শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ৭ ১৪৩১

বাবা বলে ডাকার ভাগ্য আমার হয় নাই : ওসি কামরুল

কামরুল ফারুক

প্রকাশিত: ২৭ মার্চ ২০২১  

১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতা সংগ্রামে আমার পিতা শহীদ কং/১০৪৬ মহিউদ্দিন পাকিস্তানী বর্বর হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সর্ব প্রথম ঐতিহাসিক রাজারবাগ পুলিশ লাইনে প্রতিরোধ গড়ে তুলেন এবং ২৫শে মার্চ কালো রাত্রীতে(দিবাগত রাত্রে)অর্থাৎ ২৬শে মার্চ ১৯৭১ সালে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর সাথে সম্মুখ যুদ্ধে রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে শহীদ হন।

 

১৯৭১ সালে ২৬ শে মার্চ আমার বড় ভাই আবুল কাইয়ুম ওরফে বাবুল (১৭, মামা আব্দুল কাদিরও (১৬) একই দিনে পাকিস্তানী বর্বর হায়েনা বাহিনীর নির্মম বুলেটের আঘাতে রাজারবাগে শহীদ হন। বড় ভাই আবুল কাইয়ূস @ বাবুল তখন এসএসসি পরিক্ষার্থী ছিলেন এবং মামা আঃ কাদের নবম শ্রেনীর ছাত্র ছিলেন।

 

বড় ভাই এসএসসি পরিক্ষার জন্য নতুন জামা কাপড় কিনতে এবং বাবার দোয়া নিতে মামাকে সাথে নিয়ে ২৪ শে মার্চ ১৯৭১ সালের সন্ধার দিকে ঢাকা আসেন। ঢাকায় তখনকার উত্তপ্ত অবস্থা সম্পর্কে আমার আম্মা ও ভাই জানতেন না। তখনকার যোগাযোগ ব্যবস্থা ততটা উন্নত না থাকার কারনে হয়ত ঢাকার সংবাদটা আমাদের পরিবার জানতে পারে নাই। আমার বয়স তখন ৫/৬ মাস। আমার বাবাকে নিয়ে আমার স্মৃতি বলতে কিছু নেই। বাবার সম্পর্কে স্পষ্ট ধারনা হওয়ার আগেই পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর নির্মম বুলেট আমার কাছ থেকে বাবাকে অনেক দূরে নিয়ে গেছে। কোন দিন বাবাকে বাবা বলে ডাকার ভাগ্য আমার হয় নাই। বিভিন্ন প্রতিকুল পরিবেশের মধ্যে মরণপন সংগ্রাম করে আমার মা আমরা ছোট ছোট চার ভাই ও দুই বোনকে নিয়ে সংসার নামক তরিতে নিশানা বিহীন অবস্থায় ভাসতে থাকে।

 

স্বাধীনতা সংগ্রামে সুদীর্ঘ নয় মাস আমাদের পরিবারের পক্ষে বাবা, ভাই ও মামার কোন খোঁজ খবর নেওয়া সম্ভব হয় নাই। মহান স্বধীনতা সংগ্রাম চলাকালীন সময়ের প্রায়ই বিভিন্ন লোকে সান্তনার বাণী হিসাবে মার কাছে এসে বলত, “আপনার স্বামী ,ছেলে ও ভাই সবাই জীবিত আছে” কিংবা কেউ কেউ এসে বলত তাদেরকে পাকিস্তানী বাহিনী ধরে পাকিস্তানী নিয়ে গেছে। স্বাধীনতার সময় আমার মা আমার ছোট ছোট ভাই বোনদের নিয়ে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসর রাজাকারদের ভয়ে এ গ্রাম থেকে ও গ্রাম ,এ বাড়ি থেকে ও বাড়িতে পালিয়ে বেড়াত। দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতা যুদ্ধে ৩০ লক্ষ শহীদ ও দুই লক্ষ মা বোনদের ইজ্জতের বিনিময়ে অবশেষে বিশে^র ইতিহাসে বাংলাদেশ নামক একটি নতুন স্বাধীন রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটে।

 

