বৃহস্পতিবার   ২৮ মার্চ ২০২৪   চৈত্র ১৪ ১৪৩০

বারো দিনে ১০ মামলা, পলাতক গিয়াসউদ্দিন

অর্ণব হাসান

প্রকাশিত: ৩ ডিসেম্বর ২০২২  

 

# গিয়াসউদ্দিনের বাড়ি তল্লাশী, হাজারখানেক কর্মী আসামী
# আবারও আদালত মুখী বিএনপি

নারায়ণগঞ্জে বিএনপি ও এর সহযোগী অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের নামে প্রতিদিনই দায়ের করা হচ্ছে মামলা। গত ৩০ আগস্ট থেকে নারায়ণগঞ্জ জেলার সাতটি থানায় বিএনপির কয়েক হাজার নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে ১৪টি।

 

 

সম্প্রতি ১২ দিনের  ব্যবধানে নারায়ণগঞ্জে ১০ টি মামলা হয়েছে। আবার নাশকতা মামলার ঘটনায় বিএনপির নেতা কর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে পুলিশ প্রশাসন অভিযান পরিচালনা করে গ্রেপ্তার আতঙ্ক তৈরী করে রাখছে।

 

 

ইতোমধ্যে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও সাবেক এমপি গিয়াস উদ্দিনের বাড়িতে তল্লাশী করা হয়েছে। তবে সাংসদের বাড়িতে গিয়ে তাকে পান নি। তিনি পলাতক রয়েছে বলে জানান দলীয় একটি সুত্র।

 

 

এদিকে এসব মামলায় জেলা শীর্ষ নেতা থেকে শুরু করে ওয়ার্ড ইউনিয়নের নেতাদেরও আসামি করা হয়েছে। গ্রেপ্তার এড়াতে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন নেতাকর্মীরা। গত দুই দিনে নারায়ণগঞ্জ জেলার ৫টি থানায় পৃথক ৫টি বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের মামলা করা হয়েছে।

 

 

এসব মামলায় প্রায় চার শতাধিক বিএনপি নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। বেশকজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এর আগে গত ৩০ আগস্ট, তিন ও পাঁচ সেপ্টেম্বর রূপগঞ্জ থানায়ও মামলা দায়ের করে পুলিশ।

 

 

তারও আগে সোনারগাঁও থানা পুলিশ আরেকটি মামলা দায়ের করে। এদিকে ১০ সেপ্টেম্বর নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ ও সোনারগাঁও থানা পুলিশের দায়ের করা দুটি বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের মামলায় ১৭৯ জন বিএনপির নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে।

 

 

একাধিক সুত্রে জানা যায়,  ১০ সেপ্টেম্বর সকালে রূপগঞ্জ ও সোনারগাঁও থানা পুলিশ পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও নারায়ণগঞ্জ ৪ আসনের সাবেক এমপি গিয়াস উদ্দিন, সদস্য সচিব গোলাম ফারুক খোকন, কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান দিপু ভুঁইয়াকেও আসামি করা হয়।

 

 

এর আগের দিন রবিবার নারায়ণগঞ্জ সদর, ফতুল্লা ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় একই অভিযোগে প্রায় দুই শতাধিক বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে তিনটি মামলা দায়ের করা হয়।

 

 

সোনারগাঁয়ে উপজেলার তালতলা মিরেরটেক ফাঁড়ির উপপরিদর্শক (এসআই) মনিরুজ্জামান বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় ৪৪ জনের নামসহ অজ্ঞাতনামা আরও ৩০ জনকে আসামি করা হয়। মামলায় সাদিপুর ইউনিয়ন বিএনপির সেক্রেটারি হাজী সেলিম সরকারকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

 

 

এ মামলায় বেশকজন জামায়াতে ইসলামীর নেতাকেও আসামি করা হয়। একইভাবে রূপগঞ্জ থানা পুলিশের এসআই রুহুল আমিন বাদী হয়ে ৮৩ জন বিএনপি নেতাকর্মীদের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ২২ জনকে আসামি করা হয়। মামলায় তাদের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক দ্রব্য ও সরকার উৎখাতের অভিযোগ আনা হয়েছে।

 

 

সোনারগাঁ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোরশেদ আলম মামলার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, উপজেলার সাদিপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হাজী সেলিম সরকার ও সভাপতি কামরুজ্জামান মাসুম সাদিপুর ইউনিয়ন বিএনপির নেতাকর্মীদের নিয়ে গত শনিবার রাতে নয়াপুর মাঠে সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্র ও বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে বিস্ফোরক দ্রব্য দিয়ে হামলায় ষড়যন্ত্র করছিল।

 

 

এমন সংবাদের ভিত্তিতে তালতলা পুলিশ ফাঁড়ির এসআই শফিকুল ইসলাম সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে ওই সভা থেকে সাদিপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সেলিম সরকারকে গ্রেপ্তার করে। পুলিশের উপস্থিত টের পেয়ে সভার অন্য সদস্যরা পালিয়ে যায়।

 

 

অন্যদিকে আগের ৯ সেপ্টেম্বর নারায়ণগঞ্জের তিনটি থানায় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা তৈমূর আলম খন্দকার, জেলা বিএনপির সভাপতি কাজী মনিরুজ্জামান ও সাধারণ সম্পাদক মামুন মাহমুদসহ মোট ১৯৭ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে তিনটি মামলা করা হয়েছে। একই দিনে নারায়ণগঞ্জ সদর, ফতুল্লা ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় পুলিশ বাদী হয়ে পৃথক তিনটি মামলা করেছে।

