Logo
Logo
×

শিল্প ও সাহিত্য

বিলুপ্তির পথে ঐতিহ্যের বাহন পালকি

Icon

যুগের চিন্তা অনলাইন

প্রকাশ: ১৪ অক্টোবর ২০২১, ০৮:১৮ পিএম

বিলুপ্তির পথে ঐতিহ্যের বাহন পালকি
Swapno

সময়ের সাথে সাথে আধুনিক সমাজ ব্যবস্থায় বদলে গেছে মানুষের জীবনধারা, সেই সাথে বদলেছে প্রাচীন সংস্কৃতি ও সভ্যতা। বাংলার সংস্কৃতিতে এমন এক সময় ছিল যেকোন  বিয়েতেই পালকির প্রচলন অনেকটা বাধ্যতা মূলক বায়না ধরতো কণে বাড়ীর লোকজন। পালকি ছাড়া কনে পরিবার বরের কাছে কন্যা সম্প্রদানে অনীহা প্রকাশ করত।

 

বিয়ের পালকি যাওয়ার সময় বেহারাদের হুহুম না হুম সুরের শব্দ শুনলেই গাঁয়ের মানুষ ছোট বড় সকলেই রাস্তায় আঁড়ালে আবডালে দাঁড়িয়ে দেখতো মনোরম সেই দৃশ্য। দেশীয় ঐতিহ্যের অভিজাত বাহন হিসেবে সে সময় পালকি গ্রামগঞ্জে ব্যাপক চাহিদা ছিল। যুগ পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে যান্ত্রিক সব আধুনিক যানবাহন চালু হওয়ায় বিয়ের উৎসবে পালকির প্রচলন এখন আর নেই বললেই চলে। কয়েক শত বছরের পুড়নো ঐতিহ্যবাহী বাহন পালকি সোনারগাঁ তথা নারায়ণগঞ্জ জেলার আশপাশের অঞ্চলগুলোতে এখন আর দেখা যায় না ঐতিহ্য হাড়িয়ে পালকি এখন বিলুপ্তির পথে।

 

শুধু পুঁথি পুস্তকে লিপিবদ্ধ আর লোক ও কারুশিল্প যাদুঘরে আটকে যাচ্ছে ঐতিহ্যের অনেক স্মৃতি চিহ্ন। জমিদারী আমলে ও ঈশাখার রাজধানী সোনারগাঁয়ে এই পালকিতে চড়েই সে সময়ের জমিদার, রাজা-বাদশাহ, সুলতান, মহাজনরা চলাচল করতেন। পালকি নিয়ে রচিত হয়েছে মনোমুগ্ধকর অনেক গান ও কবিতা। এখন আর দেখা যায়না পালকি কাঁধে বেহারাদের চলাচলের মনোরম দৃশ্য। শোনা যায়না আঞ্চলিক গানের সাথে তাল মিশানো ‘হুহুম না হুম সুরের মূর্ছনা। বেহারাগণ রোজগারের পাশাপাশি আনন্দের জন্যও বর-কনেকে পালকিতে বহন করতেন।

 

তবে সোনারগাঁ থেকে ঐতিহ্যের এ বাহন হারিয়ে গেলেও অতীত ঐতিহ্য ধারণ করা কিছু সৌখিন মানুষ এখনো বিয়েতে বর-কনে বহনের জন্য মাউরা বাড়ি থেকে ভাড়া করে পালকি নিয়ে আসেন। সোনারগাঁয়ে পালকি বাহকের কাজে জড়িত বরিশালের গোসাইরচর গ্রামের শিকিম আলী সরদার বলেন, ১৯৪৫ সালের দিকে তার বাবা আলফু সরদার দিনমজুরী খেটে তার আয় দিয়ে সংসার চালাতে কষ্ট হতো বিধায় পরিবারের সবাইকে নিয়ে সোনারগাঁয়ের বড়নগর এলাকায় চলে আসেন। সে সময় থেকেই বিয়েতে বর-কনেকে আনা নেওয়ার পাশাপাশি সোনারগাঁ এলাকার জমিদার সুলতানেরা বেড়াতে যেতেন পালকিতে চড়ে। সেই সুবাদে বাবা পালকি বানিয়ে ভাড়া দিতেন তখন আয় রোজগারও বেশ ভাল ছিল। সংসারে কোন অভাব ছিলনা।

 

পরে বাবা মারা গেলে পারিবারিক ধারাবাহিকতা  রক্ষায় বড় ভাই আলী মিয়া সরদার হাল ধরেন পালকি’র। কয়েক বছর পর তিনিও মারা গেলে পুরনো ঐতিহ্যকে লালন করতে গভীর ভালবাসা ও মায়ার টানেই পালকি সরদারের দায়িত্ব নেই আমি। সুরের তালে তালে ‘হুহুম না হুহুম না’ বলে নিরলস এগিয়ে যাওয়া পালকি বহনের মজুরি ছিল চার জনের সমান ভাগ। তার মধ্যে সকলের মতো পালকিরও এক ভাগ দিতে হতো।

 

শিকিম আলী বলেন, বাবার স্মৃতি ও অজানা এক ভালো লাগার টানেই পালকিটি রেখেছি। মাঝে-মধ্যে প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিয়ের জন্য ভাড়া করে নিয়ে যায় মানুষ। আগের মতো পালকি বহনের বেহারা পাওয়া যায়না মানুষও পালকির কদর করেনা বিধায় বর্তমানে রিক্সা ভ্যান চালিয়ে সংসার চালাচ্ছি। এই পালকিটি ভেঙ্গে গেলে আর বানানো হবেনা পালকি। হয়তো আমার নাতী-পুতিরা যাদুঘরে গিয়ে পালকি দেখে আমাদের স্মৃতি মনে করবে।

Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher
ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন