বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১১ ১৪৩১

বিতর্কিত বাবুলও আ.লীগে মূল্যায়িত

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশিত: ৩ জুন ২০২৩  

 

# অবশ্যই বিতর্কিত হিসেবে বাদ যাবে : আবদুল হাই

 

 

সর্ষের মধ্যে লুকিয়ে থাকা ভূতকে তাড়ানোর চেষ্টা করা হয়। কিন্তু সোনারগাঁ আওয়ামীলীগ নেতারা সর্ষের ভিতর লুকিয়ে থাকা ভূতকে বরাবরই সোনারগাঁ আওয়ামীলীগে প্রবেশ করিয়ে আওয়ামীলীগকে কলঙ্কিত করছেন। সোনারগাঁয়ের এক চতুর মুখোশধারী আওয়ামী লীগ নেতা পরিচয়ধারী অর্থের প্রভাবে আওয়ামীলীগে অনুপ্রবেশ করেই বারদী ইউনিয়ন পরিষদে নৌকা প্রতীক ভাগিয়ে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান ও সোনারগাঁ আওয়ামীলীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য পদ ভাগিয়ে ক্ষমতার প্রভাবে উন্মদ হয়ে প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে কটুক্তি ও বঙ্গবন্ধুর খুনীদের জান্নাত কামনা এবং স্বাধীনতার ইতিহাস বিকৃতিকারী সেই লায়ন বাবুল ওরফে চুম্মা বাবুলকে সোনারগাঁ থানা আওয়ামীলীগের প্রস্তাবিত কমিটিতে ফের বহাল তবিয়তে থাকায় ক্ষুদ্ধ তৃণমূল।

 

তবে কটুক্তি করে বহিষ্কার হলে তখন তাকে ক্ষমার প্রসঙ্গে বলা হয় সংগঠন বিরোধী কোনো কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হলে তা ক্ষমার অযোগ্য বলে বিবেচিত হবে। কিন্তু একের পর এক সংগঠন বিরোধী কর্মকান্ড লিপ্ত হলেও তাকে আওয়ামীলীগ থেকে কারণ দর্শানো না হলেও উল্টো সোনারগাঁ থানা আওয়ামীলীগের নেতারা প্রস্তাবিত পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে তাকে স্থান করে দিয়েছেন।

 

সূত্র বলছে, সারা বাংলাদেশে জাতির কাছে আওয়ামীলীগকে কলঙ্কিত করা লায়ন বাবুলের পারবারিক ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় তার বাবা ভাই পূর্বে থেকেই ছিল বিএনপির রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে জানা যায়, ১৯৯১ সালের দিকে লায়ন বাবুলের পিতা সালাউদ্দিন ভূঁইয়া ওরফে সল্লা বারদী ইউনিয়ন বিএনপির সহ-সভাপতি ছিলেন। এছাড়া লায়ন বাবুলের ভাই জসিম উদ্দিন ভূঁইয়া বারদী ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।

 

সে মূলত সোনারগাঁ থানা বিএনপির সভাপতি আজহারুল ইসলাম মান্নানের নেতৃত্বে রাজনীতি করতেন। বিএনপির রাজনীতিতে সম্পৃক্ত থাকাকালে জ্বালাও পোড়াও ৬৮৫/১৯ ও ৬৮৬/১৯ সি আর মামলায় আসামীও ছিলেন। তবে হঠাৎ করেই অর্থের প্রভাবে লন্ডন পারি জমিয়ে জ্বালাও পোড়াও বিভিন্ন মামলায় আসামী দেখিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সখ্যতা তৈরী করেন। লায়ন বাবুল নিজেও সোনারগাঁয়ে রাজনীতিতে অনুপ্রবেশের ছলে কখনো জাতীয় পার্টির এমপির সাথে সখ্যতা কখনো আওয়ামীলীগের একাধিক নেতার সাথে সখ্যতা তৈরী করে একের পর এক নেতা বদলের মাধ্যমে সোনারগাঁ আওয়ামীলীগে অনুপ্রবেশ করে।

 