উল্লেখ্য যে, স্বাধীনতা স্বপক্ষে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর বিপক্ষে রাজারবাগের পূর্ণভূমি থেকে সর্ব প্রথম স্বাধীনতার পক্ষে যে বুলেট টি পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে ছুড়েছিল তার অংশীদার ছিলেন শহীদ মহিউদ্দিন। শহীদ মহিউদ্দিন এর স্মৃতি রক্ষার্থে রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সের ২নং গেইট শহীদ মহিউদ্দিন এর নামে নাম করণ করা হয়। তাছাড়া শহীদ মহিউদ্দিন এর নিজ বাড়ি ময়মনসিংহ গফরগাঁও থানা বর্তমানে পাগলা থানায় একটি রাস্তার নাম শহীদ মহিউদ্দিন সড়ক করা হয়।


দেশ স্বাধীন  হওয়ার পর আমার মা অনেক কষ্টে বিভিন্ন পুলিশ বিভাগে বিভিন্ন অফিসে দৌড়াদৌড়ি করে জানতে পারেন যে, আমার বাবা ১৯৭১ সালে শহীদ হইয়াছে। ১৯৭২ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমার মাকে ২০০০/- টাকার একটি চেক এবং আমার পিতার স্বাধীনতা সংগ্রামে অবদানের কথা স্মরণ করে একটি সম্মাননা পত্র প্রদান করেন। আমি প্রকৃতির নিয়মে আস্তে আস্তে বেড়ে উঠার সাথে সাথে বাবার অনুপস্থিতি আমাকে দারুনভাবে নাড়া দিত।

 

মায়ের কাছে মাঝে মাঝে সমস্ত ঘটনা শুনতাম অনেক সময় মা ছবিসহ স্মৃতি বর্ণনা করতে গিয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলতেন। আমি অনেক সময় আমাদের ঘরে রক্ষিত বিভিন্ন কাগজপত্র ঘেটে ঘেটে দেখতাম বাবার স্মৃতি সংক্রান্ত কোন তথ্য পাওয়া যায় কিনা। অনেক সময় বাবা কোন ছবি কেন ঘরে নেই তা নিয়া মার কাছে অভিযোগ করতাম। বাবার ছবি কেন ঘরে নেই এই ব্যাপারে আমার বড় বোন রানুর কাছে থেকে জানতে পারি আমাদের ঘরের যে রুমে বাবা ও বড় ভাই বাবুল এর সাদাকালো বাঁধানো ছবি ছিল সেই ঘরে আম্মা গেলেই কান্নাকাটি করতেন এবং অজ্ঞান হয়ে যেতেন। সেই কারণে ছবিগুলো ঘরের টাঙ্গানো নিদিষ্ট স্থান থেকে নামিয়ে রেখে দেওয়া হয়েছিল, যা পরবর্তীতে ছবিগুলো নষ্ট হয়ে যায়। পাড়া প্রতিবেশি সমবয়সী ছেলে মেয়েদেরকে তাদের বাবার হাত ধরে মেলায় নিয়ে যেতে দেখলে কিংবা ব্রক্ষপুত্র নদের ধার ঘেষে গ্রামে মেঠো রাস্তা দিয়ে হাত ধরে কিংবা কাঁদে করে নিয়া যেতে দেখলে বাবার অভাব ভীষণভাবে অনুভব করতাম।

 

মাঝে মাঝে মনের ভিতর কল্পনার ফানুস আকঁতাম। হয়ত একদিন সন্ধায় কিংবা সকাল বেলায় আমার বাবা আমাদের বাড়িতে এসে আমাদের সবাইকে ডাক দিয়ে বলবে তোমরা কে কোথায় জলদি আস, আমি এসেছি। পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী আমাকে, আমার ছেলেকে ও শ্যালক ধরে নিয়া গিয়েছিল।

 

দীর্ঘদিন পর পাকিস্তানী বাহিনীর বন্ধিদশা থেকে মুক্তি পেয়ে তোমাদের কাছে চলে এসেছি। এই সবই ছিল কল্পনা মাত্র। মাঝে মাঝে নিজেকে সান্তনা দেওয়ার জন্য নিরবে বসে এই সব কল্পনার ফানুস বুনতাম মনের ভিতরে, নিজের অজান্তে। মা‘র হাত ধরে বাংলাদেশের বিভিন্ন পুলিশ লাইনে গিয়েছি এবং বিভিন্ন গণকবরের তালিকায় খোঁজ নিয়েছি বাবা, ভাই ও মামার কোন সন্ধান পাওয়া যায় কিনা।

