শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ৬ ১৪৩১

বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণে নীরব সবাই

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশিত: ২৭ জানুয়ারি ২০২৩  

 

# সর্বমোট ৩টি বায়ু দূষণ পরিমাপক যন্ত্র বসানো হয়েছে : নগর পরিকল্পনাবিদ

 

গত ২০ জানুয়ারি (শুক্রবার) থেকে ২৬ জানুয়ারি (বৃহস্পতিবার) পর্যন্ত টানা ৭ দিন বায়ু দূষণে শীর্ষে ঢাকা। রাজধানীর ঠিক পাশের জেলা নারায়ণগঞ্জের বায়ু দূষণের পরিস্থিতি ও যথেষ্ট উদ্বেগের কারণ।  ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড থেকে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ পুরাতন সড়ক কিংবা ঢাকা-মুন্সিগঞ্জ সড়ক। সর্বত্রই ধূলাবালির দৌরাত্ম্যে পরিলক্ষিত হয়।

 

 

এমনকি মহল্লার অলিগলিতে ও ধুলাবালির উপস্থিতি নেহাত কম নয়। নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত নারায়ণগঞ্জ এ বায়ু দূষণ নতুন কোনো কিছু নয়। তবে এ দূষণের মাত্রা দিন দিন বেড়েই চলেছে। যা নিয়ে শঙ্কিত শহরবাসী। তবে এই শঙ্কাকে আরও একধাপ এগিয়ে নিয়ে যাবে এক চাঞ্চল্যকর তথ্য।

 

 

স্ট্যামফোর্ড বায়ুমন্ডলীয় দূষণ অধ্যায়ন কেন্দ্রের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে সারাবিশ্বের মধ্যে বায়ুদূষণে বাংলাদেশ প্রথম। আর বাংলাদেশে বায়ুদূষণে তৃতীয় নারায়ণগঞ্জ। যা নারায়ণগঞ্জবাসীর জন্য খারাপ খবর।

 

 

প্রতিবেদনে বলা হয় দেশের বায়ুতে  অতি ক্ষুদ্র বস্তুকণা ২.৫ এর গড় উপস্থিতি প্রতি ঘন মিটারে ১০২.৪১ মাইক্রোগ্রাম। যা আদর্শ মানের (৬৫ মাইক্রোগ্রাম) চেয়ে প্রায় দেড় গুণ বেশি কিন্তু নারায়ণগঞ্জ এর বায়ুতে অতি ক্ষুদ্র বস্তুকণা  ২.৫ এর উপস্থিতি ২২২.৪৫ মাইক্রোগ্রাম। যা আদর্শ মানের চেয়ে প্রায় ৪ গুণ বেশি।

 

 

স্ট্যামফোর্ড বায়ুমন্ডলীয় দূষন অধ্যায়ন কেন্দ্রের পরিচালক অধ্যাপক ডা. কামরুজ্জান মজুমদার আরও বলেন বিশ্বব্যাপী অসংক্রামক রোগে যে পরিমান মৃত্যু হয়, তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয় বায়ু দুষণের কারণে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, প্রতিবছর ৪.২ বিলিয়ন মানুষের অকাল মৃত্যু হয় বায়ু দুষণ গঠিত রোগের কারণে।

 

 


এমনকি এমন শহর বসবাসের অযোগ্য হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। অর্থাৎ নারায়ণগঞ্জ এর বায়ু দুষন এর হার ভবিষ্যতের জন্য এক অশনি সংকেত। ২৬ জানুয়ারি ২০২৩ (বৃহস্পতিবার) শহরের লিংক রোড, পঞ্চবটি, আলিগঞ্জ, পাগলা, ফতুল্লা এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায় রাস্তাসহ আশেপাশের এলাকা ধুলোয় আছন্ন হয়ে আছে।

 

 