আওয়ামীলীগে অনুপ্রবেশ করেই সোনারগাঁয়ের বারদী ইউনিয়নে অর্থের বিনিময়ে নৌকার মনোনয়ন ভাগিয়ে নৌকার চেয়ারম্যান হওয়ার পর থেকেই তার মুখোশের আড়ালে থাকা আসল রূপ উঠে আসতে থাকে। চেয়ারম্যান হওয়ার পর থেকেই ক্ষমতার দাম্ভিকতায় প্রধানমন্ত্রীকে কটুক্তি করে বসে। ২০২২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারী বারদী পাইকপাড়া ইসলামীয়া মাদ্রাসায় ২ দিন ব্যাপী ওয়াজ মাহফিলে বারদী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান লায়ন বাবুল প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেন, ‘আমি বারদী ইউনিয়নের ম্যাজিস্ট্রেট, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এখানে আসতে হলে আমার অনুমতি নিয়ে বারদীতে আসতে হবে, এখন থেকে প্রশাসনকে অবশ্যই আমার পক্ষে কাজ করতে হবে কারো ফোনে প্রশাসন আসবে না, আমি যদি বলি সুইচ অফ দিজ ইজ অফ’।

 

দেশের প্রধানমন্ত্রী তথা সরকার প্রধানকে বারদী আসতে তাহার অনুমতি লাগবে মর্মে মন্তব্য করে মানহানি করেছে মর্মে ফারুক হোসেন বাদী হয়ে সোনারগাঁও আদালতে মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় ডিবি তদন্ত পূর্বক সত্যতা পাওয়ার রিপোর্ট দিলে বাবুল চেয়ারম্যান ২০ হাজার টাকা মুচলেকায় যে কোন শর্তে পরবর্তী ধার্য তারিখ পযর্ন্ত জামিন নেন। বাবুলের সেই বক্তব্যের পরপরই নারায়ণগঞ্জ আওয়ামীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবী উঠে।

 

একই সাথে ইতোমধ্যে সোনারগাঁয়ের বারদী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান বাবুলকে আওয়ামী লীগ থেকে অব্যাহতি দিয়ে স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের জন্য কেন্দ্রে চিঠি পাঠিয়েছিলেন। পাশাপাশি তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাইয়ের নেতৃত্বে জেলা আওয়ামী লীগের অন্যান্য নেতারা নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করেন। তবে এর কিছুদিন পরেই বাবুলকে ক্ষমা করে আওয়ামী লীগ।

 

তবে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত মো. শহীদ বাদল স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে তাকে এই ক্ষমার কথা জানানো হয়। চিঠিতে বলা হয়, সম্প্রতি সোনারগাঁয়ের বারদী ইউপিতে এক ধর্মীয় অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা সম্পর্কে মনগড়া বক্তব্যের অভিযোগে সংগঠনের গঠনতন্ত্রের ৪৭ (ক) ধারা অনুযায়ী আপনাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। সাংবাদিক সম্মেলন করে অভিযোগের সত্যতা স্বীকার ও কারণ দর্শানো নোটিশের লিখিত জবাব দাখিলের মাধ্যমে আপনার বক্তব্য প্রত্যাহার পূর্বক বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা এবং দেশ ও জাতির কাছে গভীরভাবে অনুতপ্ত হয়ে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েছেন।

 

তৎসঙ্গে ভবিষ্যতে সংগঠনের গঠনতন্ত্র, নীতি ও আদর্শ পরিপন্থী কোনো কার্যকলাপে সম্পৃক্ত হবেন না মর্মে লিখিত অঙ্গীকার করেছেন। চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক (ঢাকা বিভাগ) মির্জা আজম এমপির নির্দেশে নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ আপনার প্রেরিত লিখিত জবাব পর্যালোচনা করে ভবিষ্যতে সংগঠনের স্বার্থ পরিপন্থী কার্যক্রম ও শৃঙ্খলা ভঙ্গ না করার শর্তে আপনাকে ক্ষমা করেছে। সেই সঙ্গে দলীয় পদে বহালের জন্য সোনারগাঁও উপজেলা আওয়ামীলীগকে সাংগঠনিক নির্দেশনা দেওয়া হলো।

 