 

 

নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি কাজী মনিরুজ্জামান মনির ও নারায়ণগঞ্জের আলোচিত আইনজীবী মহানগর বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান সহ নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর বিএনপির ২০ নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ করে একটি বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে নাশকতার মামলা দায়ের করেছে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানা পুলিশ।

 

 

মামলায় আরও ২০ থেকে ২৫ জন অজ্ঞাতনামা আসামিসহ শনিবার শহরের চাষাড়ায় মিছিলের চেষ্টার সময় আটক ৪ জনকে আসামি দেখানো হয়েছে।

 

 

এছাড়াও নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মামুন মাহমুদসহ বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের ৪০ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইন ও বিস্ফোরক আইনে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার এসআই আমিনুল ইসলাম-২ বাদী হয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় আরও একটি মামলা করেন।

 

 

মামলায় দুজনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। তারা হলেন, জিয়াউদ্দিন বিজয় ও রমজান ভূঁইয়া। এছাড়া বৃহস্পতিবার একই দিনে সদর থানা এবং ফতুল্লা থানায় ২ টি মামলা হয়। এই মামলা নিয়ে গত ২০ দিনের ব্যবধানে বিএনপি নেতাদের নামে ১০ মামলা হয়।

 

 

আর এই সকল মামলার কারনে বিএনপির নেতা কর্মীরা ভীত নয়। তারা আরও শক্তিশালী হয়ে উঠছেন। তবে ইদানিং মামলা গুলো আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকার সমাবেশকে কেন্দ্র করে এই মামলা গুলো দেয়া হচ্ছে।

 

 

অভিযান প্রসঙ্গে সাবেক এমপি গিয়াস উদ্দিন বলেন, এই অভিযান ১০ ডিসেম্বরের প্রস্তুতিকে প্রতিবন্ধিকতার সৃষ্টির একটি অংশ। এই অভিযানের পেছনে স্থানীয় একজন জনপ্রতিনিধির ইন্ধন রয়েছে বলে মনে করছি। যত প্রতিবন্ধীকতা ও পুলিশি ভয় দেখানো হোক, ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশ সফল করবো। মামলা হামলা করে আমাদের দমাতে পারবে না।

 

 

জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব গোলাম ফারুক খোকন বলেন, শেষ রক্ষা পেতে এবং অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলে রাখতে সরকার আবারো সেই পুরোনো খেলা শুরু করেছে। নিশিরাতের মাফিয়া সরকার পতনের শেষ প্রান্তে পৌঁছে ১০ ডিসেম্বর বিএনপির কর্মসূচিকে নিয়ে ‘পোড়া মাটি নীতি’ অবলম্বন করেছে।

 

 

আওয়ামী ফ্যাসিবাদ টিকিয়ে রাখার জন্য বিরোধী দলীয় কর্মসূচিকে বানচাল করতে নানা ষড়যন্ত্র করেছে। বিএনপির নেতাকর্মীদের হত্যা-নির্যাতন ও মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। অসংখ্য ককটেল ফাটানোর অভিযোগে পুলিশের মামলা দায়ের, কিন্তু কেউ ককটেল ফুটতে দেখেনি বা শোনেনি।

 

 

নারায়ণগঞ্জে পুলিশের মামলায় জাপানে থাকা প্রবাসী ছাত্রদল নেতা গায়েবি মামলার আসামি। সেই পুরোনো কায়দায় সারা দেশে আবারও গায়েবি মামলার হিড়িক চলছে। তবে আমরা তাদের এই মামলা হামলাকে ভয় পাই না।

 

 

কয়েক হাজার মামলা দিয়েও তারা বিএনপি নেতা কর্মীদের দমাতে পারবে না। ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশের পরে সরকার টিকে থাকতে পারবে বলে তারা এখন মামলা দিয়ে নেতা কর্মীদের দমাতে চাচ্ছেন। কিন্তু এতে করে কোন কাজ হবে না।

 

 

এই মামলার নিন্দা জানিয়ে মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মামুন জানান, ১০ ডিসেম্বর ঢাকার সমাবেশকে সরকারে নিজেদের পতনের ইঙ্গিত মনে করছেন। মূলত আগামী ১০ ডিসেম্বর বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশে নেতাকর্মীদের ঠেকাতেই সরকারি দল আওয়ামী লীগের পক্ষে মিথ্যা ঘটনা সাজিয়ে গায়েবি মামলা দায়ের করেছে।

 

 

নারায়ণগঞ্জে এ ধরণের কোনো ঘটনাই ঘটেনি। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। একই সঙ্গে এই মিথ্যা সাজানো গায়েবি মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানাই। তাছাড়া কোনো ষড়যন্ত্র করেও ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশে নেতাকর্মীদের দমিয়ে রাখতে পারবে না।

 

 

তিনি আরও বলেন, সেই পুরোনো কায়দায় সারা দেশে আবারও গায়েবি মামলার হিড়িক চলছে। তবে আমরা তাদের এই মামলা হামলাকে ভয় পাই না। কয়েক হাজার মামলা দিয়েও তারা বিএনপি নেতা কর্মীদের দমাতে পারবে না। যত বাধাই আসুকনা কেন সকল বাধা কাটিয়ে ঢাকার মহা সমাবেশ বাস্তাবায়ন হবে।

এস.এ/জেসি
 

এই বিভাগের আরো খবর