Logo
Logo
×

স্বাস্থ্য

বেড়েই চলছে ভুয়া ডাক্তারের দৌরাত্ম্য

Icon

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশ: ১২ জুন ২০২৩, ১১:১৫ পিএম

বেড়েই চলছে ভুয়া ডাক্তারের দৌরাত্ম্য
Swapno

 

# এক মাস না যেতেই দুই ভুয়া ডাক্তারকে কারাদণ্ড
# ভুয়া ডাক্তারের খপ্পরে রোগীরা প্রতারিত হচ্ছে

 

 

ভুয়া ডিগ্রিধারী ডাক্তারদের ছড়াছড়ি এখন আশঙ্কাজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে, বাড়ছে তাদের সীমাহীন দৌরাত্ম্য। ডাক্তার না হয়েও ডাক্তারি পেইড ব্যবহার রোগী দেখে ভুয়া ডাক্তার নামে কথিত নামে বেনামে ডাক্তাররা। আর এতে করে অনেক রোগীরা প্রতারিত হচ্ছে। বিভিন্ন আইটেমের বাহারি ডিগ্রি ব্যবহার করে চকচকে সাইন বোর্ড সাঁটিয়ে নিরীহ রোগীদের প্রতারিত করে আসছেন তারা।

 

ফলে চিকিৎসাসেবায় চরম অরাজকতা বিরাজ করছে নারায়ণগঞ্জে। ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে রোগীদের জীবন। তাছাড়া যারা ডাক্তারি পাশ করে নিবন্ধিত হয়ে চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত রয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে কমিশন বানিজ্যের অভিযোগ রয়েছে। সেই সাথে ভুল চিকিৎসার স্বীকার হয়ে অইেশ ক্লিনিকে রোগীরা মৃত্যু পর্যন্ত হয়। কিন্তু তারা আবার বীর দর্পে চিকিৎসা সেবায় কাজ করে যান।

 

এদিকে সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জ শহরে একাধিক ক্লিনিকে প্রশাসনের গোয়েন্দা সংস্থা এন এস আইয়ের তথ্য ভিত্তিতে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে একাধিক ভুয়া ডাক্তারকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হয়। একই সাথে তাদের ১ বছরের সাজা প্রদান করা হয়। এছাড়া সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হয়।

 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গতকাল শহরের চাষাড়া গ্রীন লাইফ ডায়াগনষ্টিক এন্ড কনসালটেশন সেন্টারে নারায়ণগঞ্জ প্রশাসনের গোয়েন্দা সংস্থা এন এস আইয়ের তথ্যের ভিত্তিতে জেলা প্রশাসকরে মোবাইল কোর্ট অভিযান পরিচালনা করেন। এসময় এই প্রতিষ্ঠানের কর্মরত ভুয়া ডাক্তার মো. সাইদুল ইসলাম শাহিনের বিএমডিসির রেজিষ্ট্রেশন না থাকায় গ্রেপ্তার করে ১ বছরের কারাদন্ড দেয়া হয়।

 

তিনি এম বি বি এস ডাক্তার না হয়ে তার নামের ব্যবহৃত পেইডে ডাক্তার ব্যবহার করা হত। যা সম্পুর্ণ অবৈধ। ডাক্তার না হয়ে নামের আগে ডাক্তার ব্যবহার করায় তাকে ১ বছরের বিনা শ্রম কারা দন্ড দেয়া হয়। জেলা প্রশাসকের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট নুসরাত আরা খানম মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে তাকে এই সাজা দেয়া হয়। একই সাথে গ্রীন লাইফ ডায়াগনষ্টি এন্ড কনসালটেশন সেন্টার প্রতিষ্ঠানকে ভোক্তা অধিকার আইন ২০০৯ এর ৫৩ ধারায় প্রতিষ্ঠানের কর্মরত ব্যক্তিদের প্রোফাইল না থাকায় ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

 

