শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১২ ১৪৩১

বীর মুক্তিযোদ্ধার নামের স্কুলের সভাপতি রাজাকার পুত্র

যুগের চিন্তা অনলাইন

প্রকাশিত: ১৬ জুন ২০২১  

প্রয়াত জননেতা একেএম (আবুল খায়ের মোহাম্মদ) সামসুজ্জোহা শুধু একজন রাজনীতিবিদই নন। তিনি মহান স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম সংগঠক, ভাষা সৈনিক ও স্বাধীনতা পদকে (মরোণত্তর) ভূষিত। অথচ বন্দর উপজেলার মুসাপুরে তার নামে প্রতিষ্ঠিত হওয়া সামসুজ্জোহা বিএম উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন মুসাপুর ইউনিয়ন পরিষদ এর বর্তমান চেয়ারম্যান কুখ্যাত রাজাকার রফিক এর ছেলে মাকসুদ হোসেন।

 

যেই রাজাকারের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের সময় মদনপুর মুসাপুর এলাকার মুক্তিযোদ্ধাদের ধ্বংস করার জন্য ১৮টি গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। আর তাকে প্রতিষ্ঠিত করতে সহযোগিতা করেছেন স্থানীয় হেভিওয়েট হাইব্রীড আওয়ামী লীগের নেতাসহ জাতীয় পার্টির নেতৃবৃন্দসহ সামসুজ্জোহার দ্বিতীয় পুত্র জাতীয় পার্টি সমর্থিত নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সাংসদ একেএম সেলিম ওসমান। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় মাকসুদ শুধু যে সামসুজ্জোহা বিদ্যালয়ের সভাপতি তাই নয়, স্থানীয় একাধিক বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।

 

আর তারই সুত্র ধরে এই রাজাকার পুত্রকে বুদ্ধিজীবী হত্যা দিবসের অনুষ্ঠানসহ মুক্তি বিষয়ক বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব ও প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকতে দেখা যায়। এ নিয়ে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় বিস্তর লেখালেখি হয়েছে। এর বিষয় নিয়ে বছর দুই এক আগে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াত আইভী শহরের জিমখানা স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত বিজয় দিবসের এক অনুষ্ঠানে বলেন, ‘সংসদ সদস্যের ছত্রছায়ায় নৌকাকে ফেল করিয়ে রাজাকারের সন্তান মাকসুদকে চেয়ারম্যান বানানো হয়েছে।’
 


২০১৬ সালের মুছাপুর ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে সাংসদ সেলিম ওসমান তাকে সমর্থন দেন। সেই সুবাদে মাকসুদ জাতীয় পার্টির সমর্থনে লাঙ্গল প্রতীকে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। আর তার নিকটতম প্রতিদ্ব›দ্বী ছিলেন নৌকা প্রতীকের আব্দুল কাদির। স্থানীয় আওয়ামী লীগের অভিযোগ বন্দর আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা সেলিম ওসমানকে তুষ্ট করার জন্য তখন আব্দুল কাদিরের পক্ষে কাজ না করে মাকসুদকে চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত করতে সহযোগিতা করছিলেন। শুধু এখানেই থেমে নেই, মুক্তিযুদ্ধের অর্ধশত বছর পার হলেও থেমে থাকেনি মাকসুদ চেয়ারম্যানের দাপট।

 

আর তার সব কাজে প্রকাশ্য সমর্থন দিচ্ছে জাতীয় পার্টিসহ স্থানীয় হাইব্রীড আওয়ামী লীগের নেতা এবং নীরব সমর্থনসহ প্রশাসনিকভাবে সহযোগিতা করছেন বন্দরের উপরের সারির আওয়ামী লীগের সুবিধাবাদি নেতৃবৃন্দ। রফিক চেয়ারম্যানের বাবা মাইনুদ্দিন এবং দুই ভাই আব্দুল মালেক ও আব্দুস সামাদও রাজাকার ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময় রাজাকার রফিকের বাহিনী গুলি করে হত্যা করে বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল আজিজ, ধামগড়ের নূর ইসলাম, নয়ামাটির আবদুল হামিদ, ইদ্রিস আলীসহ ইদ্রিস আলী, আবুল হাশেম ও জলিল মিয়াকে। স্বাধীনতার প্রায় ৩০ বছর পরেও রাজাকার রফিকের ছেলেকে রাজাকার বলাতে তার পালিত সন্ত্রাসীরা কুড়িপাড়া বাজারে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ বন্দর কমান্ড মুক্তিযোদ্ধা আলাউদ্দিনকে।

 

রাজাকার রফিকের ৪টি পরিবারে ৮টি পুত্র সন্তানের সবাই সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে লিপ্ত ছিল। তার ছেলে মুর্শেদ ওরফে মুন্সী এবং মোয়াজ্জম ওরফে কালুর নামে ধামগড়সহ পুরো লাঙ্গলবন্ধ এলাকার মানুষ এক সময় সন্ত্রস্ত হয়ে থাকতো। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হলো, তাদের কাছ থেকে ব্যবসায়িক সুবিধাসহ অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের লোভে কিছু নীতিভ্রষ্ট মুক্তিযোদ্ধাও কাজ করেছে তাদের পক্ষ হয়ে। এখনো তারই বংশধর মাকসুদ হোসেন একই কৌশল খাটিয়ে এই বঙ্গবন্ধুর প্রাণের চেয়েও প্রিয় দল আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকা অবস্থায়, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় এবং যেই বাড়িতে আওয়ামী লীগের গোড়াপত্তন হয়েছে সেই পরিবার সহ বেশ কিছু নীতিচ্যুত হয়ে যাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদে মুসাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানসহ সামসুজ্জোহা স্মৃতি সম্বলিত বিদ্যালয়ের সভাপতির দায়িত্ব পালন করার সুযোগ পান।

 

সেই কুখ্যাত রাজাকারের সন্তানের ছবির সাথে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার ছবি মিলিয়ে ব্যানার ফেস্টুন করা হয়। গত বছরের অক্টোবরে তার বিরুদ্ধে ভ‚মি দখলের অভিযোগ এনে সংবাদ সম্মেলন করেন আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ। এ বছরের মে মাসে তার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ নেতার ছেলেকে মারধরের অভিযোগে মামলা করা হয়। এধরণের নেতাদের যে সব আওয়ামী লীগের হাইব্রীডরা সমর্থন দেয়, তাদের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা লাভের আশায় তাদের দালালী করে তাদেরকে চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কেন্দ্র ও জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের বিনীত অনুরোধ জানান বন্দর আওয়ামী লীগের তৃণমূল ও ত্যাগী নেতৃবৃন্দ।
 

এই বিভাগের আরো খবর