 

১৯৯৫ সালের দিকে আমি লেখাপড়ার সুবাদে ঢাকা আসি। আমার সব সময় একটা পণ ছিল যে আমার বাবা, ভাই ও মামা কোথায়, কখন, কিভাবে শহীদ হয়েছেন তা আমাকে বাহির করতেই হবে। এই লক্ষ্যে ঢাকায় এসে আমি প্রজন্ম ৭১ এর সাথে যুক্ত হই এবং ঢাকায় ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের স্মৃতি বিজড়িত স্থান, শহীদ মিনার ও শহীদদের কবরস্থান সম্পর্কে খোঁজ-খবর নিতে থাকি। ১৯৯৬ সালে কোন এক শুভক্ষণে তারিখটা মনে নেই, মুক্তিযোদ্ধা সংহতি পরিষদের একটি স্মরনিকা আমার হাতে আসে।

 

উক্ত স্মারনিকার শেষ প্রচ্ছদে রাজারবাগ শহীদ মিনারের ছবি দেখতে পাই এবং উক্ত প্রচ্ছদের শহীদ মিনারের নীচে লেখা ছিল, ১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতা সংগ্রামে যে সকল বীর পুলিশ সদস্যগণ স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহণ করিয়া পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী কর্তৃক শহীদ হইয়াছেন সেই সকল বীর শহীদ সদস্যদের নাম উক্ত শহীদ মিনারে মুদ্রিত আছে। স্মারনিকাটি সন্ধার দিকে আমার হস্তগত হয়েছিল এবং দিনটি ছিল বৃহস্পতিবার। স্মারনিকাটি পাওয়ার পর সারারাত আমার একটা অস্থিরতার মধ্যে কাটে। কখন ভোর হবে, কখন আমি শহীদ মিনারে যাব। বাবার নাম উক্ত শহীদ মিনারে আছে কি না, না থাকলে হয়ত এখন পর্যন্ত বেঁচে আছে এই সব কল্পনা নিয়া নির্ঘুম রাত কাটাই। পরের দিন সকাল ১০:০০ ঘটিকার সময় রাজারবাগ পুলিশ লাইনে যাই। আমার পূর্ব পরিচিত তখনকার এ. এস. আই হেলাল যিনি কল্যাণ অফিসে কাজ করতেন এবং কল্যান অফিস ছিল রাজারবাগ জামে মসজিদের গেইট সংলগ্ন পুকুর পাড়ের পূর্ব পাশের টিনের শেড ঘরে। আমি রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সের ৩নং গেইট দিয়ে পাহারারত ডিউটি কংদের অনুমতি নিয়া ভিতরে ঢুকে কল্যাণ অফিসে গিয়ে এ, এস, আই হেলাল এর  কাছে ঘটনা বলি এবং শহীদ মিনারে যেতে চাই বললে সে আমাকে যাওয়ার জন্য অভয় দেয়। তখন আমি রাজারবাগ শহীদ মিনারে এসে ডিউটিরত কং এর অনুমতি নিয়া ভিতরে ঢুকি। মুক্তিযোদ্ধা শহীদ পুলিশ সদস্যদের নামের তালিকায় আমার বাবার নাম খুজঁতে থাকি।  এক পর্যায়ে শহীদ মিনারের পশ্চিম পাশের্^ আসিয়া আমার বাবার নাম, নম্বর ও শহীদ হওয়ার তারিখ ২৬শে মার্চ ১৯৭১ ক্রমিক নং-১৫ তে খুঁজে পাই, উল্লেখ্য, আমার বাবা ঢাকায় বাবু বাজার পুলিশ ফাঁড়িতে কর্মরত ছিলেন এবং রাজারবাগ পুলিশ লাইনে থাকিতেন। 


বাবার শহীদ হওয়ার তারিখ শহীদ মিনারে খোদাইকৃত পাইয়া আমার সমস্ত শরীরে একটি ঝাকুনির সৃষ্টি হয়। তখন আমার মনে হয়েছিল যে, এই মাত্র বুঝি আমার বাবা শহীদ হয়েছেন এবং আমি তার শহীদি মৃত দেহের সামনে দাড়িয়ে আছি। এরপর থেকে রাজারবাগ শহীদ মিনার আমার কাছে হয়ে উঠে একটি তীর্থস্থানের মত। প্রতি শুক্রবার আমি উক্ত শহীদ মিনারে এসে শহীদদের তালিকায় বাবার নাম দেখতাম এবং পরম করুণাময় আল্লাহর কাছে সকল শহীদ সদস্যদের জন্য প্রার্থনা করতাম।

 

প্রতি বৎসর ২৫ শে মার্চ কালো রাত্রিতে রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সের শহীদ মিনারে মোমবাতি জ¦ালিয়ে শহীদদেরকে স্মরণ করা হইত। উক্ত স্মরণ সভায় পর পর তিন বৎসর ১৯৮৭,১৯৮৮,১৯৯৯ সালে মরহুম বিচারপতি কে.এম সোবহান ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সৈয়দ হাসান ইমাম সাহেবদের প্রধান ও বিশেষ অতিথি করে ছোট পরিসরে অনুষ্ঠান করা হত। উক্ত অনুষ্ঠানগুলোতে শহীদ পরিবারের সন্তান হিসেবে প্রতি বৎসর আমি উপস্থিত থাকতাম। উক্ত অনুষ্ঠানে পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকতাগণ উপস্থিত থাকতেন। প্রধান অতিথি, বিশেষ অতিথি ও পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণের সাথে শহীদ মিনারের মূল বেদীতে আমি বসতাম এবং ৩০/৩৫ জন কনস্টেবল সামনে প্লাষ্টিকের চেয়ারে বসে সারিবদ্ধভাবে প্রধান অতিথি, বিশেষ অতিথি সহ অন্যান্য আলোচকদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ভিত্তিক আলোচনা শুনতেন। উক্ত তিনটি অনুষ্ঠানে আমি প্রধান অতিথি, বিশেষ ও পুলিশের উধ্বর্তন কর্তৃপক্ষের কাছে বার বার দাবী জানিয়েছিলাম যে, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের সূচনাকারী এবং সর্বপ্রথম প্রতিরোধকারী হিসেবে বাংলাদেশ পুলিশকে মহান স্বাধীনতা পদক প্রদানকাল্পে সরকারের কাছে দাবী জানানোর জন্য।

 


সময়ের বিবর্তনে এবং বর্তমানে মুক্তিযুদ্ধে স্বপক্ষে সরকার ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার কারণে স্বাধীনতা সুদীর্ঘ ৪০ বৎসর পর বাংলাদেশ পুলিশের স্বাধীনতা সংগ্রামে মহান আতœত্যাগ ও বীরোচিত ভূমিকার কথা স্মরণ করে বর্তমান মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে সরকার বাংলাদেশ পুলিশকে স্বাধীনতার পদক প্রদান করে যা বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর জন্য সত্যিই গর্বের বিষয়।

 

বাংলাদেশ পুলিশের স্বাধীনতা পদক পাওয়ার খবরটি যখন পত্রিকায় দেখি তখন এই ছোট্ট সংবাদটি বার বার পড়েছি এবং মনে মনে বাবা, ভাই ও মামাকে বার বার স্মরণ করেছি। বার বার বাবার উদ্দেশ্যে বলিছি “ তোমরা শান্তিতে ঘুমাও”। তোমার ও তোমার সন্তানের দেওয়া বুকের তাজা রক্তের বিনিময়ে আজ আমরা স্বাধীন বাংলাদেশ নামক একটি রাষ্ট্র, একটি মানচিত্র এবং একটি স্বাধীন পতাকা পেয়েছি। যে পতাকার মাঝে তোমার ও তোমার সন্তান এর বুকের তাজা রক্ত লেগে আছে। আজ সমস্ত বিশ্বে এই পতাকা মাথা উচুঁ করে পতপত করে উড়ছে। তোমার বুকের তাজা রক্তের বিনিময়ে আজ বাংলাদেশ পুলিশ মহান স্বাধীনতা পদকে ভূষিত হয়েছে “ সেই সাথে আজ আরও মনে পড়ছে তুমি শহীদ হওয়ার সময় রেখে যাওয়া তোমার বিধবা স্ত্রী ও ছোট ছোট সন্তানদের তাদের হক তোমার চাকুরীর পেনশন অজ্ঞাত কারনে ২৬/০৩/১৯৭৬ তারিখে বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরবর্তীতে আমি বিভিন্ন অফিসে দৌড়াদৌড়ি করে ১৯৯৮ সালের দিকে উক্ত বন্ধকৃত পেনশনটি চালু করতে সমর্থ হই।

 

আমার বাবা শহীদ হওয়া সংক্রান্তে কাগজ-পত্রের জন্য পুলিশের বিভিন্ন দপ্তরে গিয়েছি অনেকবার। অনেকের কাছ থেকে বিরূপ আচরনের স্বীকার হয়েছি। বারবার মন্ত্রনালয়সহ পুলিশ দপ্তরে পত্র দিয়েছি, শহীদ পরিবার হিসেবে আমাদের খোঁজখবর নেওয়ার জন্য কিন্তু কোন ফল হয় না। আমরা যে একটা পুলিশ পরিবারের সদস্য এবং মহান স্বাধীনতা সংগ্রামে আমাদের পরিবারের এতবড় অবদান এই খবরটুকু কেউ নেওয়ার প্রয়োজন মনে করে নাই।

 

সর্ব প্রথম স্বাধীনতার সুর্দীঘ ৩৯ বৎসর পর সাবেক মাননীয় ইন্সপেক্টর জেনারেল জনাব এ,কে,এম শহীদুল হক, বিপিএম, পিপিএম এবং জনাব হাবিবুর রহমান, বিপিএম (বার), পিপিএম এর নেতৃত্বে গত ইং ২৬/১২/২০০৯ তারিখে রাজার বাগ পুলিশ লাইনে মাননীয় (প্রাক্তন) ইন্সপেক্টর জেনারেল জনাব নুর মোহাম্মদ স্যারের উপস্থিতিতে মুক্তিযোদ্ধে সর্ব প্রথম রাজারবাগে প্রতিরোধকারী জীবিত বীর মুক্তিযোদ্ধা পুলিশ সদস্যগন এবং সর্ব প্রথম মুক্তিযোদ্ধে রাজারবাগে শহীদ পরিবারের সদস্যগনদেরকে সংর্বধনা প্রদান করা হয় এবং মাননীয় কমিশনার স্যারের পক্ষ থেকে একটি চাদর, পাঁচ হাজার টাকার প্রাইজবন্ড এবং একটি সন্মাননা পত্র প্রদান করা হয়।

 

স্বাধীনতার সুদীর্ঘ ৩৯ বৎসর পর হইলেও আমাদেরকে প্রথম বারের মত রাষ্ট্রীয়ভাবে স্মরণ করার জন্য ততকালীন মাননীয় ইন্সপেক্টর জেনারেল জনাব এ,কে,এম শহীদুল হক, বিপিএম, পিপিএম, এবং  সাবেক ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার জনাব হাবিবুর রহমান, বিপিএম (বার), পিপিএম স্যার সহ যারা উক্ত মহৎ কাজের সাথে জড়িত তাঁদের প্রতি আমাদের পরিবার ও শহীদ পরিবারের সদস্যগন চির কৃতজ্ঞ। তাছাড়া বর্তমান আইজিপি মহোদয় ডাঃ বেনজির আহম্মেদ বিপিএম (বার)    স্যারের প্রতি কৃতজ্ঞ আমাদের শহীদ পরিবারের সব সময় খোঁজ খবর নেওয়ার জন্য।

 

ইহার ধারাবাহিকতায় তৎকালীন মাননীয় ইন্সপেক্টর জেনারেল জনাব এ,কে,এম শহীদুল হক, পিপিএম, বিপিএম এবং ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার জনাব হাবিবুর রহমান, বিপিএম (বার), পিপিএম, অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (অর্থ) জনাব আবিদা সুলতানা স্যার, বীর মুক্তিযোদ্ধা পুলিশ সদস্য এবং শহীদ পরিবারের সদস্যদের সন্মাননার আয়োজনসহ তাঁদের খোঁজ খবর নিচ্ছেন। আমার বাবা দেশের জন্য প্রান দিয়েছেন। বিনিময়ে আমরা একটি স্বাধীন স্বার্বভৌম, স্বদেশ ও স্বাধীন পতাকা পেয়েছি। এর চেয়ে বড় আর কি গৌরব হতে পারে আমার জন্য। তবুও ব্যক্তিগতভাবে আমি ও আমার পরিবার যা হারিয়েছি তার আর কি ফিরে পাব কোনদিন ? কোনদিন হয়ত আমার বাবা, ভাই ও মামাকে ফিরে পাব না। কিন্তু তারা যুগযুগ ধরে বেঁচে থাকবেন অগনিত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝে। বেঁচে থাকবেন লাল সবুজ পতাকার মাঝে। বেঁচে থাকবেন বাংলাদেশ নামক দেশটি যতদিন বিশে^ মানচিত্র থাকবে ততদিন। এটাই আমার ও আমার পরিবারের জন্য সবচেয়ে বড় সান্তনা। পিতৃহীনতার অভাব যে, কতটুকু যন্ত্রণাদায়ক তা একমাত্র আমি বুঝতে পারি। আমার বাবা, ভাই ও মামার কবর কোথাই আমরা এখন পর্যন্ত তার সন্ধান পাই নাই। আজও পর্যন্ত আমি আমার বাবার কবরের সন্ধান করে যাচ্ছি। যেকোন মুহুর্তে যেকোন সোর্স থেকে কোন তথ্য পেলেই আমি আমার বাবার কবরের সন্ধানে সেখানে ছুটে যাই। হয়ত একটি পরম করুণাময়ের রহমতে বাবা, ভাই ও মামার কবরের সন্ধান পাব সেই আশায় এখনও বুক বেধে আছি। বাবা তোমার বিদেহী পবিত্র আতœার উদ্দেশ্যে শ্রেষ্টতম পবিত্রতা উৎস্বর্গ করলাম। একজন শহীদ সন্তান হিসেবে নিজেকে যখন ভাবি তখন নিজেকে গর্বিত বলে মনে হয়। তোমার পবিত্র রক্তের বিনিময়ে যে স্বাধীন বাংলাদেশ আমরা পেয়েছি তাকে যেন বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাড় করাতে পারি তুমি স্বর্গে থেকে সেই দোয়াই করিও তোমার এই সন্তানের জন্য।

 

আমি ২০০১ সালে এসআই হিসেবে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে যোগদান করিয়া অত্যন্ত সততা ও নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করে আসছি। চাকুরীকালীন

 

নারায়নগঞ্জ জেলায় কর্মরত থাকাকালীন নারায়গঞ্জ জেলার শ্রেষ্ঠ তদন্তকারী অফিসার হিসাবে বিবেচিত হই এবং পুলিশ সুপার নারায়নগঞ্জ কর্তৃক ক্রেস্ট এবং আর্থিক পুরষ্কার পাই। এছাড়া ডিএমপি‘তে কর্মরত অবস্থায় পর পর ৯ বার মতিঝিল বিভাগে শ্রেষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে বিবেচিত হইয়া মাননীয় পুলিশ কমিশনার কর্তৃক ক্রেস্ট এবং আর্থিক পুরুস্কারে ভূষিত হই এবং আইজিপি পদক প্রাপ্ত হই। ২০১১ সালে পুলিশ পরিদর্শক পদে পদোন্নতি প্রাপ্ত হই। বর্তমানে অফিসার ইনচার্জ বাসন থানা জিএমপি-গাজীপুর কর্মরত আছি। 

 

(মোহাম্মদ কামরুল ফারুক)
বিপি নং-৭২০১০৩৩৮৩৭
অফিসার ইনচার্জ
বাসন থানা
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ
গাজীপুর।

এই বিভাগের আরো খবর