এ সময় ভুয়া ডাক্তার সাইদুল ইসলাম শাহীন বলেন, আমি এম বি বি এস ডাক্তার পাশ করি নাই কিন্তু টেইন্ড ইন ট্রমা করেছি। এছাড়া ডিপ্লোমা কোর্স করেছি। নিবন্ধন যুক্ত এম বি বি এস ডাক্তার না হয়ে তিনি নামের আগে ডাক্তার ব্যবহার করতে পারেন কী না তখন তিনি বলেন, এটার আমার অপরাধ হয়েছে।

 

এর মাস কয়েক আগে নগরীর ডিআইটির সুপার ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে নুসরাত আরা খানমের নেতৃত্বে মোস্তফা মিজানুর রহমান নামের এক ভুয়া ডাক্তারকে আটক করে এক বছরের কারাদন্ড করা হয়। এই বছরের ২১ মে অভিযান পরিচালনা করে তাকে সাজা দেয়া হয়। তখন নুসরাত আরা খানম জানান, শহরের মধ্যে সুপার ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে কোন কাগজপত্র যাচাই ছাড়া আলট্রাসনোগ্রাম বিভাগে মিজানুর রহমানকে নিয়োগ দেয় কর্তৃপক্ষ। আটকের পর তিনি নিজেকে ভুয়া ডাক্তার হিসেবে স্বীকার করেন।

 

তার আগে ৫ মে ফতুল্লার পঞ্চবটি নাজ ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে জেলা প্রশাসনের মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে আব্দুর রশিদ নামে এক ভুয়া ডাক্তারকে আটক করেন। এই অভিযানের নেতৃত্ব প্রদানকারী জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট ইলোরা ইয়াসমিন তখন জানান, গ্রেপ্তারকৃত আব্দুর রশিদ ১৯৯২ থেকে ১৯৯৪ সনে জেলার কাচঁপুরস্থ শুভেচ্ছা ট্রেনিং সেন্টার থেকে ডিএম এস কোর্স করেন। পরবর্তীতে ডাক্তারের তত্ত্বাবধানে কাজ করেন। লোভের বশবর্তী হয়ে তিনি নিজেকে ডাক্তার পরিচয় দিতে শুরু করেন।

 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এই আব্দুর রশিদও গ্রীন লাইফ ডায়াগনষ্টিক এন্ড কনসালটেশন সেন্টারে নিজের নামের পেইডে ডাক্তার পরিচয়ে রোগী দেখে প্রতারনা করতেন রোগীদের সাথে। আর এই ভাবে একের পর এক ভুয়া ডাক্তারের ছড়াছড়ি হচ্ছে বিভিন্ন ক্লিনিকে। আর এতে করে মানুষ ভুল চিকিৎসার খপ্পরে পরে প্রতারনার স্বীকার হচ্ছে। অভিযান পরিচালনা করে কয়েক জায়গায় ভুয়া ডাক্তারকে শাস্তি দেয়ার পরেও এর থেকে প্রতিকার মিলছে না।

 

সচেতন মহলের মতে, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ভুয়া ডিগ্রিধারী ডাক্তারদের ভুল চিকিৎসায় রোগীর পরিস্থিতি জটিল হয়েছে, অল্প সময়েই নিভে গেছে অনেকের জীবন প্রদীপ। বছরের পর বছর ধরে ভুয়া ডাক্তার কেন্দ্রিক নানা অরাজকতায় চিকিৎসাব্যবস্থা প্রশ্নবিদ্ধ হলেও সরকারের দায়িত্বশীল বিএমডিসি, স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগ, স্বাস্থ্য অধিদফতর, বিএমএসহ ডাক্তারদের পেশাদার সংগঠনগুলো কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। আর এজন্য তাদের পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানান নাগরিক সমাজ। তাই এদের বিরুদ্ধে স্বাস্থ্য বিভাগের সকল প্রতিষ্ঠানকে সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানান চিকিৎসক বিশ্লেষকরা।  এস.এ/জেসি

Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher
ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন