Logo
Logo
×

জনদুর্ভোগ

ভরসা নেই ভর্তা-ভাতেও

Icon

ইউসুফ আলী এটম

প্রকাশ: ৩১ অক্টোবর ২০২৩, ০৮:২০ পিএম

ভরসা নেই ভর্তা-ভাতেও
Swapno

 

প্রবাদ আছে, ‘মাছে-ভাতে বাঙালি’। কিন্তু সার্বিক অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, দিন বদলের সাথে সাথে প্রবাদও পাল্টে যাচ্ছে। এখন প্রবাদে পরিণত হতে চলেছে ‘ভর্তা-ভাতে বাঙালি’। মাছের আকাল না হলেও দাম শুনলে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তদের পিলে চমকে যাওয়ার উপক্রম হয়ে যায়।

 

তারপরও যদি কখনো মাছ খাওয়ার সাধ জাগে, তবে কমদামে পচা পুঁটি কিংবা ‘গরিবের ইলিশ’খ্যাত পাঙ্গাস মাছের ভাগা কিনেই সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে। অনেক মধ্যবিত্ত পরিবারতো মাংস খাওয়ার কথা প্রায় ভুলেই গেছেন। দৈবাৎ বাড়িতে মেহমান আসলে ইজ্জত বাঁচাতে ধারকর্জ করে হলেও মাংস কিনতে হয়। গরু কিংবা খাসি নয়, ব্রয়লার মুরগির ওপরই ভরসা রাখতে হয়। মেহমানের উছিলায় নিজেরাও কিঞ্চিৎ মাংসের স্বাদ নিয়ে তৃপ্তির ঢেকুর তোলার সুযোগ পান।

 

নিম্নবিত্তদের পুরো মাসটাই ভর্তা আর ডাল দিয়ে চালাতে হয়। পূর্ব ইসদাইর বুড়ির দোকান এলাকার কর্মজীবী মহিলা হাসিনা বলেন, ‘আমি তিন সন্তান আর স্বামী নিয়ে ভাড়া বাসায় থাকি। স্বামী ছোটখাট একটি দোকান চালান। দোকান ভাড়া দিয়ে যে টাকা হাতে থাকে তাতে তার নিজের পকেট খরচ জোগানই দায় হয়ে পড়ে। সংসার চলে আমার চাকরির বেতনে। মাস শেষে ঘরভাড়া আর বিদ্যুৎ বিল দেয়ার পর বাকী টাকায় আলুভর্তা আর ডাল ছাড়া ভালোকিছু কপালে জোটে না।

 

কিন্তু এখনতো মনে হয় আলুভর্তাও খেতে পারবো না। ভর্তার উপকরণ হচ্ছে আলু, পেঁয়াজ, কাঁচামরিচ ইত্যাদি। কিন্তু ২০ টাকা কেজির আলু এখন ৭০ টাকা, ৩০ টাকা কেজির পেঁয়াজ ১৩০ টাকা, ৪০ টাকার কাঁচামরিচ ২০০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। একবার যে জিনিসটার দাম বাড়ছে তা কিন্তু আর কমছে না। আর দ্রব্যমূল্যের সাথে পাল্লা দিয়ে আমাদের আয়টাও কিন্তু বাড়ছে না। চোখেমুখে অন্ধকার দেখছি। এখনতো মনে হচ্ছে, শুধু লবণ দিয়ে ভাত খেতে হবে।

 


শহরের খানপুর এলাকার ভ্যানচালক নান্নু মিয়ার কণ্ঠেও হাসিনার কথার প্রতিধ্বনি শোনা গেলো। তিনি তার কণ্ঠের ভলিয়্যুম বাড়িয়ে বললেন, ‘মাছ-মাংস খাওন লাগতো না, অহন দেখতাছি বর্তাও খাইতে ফারতাম না। হারাদিন ব্যান চালাইয়া যে ট্যাহা কামাই, চা-পান আর সিগারেট খাইয়্যা বউ-বাচ্চা লইয়া বর্তা-বাত খাওনডাও কঠিন অইয়্যা যাইবো। বর্তাও দেহি জাতে উইঠ্যা গ্যাছে গা।’ 

 

বুঝাই যাচ্ছে, সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বাজার নিয়ন্ত্রণে পুরোপুরি ব্যর্থ। দু’মাস আগে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আলু, পেঁয়াজ আর ডিমের দাম নির্ধারণ করে দেয়ার পর সিন্ডিকেটের কাছে অসহায় আত্মসমর্পণ করে। কৃষিমন্ত্রী যখন বলেন, সরকার আলু ও পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না; তখন নিম্নবিত্তের মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ে। সিন্ডিকেট তাদের ইচ্ছেমতো দাম বাড়াতে থাকে আর সরকার মাথা নত করে লজ্জায় মুখ ঢেকে বাজার ছেড়ে পালিয়ে হাঁফ ছাড়ে।

 

কী কারণে সরকার সিন্ডিকেট ভাঙ্গতে পারছেন না, তাও এক বিরাট রহস্য। কিন্তু এ অবস্থা দীর্ঘতর হলে সরকার বেকায়দায় পড়ে যেতে বাধ্য হবে। এ মুহূর্তে দেশজুড়ে চলছে সরকার হটানোর আন্দোলন। টানা অবরোধের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে বিরোধীদের পক্ষ থেকে। এর সাথে যদি দ্রব্যমূল্যের প্রসঙ্গটি যুক্ত হয়, তবে সাধারণ মানুষ কী করবে তা খুব সহজেই অনুমেয়। অতএব সাধু সাবধান! এস.এ/জেসি 

Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher
ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন