল চাকু দিয়া খুন কইরা ফেলাইছে। আমার পুত আর কপালে এ আছিল আগে জানতাম না গো..! এই দৈত্য দানবরা আমার নাতি-নাতনিদের এতিম কইরা দিছে। এখন আমার এতিম নাতি-নাতনিদের ভবিষ্যৎ কী হবে? এই ছোট ছোট বাচ্চাদের কি হবে? ও আল্লাহ্ তুমি এই হত্যাকারীদের বিচার করো। এই কান্না জড়িত কণ্ঠে আলীরটেক ইউনিয়নের কুড়েরপাড় এলাকার মামা আফজালের হাতে হত্যা হওয়া নিহত দিদারের পিতা জালাল বেপারি কথা গুলো বলতে থাকেন।

 

গতকাল সোমবার দুপুরে দিদারের লাশ পোস্টমর্টেম করার জন্য উত্তোলন করা হয়। এসময় তার অর্ধগলিত লাশ তোলা হয়। কিন্তু এলাকাবাসীর অভিযোগ দিদারকে হত্যা করা হয়েছে। হত্যার পর তার লাশ গুম করার জন্য নিহতের মামা আফজাল মিস্ত্রির বাড়ীর টিনশেড ঘরের কাড়ে লাশ রেখে দেয়। এই লাশ যেন গুমের ক্ষেত্রে কোন অসুবিাধ না হয় তার জন্য নিহতের লাশের পাশে ড্রাম রাখা হয়। যাতে করে রাতের আধারে ড্রামে করে লাশ নিয়ে ফেলে রাখতে পারে। 

 

কিন্তু সৃষ্টি কর্তার বিচার বলে একটি কথা আছে। তার আগেই তারা ধরা পড়ে যায়। ১৭ জুলাই ক্রোকেরচর আফজাল মিস্ত্রির বাড়ীর ঘর থেকে দিদারের লাশ উদ্ধার করে ক্রোকেরচর কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। এই ঘটনায় দাফনের ৬ দিন পর ২৩ জুলায় নিহতের স্ত্রী সুবর্ণা খাতুন বাদী হয়ে নারায়ণগঞ্জ সদর থানায় অজ্ঞাতনামাদের আসামী করে ৩০২/২০১/৩৪ ধারায় পেনাল কোডে মামলা হয়, যার মামলা নম্বর ১৯।  

 

নিহত দিদার এবং তার স্ত্রী সুবর্ণা এ দম্পতির দুই সন্তান রয়েছে। সবাই অপ্রাপ্ত বয়স্ক। তাদের ৭ বছরের নাবালক আবদুল্লাহ্ নামের এক ছেলে রয়েছে। ১৪ মাস বয়সের আয়েশা নামে একটি মেয়ে রয়েছে। মেয়ে আয়েশা এখনো বাবা ডাকা শিখে নাই। তার আগেই তার বাব দিদার মারা যাান। আর এতে করে দুই সন্তান বাবার আদর থেকে বঞ্চিত হন। দ্বিতীয় সন্তান আয়েশা পৃথিবীতে আসার পর এখনো হাটা শিখে নাই। তার আগেই বাবা হারিয়ে এই দম্পতির দুই সন্তান এতিম হয়ে গিয়েছে।

 

সরেজমিনে দেখা যায়, দরজার সামনে বসে আহাজারি করছেন নিহত দিদারের মা এবং স্ত্রী সুবর্ণা। পাশে নির্বাক ভঙ্গিমায় দাঁড়িয়ে নিহত দিদারের সাত বছরের ছেলে আব্দুল্লাহ্। তার চোখেমুখেও বাবা হারানোর কষ্ট ফুটে উঠেছে। খানিক দূরেই মাটিতে নীরবে বসে আছে শিশু অলিমা। পুরো বাড়িতেই যেন শোকার্ত পরিবেশ বিরাজ করছিল। ঘটনাস্থলে ভিড় করা মানুষের মনেও প্রশ্ন ছিল এখন কে দেখবে এতিম বাচ্চাদের।

 

শোকার্ত বাড়িটিতে গিয়ে অসংখ্য মানুষের ভিড় দেখা যায়। বাবা হারানোর শোক স্পর্শ করতে পারেনি সদ্য এতিম ১৪ মাসে বয়সের আয়েশাকে। পরম মমতায় বেড়ে ওঠা শিশু হয়তো ভাবছে তার-বাবা কোথাও বেড়াতে গেছেন। খেলার ছলে অন্য শিশুদের সঙ্গে দুষ্টুমিও করছিল সে। কিছুদিন পর যখন শিশু আয়েশা বাবার খোঁজ করবে তখন কে দেবে তাকে সান্তনা।

 

তবে স্বামীকে কে হারিয়ে অঝোরে কাঁদছেন নিহত দিদারের স্ত্রী সুবর্ণা আক্তার। দুর্বৃত্ত আফজাল গংদের অমানবিক কর্মকান্ডে এতিম হয়ে পড়া দিদার সুবর্ণা দম্পতির এ শিশু সন্তানদের পাশে কে দাঁড়াবে এ নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। কিন্তু স্থানীয় মেম্বার সহ সালিশগন এই সন্তানদের দিকেও তাকান নাই। তারা আসামীদের বাচাঁতে মরিয়া হয়ে উঠে পরে লেগেছে। তাই সচেতন মহল সঠিক তদন্তের মাধ্যমে এই হত্যার বিচারের দাবী জানান। কিন্তু সঠিক বিচার পাওয়া নিয়ে সন্দিহান ভুক্তভোগী নিহতের পরিবার। জেসি / এন.এইচ

এই বিভাগের আরো খবর