ভবিষ্যতে সংগঠন বিরোধী কোনো কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হলে, তা ক্ষমার অযোগ্য বলে বিবেচিত হবে বলেও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়। পরবর্তীতে ফের বিতর্কে জড়ায় সোনারগাঁও উপজেলা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ও মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের নেতারা বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে টুঙ্গিপাড়ায় গেলে। বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে মোনাজাতে অংশ নেন। মোনাজাত পরিচালনা করেন বারদী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটির সাবেক সদস্য মাহাবুবুর রহমান বাবুল।

 

মোনাজাতের মাঝখানে মাহাবুবুর রহমান বাবুল বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুনিদের মহান আল্লাহ তুমি জান্নাতবাসী করো। বঙ্গবন্ধুর খুনীদের জান্নাত কামনা করেও মামলার সম্মুখীন হন। যে মামলাটি পিবিআইতে তদন্তাধীন ছিল এবং তদন্ত শেষে তার ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায় বলে জানা গেছে। আবারও বিতর্কিত কান্ড করে সমলোচিত হয় বারদী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাহাবুর রহমান ওরফে লায়ন বাবুল বারদীতে এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দিতে গিয়ে বলেছিলেন, ‘ত্রিশ লক্ষ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে লাল সবুজের পতাকা পেয়েছি’।

 

এমন বক্তব্য দিয়ে দেশের স্বাধীনতা বিকৃতি করে বসেন তিনি। তার এমন বিতর্কিত বক্তব্যে ২০২৩ সালের ২৬ জানুয়ারি জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শামসুর রহমানের আদালতে মামলার আবেদন করেছিলেন বারদী ইউনিয়নের মছলুন্দপুর এলাকার মৃত হাবিবুর রহমানের ছেলে সানাউল্লাহ। পরবর্তীতে ২৯ জানুয়ারি সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শামসুর রহমানের আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) ওসিকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। এছাড়া এমপির ডিও লেটার জালিয়াতি করেও বিতর্কে জড়ান বাবুল।

 

সূত্রে জানা যায়, বারদী হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজের গভর্নিং বডি নির্বাচনের জন্য ১২ প্রার্থী মনোনয়ন সংগ্রহ করেন।পরে ৩ প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাহার করলে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বোর্ডের নীতিমালা ২০০৯ এর ২৩ (১) বিধি অনুযায়ী ৯ জনকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়। এরপর মাহবুবুর রহমান সভাপতি নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে জানা যায় এমপির ডিও লেটার  জালিয়াতি করে সভাপতি হন তিনি।

 

তখন বারদী ইউপি চেয়ারম্যান লায়ন মাহবুবর রহমান বাবুলের বিরুদ্ধে এমপি লিয়াকত হোসেন খোকার সই ও সিল জালিয়াতির অভিযোগে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে একটি মামলা দায়ের করা হয়। পরবর্তীতে এই স্কুল কমিটি স্থগিত করা হয়। এখানেই তিনি ক্ষান্ত হননি গত দুমাস আগে সিরাজুল নামে এক ব্যাক্তির কাছ থেকে তিন লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। মূলত জমি ব্যবসায়ী থেকে চাঁদা দাবি করে আবারও মামলার আসামী হন বাবুল।

 

বর্তমানে মামলাটি সিইডির তদন্তাধীন রয়েছে। একের পর এক নানা বিতর্কিত ঘটনার জন্ম দিয়ে স্বাধীনতাকে বিকৃতি আওয়ামীলীগকে পুরো জাতির কাছে কলঙ্কিত করা এই বাবুলকে ফের সোনারগাঁ থানা আওয়ামীলীগের পূর্ণাঙ্গ প্রস্তাবিত কমিটিতে সদস্য পদে মূল্যায়ন করে ফের এই বিতর্কিত বাবুলকে উষ্কে দিলেন সোনারগাঁ আওয়ামীলীগের নেতারা।

 

এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আব্দুল হাই জানায়, সে ফাউল লোক তার ফাউল কথা বার্তা থামেনি। অনেক সিনিয়র নেতা থাকা সত্ত্বেও তাকে মূল্যায়ন করা হয়েছে অবশ্যই বিতর্কিত হিসেবে বাদ যাবে।এস.এ/জেসি

এই বিভাগের আরো খবর