এই ধুলোর মধ্যেই গাড়ি চলছে। রাস্তার পথচারীরা চলাফেরা করছে। রাস্তার পাশের দোকানগুলো খোলা রয়েছে। দেখে মনে হবে সবকিছু স্বাভাবিক। কিন্তু এমন পরিস্থিতিতে মানুষজন একরকম বাধ্য হয়েই চলাফেরা করছে।

 

 

পাগলা বাজারের দোকানি জানান, এখানে সারাজীবন সবসময় ধূলা থাকে। ধুলার সাথে থাকতে থাকতে অনেকটা বাধ্য হয়েই আমরা মানিয়ে নিয়েছি। আগে আমি সুস্থ্য ছিলাম। এখন ধুলার কারনে আমার হাপানি দেখা দিয়েছে। এমন ধুলাবালি মুক্ত পরিবেশ আমরা কামনা করি।

 


আলিগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের এক ছাত্র জানান,  রাস্তার পাশেই স্কুল।তাই ধুলাবালি স্কুলের ভিতরেও চলে আসে। এতে করে আমাদের অনেক সমস্যা দেখা দিয়েছে। চর্ম রোগ তার মধ্যে অতি সাধারণ ঘটনা হয়ে দাড়িয়েছে।

 

 

দাপার এক বাসিন্দা জানান, এমনিতে রাস্তায় অনেক ধুলাবালি। তার উপর এই এলাকায় অনেক বালু সিমেন্ট এর বেচাকেনা হয়। এর জন্য ধুলা আরও বেশি। এমন দূষিত পরিবেশে আমাদের থাকতে অসুবিধা হলেও আমরা বাধ্য হয়েই থাকি। আমাদের অসুবিধে দেখার কেউ নেই।

 


নারায়ণগঞ্জ এর দুষিত বায়ুর কারণ অনুসন্ধানে গিয়ে দেখা যায় রাস্তার সংস্কারের কাজ, মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন, ইট ভাটা, ফিটনেশবিহীন যানবাহনের কালো ধোয়াই বায়ু দূষণের অন্যতম কারণ। বায়ুদূষণ এর প্রভাব সম্পর্কে সম্পর্কে প্রজনন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ এক অধ্যাপক এর সাথে কথা বললে তিনি জানান, বায়ুদূষণ প্রজননে অনেক বড় বাধা।সুস্থ মস্তিষ্কের বিকাশ এ বায়ু দূষণ বাধা দেয়। এছাড়াও বন্ধাত্ব, গর্ভপাত, জন্মগত ত্রুটি ইত্যাদিতে নেতিবাচক প্রভাব রাখে।

 

 


এ ব্যাপারে সিটি কর্পোরেশন এর নগর পরিকল্পনাবিদ মঈনুল ইসলামের সাথে কথা বললে তিনি জানান,  শহরের চাষাড়া, ২ নং গেইট ও রাসেল পার্কে ১ টি করে সর্বমোট ৩ টি বায়ু দূষণ পরিমাপক যন্ত্র বসানো হয়েছে। এর ফলে আমরা জানতে পারি বায়ু দূষণ এর মাত্রা কেমন। বায়ু দূষন প্রতিরোধে আমরা পরিবেশ অধিদপ্তরের সাথে মিটিং করেছি। একটা প্রকল্প হাতে নেয়ার চিন্তা ভাবনা আছে।

 

 

সেটা হলে দুষন অনেকাংশেই কমে যাবে। বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণে পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ও সহকারি পরিচালকের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তারা ফোন রিসিভড করেননি। বায়ু দূষণ নিরাময়ে তেমন উল্লেখ্যযোগ্য পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি সিটি কর্পোরেশন ও পরিবেশ অধিদপ্তরকে। বায়ু দূষণের মাত্রা বেশি হলে জরুরি অবস্থা জারি করার বিধান থাকলেও সেটা বাস্তবায়ণ  তো বহু দূর দূষণ রোধে এগিয়ে আসেনা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। তবে শহরের এমন পরিস্থিতি কবে নাগাদ স্বাভাবিক হয় সেটাই এখন আলোচ্য বিষয়।

এই বিভাগের আরো খবর